Last updated on May 23rd, 2023 at 11:42 am

এমব্রয়ডারি ব্যবসা  কিভাবে করা যায়? এই বিষয়ে আমাদের কমবেশী জানার আগ্রহ থাকতে পারে। কেননা ঘরে বসে এমব্রয়ডারি কাজ শিখে সৎভাবে অতিরিক্ত পয়সা উপার্জন কে না চায়। তাই, এই পোষ্টটি তাদের জন্য যারা ঘরে থেকে এমব্রয়ডারি কাজ করে দু’টো পয়সা উপার্জন করতে চায়।এমব্রয়ডারি কথাটিকে বাংলায় সূচিকর্ম বলা হয়।

তাহলে এমব্রয়ডারি নিয়ে আসুন শুরু করা যাক। আমরা অনেকেই বিভিন্ন ডিজাইন বিশিষ্ট কাপড় দেখতে বা পরিধান করতে পছন্দ করি। প্লেইন কালারের কোন কাপড়ে যদি কোন ডিজাইন না থাকে তাহলে তার তেমন কোন চাহিদা থাকেনা। নিতান্তই কিছু প্রয়োজন ছাড়া এসব কাপড়েরর তোমন কোন ব্যবহার চোখে পরেনা।

আবার প্লেইন কালারের কাপড়ের উপর বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন প্রিন্টের ডিজাইন দেখা যায়। এই প্রিন্ট বিভিন্নভাবে করা হয়। যেমন, স্ক্রিণ প্রিন্টিং, ব্লক, বাটিক, ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রভৃতি। এসব গেল একধরনের ডিজাইন।

আরেক ধরনের ডিজাইন আছে যা কাপড়ের উপর খুবই নৈপুন্যতার সাথে করা হয়। এখানে একটি আর্ট হিসাবে সুই ও সুতা ব্যবহার কাপড়কে সজ্জিত করা হয়। কাপড়ের উপর সুই ও সুতা দ্বারা বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করে কাপড়কে সুশোভিত করার এই কৌশলকেই এমব্রয়ডারি বা সূচিকর্ম বলা হয়।

বর্তমান আধুনিক যুগে এমব্রয়ডারি ডিজাইন বিভিন্ন পরিধানের কাপড়ের পাশাপাশি ঘরের সাজসজ্জাতেও বহুল ব্যবহৃত হয়। যেমন, সোফার কাভার, কুশন কাভার, বালিশের কাভার, টেবিল ক্লোথস ইত্যাদি। সূচিকর্ম মুলত দুইভাবে করা হয়। প্রথমত: হাতের সাহায্যে আর দ্বিতীয়ত হল মেশিনের সাহায্যে।

যদিও বা আপনি ঘর থেকেই এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করতে চান, তা সত্ত্বেও ব্যবসাটি ততটা সহজ নয়। আপনাকে অবশ্যই এমব্রয়ডারির উপর স্টাডি করতে হবে। আবার এমব্রয়ডারিকে খুব কঠিন মনে করারও কারণ নেই। এই পোস্ট আপনার প্রয়োজন অনুযায়ি এমব্রয়ডারি ব্যবসার জগতের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরবে। আলোচ্য পোস্টে আমি নিম্নোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব।

এমব্রয়ডারির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

সত্যিকার অর্থে এমব্রয়ডারির ইতিহাস বললে ইহা তথন থেকেই পৃথিবীতে অস্তিত্ব লাভ করেছে যখন থেকে মানুষ কাপড় বানানো শিখেছে। আজকাল সারা বিশ্বেই ব্যাপক সমাহারে সূচিকর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু ইহা বিশ্বাস করা হয় যে, সর্বপ্রথম চায়নাতেই এর উৎপত্তি লাভ করেছিল।

Embroidery শব্দটি ফ্রেন্স শব্দ “broderie” হতে এসেছে যার অর্থ হল ইংরেজিতে Embellishment এবং বাংলায় সুশোভিতকরন। এর পর নবম এবং দশম শতাব্দিতে সুইডেনে এমব্রয়ডারির প্রচলন লক্ষ করা যায়। এর প্রায় দুই শতাব্দি পর থেকে গোটা ইউরোপ জুরে সূচিকর্ম বিস্তার লাভ করে।

উনিশ শতাব্দি পর্যন্ত ইহা প্রধানত: ধনীক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ঐতিহাসিকগনের মতে এমব্রয়ডারির কাজ মহিলারাই করে আসত। কিন্তু পরবর্তিতে পুরুষের মধ্যে এই কাজ করার একটি প্রবনতা লক্ষ করা যায়। অভিনেতা Henry Fonda অকপটে স্বীকার করেন যে, এমব্রয়ডারি তার পছন্দের কাজের মধ্যে একটি।

আজকের বিশ্বে সূচিকর্ম একটি বহুল প্রচলিত কাজের নাম। আমাদের বাংলাদেশেও ইহা প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাধারন কোন কাপড়ের মধ্যে যদি সূচিকর্মের ডিজাইন জুরে দেওয়া যায় তাহলে এর মুল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মহিলার এই কাজকে পেশা বানিয়ে জীবিকার উৎস বানিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ভারতীয় সংস্কৃতির একটি প্রভাব রয়েছে। এর পিছনে এটিও একটি কারণ যে, ভারতীয় এমব্রয়ডারি কাজ বর্তমানে অনেক সমৃদ্ধ। হরেক রকমের ডিজাইন সম্বলিত ভারতীয় সূচিকর্ম বাংলাদেশের মহিলাদের মাঝে খুবই জনপ্রীয়।

এমব্রয়ডারি ব্যবসার ধারনা এবং সুযোগ:

কাপড় বা ফেব্রিকসের উপর বিভিন্ন ডিজাইন অংকন করে সুই সুতার মাধ্যমে সেই ডিজাইনকে ফুটিয়ে তুলাই হচ্ছে এমব্রয়ডারির কাজ। একবিংশ শতাব্দির আজকের দুনিয়ায় প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এর ফলে আপনি কম্পিউটারের বিভিন্ন সফ্টওয়ার ব্যবহার করে মনের মত সৃজনশীল কোন ডিজাইন তৈরি করতে পারেন।

একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় বলা দরকার, তা হল সূচিকর্ম দুইভাবে করা হয়। প্রথমত: হাতের মাধ্যমে আর দ্বিতীয়ত মেশিনের মাধ্যমে। যদি হাতের মাধ্যমে করতে চান তাহলে কম্পিউটার সফ্টওয়ারের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ডিজাইনটি ট্রেসিং পেপার বা অন্য কোন মাধ্যমে আপনার নির্বাচিত কাপড়ে অংকনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তারপর সেই অংকনের উপর হাতের সাহায্যে এমব্রয়ডারি কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

এবার আসুন মেশিন এমব্রয়ডারির বিষয়ে। মেশিন এমব্রয়ডারির মধ্যে পুরনো মডেলের মেশিনের সাহায্যে কাপড়ের উপর প্রতিস্থাপিত নকসার উপর দিয়ে সেলাই করতে হয়। আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল মেশিনের সাহায্যে আপনার পছন্দসই কোন ডিজাইন কাপড়ের উপর অংকন করতে হবে না। মেশিনটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ডিজাইন অনুযায়ি হুবুহু কাপড়ের উপর দিয়ে কাজ করা শুরু করবে। এই মেশিনকে কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিন বলা হয়।

তবে, হাত এবং মেশিন এমব্রয়ডারি উভয় প্রকারের মধ্যেই ভাল মন্দ রয়েছে। হাতের সূচিকর্মের মাধ্যমে উৎপাদিত কোন পন্য মেশিন এমব্রয়ডারির তুলনায় ব্যায়বহুল হয়। কারন, হাত দিয়ে সূচিকর্ম করে অনেক প্রকারের ডিজাইন ফুটিয়ে তোল যায়। অপরদিকে Machine Embroidery Uniform নকসা প্রনয়ন করে থাকে।

ঘরে এমব্রয়ডারি ব্যবসা কেন শুরু করবেন?

ঘর থেকে এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরুর আগে আপনাকে প্রথমেই হাত দিয়ে এমব্রয়ডারি কাজের বিভিন্ন রকমের Stitching বা সেলাই কৌশল রপ্ত করে নিতে হবে। বিশেষ করে এর উপর আমার আলাদা একটি পোষ্ট রয়েছে, তা দেখে নিতে উপরের লিংকে ক্লিক করে ভিজিট করতে পারেন।

যে কোন কাজই প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে শুরু করলে পরবর্তিতে ঝুঁকির মাত্রা কমে যায়। আর এই পরিক্ষামুলক এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে নিজের ঘরেই উত্তম জাগা। এখানে আপনার প্রাথমিক ভাবে ব্যবসা শুরুর জন্য খরচের পরিমানও অনেক কমে যায়। দোকান বা শো-রুম নেওয়া বাবদ কোন অতিরিক্ত অর্থ যোগানের প্রয়োজন হবে না।

আপনি এমব্রয়ডারি কাজ শিখার পর ঘর থেকে এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করার পর আপনার প্রধান কাজ হবে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করা। এ জন্য আপনাকে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে বা শো রুমে গিয়ে আপনার উৎপাদিত পণ্যের নমুনা দেখিয়ে অর্ডার সংগ্রহ করতে হবে। বিভিন্ন ট্রেড ফেয়ারেও আপনার পণ্যের প্রদর্শন করাতে পারেন। যেমন বাংলাদেশে এস এম ই ফাউন্ডেশন সময়ে সময়ে বিভিন্ন ট্রেড ফেয়ারের আয়োজন করে থাকে।

এভাবে আস্তে আস্তে আগাতে আগাতে যখন এমব্রয়ডারি পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে আপনার নিজের একটি কনফিডেন্স তৈরি হবে তখন আপনি উপযুক্ত কোন জায়াগায় শো-রুম নিয়ে পুরোদমে ব্যবসায় যাত্রা শুরু করতে পারবেন। এতে করে, আপনার ব্যবসার ঝুঁকির মাত্রা অনেক কমে যাবে। তাই শুরুতে নিজ ঘর থেকেই এমব্রয়ডারি ব্যবসা করার যাত্রা শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। এজন্য পুঁজি হিসাবে আপনার একটি এমব্রয়ডারি মেশিনের প্রয়োজন হবে।

সফলভাবে এমব্রয়ডারি ব্যবসা কিভাবে শুরু যায়?

যে কোন ব্যাবসা শুরুর আগে যে বিষয়টি দরকার তা হল সঠিকভাবে সমীক্ষা বা সার্ভে কাজ সম্পাদন করা। এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরুর বেলয়ও তার ব্যাতিক্রম নয়।

আপনাকে প্রথমেই এই ব্যবসার একটি সামগ্রিক মার্কেট সাইজ জানতে হবে। এর পর আপনার যারা প্রতিদ্বন্দি আছেন তাদের সম্পর্কেও আপনার একটি সম্যক ধারনা নিতে হবে। বিশেষ করে তারা কিভাবে এই ব্যাবসা পরিচালনা করছে। তাদের এমব্রয়ডারি কাজের উপর কোন প্রশিক্ষণ আছে কিনা। থাকলে কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা সাধারনত: কোন ধরনের কাপড়ের উপর এমব্রয়ডারি কাজ করে। এই এমব্রয়ডারি কাজ করতে কি কি কাচামাল লাগে। তাদের তৈরিকৃত পন্য তারা কোথায় বাজারজাত করে, ইত্যাদি। প্রথমেই যে সমীক্ষা কাজের কথা বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন Embroidery কাজের কোন কোন পণ্যের চাহিদা বেশী।

যাহোক, এই প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর পাওয়া সাপেক্ষেই আপনি সফলভাবে এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা প্রয়োজন:

১. Embroidery ব্যবসার সমীক্ষা এবং প্রতিদ্বন্দিদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি প্রথমেই আপনাকে আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রনয়ন করতে হবে।
২. আপনার টার্গেট অডিয়েন্স খুজে নিতে হবে। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বলতে তাদেরকেই বুঝানো হয় যারা আপনার উৎপাদিত পন্যের ভবিষ্যত ক্রেতা হবে। আপনার একজন আদর্শ কাস্টমার সে যেই হউক না কেন তার কাছে আপনার পণ্যের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এখন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সঠিকভাবে বের করার জন্য ডেমোগ্র্যাফিকসের উপর ভিত্তি করে নিচের বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে।

  • ইনকাম লেভেল: আপনার সেবাটিকি ব্যয়বহুল? কারা আপনার এই পন্য কিনার সামর্থ রাখে? এই উত্তরগুলিই আপনাকে উৎপাদিত পণ্যের প্রাইসিং স্ট্রেটেজি বের করতে সহায়তা করবে।
  • বয়স: আপনার উৎপাদিত পণ্যটিকি একটি সুনির্দিষ্ট বয়সের মানুষের জন্য ব্যবহার্য?
  • স্থান: আপনি কি আপনার উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রয় করবেন নাকি আপনি একটি অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে দেশজুরে আপনার পণ্যের বাজারজাত করবেন?
  • পেশা: আপনার পন্যটি কি কোন একটি নির্দিষ্ট পেশাজীবি মানুষের জন্য তৈরি হওয়া?
  • জেন্ডার: আপনার পণ্যটি কি মহিলা না পুরুষের জন্য; নাকি উভয়ের জন্যই?

৩) মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করতে হবে: একজন নতুন ব্যবসায়ি উদ্যোক্তা হিসাবে প্রথম প্রথম কাস্টোমারদের সন্তুষ্টি অর্জন করে তাদের আস্থাভাজন হওয়া খুবই প্রয়োজন। এর ফলে একজন কাস্টোমারের মাধ্যমের রেফারেল প্রক্রিয়ার আরোও নতুন অনেক কাস্টোমার তৈরি হবে।
৪) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাচামাল।
৫) প্রশিক্ষণ

এমব্রয়ডারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনার কি কি দক্ষতার প্রয়োজন হবে।

যেকোন ব্যবসা শুরুর প্রথমে দেখে নেওয়া উচিত ঐ ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা আপনার আছে কিনা। একইভাবে Embroidery ব্যবসার ক্ষেত্রেও। যদি না থাকে তবে শিখে নিতে হবে।অথবা এই দক্ষতাসম্পন্ন কাউকে নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগের বিষয়ে ব্যবসা শুরুর মুহুর্তে না চিন্তা করাই ভাল। আগে নিজে নিজে শুরু করুন, ব্যবসা বুঝুন, কিছু মার্কেট ধরুন— তারপর।

যাহোক, এটি এমন কোন বিষয় নয় যে এর দক্ষতা লাভের জন্য আপনাকে কোন ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।প্রথমেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন ধরনের Embroidery ব্যবসা শুরু করতে চান। যদি হ্যান্ড Embroidery নিয়ে শুরু করেন, তাহলে খুব প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকটি দক্ষতা হলেই চলবে। যেমন হাতে সেলাই কাজ, কাপড় বা ফেব্রিক সম্পর্কে কিছু ধারণ এবং কাপড়ের উপর আপনার পছন্দের বিভিন্ন ডিজাইন বা নকসা তৈরি করা। তাছাড়া কম্পিউটার থেকেও কোন ডিজাইন প্রিন্ট করে তা কাপড়ের উপর ছাপ দিয়ে এই হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করতে পারেন।

অপরদিকে মেশিন এমব্রয়ডারির ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিশেষায়িত জ্ঞান বা দক্ষতার প্রয়োজন হবে।মেশিন এমব্রয়ডারির মধ্যে আপনাকে আবার বেছে নিতে হবে আপনি কোন ধরণের মেশিন ব্যবহার করবেন। ফ্রি মোশন Embroidery বা জিগজাগ মেশিন নাকি কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিন।

যদি ফ্রি মোশন এমব্রয়ডারি মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করতে চান তাহলে প্রথম পর্যায়ে দক্ষতা হ্যান্ড এমব্রয়ডারির মতই। যেমন, নকসা হয় কাপড়ের উপর সরাসরি এঁকে বসাতে হবে অথবা কম্পিউটার থেকে কোন নকসা সাদা কাগজে প্রিন্ট করে কাপড়ের উপর ছাপ দিতে হবে। ছাপ বিভিন্নভাবেই দেওয়া যায়, তবে আমার কাছে কাপড়েরর রঙের মধ্যে যেন স্পষ্টরুপে ফুটে উঠে এমন রঙের কার্বন কাগজ ব্যবহার করাই কম ঝামেলার মনে হয়। কাপড়ের উপর ছাপ দেওয়া পর্যন্ত কাজগুলো হ্যান্ড এমব্রয়ডারির বেলায়েও প্রযোজ্য।

এরপর এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার যা লাগবে তা হল ফ্রি মোশন এমব্রয়ডারি মেশিন কিভাবে চালাতে হয় তা শিখে নেওয়া। এটিও তেমন কঠিন কিছু নয়। কোন আর্ট পেপারের উপর পেন্সিল দিয়ে আকানোর মতই ব্যাপারটা। অর্থাৎ, নকসা সম্বলিত কাপড়টি যদি আর্ট পেপার হয়, তাহলে পেন্সিল হল এমব্রয়ডারি মেশিনের নিডল। এক কথাও কাপড়েরর নকসার উপর দিয়ে আপনি এমব্রয়ডারি মেশিনের সুই চালিয়ে যাবেন। এই সুই কিভাবে চালাতে হয় তা কিছুদিন প্র্যাকটিস করে নিলেই হয়ে যাবে।

এবারে আসুন, মেশিন এমব্রয়ডারির আরেকটি পার্ট নিয়ে, তা হল কম্পিউটারাইজড মেশিন এমব্রয়ডারি। এক্ষেত্রে আসল যে সুবিধা তা হল কাপড়ের উপর আপনাকে নকসা বসাতে হবে না। আর কাপড়ের উপর আপনাকে ম্যানুয়ালি মেশিনের মাধ্যমে সুঁইও চালাতে হবেনা।  এই কাজগুলি মেশিনই করে নিবে। আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে ডিজাইন সফ্টওয়া ব্যবহার করে কম্পিউটারে বিভিন্ন নজরকরা নকসা তৈরি করা। তারপর সেই ডিজাইনটি ভাল করে এডিট করার পর মেশিন এমব্রয়ডারিতে সেট করা।

এমব্রয়ডারি মেশিনে ডিজাইনটি সিলেক্ট করার পর এমব্রয়ডারি হুপের মাধ্যমে কাপড়টি মেশিন এমব্রয়ডারিতে সেট করা। ব্যাস! এতটুকুই। এর পর শুধু মেশিনের সুইচ বাটটি অন করে দিবেন। বাকী কাজ মেশিনই করে নিবে। আপনি এবার দর্শকের ভুমিকা নিয়ে দেখা শুরু করুন কিভাবে নিখুতভাবে কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে।

 

এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কি কি ইকুইপমেন্ট এবং এক্সেসরিজের প্রয়োজন হবে।

ঘরে থেকে এমব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ঠিক করে নিতে হবে। আপনি কোন ধরনের এমব্রয়ডারি কাজ করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। আপনি নিশ্চই উপরের অংশটুকু পড়ে নিয়েছেন যেখানে এমব্রয়ডারি ব্যবসার ধরণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তার উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ি যে ধরণের এমব্রয়ডারি কাজ করেন না কেন তার জন্য কিছু কমন বিষয় ও ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন হবে।

যেমন —-

  • ঘরে একটি উপযুক্ত স্থান প্রথমেই নির্বচন করতে হবে।
  • একটি কম্পিউটার
  • এমব্রয়ডারি ডিজাইন সফ্টওয়ার
  • একটি প্রিন্টার
  • প্রয়োজনীয় ফেব্রিকস
  • বিভিন্ন রঙের এমব্রয়ডারি সুতা
  • কয়েক সাইজের এমব্রয়ডারি হুপস ইত্যাদি।

 

এবারে, আসুন জেনে নেই হ্যান্ড এমব্রয়ডারির ক্ষেত্রে কি কি লাগবে–

  • বিভিন্ন ধরণের Embroidery Needle
  • একটি কেচি
  • Embroidery Thread বা সুতা
  • ছয় ইঞ্চি এমব্রয়ডারি হুপ- প্লষ্টিক বা কাঠের
  • এমব্রয়ডারি ফ্লস
  • পানিতে দ্রবনিয় মার্কার বা কলম
  • স্টিম আয়রন
  • আয়রনিং বোর্ডি

এখানের একটি বিষয় খুব গুরত্বপূর্ণ যে হ্যান্ড এমব্রয়ডারির বেলায় Embroidery Needle নির্বাচনে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। কারন, অনেক ধরনের নিডল রয়েছে যেখান থেকে আপনার কাজের ধরন অনুযায়ি উপযুক্ত হ্যান্ড Embroidery Needle আপনাকে বেছে নিতে হবে। নিচে কয়েকটি Embroidery Needle এর নাম উল্লেখ করা হল:

  • Crewel Needle
  • Tapestry Needle
  • Milliner Needle
  • Chenille Needle
  • Sashiko Needle
  • Quilting Needle

সবশেষে, মেশিন এমব্রয়ডারির ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে —

  • টেবিলসহ একটি ফ্রি মোশন এমব্রয়ডারি মেশিন
  • একটি কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিন

 

 ঘর থেকে এমব্রয়ডারি ব্যবসার শুরু করার জন্য আপনার কি পরিমান মুলধনের প্রয়োজন হতে পারে।

যেহেতু এই বিষয়ে আমার সকলেই একমত যে, নতুন অবস্থায় যেকোন ব্যবসা ছোট আকারে করাই ভাল। তাই, আপনিও আপনার এই পরিকল্পনা ছোট আকারে প্রনয়ন করতে পারেন।

সেক্ষেত্রে আমি বলব, আপনার শুরুটা Hand Embroidery এর সাথে Free Motion Machine Embroidery পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন।উভয় প্রক্রিয়াকেই ম্যানুয়াল বললে ভুল হবে না। একটিতো ১০০% হাতের কাজ অপরটি ধরুন ৫০%। আমি

আপনাকে প্রথমেই আমি Computerized Machine Embroidery কেনার কথা বলব না। কেননা এটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর কার্যক্রম পারিচালনা করে।স্বয়ংক্রিয় কার্য প্রণালী বুঝার আগে আপনাকে প্রথমে ম্যানুয়াল ইন্টারভেনশনে দক্ষ হতে হবে।

এবার জেনে নেই, ছোট পরিসরে এই ব্যবসা পরিচালনায় আপনার কত টাকা লাগতে পারে। আনুমানিক একটি ধারণা নিয়ে নেই।

যেমন—

  • একটি কম্পিউটার ও প্রিন্টার বাবদ – ৫০০০০.০০ টাকা
  • একটি Free Motion Embroidery Machine – ১৫০০০.০০ টাকা
  • প্রয়োজনীয় ফেব্রিকস – ১০০০০.০০ টাকা
  • এমব্রয়ডারি ইকুইপমেন্টস ও এক্সেসরিজ – ৫০০০.০০ টাকা

এই হল আপনার সর্বমোট খরচ ৮০০০০.০০ (আশি হাজার) টাকা। তবে, এখানে কম্পিউটার বাবদই খরচের সিংহভাগ চলে গেছে। বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে এমনিতেই যেকোন বাসায় কম্পিউটার থাকা প্রয়োজন। এটি জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশের মত নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে।

তাই, আপনি যদি কম্পিউটারের খরচ বাদ দেন, তাহলে আপনার টোটাল খরচের পরিমান দাড়াচ্ছে মাত্র ৩৫০০০.০০ (পয়ত্রিশ হাজার) টাকা। আর দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ বাবদ ধরুন আরোও ৫০০০.০০ (পাঁচ হাজার)। আর আনুসঙ্গিক খরচ ১০০০০.০০ (দশ হাজার)। এই সর্বমোট গিয়ে দাড়ালো ৪০০০০.০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা।

আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। ধৈর্য সহকারে এত লম্বা আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য। কোন অভিমত থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!