Last updated on May 14th, 2023 at 05:44 am

টেক্সটাইল কি, টেক্সটাইল কাকে বলে – বিষয়টি সম্পর্কে যদিও আমাদের কম বেশী ধারণা আছে। তবুও, এর উপর বিস্তারিত কিছু তথ্য নিয়ে আজকের পোষ্ট।

ইতোমধ্যে আমাদের টেক্সটাইল সম্পর্কে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ধারণা রয়েছে। কেননা বাস্তব জীবনে এর গুরত্ব ও প্রয়োজনিয়তা বলে শেষ করার মত নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সময়ের প্রতিটি মুহুর্তে্ই কোন না কোন কাজে এর ব্যবহার করে আসছি।

তবে, টেক্সটাইল বিষয়ে আমাদের ধারণার কিছুটা গ্যাপ থাকতে পারে। এর সাথে ফেব্রিক এবং ক্লোথ শব্দগুলিও অনেক সময় সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। যদিও কিছুটা হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

যাহোক, আলোচ্য পোষ্টে এই বিষয়ে পরিস্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। টেক্সটাইল কি বা টেক্সটাইল কাকে বলে, এর বৈশিষ্ট কি, গুরত্ব কেমন, কি কি উপাদান দিয়ে এটি গঠিত – ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।

আসুন, মুল আলোচনা শুরু করি।

টেক্সটাইল কি?

টেক্সটাইল হল কাপড় বা ফেব্রিক যা ইয়ার্ন দিয়ে একটি আর একটির সাথে জালের মত আবদ্ধ করে তৈরি করা হয়। টেক্সটাইলের কাঁচামাল হল ফাইবার যা প্রকৃতিগত উৎস থেকে পাওয়া যায় এবং কৃত্রিমভাবেও তৈরি করা যায়। আবার এই দুই এর সংমিশ্রণেও বানানো যায়। এই ফাইবার প্রথমে স্পিনিং এর সাহায্যে ইয়ার্ন তৈরি করা হয়। তারপর উইভিং, নিটিং, ফেল্টিং ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় টেক্সটাইল ফেব্রিক তৈরি করা হয়।

টেক্সটাইল কি এর উত্তরে যদি শব্দটির উৎপত্তিগত উৎসের দিকে তাকানো যায়, তাহলে- textile শব্দটি Latin শব্দ textilis থেকে এসেছে যার অর্থ হল woven. সাধারণ অর্থে বোঝা যায়, উইভিং প্রক্রিয়ায় যা তৈরি করা হয় তাই woven.

টেক্সটাইল কথাটি অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে সমস্ত প্রকার ফাইবার অন্তর্ভুক্ত। যেমন- পাট, তুলা, উল, সিল্ক, হেম্প ইত্যাদি জাতিয় ফাইবার। এই ফাইবারগুলো ব্যবহার করে কাপড় বা ফেব্রিক তৈরি করার সমস্ত পদ্ধতিও এর মধ্যে গণ্য, যেমন উইভিং বা নিটিং সহ অন্যান্য যে সব প্রক্রিয়া কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই কাপড় দিয়ে আবার যে সব finished products তৈরি করা হয় তাও টেক্সটাইল পণ্যের মধ্যেই ধরা হয়। যেমন তৈরি পোশাক, বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্য, গৃহ সজ্জায় ব্যবহৃত যে কোন পণ্য ইত্যাদি।

টেক্সটাইল কি, বিষয়টির উপর আর একটি বাস্তব কথা – বেচে থাকার জন্য মানুষের মৌলিক চাহিদা তিনটি। এর মধ্যে টেক্সটাইল পণ্য হল আমাদের দ্বিতীয় প্রধান মৌলিক চাহিদা। এক কথায় টেক্সটাইল হল এমন এক পণ্য যা বস্ত্রের বহুমুখী চাহিদা পূরণ করা হয়।

টেক্সটাইল, ফেব্রিক ও ক্লোথের মধ্যে পার্থক্য কি?

অনেক সময় টেক্সটাইলকে ফেব্রিক এবং ক্লোথ এর প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে, এদের মধ্যে সুক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।

  • টেক্সটাইল: ইহা এমন ধরণের পদার্থ যা ফাইবার দিয়ে একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। উদাহারন স্বরুপ- এর মধ্যে কার্পেট, জিওটেক্সটাইল অন্তর্ভুক্ত যা দিয়ে পরবর্তি কোন পণ্য যেমন পোশাক বা অন্য কোন গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করা যায় না।
  • ফেব্রিক:  ঐসব টেক্সটাইলকে বলা হয় যেখানে ফাইবার থেকে ইয়ার্ন তৈরির পর তা উইভিং, নিটিং, ফেল্টিং, স্টিচিং ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়। এই ফেব্রিক দিয়ে বিভিন্ন রকমের পোশাক ও গৃহ সজ্জার কাপড় তৈরি করা যায়।
  • ক্লোথ: ইহা যদিও অনেক সময় ফেব্রিকের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয় তথাপি কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন, ক্লোথ হচ্ছে এক টুকরা ফেব্রিক যা কেটে প্রক্রিয়াজাত করে পোশাক বা অন্য কোন পণ্য বানানো যায়।

টেক্সটাইল পণ্যের বৈশিষ্ট কি?

  • যেকোন পন্য যা উইভিং, নিটিং বা ফেল্টিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা হয়।
  • ফাইবার বা ইয়ার্ন জাতিয় যেকোন কাঁচামাল যা উইভিং কাজের উপযোগি।
  • যে কোন পণ্য যা কাপড়ের সাথে সম্পর্কিত বা যা দিয়ে কাপড় তৈরি করা যায়।
  • তৈরি পোশাক বা রেডি মেইড গার্মেন্টস এর মৌলিক ও বুনিয়াদি উপাদান।
  • কাপড় জাতিয় যে কোন finished products যা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।
  • যে কোন পদার্থ যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ফাইবার দিয়ে গঠিত।

টেক্সটাইলের মুল উপাদানসমুহ কি কি?

টেক্সটাইলের মুল উপাদানগুলো ধারাবাহিকভাবে নিচে উল্লেখ করা হল-

  • ফাইবার: টেক্সটাইল ইনডাস্ট্রি বিভিন্ন ধরণের ফাইবার কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে। প্রকৃতিজাত ফাইবার একটি বড় অংশ বিভিন্ন ফাইব্রাস উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। এই উদ্ভিদগুলো আবার কৃষি কাজের মাধ্যমে চাষ করা হয়, যেমন তুলা, ফ্ল্যাক্স ইত্যাদি। আবার প্রাণিজাত উৎস থেকেও ফাইবার তৈরি করা যায়, যেমন, উল, সিল্ক ইত্যাদি।
  • ইয়ার্ন: ফাইবার প্রক্রিয়াজাতের প্রথম ধাপে স্পিনিং প্রক্রিয়ায় যা তৈরি হয় তাকে ইয়ার্ণ বলা হয়। এই ইয়ার্নগুলো ব্যবহার করে পরবর্তিতে উইভিং বা নিটিং এর মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয়।
  • গ্রে ফেব্রিক: ডাইং করা হয়নি এমন টেক্সটাইল কাপড়কে গ্রে কাপড় বলা হয়। এর ফিনিশড প্রোডাক্টের অন্তর্ভূক্ত নয়।
  • ফিনিশড ফেব্রিক: গ্রে কাপড়কে ডাইংপ্রিন্টিং এর মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসাবে তৈরি করা হয়।
  • এন্ড প্রোডাক্টস: ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসাবে উৎপাদিত ফেব্রিক কেটে সেলাই করে বিভিন্ন রকমের পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করা হয় যা এন্ড প্রোডক্ট হিসাবে ভোক্তা সাধারণ ব্যবহার করে।

টেক্সটাইলের ব্যবহার কি কি?

টেক্সটাইল বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন-

  • পোশক তৈরির কাজে টেক্সটাইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন ব্যাগ, বাসকেট, স্যুটকেস তৈরি করা হয়।
  • গৃহস্থলি কাজে ও গৃহসজ্জায় এটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, কার্পেট, জানাল-দরজার পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, টেবিল ক্লোথ, ম্যাট, তয়েলা, কম্বল ইত্যাদি পণ্য টেক্সটাইল দিয়ে তৈরি হয়।
  • বহুমাত্রিক বা বিবিধ কাজে যেমন তাবু তৈরি, পতাকা, জাল ইত্যাদি তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
  • ঘুরি, প্যারাস্যুট টেক্সটাইল দিয়ে তৈরি করা যায়।
  • চিকিৎসা প্রযুক্তির কাজেও যেমন গজ, ব্যান্ডেজ তৈরি করা যায়।
  • এগ্রো টেক্সটাইল কাজেও শষ্যে সুরক্ষায় এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
  • গতানুগতিক কাজ যেমন সেলাই, এমব্রয়ডারি, কুইল্টিং ইত্যাদি কাজ টেক্সটাইল দিয়ে করা হয়।