Last updated on May 14th, 2023 at 05:50 am

টেক্সটাইল জগতে প্রিন্টিং খুব পরিচিত একটি নাম। প্রিন্টিং কাকে বলে, প্রিন্টিং কত প্রকার ও কি কি – বিষয়টি জানার আগ্রহ আমাদের সবারই কিছু না কিছু রয়েছে। কেননা, আমরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে যত ধরণের কাপড় ব্যবহার করি প্রায় সবক্ষেত্রেই টেক্সটাইল প্রিন্টিং ছোঁয়া থাকে।

তবে, প্রিন্টিং প্রক্রিয়াটি আরোও সুন্দরভাবে বুঝার জন্য আপনার ফেব্রিক সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভাল হয়। এছাড়াও, কাপড় বা ফেব্রিক তৈরির বিভিন্ন ধাপের মধ্যে  প্রিন্টিং এর আগের ধাপ হল হল ডাইং। তাই ডাইং সম্পর্কেও আপনি ধারণা নিতে পারেন।

যাহোক, চলুন তাহলে প্রিন্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই- প্রিন্টিং কাকে বলে, প্রিন্টিং কত প্রকার ও কি কি, প্রিন্টিং এর ধাপসমুহ কি, প্রিন্টিং কিভাবে কাজ করে – ইত্যাদি বিষয়।

টেক্সটাইল প্রিন্টিং কি, প্রিন্টিং কাকে বলে?

প্রিন্টিং শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে যার অর্থ হল “pressing” বা চাপ দেওয়া। ইহা একটি পদ্ধতিকে বুঝায় যা চাপ দেওয়ার প্রক্রিয়া ব্যবহার করে।

টেক্সটাইল প্রিন্টিং হল কোন ফেব্রিকের বিভিন্ন স্থান স্থানীয়ভাবে রঙের বিভিন্ন প্যাটার্ন বা ডিজাইন অনুযায়ি রঙিন করার প্রক্রিয়া যেখানে রঙিন পদার্থ হিসাবে ডাই, পিগমেন্ট বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্যামিকেল বা পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

আরোও সহজ ভাষায় বলতে গেলে কাপড়ের কোন ফিনিসড পণ্যের উপর বিভিন্ন রঙের প্যাটার্ন বা ডিজাইন প্রয়োগ করে কাপড়কে সজ্জিত করার পদ্ধতিই হল প্রিন্টিং। সঠিকভাবে কোন প্রিন্ট কাপড়ে রঙ কাপড়ের ফাইবারের সাথে এমনভাবে মিশিয়ে দেয়া হয় যাতে তা সুর্যালোক বা পানির সংস্পর্শে আসলেও উক্ত প্রিন্টের রং ধরে রাখতে পারে।

প্রিন্টিং এর বৈশিষ্ট, কিভাবে কাজ করে?

  • প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের ডাই বা পিগমেন্ট সুনির্দিষ্ট কোন নকসা বা প্যাটার্নের আকারে কাপড়ের উপরিভাবে প্রয়োগ করা হয় যাতে তা ফাইবারে সাথে ভালভাবে মিশে যায়।
  • ডাই, পিগমেন্ট বা ক্যামিক্যাল ধরে রাখার একটি বিশেষ ধরণের আঠালো তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয় যাকে ”Print paste” বলা হয়।
  • Print paste এর High Viscosity ধর্ম ডাইকে কাপড়ের ফাইবারের সাথে মিশে যেতে সহায়তা করে।
  • ডাইং এর জন্য কম আঠালো তরল ব্যবহৃত হয় কিন্তু প্রিন্টিং এর বেলায় বেশী আঠালো তরল ব্যবহার করা হয়।
  • প্রিন্টিং এর জন্য যে সব ডাই ব্যবহৃত হয় তাতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই Vat, azoic, reactive এবং disperse dye থাকে যাদের রঙ ধরে রাখার গুনাবলি প্রশংসনীয়।
  • পিগমেন্ট যা বাস্তবিক অর্থে ডাই নয় তা ব্যপকভাবে প্রিন্টিং কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রায় ৯৬% প্রিন্টিং কাজে পিগমেন্ট ব্যবহার করা হয়। পিগমেন্টের রং কাপড়ের ফাইবারের সাথে binder দ্বারা মেশানো হয়।

প্রিন্টিং এর বিকল্প কি?

কাপড়ের রঙিন নকসা প্রয়োগে প্রিন্টিং এর কিছু বিকল্প পদ্ধতিও রয়েছে। তবে, প্রিন্টিং হল সবচেয়ে সস্তা এবং সহজলভ্য। তাই প্রিন্টিং পদ্ধতিই সর্বাধিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। অন্য পদ্ধতিগুলো যেমন –

  • রঙিন ইয়ার্ন দিয়ে যখন উভেন ফেব্রিক তৈরি করা হয়;
  • এমব্রয়ডারি যেখানে বিভিন্ন রঙের সুতা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকারের আকর্ষণীয় নকসা তৈরি করা হয়;
  • নিটি কাপড় তৈরিতে রঙিন ইয়ার্ন ব্যবহারের মাধ্যমে;
  • এপলিকস এর ক্ষেত্রে;

প্রিন্টিং এবং ডাইং এর মধ্যে পার্থক্য:

  • ডাইং এর ক্ষেত্রে কাপড়ের দৈর্ঘ এবং প্রস্থ বরাবর একই রকম রঙে রঙিন করা হয় কিন্তু প্রিন্টির ক্ষেত্রে নির্বাচিত নকসা অনুযায়ী কাপড়ের শুধু সুনির্দিষ্ট অংশেই রঙ দেওয়া হয়।
  • ডাইং এর বেলায় গোটা কাপড়ের সমস্ত জায়গায় একইভাবে রঙ প্রয়োগ করা হয় যেখানে কাপড়ের কোন পৃথক অংশ প্রযোজ্য নয়। অপরদিকে, সমস্ত কাপড়ের কোন কোন অংশে স্থানীয়ভাবে রং দেওয়া হয়।
  • কাপড়ের সামনের ও পিছনের দিক ডাইং করার পর একই রকম থাকে কিন্তু প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে একরকম থাকেনা। নকসা অনুযায়ি বিভিন্ন রকম হতে পারে।
  • ডাইং এর ক্ষেত্রে কম আঠালো বিশিষ্ট তরল পদার্থের মিডিয়ামে ডাই প্রয়োগ করা হয় কিন্তু প্রিনিং এর ক্ষেত্রে বেশী আঠালো তরল ব্যবহৃত হয় যা Paste form আকারে কাজ করে ।
  • ডাইং এ থিকেনার ব্যবহার করা হয়না। প্রিন্টিং এ থিকেনার ব্যবহৃত হয়।
  • ডাইং এ সুনির্দিষ্ট নকসা বা ডিজাইন লাগেনা কিন্তু প্রিন্টিং এ রঙ নকসা বা ডিজাইন অনুযায়ি প্রয়োগ হয়।
  • ডাইং এ ফেব্রিকসহ কাপড় তৈরির ফাইবার এবং ইয়ার্নও ডাইং করা যায়। কিন্তু প্রিন্টিং এ শুধু ফেব্রিক প্রিন্ট করা হয়।

প্রিন্টিং এর বিভিন্ন ধাপসমুহ কি কি?

  • প্রথম ধাপ: প্রিন্টিং এর জন্য কাপড় প্রস্তুতকরণ।
  • দ্বিতীয় ধাপ: প্রিন্টিং ডিভাইস নির্বাচন করে তৈরি বা সংগ্রহ করা (কাঠের ব্লক,রোটারি স্ক্রিণ, রোলার ইত্যাদি)।
  • তৃতীয় ধাপ: প্রিন্টিং পেস্ট তৈরি করা।
  • চতুর্থ ধাপ: কাপড়ের উপর প্রিন্ট প্রয়োগ করা।
  • পঞ্চম ধাপ: প্রিন্ট করা কাপড়টিকে শুকানোর ব্যবস্থা করা।
  • ষষ্ঠ ধাপ: Curing প্রক্রিয়ায় Fixation করা।
  • সপ্তম ধাপ: ভালভাবে ধৌত করা।
  • অষ্টম ধাপ: চুড়ান্তভাবে কাপড়কে শুকিয়ে নেওয়।
  • নবম ধাপ: বাজারে সরবরাহ করা।

প্রিন্টিং এর বিভিন্ন স্টাইল বা কৌশল:

  • Direct Style :

এই ধরণের প্রিন্টিং এর বেলায় খোদাই করা ব্লক, স্টেনসিল, ‍স্ক্রিণ এবং রোলারের সাহায্যে ডাই কাপড়ের উপর প্রয়োগ করা হয়। Paste আকারে ডাই কাপড়ের উপর ছাপ দেওয়া হয়। রঙের যেকোন পছন্দিয় প্যাটার্ন তৈরি করা যায়।

যেমন, ব্লক প্রিন্টিং, স্টেনসিল, রোলার প্রিন্টিং, স্ক্রিণ প্রিন্টিং ইত্যাদি।

  • Resist Style:

প্রিন্টিং এর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধৌতকৃত কাপড়  Resist pasting এর মাধ্যমে প্রিন্ট করা হয়। ডাই এর রং কাপড়ের শুধুমাত্র ঐ সব এলাকায় প্রবেশ করতে পারে যে অংশ টুকু Resist paste দ্বার আবৃত থাকেনা।

  • Discharge Style:

এই প্রক্রিয়ায় ফেব্রিক ডাইং করার পর ক্যামিকেল জাতীয় পদার্থের সাহায্যে ডাইং কাপড়ের নির্দিষ্ট অঞ্চলের রঙ নকসা অনুযায়ি উঠিয়ে ফেলা হয়। কোন কোন সময় ডাইং এর মুল রং উঠিয়ে ঐ জায়গায় তা নতুন রঙ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রিন্টিং কত প্রকার ও কি কি ?

ইহা হল প্রিন্টিং জগতের সবচেয়ে সহজ এবং পুরাতন পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়া একটি কাঠের ব্লকে প্যাটার্নের নকসা তৈরি করা হয় যা  রঙের ভিতর প্রবেশ করিয়ে রঙ লাগানোর পর ফেব্রিকের উপর চাপ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি বার বার অনুসরণের ফলে ব্লক প্যাটার্নের নকসা ব্যবহৃত রঙ অনুযায়ি কাপড়ের উপর প্রিন্ট হয়ে যায়।

কাঠের ব্লক সাধারনত: হাত দিয়ে কাংখিত নকসা অনুযায়ি খোদাই করা হয়। এই প্রিন্টিং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ন ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করা হয়।

  • রোলার প্রিন্টিং (Roller) :

এই প্রিন্টিং কাজ মেশিনের সাহায্যে করা হয়। এখানে খোদাইকৃত রোলার ব্যবহার করে কাপড়ের উপর প্রিন্ট করা হয়। নকসাটি ধাতব রোলারের উপরিভাগে খোদাই করা হয় যেখানে ডাই মিশিয়ে প্রিন্ট করা হয়।

ইহাও প্রাচিনতম পদ্ধতির মধ্যে একটি। এটি হাতে বা মেশিন উভয়ভাবেই করা যায়। এখানে একটি স্ক্রিণের প্রয়োজন হয় যা সুক্ষ জালের এক ধরণের কাপড়। এই স্ক্রিণকে ফ্রেমের ভিতর শক্ত এবং টান করে লাগানো হয়। এই স্ক্রিণ নিজেই একটি নকসার প্যাটার্ন হিসাবে কাজ করে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের রং ব্যবহার করে কাপড়ে একই ডিজাইন বিভিন্ন রঙে রঙিন করা যায়।

  • ফ্লাট স্ক্রিণ প্রিন্টিং (Flat-screen) :

ইহা হল স্ক্রিণ প্রিন্টিং এর একটি উন্নত প্রযুক্তি। এখানে প্রিন্টিং টেবিল, কনভেয়ার বেল্ট এবং অনেকগুলো স্ক্রিণের প্রয়োজন হয়।

কোন Feeding ব্যবস্থাপনার সাহায্যে কাপড় প্রথেমে প্রিন্টিং টেবিলে আনা হয়। তারপর টেবিলের কনভেয়ার বেল্টে আঠার সাহায্যে লাগিয়ে ফেলা হয়।

  • রোটারি প্রিন্টিং (Rotary) :

এই ধরণের প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে অনেকগুলো আবর্তিত ধাতব সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয় যা ক্রম অনুসারে সাজানো থাকে। এই প্রতিটি সিলিন্ডারেই স্ক্রিণ থাকে যা দিয়ে কাপড় প্রিন্ট করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একসাথে ২০টির অধিক রঙ ব্যবহার করে প্রিন্ট করা যায়। এই পদ্ধতি অধিক দ্রুততার ও দক্ষতার সাথে কাজ করে।

  • স্টেনসিল প্রিন্টিং (Stencil) :

ফেব্রিক প্রিন্টিং এর ইহা একটি পরোক্ষ পদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, সময় এবং চাপ প্রয়োগ করে ডাই কাগজ থেকে থার্মোপ্লাস্টিক কাপড়ে স্থানান্তর করা হয়। ছবি প্রথমে কপার প্লেটে খোদাই করা হয়। তারপর এই প্লেটে পিগমেন্ট প্রদান করা হয়। ছবিটি তারপর এক টুকরা কাগজে স্থানান্তর করা হয়। এখানে আঠার একটি স্তর ব্যবহার করা হয়। ইহা তখন কাপড়ের উপর রেখে তাপ এবং চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরফলে ছবিটি কাপড়ের সাথে লেগে যায়।

  • ট্রেন্সফার প্রিন্টিং (Transfer) :
  • ডিজিটাল প্রিন্টিং (Digital) :
  • বাটিক প্রিন্টিং (Batik) :