Last updated on May 11th, 2023 at 12:53 pm

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কিভাবে কাজ করে এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে পয়সা উপার্জন করা যায় – এসব বিষয়ে ডিজটাল জগতের মানুষের রয়েছে অনেক কৌতুহল।

স্বচ্ছ ধারণার অভাবে অনেকেই এ রাস্তায় পথ চলার মাঝে হারিয়ে যায়। নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য কোন পথ ধরার চেষ্টায় লেগে যায়।

আসলে, ব্যাপারটি তেমন নয় যদি আপনি সঠিক ট্র্যাকে আগাতে পারেন। প্রয়োজনীয় দক্ষতার পাশাপাশি ধৈর্য ধারণ করে অগ্রসর হতে পারলে নিশ্চয়ই আপনিও সফলতার শেখরে পৌঁছতে পারবেন।

অনলাইন তথ্য ভান্ডারে তথ্যের কোন ঘাটতি নেই। বিশেষ করে ঘরে বসে অনলাইনে কিভাবে পয়সা উপার্জন করা যায়, সে বিষয়ে। কিন্তু এত করে অনেকের মাঝেই কিছুটা হলেও অতি উৎসাহি মনোভাব জন্ম নেয়। বাস্তবতা অনেকটা চাপা পরে যায়। ফলে, মাঝ পথে হারিয়ে যেতে হয়।

যাহোক, আলোচ্য পোষ্টে, এফিলিয়েট মার্কেটি কি, এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কেমন, এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে – এসব কিছুর উপর একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এক ধরণের অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোন কম্পানির পন্য বা সেবা promote করা হয়। এই পন্য বা সেবা আপনার অডিয়েন্সের নিকট promote করতে গিয়ে যখন তা বিক্রি হবে তখন প্রতিটি পন্য আপনার promotion এর কারণে বিক্রি হওয়ার জন্য উক্ত কম্পানি তাদের নির্ধারিত হারে আপনাকে কমিশন দিবে।

এক কথায় বলতে গেলে – ইহা হল শুধুমাত্র কমিশন নির্ভর কোন কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।

বর্তমান বিশ্বে, অনলাইনে পয়সা উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে এটি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই কম্পিউটার বা ল্যাপটপ খুলে জানতে পারবেন গত দিনে আপনার উপার্জনের পরিমান।

এটি হল প্যাসিভ ইনকাম। অনেকটা ঘুমিয়ে থেকে টাকা উপার্জন করার মত একটি বিষয়।

এর পিছনের আইডিয়াটা হচ্ছে, আপনি অন্য মানুষের প্রোডাক্টস বা সার্ভিস promote করবেন একটি এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। আর বিক্রি হলে কমিশন পাবেন।

এটিকে আপনি রেভিনিউ শেয়ারিং বলতে পারেন। আপনার যদি কোন প্রোডাক্ট থাকে যা আপনি অধিক পরিমানে বিক্রি করতে চান, তাহলে আপনি এফিলিয়েট প্রোগ্রামের মাধ্যমে তা promoters এর নিকট offer করতে পারেন। যেখানে আপনি লাভের একটি অংশ তাকে ছেড়ে দিবেন।

অপরদিকে, আপনার যদি নিজস্ব কোন পণ্য না থাকে অথচ আপনি পয়সা উপার্জন করতে চান, তাহলে এফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে আপনি অন্য মানুষের পণ্য বাজারজাত করার জন্য প্রোমোট করবেন।

এই আর্টিকেলে আপনি নতুন হয়েও কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন তা ধাপে ধাপে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আর একটি বিষয় না বললেই নয়, কোন কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিকে শুধু তার কম্পানির পন্য বাজারজাত করতে হয়। আর একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে আপনি একাধিক কম্পানির পণ্য বিক্রয়ের জন্য কাজ করতে পারবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যত কেমন?

এফিলিয়ে মার্কেটিং খুব সম্ভাবনাময় একটি বিষয়। উন্নত বিশ্বে অনেক আগে থেকেই এর প্রচলন লক্ষ করা যায়। এর মার্কেট সাইজ দিন দিন বেড়েই চলছে। বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০% বলা চলে।

Statista এর প্রাক্কলন অনুযায়ী,  ২০২২ সাল নাগাদ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর আকার হতে পারে ৮.২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে এর পরিমান ছিল ৫.৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালের এফিলিয়েট মার্কেটিং এর এক তথ্য অনুযায়ী –

  • ৮০% ব্র্যান্ড প্রোডাক্টের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্থ ব্যয়ের পরিমান ১০% শতাংশ হারে সামনের কয়েক বছর বর্ধিত হবে।
  • বিশ্বে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় মার্কেট শেয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যার পরিমান ৩৯%।
  • অ্যামেরিকা ও কানাডায় অনলাইন কেনা-কাটার ১৬% এর অধিক এফিলিয়েট মার্কেটিং মাধ্যমে হয়।
  • বিশ্বব্যাপী ৬৫% এফিলিয়েট মার্কেটার ট্রাফিক তৈরি করে শুধু ব্লগিং মাধ্যম।
  • ডিজিটাল মিডিয়ায় উপার্জিত সমস্ত অর্থের ১৫% এর অধিক জায়গা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর দখলে।
  • ৯৪% পাবলিশার একাধিক এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
  • বিশ্বের ৪০% মার্কেটারের নিকট এফিলিয়েট মার্কেটিং একটি crucial skill হিসাবে বিবেচিত।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি কঠিন?

এর উত্তর হ্যা এবং না, উভয়ই। যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং জগতের পেশাজীবি এবং দক্ষ তাদের জন্য সহজ। আবার যারা, এই ফিল্ডে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে বা করতে চায় তাদের জন্য বেশ কঠিন। ২০১০ সালের দিকে, একজন নতুন এফিলিয়েট মার্কেটার যতটা সহজে এখানে আসতে পেরেছে; ২০২১ সালের প্রেক্ষাপট ততটা সহজ।

ইতোমধ্যে মার্কেটিং অনেকটা প্রতিযোগীতামুলক হয়ে দাড়িয়েছে। নবাগত হিসাবে বিদ্যমান মার্কেট থেকে শেয়ার দখল করতে হলে আপনাকে ধৈর্য সহকারে হাতে সময় নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

তবে, আপনি ধীরে ধীরে যখন এর কৌশল রপ্ত করে চলতে থাকবেন, তখন আপনার নিকটও সহজ মনে হবে। আপনি যখন সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরি কোন niche বাছাই করে অগ্রসর হবেন এবং তাতে ভাল পরিমানে ট্রাফিক তৈরি করতে সমর্থ হবেন, তখন আপনি এটিকে উপভোগ করবেন। আপনার নিকট মজার মনে হবে।

আপনাকে ধারাবাহিকভাবে দৈনিক কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে এর পিছনে। এর মাধ্যমে, আপনার বাছাই করা niche বিশিষ্ট ব্লগে একটি ভাল সংখ্যার অডিয়েন্স তৈরি হয়ে যাবে। আপনার ব্লগে যখন দৈনিক ৫০০০০ থেকে ১০০০০০ ট্রাফিক তৈরি হয়ে যাবে যারা আপনার টার্গেট অডিয়েন্স; তখন আপনি এটি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

এফিলিয়েট গুরু যারা তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে জানে বিষয়টি কিভাবে কাজ করে। বিশ্বের সেরা এফিলিয়েট মার্কেটার এমনও আছে যারা একটি বিক্রয় থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত কমিশন পায়। তবে, সাধারণত: যারা দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে, তাদের পক্ষে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলার আয় করা তেমন কষ্টসাধ্য নয়।

প্রথম প্রথম অডিয়েন্স তৈরি হওয়া পর্যন্ত অধিকাংশ এফিলিয়েট পার্ট টাইম বেসিসে যাত্রা শুরু করে। তারপর, যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন অন্য কাজ ছেড়ে দিয়ে ফুল টাইম এর পিছনে ব্যয় করে। কাজেই, হতাশাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ধীরগতিতে অগ্রসর হতে থাকুন। সফলতা না আসার কোন কারণ নেই।

এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিতে পয়সা লাগে?

না, আপনি বিনা পয়সায় এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেন। তবে, অনেক সময় আপনার আবেদন দাখিলের পর তারা রিভিউ করে দেখতে পারে। আপনার দেওয়া তথ্যগুলি যাচাই বাচাই করতে পারে। অনুমোদনের বিষয়টি নির্ভর করে, আপনার অডিয়েন্স কেমন বা সংখ্যায় কত, তার উপর।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম চার প্রকার মানুষের গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত। যেখানে প্রত্যেকেই একে অপরের সাথে লাভ ভাগাভাগি করে অগ্রসর হয়। এরা হচ্ছে –

  • মার্চেন্ট
  • এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক
  • পাবলিশার এবং
  • কনজিউমার বা কাস্টোমার

মার্চেন্ট

এই গ্রুপের লোকজনের হাতে পণ্য থাকে। তারা তাদের পন্য বিক্রি বাড়াতে চায়। এরা হতে পারে পন্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান, বা কোন নামি-দামি ব্র্যান্ড, রিটেইলার অথবা কোন ভেন্ডর।

মার্চেন্ট গ্রুপে কোন একক ব্যক্তিও থাকতে পারে যদি তার হাতে বিক্রয়যোগ্য কোন প্রোডাক্ট থাকে।

এফিলিয়েট

এরা পাবলিশার নামেও পরিচিত। এই গ্রুপটিও একক কোন ব্যক্তি দিয়ে হতে পারে অথবা একটি কম্পানিও হতে পারে। এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসায় প্রতি মাসে কয়েকশত ডলার থেকে শুরু করে কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উপার্জন হয়ে থাকে।

এফিলিয়েট গ্রুপের মানুষের দ্বারাই মার্কেটিং এর মুল কাজটি হয়ে থাকে। কারণ, এরাই পণ্য বাজারজাতের জন্য promote করে। পণ্য promote করতে গিয়ে তারা কাস্টোমারকে বিভিন্নভাবে কনভিন্স করার চেষ্টা করে। যাতে বিক্রয় কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। কেননা, বিক্রি হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু পরিশ্রম আর পরিশ্রম। বিক্রি হয়ে গেলেই লাভের অংশটা হস্তগত হবে। তার আগ পর্যন্ত নয়।

এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক

এই গ্রুপ অপর দুই গ্রুপের মধ্যে যোগসুত্র স্থাপন করে। এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক পাবলিশার এবং পণ্য প্রস্তুতকারি কম্পানির মাঝে মধ্যস্থতাকারির ভূমিকা পালন করে। পাললিশার এর অপর নাম এফিলিয়েট।

এ সম্পর্কে উপরে আলোচনা হয়েছে। পাবলিশার হতে পারে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন ইনফ্লুয়েন্সার বা কোন ব্লগার। যারা তাদের মিডিয়ায় বা ব্লগের ভিজিটরের নিকট এফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রোমোট করবে।

অপরদিকে, কম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার জন্য বা বিক্রয় বৃদ্ধি করার জন্য এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। বিনিময়ে এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক কম্পানির পণ্য বিক্রির লাভের একটি অংশ নিয়ে নেয়। এভাবে মিউচুয়ালি এই সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে।

কনজিউমার

এরা হল কাস্টোমার যাদের নিকট পণ্য বিক্রির জন্য promote করা হয়।

বন্ধুগন, এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে যে সব তথ্যগুলো শেয়ার করা হল তা আপনাদের নিকট উপকারি মনে হলে পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাই দিয়ে রাখুন।

অনলাইনে ব্যবসা করা নিয়মের উপর অপর এক পোষ্টে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেখে নিতে পারেন।

ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।