Last updated on May 9th, 2023 at 01:12 pm

খাদ্য কত প্রকার হতে পারে- বিষয়টির উপর আমাদের কিছুটা হলেও ধারণা আছে। আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাদ্য খেয়েই চলে আসছি।

আমাদের মৌলিক চাহিদার একটি খাদ্য। মানুষ ও প্রাণির জীবন ধারণের জন্য খাদ্য খেতে হয়। খাদ্য ছাড়া আমরা বেচে থাকতে পারি না। বেচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজনিয়তা অপরিসীম। এমন গুরত্বপূর্ণ জিনিস সম্পর্কে আমাদের একটি প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্য এই আর্টিকেলে খাদ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।

এই পোষ্টে খাদ্য কাকে বলে, খাদ্যের উৎস কি, খাদ্য কত প্রকার ও কি কি – ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন শুরু করি।

খাদ্য কাকে বলে?

খাদ্য এমন এক ধরণে পদার্থ যা খেয়ে মানুষ ও প্রাণি বেচে থাকে। খাদ্য দেহে পুষ্টি ও শক্তি যোগায়। খাদ্য প্রধানত: ‍উদ্ভিদ এবং প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া, কিছু ফাঙ্গাসও খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এই খাদ্য গ্রহণের পর আমরা বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি পেয়ে থাকি, যেমন- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবন ইত্যাদি। আমরা যা খেয়ে থাকি তা প্রথমে পরিপাকতন্ত্রে হজম হয়। তারপর এর সার অংশ বা পুষ্টি অন্ত্রের মাধ্যমে শোষন হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। অত:পর রক্তের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে সরবরাহ করা হয়।

কোষে বিপাকীয় কার্য সম্পাদনের পর শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি উৎপাদনের ফলেই আমরা কাজ কর্ম করে খেতে পারি। দুর্বলতার সৃষ্টি হয় না। আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি বা দেহের ক্ষয়পূরণে খাদ্য এভাবেই ভূমিকা পালন করে।

বায়োলোজির ভাষায় যেহেতু মানুষকেও প্রাণির মধ্যে গণ্য। খাদ্যাভ্যাসের উপর ভিত্তি করে আমরা সর্বভূক প্রাণি। কিছু প্রাণি এমন যার শুধু ঘাস, লতা-পাতা জাতিয় খাদ্য খেয়েই জীবন ধারণ করতে পারে, তাদের বলা হয় তৃণভোজি। আবার কোন কোন প্রাণি শুধু মাংস জাতীয় খাদ্যকে বেছে নেয়, এরা মাংসাসি প্রাণি। আর, আমাদের খাদ্য তালিকায় যেহেতু উভয় ধরণের আইটেম থাকে, তাই আমাদের সর্বভূক বলা হয়।

কৃষি প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উৎপাদন সহজ হয়ে গিয়েছে। এক এক দেশের মানুষের সংষ্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বিভিন্ন culinary arts এবং cusine তৈরি হয়েছে। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের কারণে তা এক দেশে থেকে অপর দেশে সহজেই ছড়িয়ে পরছে।

খাদ্যের উৎস কি?

খাদ্যের প্রধান উৎস হল উদ্ভিদ এবং প্রাণি। তবে, এদের মধ্যে উদ্ভিদজাত উৎস থেকে আমরা সর্বাধিক খাদ্য পেয়ে থাকি। কিছু কিছু খাদ্য এমন আছে যাদের সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এমনকি যে সব গৃহপালিত প্রাণি পোষা হয় তাদের খাদ্যও বলতে গেলে উদ্ভিদ থেকেই তৈরি হয়। বিশ্বব্যপি cereal grain খাদ্যের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কেননা অন্যান্য উদ্ভিদজাত খাদ্যের তুলনায় এদের থেকে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। ধান, গম ও ভুট্টা থেকে সমস্ত দানাদার খাদ্যের প্রায় ৮৭% খাদ্য যোগান দেওয়া হয়। দানাদার খাদ্যের অধিকাংশই আবার প্রাণিসম্পদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

অপরদিকে প্রাণিজাত উৎসের খাদ্যের মধ্যে দুধ, ডিম ও মাংস অন্যতম। যারা পুষ্টিগুনের কারণে সারা বিশ্বে বেশ সমাদৃত।

উৎসগত ভাবেও খাদ্য কত প্রকার হতে পারে- সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা চলে আসে।

খাদ্য কত প্রকার ও কি কি?

খাদ্যের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। খাদ্য কত প্রকার ও কি কি তা নিচে উল্লেখ করা হল-

Diet food

এরা ঐসব খাদ্য বা পানিয় যেখানে চর্বি, কার্বোহাইড্রেট বা সুগার কমানোর মাধ্যমে এর রেসিপি পরিবর্তন করা হয়। এটি দেহেরে ওজন কমানো কর্মসূচির অংশ হিসাবে করা হয়। এই ধরণের খাদ্য দৈহিক ওজন হ্রাসে বা দেহের আকার পরিবর্তনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে যে সব খাদ্যে ক্যালোরি বা শক্তি বেশি থাকে তার বিকল্প হিসাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কম ক্যালোরি বিশিষ্ট খাদ্য প্রস্তুত করা হয়।

এই পরিকল্পনায় সাধারণত: ঐসব খাদ্য বেছে নেওয়া হয় যেখানে ফাইবারের পরিমান বেশি থাকে। আমরা জানি খাদ্যের ফাইবার অংশে ক্যালোরি থাকেনা বললেই চলে। এজন্য, অনেকসময় খাদ্যের ফাইবার অংশ ধরে রাখার জন্য whole grain খাদ্য নির্বাচন করা হয়।

টাটকা বা Fresh food

যেসব খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়না, তৈরির পর পরই খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় সেগুলিকে ফ্রেস ফুড বা টাটকা খাদ্য বলা হয়। যেমন, শাক-সবজি বা ফলমুল হতে পারে যা সবে মাত্র গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। মাংস হতে পারে যা তৎক্ষণাৎ গৃহপালিত প্রাণি বা পোল্ট্রি জবাইখানা থেকে নেওয়া হয়। এছাড়াও, মাছ হতে পারে যা পানি থেকে ধরে এনে সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য প্রস্তুতের জন্য রান্না করা হয়। এরাই ফ্রেস ফুড বা টাটকা খাদ্য হিসাবে পরিচিত।

হিমায়িত বা Frozen food

খাদ্য তৈরির পর খাওয়ার আগ পর্যন্ত এবং খাদ্যের কাঁচামাল রান্না করা পর্যন্ত সময় যদি আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে চান তাহলে হিমায়িত বা ফ্রিজিং পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সংরক্ষিত খাদ্যকে ফ্রোজেন ফুড বলা হয়। হিমায়িত প্রক্রিয়া খাদ্যের ভেতরগত আদ্রতাকে বরফে পরিবর্তন করার মাধ্যমে এর পচন হওয়া রোধ করে বা বিলম্বিত করে। যার ফলে অনেক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি থেমে যায়। ফুড ইন্ডাস্ট্রি গুলোয় সাধারণত: দুই ভাবে ফ্রোজেন ফুড তৈরি করা হয়-

  • মেকানিকাল ফ্রিজিং
  • cryogenic freezing

এদের মধ্যে ক্রায়োজেনিক ফ্রিজিং প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়। তবে, পারিবারিক পর্যায়ে সাধারণ রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করে ফ্রিজিং প্রক্রিয়ায় খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়।

প্রাকৃতিক খাদ্য

ইহা সাধারণত: ঐ সব খাদ্যকে বুঝায় যা খাওয়ার আগে কোনরুপ প্রক্রিয়াজাত করা হয় না। যার ফলে খাদ্যটির সমস্ত উপাদানের প্রকৃতিগত অবস্থা বিদ্যমান থাকে। এ যেন, প্রকৃতির কাছে এক ধরণের সমর্পন করা। এই জাতিয় খাদ্যে কোন প্রকার এডিটিভস যেমন, হরমোন, এন্টিবায়োটিকস, রঙিন ও সুগন্ধ সৃষ্টির কোন রাসায়নিক উপস্থিত থাকে না।

জৈব বা অরগানিক খাদ্য

অরগানিক খামার পদ্ধতির মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অরগানিক খাবার তৈরি করা হয়। এই স্ট্যান্ডার্ড এক এক দেশে এক এক রকম হয়। কিন্তু জৈব খামারের ব্যবহৃত সম্পদ বা কাঁচামাল বার বার cycle করার চেষ্টা প্রত্যেক দেশেই অনুসরণ করা হয়। এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে এবং জীব বৈচিত্রতা রক্ষা করা যায়। এই ধরণের খাদ্য প্রস্তুতের সময় বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা কীটনাশক ও সার ব্যবহারের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে থাকে। এজন্য, কোন কোন দেশে অরগানিক খাদ্য প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিশেষ ধরণে প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকত আরোপ করে এই মর্মে যে উৎপাদনকৃত খাদ্য জন স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। এতে করে বাজারজাতকরণ সহজ হয়।

মৌসুমী খাদ্য

কিছু কিছু খাদ্য বছরের সব সময় চাষ করা যায় না। বছরের কেবল নির্দিষ্ট এক মৌসুমেই তার চাষাবাদ হয়। ফলে সার বছর ধরে তা বাজারে পাওয়া যায় না। এ ধরণের খাদ্যকে মৌসুমি খাদ্য বলে। যদি সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাহলে সুনির্দিষ্ট মৌসুমে এই ধরণের খাদ্যের যেমন গুনগত মান ও স্বাদ পাওয়া যায় তা বছরের অন্য সময়ে পাওয়া যায় না।

স্বাস্থ্যকর বা Healthy food

সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য যা স্বাস্থ্যগত উন্নতি সাধনের জন্য খাওয়ার জন্য বলা হয় তাকে healthy food বলা হয়। এ ধরণের খাদ্যে দেহের জন্য প্রয়োজনিয় পুষ্টিসমুহ বিদ্যমান থাকে। এই পুষ্টি গুলো macronutrients ও micronutrients নিয়ে গঠিত। এই খাদ্যের উদাহারণ হচ্ছে ফলমুল, শাক-সবজি, whole grain বা সম্পূর্ণ শষ্যদানা দিয়ে তৈরি খাদ্য ইত্যাদি। এদের বৈশিষ্ট হল, এখানে নির্দেশিত মাত্রায় ফাইবারের উপস্থিতি থাকে এবং আমাদের দৈনিক ক্যালোরি চাহিদা অনুযায়ি পরিমিত মাত্রায় ক্যালোরি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং মিষ্টি পানিয় সামগ্রি বর্জন করা হয়। সাধারণত: উদ্ভিদ এবং প্রাণিজাত উৎস হতে স্বাস্থ্যপ্রদ খাদ্য তৈরি করা হয়। আপনি চাইলে এর সাথে কিছু ভিটামিন যেম বি-১২ যোগ করে নিতে পারেন।

আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দু’টি কাজ অবশ্য করণিয়- তা হল, দৈনিক শরীর চর্চায় অংশ নেওয়া এবং দ্বিতীয়ত: স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া। এই দুই এর সমন্বয় সাধনকেই healthy lifestyle বলা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ধারণ পদ্ধতি মেনে চলার মাধ্যমে আপনি অনেক জটিল জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন। এই জটিল রোগ গুলো স্বাভাবিকভাবে চল্লিশোর্ধ বয়স থেকে শুরু হয়। যেমন, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি।

খাদ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাঁচ নির্দেশনা

  • স্বাভাবিক দৈহিক ওজন ধরে রাখার জন্য খাদ্যের সাথে দৈনিক ঐ পরিমান ক্যালোরি গ্রহন করা যে পরিমান ক্যালোরি দৈনিক খরচ করা যায়। ক্যালোরি গ্রহন এবং ক্যালোরি বার্ন যেন সমান পর্যায়ে থাকে।
  • চর্বি জাতিয় খাদ্য যথাসম্ভব কমিয়ে আনা যাতে মোট ক্যালোরির ৩০% এর বেশি চর্বির মাধ্যমে না আসে। সম্পৃক্ত ফ্যাটের পরিবর্তে অসম্পৃক্ত ফ্যাট প্রাধান্য দিতে হবে। Trans fat পরিহার করা।
  • দৈনিক কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম ফলমুল এবং শাক সবজি খাওয়। গোল আলু, মিষ্টি আলু, cassava এবং অন্যান্য শ্বেতসার জাতিয় খাদ্য যা উদ্ভিদের মুল থেকে আসে তা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের মধ্যে লিগিউমস, whole grain বা পুরো শষ্য দানা এবং nuts জাতিয় খাদ্য অন্তর্ভুক্ত।
  • খাদ্যের সাথে Simple sugar খাওয়া যেন মোট ক্যালোরি হিসাবের ১০% এর বেশি না হয়। এটিকে ৫% এর মধ্যে রাখা গেলে আরোও ভাল। এজন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • খাবারে সকল উৎস হতে লবন বা সোডিয়াম গ্রহন যথা সম্ভব সীমিত রাখুন এবং লবন যাতে আয়োডিন সমৃদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করুন। দৈনিক ৫ গ্রামের চেয়ে কম লবন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে।

পরিশেষে, বন্ধুরা! খাদ্য কত প্রকার ও কি কি – বিষয়ে পোষ্টটি পড়ে কেমন লাগল, কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

Reference:

  1. Food. (2021). Retrieved 23 February 2021, from https://en.wikipedia.org/wiki/Food#Food_sources