Last updated on April 21st, 2024 at 03:16 pm

কটন কাপড় চেনার উপায় – কথাটি সহজ শুনালেও বাস্তবতা কিন্তু অনেকটা কঠিন। কাপড়ের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। হরেক রকমের এত সব কাপড়েরর মাঝে আপনার নির্বাচিত কাপড়টি সত্যিকার অর্থে কোন ধরণের – তা উপস্থিত সময়ে নির্নয় করা কঠিন।

ধরে নেই, আপনি ঘর থেকে মার্কেটের উদ্দেশ্যে বের হলেন পছন্দের কাপড়টি কেনার জন্য। অনেক খুজাখুজির পর সেটি পেয়েও গেলেন। তারপর কাপড় বিক্রেতাকে প্রশ্ন করলেন, ভাই এটি কি ধরণের কাপড় বা এই কাপড়ের নাম কি?

দোকানদার বললেন, পোশাকটি কটন কাপড় দিয়ে তৈরি – কথার কথা। তারপর? আপনি কি তখন তখনই বিক্রেতার কথা অনুযায়ি আশ্বস্থ হয়ে যাবেন নাকি নিজে একটু পরীক্ষা করে কাপড়টি চেনার চেষ্টা করবেন?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তখন যে কোন কাস্টোমার কাপড়টি হাতে নিয়ে বিভিন্ন অংশ দেখে বুঝার চেষ্টা করে। আসলেই এটি বিক্রেতার কথামত সুঁতি কাপড় কিনা।

বাস্তবতা হল, কাপড় সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোন ধারনা না থাকলে সেই সময় কাপড়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারা কিছুট হলেও কষ্ট সাধ্য। একটু কনফিউজিং ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। যিনি সচারাচর দু’ এক ধরণের কাপড় পরে অভ্যস্ত, তার পক্ষেতো রীতিমত কঠিন ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

আপনার কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে ক্রয়কৃত পোষাকটি নিয়ে আপনার সন্দেহ থাকতেই পারে। সেই সন্দেহ দুর করতে কটন কাপড় চেনার উপায় নিয়ে কথা বলার জন্য আজ চলে এলাম আপনাদের মাঝে ।

তবে, কটন কাপড় চেনার জন্য প্রথমে কটন কাপড় সম্পর্কে আপনার প্রাথমিক ধারণা নেয়া প্রয়োজন। এটি নিয়ে পৃথক এক পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সজন্য লিংকে ক্লিক সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

তাহলে চলুন শুরু করা যাক মূল আলোচনা।

কটন কাপড় চেনার উপায়: কিছু টিপস

বাজারে প্রচলিত কাপড়সমূহের মধ্যে কটন কাপড় বহুল ব্যবহৃত এক ফেব্রিকস। বিশেষ করে গ্রীষ্ম প্রধান দেশে বা গরম মৌসুমে এর ব্যবহার আধিক্য লক্ষ করার মত। কাপড়টির এমন অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তার জন্য অসাধু ব্যবসায়ি প্রতারণার সুযোগ খুঁজে। অন্য ধরণের কাপড় বা মিক্সড কটনকে পিউর কটন বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

এজন্য আপনাকে কৌশলী হয়ে কাপড়টি বুঝার চেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়ে নিচে কিছু ট্রিকস আর টিপস উল্লেখ করা হলো।

কটন কাপড় চেনার উপায়

সুখরব হলো, কাপড় চেনাটা আসলে তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়। খুবই সহজ একটি ব্যাপার। একটু চেষ্টা করে কিছু কৌশল রপ্ত করলেই হয়।

 

সুঁতি কাপড় প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদজাত উৎস হতে তৈরি। যাকে আমরা তুলা বৃক্ষ নামে সকলেই চিনি। এই তুলার আঁশ বা ফাইবার থেকেই বিভিন্ন রকমের টেক্সটাইল প্রযুক্তি যেমন স্পিনিং, নিটিং, উইভিং, ডাইং এবং সর্বশেষ প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কটন কাপড় হিসাবে বাজারজাত করা হয়।

উপরে সুঁতি কাপড়ের উপর যে পোষ্টটি দেখে আসার অনুরোধ করা হয়েছে সেখানে  এই কাপড়ের কিছু বৈশিষ্ট উল্লেখ করা আছে। যা জানা থাকলে এটি চেনা আপনার জন্য সহজ হবে। এর ফলে, কাপড় কেনার সময় এই কাপড়ের বৈশিষ্টগুলি মিলিয়ে দেখা যাবে।

এরপরেও, নিচে এই কাপড়ের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি –

  • কটন কাপড় তুলার আঁশ নামক ফাইবার দিয়ে তৈরি, তাই এটি নরম প্রকৃতির হয় এবং পরিধান করে আরামদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
  • কটন কাপড় পানি শোষন করতে পারে।
  • শুকাতে তুলনামুলকভাবে কিছুটা বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়।
  • পানিতে ধুয়ার সময় কুঁচকে যায়।
  • দীর্ঘ সময় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কটন কাপড়ের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
  • কটন কাপড় টেকসই হয়।
  • এটি পরিধানের সময় বাতাস শরীরের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। ফলে, গ্রীষ্মকালে বেশীরভাগ মানুষই কটন কাপড় ব্যবহার করে থাকে।

তবে, বাস্তবতা হলো, বাজারে প্রচলিত পিওর কটন বা ১০০% কটন কাপড় চেনার উপায় হিসাবে শুধু উপরের বৈশিষ্টগুলি মিলানোই যথেষ্ট নয়।

বিক্রেতা তার বিক্রির স্বার্থে একটি কাপড়কে যখন ১০০% পিওর কটন বলে ঘোষনা দিয়ে আপনার হাতে ধরিয়ে দিবে, তখন কাপড়টি শতভাগ কটন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া আপনার সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াতে পারে।

আপনার  থিওরিটিক্যাল বা তাত্ত্বিক জ্ঞানের অংশ হিসেবে এই কাপড়ের বৈশিষ্ট সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অবশ্যই আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট। তবে, থিওরিটিক্যাল জ্ঞানের সাথে সাথে প্র্যাকটিকাল বা ব্যবহারিক জ্ঞান এর প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

এই উভয় প্রকার জ্ঞান এর মাঝে সমন্বয় সাধন করে তখন পিউর কটন চিনতে আপনি ভূল করবেন না। তাই, আসুন নিচের অংশ থেকে জেনে নেই কি কি বাস্তব পরীক্ষা প্রয়োগ করে আপনি একশতভাগ নিশ্চিত হতে পারেন যে এটি পিউর কটন।

  • লাইট টেষ্ট: কাপড়টিকে আলোর সামনে ধরুন। এতে যদি কাপড়টির ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে তাহলে বুঝা যাবে কাপড়টি খুব স্বচ্ছ। আর এরকম স্বচ্ছতা কটন কাপড়ের বৈশিষ্ট নয়।
  • ইউনিফর্মিটি টেষ্ট: আমরা জানি, তুলার আঁশ এক প্রকার ফাইবার যা থেকে স্পিনিং প্রক্রিয়ায় ইয়ার্ন তৈরি করা হয়। আবার এই, ইয়ার্নগুলি বুনন বা উইভিং এর মাধ্যমে কটন কাপড় তৈরি হয়। অর্থাৎ, কটন কাপড়ে বুনন প্রক্রিয়ার একটি প্যাটার্ন অবশ্যই থাকবে যা আপনি হাত দিয়ে একটু গভীরভাবে লক্ষ করলেই বুঝতে পারবেন।
  • বার্ন টেষ্ট: কটন কাপড় চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এই বার্ন টেষ্টই হল কনাফার্মেটরি টেষ্ট বা নিশ্চিত পরীক্ষ। এই পরীক্ষা করার জন্য কাপড়টির কোন এক অংশ আপনি আগুনের শিখার উপর ধরুন। কাপড়টির কিছু অংশ বা কিছুর ফাইবার পুরে যাওয়ার পর এবারে আপনি ধোয়ার গন্ধটি অনুভব করুন। কটন কাপড়ের বেলায় ধোয়ার গন্ধ অনেকটা কাগজ পোড়ানোর মত মনে হবে এবং কাপড়ের পুরে যাওয়া অংশটি সাধারন ছাই এর মত দেখা যাবে। এর ব্যাতিক্রম কিছু পেলেই বুঝতে হবে, বিক্রেতা তার দাবীতে সত্যবাদি নয়।

উপরের তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সহজেই কটন কাপড় সনাক্ত করতে পারেন।

কটন কাপড় কেমন?

নিঃসন্দেহে এটি ভাল কাপড় – বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে, বাজারে বিভিন্ন মানের কটন কাপড় বিক্রি করা হয়। আপনি যদি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য নিম্ন মানের কাপড় কিনেন সেটি ভিন্ন কথা। কাপড়েরর মান নির্নয় বলতে এর সাথে বিভিন্ন প্যারামিটার বা বৈশিষ্ট্য যুক্ত রয়েছে।

ভিন্ন একটি পোষ্টে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

উপসংহার

বন্ধুগন – কটন কাপড় চেনার উপায় প্রসঙ্গে যে সব কথা আলোচনা করা হলো তার উপর যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করছি। পোষ্টটি ভাল লাগলে আমাদের ফেসবুক পেজ -এ লাইক দিয়ে সাথেই থাকতে পারেন। ধন্যবাদ