হার্ট অ্যাটাক খুব মারাত্মক এক ধরণের রোগ। সারা বিশ্বে প্রতি বছর বহুলোক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যবরণ করে। তথ্য সুত্রে জানা যায়, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর কম পক্ষে ১০ লক্ষ অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাটাকের স্বীকার হয়।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। জন সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসাবে বাঙালিদের জন্য বাংলা ভাষায় এর উপর এই আর্টিকেল লেখার মনস্থির করলাম।

এই পোস্টে, হার্ট অ্যাটাক কি, এটি কেন হয়, এর লক্ষণসমুহ কি কি, কিভাবে ডায়াগনোসিস করতে হয়, এর চিকিৎসা ও প্রতিকার বা প্রতিরোধ পদ্ধতি কি হতে পারে – এসব বিষয়েই কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।

এই বিষয়গুলি আরোও সুন্দরভাবে বুঝার জন্য হার্ট কিভাবে কাজ করে – এ সম্পর্কে  বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন।

চলুন- শুরু করি।

হার্ট অ্যাটাক কি?

যখন কোন কিছু হার্টে রক্ত সরবরাহ করতে বাধা প্রদান করে তখন হার্ট তার প্রয়োজনিয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পাওয়া থেকে বিরত থাকে। ফলে, হার্ট তার কাংখিত কাজ সম্পাদন করতে পারে না। তখন, এই অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর বা অ্যাটাক বলে।

এই রোগের অপর নাম Myocardial Infarction বা (MI) বলা হয়। Myo অর্থ মাসল বা মাংস পেশি, cardial অর্থ হৃদপিন্ড এবং infarction হল রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে মৃত টিস্যু বা কোষ। যখন হার্টে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে হার্ট টিস্যু বা কোষ সমুহ মারা যেতে থাকে তখন ক্রমান্বয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ কি কি?

আপনার শরীরের এক বা একাধিক করোনারি আর্টারি যখন ব্লক হয়ে যায় তখন হার্ট ফেইলিউর বা অ্যাটাক হতে পারে। হাই কোলেস্টেরল এর কারণে দির্ঘদিন ধরে আর্টারির প্রাচিরের ভিতর চর্বি জমা হতে হতে কোলেস্টেরল প্লেক তৈরি হয় যা করোনারি আর্টারি সহ দেহের অন্যান্য আর্টারিসমুহকে সরু করে ফেলে। এই অবস্থাকে বল হয় atherosclerosis. হার্টে রক্ত সরবরাহের কাজে নিয়োজিত করোনারি আর্টারি যখন আক্রান্ত হয়ে সরু হতে থাকে তখন এটিকে বলা হয় করোনারি হার্ট রোগ যা এক সময় হার্ট অ্যাটাকের পরিণতি বয়ে আনে।

হার্ট অ্যাটাকের সময় করোনারি আর্টারির ভিতরে তৈরি হওয়া cholesterol plaque ফেটে যায় বা ভেঙ্গে যেতে পারে। ফলে plaque এ উপস্থিত চর্বিগুলোর সাথে অন্যান্য বর্জ পদার্থ যা দেহের কোষ থেকে উৎপন্ন হয় তা রক্ত স্রোতে মিশে যায়। cholesterol plaque ভেঙ্গে যাওয়ার স্থানে অনেক সময় রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। যদি জমাট রক্তের আকার বড় হয়ে যায়, তখন করোনারি আর্টারির ভিতর দিয়ে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে ব্লক হয়ে যায়। যখন করোনারি আর্টারি সম্পূর্ণরুপে ব্লক হয়ে যায়, তখন হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, হার্ট প্রয়োজনিয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। আর তখনই হার্ট ফেইলিউর হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়।

এই করোনারি আর্টারি দুই ভাবে ব্লক হতে পারে-

  • আংশিক ব্লক: এই ক্ষেত্রে non-ST elevation myocardial infarction (STEMI) এর ঘটনা ঘটে।
  • সম্পূর্ণ ব্লক: সম্পূর্ণ ব্লক হলে বুঝা যাবে যে, আপনার ST elevation myocardial infarction (STEMI) হয়েছে।

এই অবস্থার ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা নির্ভর করে কোন পর্যায়ে ব্লক হয়েছে, আংশিক না সম্পূর্ণ।

হার্ট অ্যাটাকের অপর কারণটি হল, করোনারি আর্টারির ভিতর spasm বা এক প্রকারের ঝাঁকুনি তৈরি হওয়া যার ফলে হার্ট মাংস পেশির একাংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ধুমপান এবং অবৈধ ড্রাগস সেবনে এ অবস্থা তৈরি হতে পারে।

এছাড়াও, সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে যে, Covid-19 এ আক্রান্ত ব্যাক্তির হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটছে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কি কি?

হার্ট অ্যাটাকে যারা অক্রান্ত হয় তাদের সকলের লক্ষণ এক রকম হয় না। ব্যক্তি ভেদে এর তীব্রতা বা লক্ষণগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। কোন কোন মানুষের ক্ষেত্রে বুকে মৃদু ব্যথা মনে হতে পারে। কারোও ক্ষেত্রে তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি হতে পারে। আবার কোন মানুষের লক্ষণ বাহ্যিকভাবে প্রকাশ নাও পেতে পারে।

কিছু কিছু মানুষের প্রথম লক্ষণেই হঠাৎ করে কার্ডিয়াক এরেস্ট বা হার্ট ফেইলিউর হয়ে যেতে পারে। আবার কারোও ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা হিসাবে কিছু লক্ষণ আগে থেকেই প্রকাশ পেতে পারে। যা কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন আগে থেকেও বুঝা যেতে পারে। সর্বপ্রথম লক্ষণের যে বার্তাটি পাওয়া যায় তা হল, বুকে ব্যাথা অনুভূত হওয়া যা দৈহিক পরিশ্রমে বেড়ে যায় এবং বিশ্রামের সময় পুনরায় কমে যায়। এই অবস্থাকে angina বলা হয়। Angina হওয়ার কারণ হচ্ছে সাময়িকভাবে হার্টে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে।

এছাড়াও, নিচে হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণ সমুহ উল্লেখ করা হল:

  • বুকে চাপ অনুভব হওয়া, অস্বস্তিবোধ করা, এবং বুকে, ব্যাথা অনুভব হওয়া;
  • অস্বস্তিবোধ বা ব্যাথা শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন কাঁধ ও বাহু যুগলে ছড়িয়ে পরা;
  • Indigestion ও ক্ষুধামন্দা;
  • শরীর ঘেমে যাওয়া, বমি হওয়া;
  • অবসাদগ্রস্থতা, ক্লান্ত মনে হওয়া, বিষণ্ণতা;
  • শ্বাসকষ্ট তৈরি হওয়া বা শ্বাস ছোট হয়ে যাওয়া;

হার্ট অ্যাটাক হলে করনীয় কি?

হার্ট অ্যাটাক হলে খুব দ্রুত আপনাকে কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে। তার পর, আর্টারি থেকে ব্লক সরিয়ে বা কমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ প্রকাশের দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই অঘটন ঘটে যেতে পারে। কারণ বেশি সময় নিলে হার্টের অধিক ক্ষতি সাধনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

কি কি বিষয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়?

কিছু সুনির্দিষ্ট ফ্যাক্টর বা বিষয় এমন আছে যা আর্টারির ভিতরের প্রাচিরে অনাকাংখিত চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে যার ফলে আপনার সমস্ত শরীরের আর্টারিগুলো সরু হয়ে যায়। আপনি এমন অনেক ফ্যাক্টর পরিহার বা কমিয়ে আনতে পারেন যাতে আপনার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

হার্ট অ্যাটাকের রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো নিম্নরুপ:

  • বয়স: পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর বা তদুর্ধ এবং মহিলাদের বেলায় ৫৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সের মানুষের অপেক্ষাকৃত কম বয়সি মানুষের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ধুমপান: যারা ধুমপান করে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে পরোক্ষভাবে ধুমপায়িদের ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়া গ্রহন করে উভয়ের ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
  • হাই ব্লাড প্রেসার: সময়ের পথ পরিক্রমায়, উচ্চ রক্তচাপ করোনারি আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে যা হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহের কাজে নিয়োজিত থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সাথে যদি হাই কোলেস্টেরল, ওবেসিটি এবং ডায়াবেটিস থাকে তাহলে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক পরিমান বেড়ে যায়।
  • রক্তে হাই কোলেস্টেরল বা ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল: বেশি পরিমানে খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা এলডিএল কোলেস্টেরল এর উপস্থিতির ফলে আপনার শরীরের আর্টারিসমুহ সরু হয়ে যায়। ট্রাই গ্লিসারাইড যা রক্তে পাওয়া যায় এমন এক ধরণের চর্বি যদি রক্তে উচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান থাকে তাহলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। তবে, ভাল কোলেস্টেরল মানে হল বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরল আপনার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
  • ওবেসিটি: এর সাথে রক্তে হাই কোলেস্টেরল লেভেল, হাই ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল, হাই ব্লাড প্রেসার এবং ডায়াবেটিসের যোগসুত্র রয়েছে। কাজেই, আপনার যদি ওবেসিটি অর্থাৎ দৈহিক ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকে, তাহলে এক সময়ে তা হার্ট ফেইলিউর এর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
  • ডায়াবেটিস: যদি আপনার শরীরে প্রয়োজনিয় পরিমানে ইনসুলিন না তৈরি হয় বা আপনার শরীরে যদি ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে যা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স নামে পরিচিত, সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি। এই ডায়াবেটিস হার্ট হার্ট ফেইলিউর বা অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
  • মেটাবলিক সিনড্রোম: এই ধরণের লক্ষণ প্রকাশ পায় যদি আপনার ওবেসিটি, হাই ব্লাড প্রেসার বা রক্তে সুগারের পরিমান বেশি থাকে। এর ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
  • হার্ট অ্যাটাকের পারিবারিক ইতিহাস: আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা পরিবারের নিকট আত্মিয়দের মধ্যে কেউ যদি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আপনিও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। আত্মিয় স্বজনদের মধ্যে পুরুষ যদি ৫৫ বছর বা তার কম বয়সে এবং মহিলাদের কেউ যদি ৬৫ বা তার কম বয়সে আক্রান্ত হয় তাহলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
  • শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: আপনি অধিকাংশ সময় শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে বা দৈহিক পরিশ্রম হয় এমন কাজে অংশগ্রহন না করে জীবন অতিবাহিত করেন, তাহলে আপনার হার্ট হার্ট ফেইলিউর হওয়ার ঝুঁকি বেশি হবে। এজন্য নিয়মিত শরীর চর্চায় অংশ নেওয়া প্রয়োজন।
  • স্ট্রেস বা চাপ: কোন প্রকার চাপ বা টেনশনের মধ্যে চললে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি হয়।
  • অবৈধ ঔষধ গ্রহন করলে: উত্তেজক জাতিয় ঔষধ যেমন কোকেইন বা amphetamines ধরণের ঔষধ গ্রহন করলে আপনার করোনারি আর্টারিতে ঝাঁকুনি তৈরি হতে পারে যা অনেক সময় হার্ট ফেইলিউর হওয়ার কারণ হয়।
  • Preeclampsia এর কোন ইতিহাস থাকলে: এই রোগের অবস্থা বিদ্যমান থাকলে শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটি সাধারণত: মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে দেখা দিতে পারে। এর ফলে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে সারা জীবনের জন্য আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
  • Auto immune condition: এ ধরণের অবস্থা যা অনেক সময় rheumatoid arthritis বা lupus এর কারণে তৈরি হতে পারে। এর ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

হার্ট অ্যাটাক কিভাবে ডায়াগনোসিস করা হয়?

হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার প্রথমে আপনার লক্ষণগুলো জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং কিছু পরীক্ষাদি সম্পন্ন করার কথা বলতে পারে।

যে সব টেস্টের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক নির্ণয় করা হয় তা নিম্নরুপ:

  • ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি: এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার হার্ট মাসলের কোথায় কতটুকু ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়া, আপনি এই পরীক্ষার সাহায্যে হৃদস্পন্দনও মনিটর করতে পারেন।
  • রক্ত পরীক্ষা: আপনার রক্তে কার্ডিয়াক এনজাইমের বিভিন্ন মাত্রার উপস্থিতি আপনার হার্ট মাসল ক্ষতি হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে। এই এনজাইমগুলো সাধারণত: হার্ট কোষের ভিতরে থাকে। হার্ট মাসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সময় যখন এই কোষ সমুহে ইনজুরি হয় তখন কোষের ভিতরকার এনজাইমসহ অন্যান পদার্থ রক্ত স্রোতে মিশে যায়। রক্তে উপস্থিত এই এনজাইম কি পরিমান এর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার বুঝে নেয় যে, হার্ট অ্যাটাকের তীব্রতা কখন ছিল এবং হার্ট অ্যাটাক কখন শুরু হয়েছিল। এই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে troponin level সম্পর্কেও জানা যায়। Troponin হল এক প্রকার প্রোটিন যা হার্ট কোষের ভিতরে থাকে। এই হার্ট কোষে ইনজুরির কারণে ট্রোপোনিন কোষ থেকে বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়।
  • ইকোকার্ডিওগ্রাফি: ইহা এক প্রকার ইমেজিং টেষ্ট। এটি হার্ট অ্যাটাকের সময় এবং হার্ট অ্যাটাক পরবর্তি সময়ে করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায়, আপনার হার্টের পাম্পিং অবস্থা কেমন এবং হার্টের কোন অংশ পাম্পিং কাজ থেকে বিরত রয়েছে কিনা। এছাড়াও, এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, হার্ট অ্যাটাকের সময় হার্টের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশ যেমন হার্ট ভাল্ব বা হার্টের সেপ্টামে ক্ষতি সাধন হয়েছে কিনা।
  • কার্ডিয়াক কেথেটারাইজেশন: ঔষধের মাধ্যমে যদি ভাল ফলাফল না পাওয়া যায় তাহলে হার্ট অ্যাটাকের এক ঘন্টার ভিতর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর সাহায্যে, আর্টারির যে অংশে ব্লক হয়েছে তার একটি ছবি পাওয়া যায়। যা ডাক্তারের চিকিৎসার করণিয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করে।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা কি?

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায়। এমনকি এম্বুলেন্সে থাকা বা জরুরী চিকিৎসা কক্ষ থেকেই এর চিকিৎসা শুরু হয়।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় কি কি ঔষধ ব্যবহার করা হয়?

এই চিকিৎসায় ঔষধ থেরাপির উদ্দেশ্য হল, করোনরি আর্টারির ভিতর যদি রক্ত জামাট থেকে থাকে তা দুর করা বা সারিয়ে ফেলা। রক্তের অনুচক্রিকাকে প্লেক এর নিকট জমা হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ischemia অবস্থাকে কমিয়ে আনা।

যাহোক, হার্ট অ্যাটাকের ১ থেকে ২ ঘন্টার ভিতর নিচেরে ঔষধগুলি গ্রহন করুন যাতে হার্টের অতিরিক্ত ক্ষতি রোধ করা যায়।

  • এসপিরিন: যা রক্ত জমাটে বাধা প্রদান করে।
  • এন্টি প্লেটলেট ড্রাগস যেমন clopidogrel, ticagrelor, prasugrel ইত্যাদি ঔষধগুলিও রক্ত জমাট প্রতিহত করতে কাজ করে।
  • থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি: করোনারি আর্টারির ভিতর বিদ্যমান জমাট রক্ত ভেঙ্গে ফেলে।
  • উপরের ঔষধুগলি মিলিয়ে ব্যবহার।

এছাড়া, অন্যান্য ঔষধ হার্ট অ্যাটাকের সময় বা পরে ব্যবহার করা হয় যাতে হার্ট সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।  যেমন, আর্টারির ভিতরের আয়তন প্রসারিত করে এমন ঔষধ, ব্যাথানাশক ইত্যাদি।

হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি আছে কি?

  • কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন
  • বাইপাস সার্জারি

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় কি?

যাদের প্রথমবার হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয়বার যাতে না হয়- এর জন্য প্রতিরোধ মুলক পদক্ষেপ মেনে চলা উচিত। তাই, দরকার হল, আপনার হার্ট কিভাবে ভাল ও সুস্থ থাকে সেই কর্ম পদ্ধতি অনুযায়ি জীবন অতিবাহিত করা। এর ফলে পরবর্তি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বা ঝুঁকি কমে যাবে।

প্রথমবার অ্যাটাকের পর নিচের কাজগুলো গুরত্বের সাথে করতে থাকুন-

  • চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মতে নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন।
  • স্বাস্থ্য সম্মত লাইফ-স্টাইল অনুসরণ করুন।
  • নির্দিষ্ট বিরতির পর নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

হার্ট অ্যাটাকের পর কেন ঔষধ খাওয়া জরুরি?

আপনাকে সুনির্দিষ্ট কিছু ঔষধ খেতে হবে হার্ট  ফেইলিউর এর পর যাতে নিম্নোক্তভাবে উপকৃত হওয়া যায়:

  • রক্ত জমাট রোধ করার জন্য।
  • আপনার হার্ট যাতে অধিক সুস্থতার সাথে কাজ করতে পারে।
  • কোলেস্টেরল লেভেল কমানোর সাহায্যে plaque তৈরিতে বাধা দান করা।

এছাড়া, আপনি হার্ট বিটে সমস্য থাকলে, বা রক্ত চাপ কমানোর জন্য বা বুক ব্যাথার জন্য ঔষধ খেতে পারেন। এজন্য, আপনি ঔষধগুলোর নাম জেনে রাখুন, কোন ঔষধ কোন সমস্যার জন্য এবং কোন সময়ে খেতে হয় তাও শিখে নিন। ঔষধগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন এবং প্রতিবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তা সঙ্গে রাখুন যাতে চিকিৎসক জানতে চাইলে দেখানো যায়। যদি এ বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে ডাক্তার বা নার্সের সাথে আলাপ করুন।

এবারে, হার্ট ফেইলিউর প্রতিরোধের জন্য অপর কাজটি হল আপনাকে লাইফ-স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। যাতে দ্বিতীয়বার এই অবস্থা তৈরি না হয় সেজন্য। এ বিষয়ে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে নিম্নলিখিত উপায়ে লাইফ-স্টাইল পরিবর্তন করা যেতে পারে-

Reference:

  1. Newman, T. (2021). Heart attack: Symptoms, treatment, and causes. Retrieved 21 February 2021, from https://www.medicalnewstoday.com/articles/151444
  2. Staff, M., 2021. Heart attack – Symptoms and causes. [online] Mayo Clinic. Available at: <https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/heart-attack/symptoms-causes/syc-20373106> [Accessed 21 February 2021].
  3. Ba and Social Distancing, Q., 2021. Heart Attack. [online] WebMD. Available at: <https://www.webmd.com/heart-disease/guide/heart-disease-heart-attacks#1> [Accessed 21 February 2021].