জুম্মার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি – বিষয়টির উপর ইসলামি চিন্তাবিদগণের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন মতামত। তাই, আমরা যারা সাধারণ মুসলমান, আমরাও এটি নিয়ে অনেক সময় সন্দেহে পড়ে যাই।

তাই, এর উপর সন্দেহ দুর করার জন্যই আজকের এই পোষ্ট। তাহলে পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত।

এই নামাজ মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট অতীব গুরত্বপূর্ণ একটি এবাদত। কোরআন ও হাদিস শরীফে এই নামাজ সম্পর্কে অনেক উৎসাহ ও ফজিলতের কথা বর্ননা করা হয়েছে। যার আলোচনা অপর এক পোষ্টে করা হয়েছে।

যাহোক, প্রথমেই চলুন জেনে নেওয়া যাক জুম্মার নামাজ সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা।

জুম্মার নামাজ কি?

সালাতুল জুম্মাহ্ বা জুম্মার নামাজ সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবার মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে হয়। সপ্তাহের অন্যান্য দিনে দুপুর বেলায় যে জোহর নামাজ আদায় করা হয় সালাতুল জুম্মা তারই স্থলাভিষিক্ত।

এই নামাজকে সাপ্তাহিক ঈদের নামাজ বলা হয়েছে। তাই, নামাজের পূর্বে খুব ভালো করে গুসল সেরে পরিস্কার ও তুলনামুলক ভালো জামা পরিধান করে খসবু লাগিয়ে মসজিদের দিকে ধাবিত হতে হয়। এই নামাজের আযান সাধারণত: জোহর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পরই দেওয়া হয়। তাই, আযানের পরই যত তারাতারি মসজিদে গমন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

কোরআন হাদিসের তথ্য মোতাবেক এই নামাজের যথেষ্ট গুরত্ব ও ফজিলত রয়েছে।

সাধারণত: কোন এলাকা বা মহল্লার মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট এটি একটি বড় মাপের জমায়েত বলা যেতে পারে। তাই, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের ফরজ নামাজের জামাতে যে পরিমান মুসলমান অংশগ্রহণ, জুম্মার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা তুলনামুলক অনেক বেশী হয়ে।

জুম্মার নামাজে দু’টি আযান দেওয়া হয়। একটি, জোহরের ওয়াক্ত শুরুর সাথে সাথে অর্থাৎ সুর্য যখন হেলে যাওয়া শুরু করে। আর দ্বিতীয় আযান দেওয়া হয় ঈমাম যখন আরবিতে খুৎবা শুরু করেন তার ঠিক আগে।

খুৎবার পর জুম্মার ফরজ নামাজ শুরু হয়।

জুম্মার নামাজ কয় রাকাত?

আলোচনার শুরুর প্রথমেই মাযহাব নিয়ে কথা বলা দরকার। ইসলামে স্বীকৃত মাযহাবের সংখ্যা চারটি। যথা- হানাফি, হাম্বলী, শাফী ও মালেকি। মুসলমান হিসাবে আমাদের কোন না কোন মাযহাব অনুসরণ করে চলতে হয়।

পাশাপাশি, বিষয়টি এমন নয় যে, সময়ে সময়ে তা পরিবর্তন যোগ্য। মানে হলো – কিছু দিন এক মাযহাব নিয়ে চলার পর তা পরিবর্তন করে অপর মাযহাব ধরা। এটির অনুমতি নাই।

স্বীকৃত এই চার মাযহাবের মধ্যে যে কোন একটি অনুসরণ করে শেষ পর্যন্ত আপনাকে চলতে হবে। এটিই নিয়ম। এই চার মাযহাবগুলোর মধ্যে সঠিকতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। বরং প্রশ্ন হলো আপনার পছন্দ। কোন মাযহাব আপনি গ্রহণ করে চলবেন, ইহা গুরত্বপূর্ণ।

এক মাযহাবের অনুসারি অপর মাযহাবকে কখনো ছোট করে দেখার সুযোগ নেই; বা সমালোচনারও কোন অবকাস নেই।

জুম্মার নামাজ কয় প্রকার বিষয়টি আলোচনার পূর্বে মাযহাব এতগুলো কথা বলার উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো, এক এক মাযহাবে প্রশ্নটির উত্তর এক এক রকম। যে কারণে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই উদয় হয়।

যেহেতু, এই পাক-ভারত উপমহাদেশের বেশীর ভাগ মুসলমান হানাফি মাযহাব এর অনুসারি, তাই চলুন হানাফি মাযহাবে থেকে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

জুম্মার নামাজ কয় প্রকার ও কি কি?

এবারে, হাদিসের তথ্যের আলোকে কথা বলব পোষ্টের মুল প্রসঙ্গে নিয়ে। এখানে হানাফি মাযহাব অনুসারীদের জন্য জুম্মার নামাজ কয় প্রকার ও কি কি – তা বলা হচ্ছে।

জুম্মার নামাজ ১৪ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত, তারপর দুই রাকাত ফরজ। ফরজের পর আবার চার রাকাত সুন্নত এবং এর পর দুই রাকাত নফল।

জুম্মাহ্ নামাজের ফরজের আগে যে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা হয় তার নাম ক্বাবলাল জুম্মা। অপরদিকে, ফরজের পর যে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয় তাকে বা’য়দাল জুম্মা বলা হয়।

আরোও দেখুন- জুম্মার নামাজ পড়ার নিয়ম।

উপসংহার

এই নামাজ বাড়িতে অবস্থানরত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আদায় করা বাধ্যতামুলক। তবে, যারা সফর হালতে থাকেন, তাদের জন্য মাসয়ালা ভিন্ন। এই নামাজ আদায়ের মাঝে পবিত্র হাদিস শরীফে অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

জুম্মার নামাজের ফজিলত এর উপর অন্য একটি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেটি দেখে আসতে পারেন।

প্রিয় বন্ধুরা – অদ্যকার পোষ্টে যে সব তথ্য উপস্থাপন করা হলো তার উপর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করছি। দেখা হবে আবার নতুন কোন আলোচনায়।

মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হোন – আমিন।

আরোও দেখুন- নামাজ পড়ার নিয়ম