Last updated on May 11th, 2023 at 12:51 pm

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম সম্পর্কে অনেকের মাঝেই জানার আগ্রহ থাকে। বিশেষ করে কম খরচে ও সহজে কিভাবে একটি ব্লগ তৈরি করা যায়-সে বিষয়ে।

আপনিও কি তাদের মত একজন? তাহলে সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন।

২০১০ সালে যখন আমি সর্বপ্রথ ব্লগ সম্পর্কে পরিচিত হই, তখন অনলাইন উৎস থেকে সহায়ক তথ্য যোগার করতে বেশ ভাল বেগ পোহাতে হয়। আমি শুধু এক এক ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যের অংশ বিশেষ পেতাম। সবকিছু এক জায়াগায় না পাওয়ায় সময় অনেক লেগে যায়।

তাই, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, আপনার সময় বাচানোর জন্য সব তথ্য যাতে এক সাথে পেয়ে যান – সে জন্য ধাপে ধাপে ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম সম্পর্কে এই টিউটোরিয়াল লেখতে বসলাম।

এই গাইড পড়ে আপনি সহজে অল্প সময়ের মধ্যে একটি ব্লগ খুলতে পারবেন। মানুষ যত কঠিন মনে করে, আসলে ব্যাপারটি তেমন কঠিন কিছু নয়। এর জন্য আপনাকে যে প্রোগ্রামার হতে হবে – তারও প্রয়োজন নেই। আপনি যদি কম্পিউটার অপারেট করতে জানেন ও টাইপিং এর উপর আপনার যদি দক্ষতা থাকে, তাহলেই হয়ে গেল। বাকি শুধু  কম্পিউটারের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ।

আপনি যদি ব্লগিং সম্পর্কে একেবারেই নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে এই টিউটোরিয়ালের কনটেন্ট একটু লম্বা হলেও মনযোগের সাথে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পড়তে থাকুন। যদি কোথাও বুঝতে কোন অসুবিধা হয়, নিঃসংকোচে কমেন্ট করে জানাবেন।

তবে, ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম জানার আগে ব্লগ জিনিসটি আসলে কি এবং এর কিছু ইতি কথা আপনার জেনে নেওয়া উচিত।

তো, চলুন শুরু করি।

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম

একটি ব্লগ সাইট খুলতে হলে আপনাকে ধারাবাহিকভাবে নিচের কাজগুলো করতে হবে-

  • প্রথম ধাপ: আপনার ব্লগের একটি নিশ (niche) বেছে নিন।
  • দ্বিতীয় ধাপ: একটি ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন ।
  • তৃতীয় ধাপ: ডোমেইনের নাম ঠিক করে রেজিষ্ট্রেশন করুন ।
  • চতুর্থ ধাপ: ওয়েব হোস্টিং কম্পানিতে একাউন্ট খুলুন।
  • পঞ্চম ধাপ: হোস্টিং সার্ভারে ব্লগ ইনস্টল করুন।
  • ষষ্ঠ ধাপ: ব্লগ সাইট কাস্টোমাইজ করুন।
  • সপ্তম ধাপ: কনটেন্ট লেখা শুরু করুন।
  • অষ্টম ধাপ: SEO কাজ সম্পন্ন করে কনটেন্ট পাবলিশ করুন।
  • নবম ধাপ: ব্লগ সাইট প্রোমোট করুন।

প্রথম ধাপ: আপনার ব্লগের একটি nich বেছে নিন

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম এর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে ভূল করলে ফলাফল ভাল আসবে না। বিশেষ করে আপনি যদি ব্লগিং এর জন্য ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে চান। কারণ, ইংরেজি ভাষায় ব্লগ করতে হলে সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংকিং করানোর জন্য আপানাকে প্রবল প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হতে হবে। ইংরেজি ভাষার ব্লগার সারা বিশ্ব জুরে। প্রতিদিন শত শত নতুন ব্লগসাইট ওপেন হচ্ছে। তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য একটি উপযুক্ত ব্যবসায়িক নিশ বা টপিক নির্বাচন আপনার জন্য অপরিহার্য।

নিচের দু’টি ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা করে আপনি প্রাথমিকভাবে একটি niche নির্বাচন করতে পারেন-

  • প্রথমত: এমন niche নির্বাচন করুন যা আপনার নিকট প্রিয়, যার প্রতি আপনি অনুরাগী বা কৌতুহলী। ঐ niche সম্পর্কে থাকলে ভাল, পূর্ব ধারণা না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। আসল ব্যাপার হল আপনি যে niche নির্বাচন করবেন তার উপর আপনার কেমন – সেটি হল বড় ব্যাপার।
  • দ্বিতীয়ত: আপনি যে niche নির্বাচন করতে যাচ্ছেন তার প্রতি অডিয়েন্সের যথেষ্ট আগ্রহ আছে কিনা – সেটিও আপনাকে পরীক্ষা করে আগে-ভাগে দেখে নিতে হবে। এটি পরীক্ষার উপায় হল, আপনার পছন্দের niche এর বিষয়বস্তুগুলোর গুগলে সার্চ ভলিউম কেমন, তা দেখার মাধ্যমে। সার্চ বেশী হওয়ার অর্থ হল পাবলিক ঐ টপিকসের উপর আগ্রহি। এজন্য এই বিষয়ে তথ্য জানার জন্য মানুষ গুগলে সার্চ করে। আর সার্চ ভলিউম কম হলে, বুঝা যাবে – পাবলিকের বা অডিয়েন্সের এই বিষয়ে জানার আগ্রহ কম।

কেউ যদি কম সময়ে অধিক মাছ ধরতে চায় তাহলে এর কৌশল জানতে হবে। উদাহরণস্বরুপ, একটি কৌশল হল, আগে থেকে খোজ খবর রাখা – যে কোন পানিতে মাছ বেশী। এটি অগ্রিম জেনে সেই পানিতেই আপনাকে জাল ফেলতে হবে। তাহলে, আপনার পরিশ্রম স্বার্থক হবে। অন্যথায়, শ্রম ঠিকই খরচ হবে কিন্তু আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে না।

আমরা যে শব্দগুলো গুগলের সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করি তাকে SEO এর ভাষায় keywords বলে।

আপনি যে niche নির্বাচন করবেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট keywords সমুহের সার্চ ভলিউম অর্থাত সেগুলো মাসে কত সংখ্যায় সার্চ করা হয় তা জানতে হবে। কারণ, ইহা keyword research এর একটি অংশ।

আপনি niche নির্বাচনের সময় keyword research করলে এসব বিষয়ে অগ্রিম কিছু ধারণা পেয়ে যাবেন।

কথা কিছুটা লম্বা হয়ে গেল। যাহোক, উপরের দুটি বিষয় মাথায় রেখে আপনি আপনার পছন্দের niche নির্বাচন করতে পারেন। তবে, এই দু’টি ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা আপনার যে niche নির্বাচন করবেন, তা হবে প্রাথমিক নির্বাচন। আপনার প্রাথমিক পর্যায়ের নির্বাচিত niche এখন validate করতে হবে। সফলভাবে validation হলেই ত হবে আপনার চূড়ান্ত niche.

এবারে আসুন, validate কিভাবে করবেন? এর জন্য নিচের তিনটি বিষয় যাচাই করুন –

দ্বিতীয় ধাপ: একটি ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম নিয়ে আলোচনার এ পর্যায়ের কাজ হল একটি ব্লগিং প্লাটফর্ম বেছে নেওয়া। এই ধাপটি অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে প্রচলিত যে সব ব্লগিং প্লাটফর্ম রয়েছে এর মধ্য থেকে আপনার জন্য যেটি সবচেয়ে ভাল ও ব্যবহার বান্ধব হতে পারে – সেটিকে বেছে নিতে হবে।

অনেক নতুন ব্লগার এখানে ভূল করে বসে। আপনি সৌভাগ্যবান যে, এই ভূলটি আপনি করছেন না। কারণ, আপনি এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার প্রচেষ্টায় আছেন।

ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচন করার বিষয়ে আপনার কিছু অপশন থাকবে। নিচে সারা বিশ্বে প্রচলিত কয়েকটি ব্লগিং প্লাটফর্মের নাম উল্লেখ করছি –

  • wordpress.org
  • wordpress.com
  • Blogger
  • Ghost
  • Medium
  • Hubspot CMS
  • Squarespace
  • Gator
  • Weebly, etc.

এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু প্লাটফর্ম আপনাকে শুধু বিনা পয়সায় ব্লগ তৈরি করার সুযোগ দেয়। আবার কোন প্লাটফর্ম নিজস্ব ডোমেইন ব্যবহার করে ব্লগিং করার সুযোগ দেয়। যেহেতু নিজস্ব ডোমেইনের প্রসঙ্গ এল, তাই এক্ষেত্রে আপনাকে ডোমেইন কেনার এবং তা হোস্ট করার অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে।

উপরের আলোচনায় এতটুকু বোঝা গেল, ব্লগ দুই ধরণের ব্লগ হতে পারে-

  • একটি free blog
  • অপরটি self hosted blog

Free blog কি?

যে ব্লগিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ব্লগ তৈরির ক্ষেত্রে আপনার ডোমেইন কেনা এবং হোস্টিং বাবদ কোন পয়সা খরচ হয়না, তাকেই ফ্রি ব্লগ বলা হয়। এক্ষত্রে, আপনি যে ব্লগিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করবেন, তার সাবডোমেইন হবে আপনার ফ্রি ব্লগের ডোমেইন। আর, তার হোস্টিং ঐ ব্লাগিং প্লাটফর্মেই built in আকারে থাকে।

যেমন, blogger.com, wordpress.com বা tumblr.com ইত্যাদি ব্লগিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করতে পারেন।

Self hosted ব্লগ কাকে বলে?

এই ধরণের ব্লগের ক্ষেত্রে আপনার নিজের কেনা ডোমেইন থাকতে হবে যা কোন ওয়েব হোস্টিং কম্পানির সার্ভারে space কিনে host করাতে হবে।

তবে, আপনি যদি ব্লগিং জগতে একদম নতুন হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকে তাহলে, প্রথম প্রথম অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্মে যাত্রা শুরু করতে পারেন।

কিন্তু, মুল বিষয় হল, আপনাকে এই দু’টি ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে সুবিধা অসুবিধা এবং পার্থক্য ভালভাবে জানতে হবে ও বুঝতে হবে।

Free Blog এবং Self Hosted Blog এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ফ্রি ব্লগিং সার্ভিসে অনেক অসুবিধা থাকে। যেমন, পরবির্তিতে এখান থেকে পয়সা আয় করার সুযোগ সীমিত থাকবে, নিজের মত করে customize করা যায়না এবং ফ্রি ব্লগের যে সাব ডোমেইন দেওয়া হয় তা দেখে ট্রাফিক কম আসে। এই ব্লগের উপর আপনার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এছাড়া, আপনি যদি আপগ্রেড করতে চান, তাহলে যে টাকা লাগবে তার চেয়ে কম টাকায় আপনি Self Hosted ব্লগ কিনতে পারবেন।

অপরদিকে, আপনি যদি, Self Hosted ব্লগ নিতে চান, তাতে আপনার কোন সীমাবদ্ধতা থাকবে না। ইচ্ছেমত customize করতে পারবেন, প্রয়োজন অনুযায়ি ছবি বা ভিডিও আপলোড দিতে পারবেন। আপনার ব্লগ অনেক professional দেখাবে।

সবচেয়ে বড় কথা, যে কোন সম্পত্তি কেনার মত, এটিও হয়ে যাবে আপনার নিজস্ব কোন সম্পত্তির মত। আপনি এককভাবে তার মালিক।

নিচে আরোও কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হল-

Free BlogSelf Hosted Blog
দ্রুত সেট করা যায়।সেট আপ প্রোসেস দীর্ঘ।
ব্লগটি তাদের সাবডোমেইনের উপর থাকবে।ব্লগ আপনার নিজস্ব ডোমেইনের ভিতর থাকবে।
ব্লগের ফাইলসমুহ ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্মের সার্ভারে থাকবে।ব্লগের ফাইলসমুহ আপনার কেনা হোস্টিং সার্ভারে থাকবে।
সম্পূর্ণ ফ্রি।বছরে প্রায় ৩০ ডলারের মত খরচ হবে।
প্লাটফর্মের সুনির্দিষ্ট থিমগুলির যে কোনটি ব্যবহার করতে হবে।যে কোন থিম পছন্দমত কাস্টোমাইজ করে ব্যবহার করা যাবে।
স্টোরেজ স্পেস সীমিত।স্টোরেজ স্পেস সীমিত নয়।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে monetize করা কঠিন।Monetization প্রক্রিয়া সহজ এবং এর অপশন বেশী।

যদি আপনি স্বল্প মেয়াদে ব্লগ খুলতে চান, তাহলে ফ্রি ব্লগ আপনাকে কিছু অভিজ্ঞতা দিতে পারে। কিন্তু আপনি যদি, seriously দীর্ঘ মেয়াদের জন্য কোন ব্লগ সাইট খুলতে চান এবং তাকে অর্থ আয়ের একটি উৎস বানাতে চান তাহলে self hosted blog বেছে নেওয়া আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

যাহোক, একটি ব্লগিং প্লাটফর্ম বেছে নেওয়ার উপর প্রাসঙ্গিক কিছু কথা আলোচনা হয়ে গেল।

এবার যাই মুল প্রসঙ্গে, আপনার কোন প্লাটফর্ম ব্যবহার করা উচিত?

উপরের আলোচনার সারমর্ম হিসাবে ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচনের পূর্বে আপনাকে নিচের কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে-

  • Cost: আপনি কি ব্লগিং প্লাটফর্মের মুল্য পরিষোধে সামর্থ্য রাখেন?
  • User-friendliness: এটি কি সহজে ব্যবহার করা যায় বা তার কোন সাপোর্ট সার্ভিস আছে?
  • Features: প্লাটফর্মের থিম, প্লাগইন বা এর এক্সটেনশনসমুহের কাস্টোমাইজেশনের সুযোগ কেমন?
  • Maintanance: এর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আপনাকে কি পরিমান কাজ করতে হবে?
  • Monetization options: প্লাটফর্মের ব্লগ থেকে ভবিষ্যৎ মনিটাইজেশনের সুযোগ কেমন হবে?

অতি সাম্প্রতিক কালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে ব্লগ তৈরির ক্ষেত্রে যে প্লাটফর্মটি সবচেয় বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে তা হল ওয়ার্ডপ্রেস। আপনি জেনে অবাক হবেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ডপ্রেসের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৯৫%। অর্থাৎ, সেখানে প্রায় ৯৫% ব্লগার তার ব্লগিং প্লাটফর্ম হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেসকে বেছে নিয়েছে।

এর পিছনে কারণ হল, ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচনের যে ৫টি বৈশিষ্ট বা ক্রাইটেরিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডপ্রেসের বেলায় বিদ্যমান।

তবে, আর একটি বিষয় অনেক সময় সন্দেহের ভিতর ফেলে দেয়, তা হল – ওয়ার্ডপ্রেসের ব্লগিং প্লাটফর্ম দু’টি।

  • com এবং
  • org

এদের মধ্যে, self hosted blogging প্লাটফর্ম হচ্ছে – wordpress.org. তবে, এটিতে ব্লগিং এর যে Content Management System (CMS) ব্যবহৃত হয় তা কিন্তু ওপেন সোর্স, মানে ফ্রি। CMS কে আপনি একটি টুলস বা সফ্টওয়ার নামেও বলতে পারেন। আপনার নিজস্ব কাষ্টম ডোমেইন কেনার পর তা যে হোস্টিং সার্ভারে হোস্ট করবেন, সেখানে ওয়ার্ডপ্রেসের এই সফ্টওয়ার আপনি ফ্রিতে ইনস্টল করতে পারবেন। এই অর্থে এটি হল ওপেন সোর্স বা ফ্রি।

আর, wordpress.com, এটি self hosted নয়। এর বেলায় আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং কোনটিই কিনতে হবে না। এখানে আপনার ব্লগটি হবে এর সাবডোমেনের উপর এবং হোস্টিং হবে তাদের সার্ভারে।

আশা করি, বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। এরপরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

এবারে আমরা, আর একটি উৎস থেকে ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর ব্যবহারের একটি তুলনামুলক চিত্র উপস্থাপন করে ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম এর দ্বিতীয় ধাপের বর্ননার পরিসমাপ্তি ঘটাবো।

ব্লগিং প্লাটফর্মওয়েবসাইটের সংখ্যাColumn 3
WordPress805977693.66
Blogger4074634.7
Tumblr774530.90
Ghost246080.29
Medium107370.12
OthersOthers0.25

সুত্র: ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে BuiltWith.com থেকে প্রকাশিত।

বন্ধুগন, তাহলে, এবার সিদ্ধান্ত আপনার যে আপনি কোন ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচন করবেন। ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা ইতোমধ্যে দীর্ঘ হলেও সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ করছি। কারণ, ব্লগিং এমন কোন বিষয় নয় যে, আজ চারা লাগালে কালকেই তা থেকে ফল পাওয়া যাবে। আপনাকে সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। তাহলে মাঝ পথে হারিয়ে যেতে হবে না। সফলতায় পৌঁছানো যাবে।

তৃতীয় ধাপ: ডোমেইনের নাম ঠিক করে রেজিষ্ট্রেশন করুন

আপনার ডোমেইন এর নাম ধরে অনলাইন জগতে আপনাকে ডাকা হবে। আপনি যে কোন niche নির্বাচন করেন না কেন তা এখানে মুখ্য বিষয় নয়। ডোমেইন এর নাম দিয়ে আপনি অডিয়েন্সের মাঝে পরিচিত হবেন। ইন্টরানেটে এটি হবে আপনার ব্লগের একটি ইউনিক বা একক কোন ঠিকানা। এটি আপনারই থেকে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বছর বছর এটি নবায়ন করে চলবেন।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারির মধ্যে যারা আপনার ডোমেইনটি জানবে, তারা ব্রাউজারের এড্রেস বারে এটি টাইপ করে আপনার ব্লগে প্রবেশ করবে। অন্যরা এটি আবিস্কার করতে সমর্থ্য হবে গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যদি তাদের সার্চ কিওয়ার্ডের প্রেক্ষিতে সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটকে র‌্যাংক করে প্রথম পেজ -এ প্রদর্শন করে।

এজন্য, বোঝাই যাচ্ছে যে, একটি সুন্দর ও কার্যকর ডোমেইন খুঁজে নেওয়া আপনার জন্য কতটা গুরত্বপূর্ণ। আপনি অজ্ঞতাবশত: ভূল কোন ডোমেইন নিয়ে নেন, পরবর্তিতে এটি পুনরায় পরিবর্তন করা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়ায়। অন্যথায়, আপনার ব্র্যান্ড এবং সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাংকিং বাধাগ্রস্থ হওয়ার আশংকা থাকবে।

এজন্য, প্রথমেই, সময় নিয়ে হলেও আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল এবং সঠিক ডোমেইনটি খুঁজে পেতে হবে। যা আপনার ব্লগ বা ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম প্রসঙ্গে সঠিক ডোমেইন নির্বাচন করা কেন গুরত্বপূর্ণ তা সারমর্ম আকারে নিচে পেশ করা হল-

  • এটি হবে আপনার first impression.
  • SEO factors এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে: Keyword এর সাথে হুবুহু মিল থাকে এমন ডোমেইন অপরিহার্য নয়। তবে, আপনার ডোমেইনে যদি কিওয়ার্ড থাকে তবে এটি র‌্যাংকিং এর ক্ষেত্রে হতে পারে একটি বাড়তি সুবিধা।
  • এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ড প্রতিফলিত হয়: ডোমেইন এর নাম আপনার ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। সঠিক ডোমেইন আপনার ব্র্যান্ড এর স্বীকৃতি পেতে সহায়তা করতে পারে।

সঠিক ডোমেইন এর নাম খুঁজে নেওয়ার উপর এই উপাদানগুলো অনেক ফ্যাক্টরের মধ্যে কয়েকটি মাত্র।

আপনি কিভাবে একটি সঠিক ডোমেইন নিতে পারেন – তা আলোচনার পূর্বে আমি প্রথমে এর সাথে সংশ্লিষ্ট দু’টি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই, তা হল-

ডোমেইন কাকে বলে?

ডোমেইন এর এই দু’টি অংশের ব্যাপারে আমরা প্রায় সকলেই জানি – একটি ‘https’ এবং অপরটি হল তার extension. Extension হচ্ছে ডোমেইনের শেষ অংশ যা ডট কম (.com), ডট নেট (.net), ডট অরগ (.org), ইত্যাদি আকারে বিদ্যমান থাকে।

এই দু’টি অংশ যা উপরে উল্লেখ করা হল এর মধ্যবর্তি অংশে যে অক্ষরগুলো থাকে, সেটি হল ডোমেইন এর তৃতীয় অংশ যা আপনার সঠিকভাবে নির্বাচন করে নেওয়া আপনার হাতে। আর এর উপর ভিত্তি করেই এত আলোচনা হল, যে ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম এর মধ্যে সঠিক ডোমেইন ব্যবহার করা কেন গুরত্বপূর্ণ।

নিচেরে চিত্রের সাহায্যে প্রদত্ত উদাহারণের দিকে খেয়াল দিন-

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম

উপরের চিত্রে, ডোমেইনের প্রথম অংশ উল্লেখ করা হয়নি। দ্বিতীয় অংশ হল “example” যা আপনার মুল ডোমেইন। আর দ্বিতীয় অংশের পূর্বে যে ‘www’ লেখা আছে তা হল আপনার সাবডোমেইন। ডোমেইনের শেষ অংশ যাকে এক্সটেনশন বলা হয়, চিত্রে দেখা যাচ্ছে, তার নিচে Top Level Domain লেখা রয়েছে।

ডোমেইনের কয়েকটি লেভেল থাকে যা এই পোষ্টে আলোচনার বিষয় নয়। সময় হলে, অন্য একটি পোষ্টে সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

এখন, আপনার জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, Top Level Domain এক্সটেনশনের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত এক্সটেনশন সমুহ নিম্নরুপ –

  • ডট কম (.com)
  • ডট নেট (.net)
  • ডট অরগ (.org)

তবে, আর একটি বিষয় বলার জন্য চলুন একটু পিছনে ফিরে যাই। সারা বিশ্বে ইন্টারনেট প্রযুক্তি আবির্ভাবের প্রথম দিকে এখনকার মত আক্ষরিকভাবে ডোমেইন এর নাম ব্যবহৃত হত না। তখন, ব্রাউজারের এড্রেস বারে আই পি এড্রেস লিখে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা হথ। এক এক ওয়েবসাইটের জন্য থাকত এক এক আই পি এড্রেস। তা মনে রেখে বা ব্যবহার করেই শুধু নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইটে ঢুকা যেত।

আজকের দিনে বিষয়টি কল্পনা করতেও কেমন যেন কঠিন মনে হয়। নি:সন্দেহে অক্ষর দিয়ে গঠিত শব্দ মনে রাখা তার চেয়ে অনেক সহজ ও বোধগম্য। এই সমস্য থেকে উত্তরণের পথ হিসাবে তারপর আবির্ভাব হল ডোমেইন সম্পর্কিত ধারণা। যা আমরা বর্তমানে ব্যবহার করছি বলেই ডোমেইনের নাম নির্বাচন নিয়ে এত কথা বলছি।

তাহলে, ডোমেইন বলতে কি বুঝায় – উপরের আলোচনা থেকে অনেকটা পরিস্কার ধারণা পাওয়া গেল।

Http বলতে কি বুঝায়?

Http সম্পর্কে আমারা এতটুকু জেনেছি যে, ইহা ডোমেইনের প্রথম অংশ। কিন্তু তাতেই কি শেষ? না – এটি সম্পর্কে ন্যুনতম একটি প্রাথমিক ধারণা থাকা চাই।

Http এর দ্বারা বুঝায় – Hyper Text Transfer Protocol. কাজেই, বুঝা গেল – এটি এক ধরণের প্রটোকল। কিন্তু কাদের মাঝে? এই প্রোটোকলটি হল ক্লায়েন্ট এবং সার্ভারের মাঝে। ক্লায়েন্ট হল ব্রাউজার যেমন ক্রোম, মজিলা, সাফারি, edge, অপেরা ইত্যাদি।

আপনি একজন ইন্টারনেট ইউজার হিসাবে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য একটি ব্রাউজার ওপেন করে তার ঠিকানা লেখার ঘরে কোন ওয়েব এড্রেসের নাম লিখে এন্টার চাললেন। তখন এই ব্রাউজার থেকে উক্ত ওয়েবসাইট যে হোস্টিং সার্ভারে হোস্ট করা রয়েছে সেখানে রিকোয়েস্ট চলে যায় সেই তথ্যটি প্রেরণের জন্য। তারপর, ঐ সার্ভার থেকে অনুরুপ তথ্যটি ক্লায়েন্ট এর নিকট চলে যায়।

অর্থাৎ ব্রাউজার তথ্য পাওয়ার জন্য অনুরোধ করে আর সার্ভার সেই অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়ে উক্ত তথ্য প্রেরণ করে। প্রোটোকলটি ঠিক এভাবেই কাজ করে।

এজন্য ক্লায়েন্ট এবং সার্ভারের মধ্যে যোগাযোগের ধরণ হল request এবং response. এই প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত উপায়ে চলে-

  • ক্লায়েন্ট (যা একটি ব্রাউজার) ওয়েবে http অনুরোধ পাঠায়।
  • ওয়েব সার্ভার সেটিকে গ্রহন করে।
  • সার্ভার তার সেই অনুরোধ প্রসেসিং করতে কাজ শুরু করে।
  • তারপর সার্ভার আপনার ব্রাউজারে request অনুযায়ী http response ফেরত পাঠায়।
  • ক্লায়েন্ট (ব্রাউজার) তখন সেই response গ্রহন করে।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ঘটনাগুলি মাত্র দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যে সংগঠিত হয়।

URL কাকে বলে?

URL এবং ডোমেইন দু’টির মাঝে আমরা সংশয়ে পড়ে যাই, মনে করি এরা একই জিনিস। কিন্তু আসলে কি তাই? উত্তর হল- না! তারা এক নয়। এদের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

উপরে ডোমেইনের আলোচনা থেকে এর সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এক কথায় ডোমেইন হল URL এর একটি অংশ।

URL এর অর্থ হল uniform resource locator । এটি এক প্রকারের tool যার সাহায্যে কোন ওয়েবসাইটের সুনির্দিষ্ট কোন ওয়েব পেজ খুজে বের করা হয়।

URL নিচের কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত-

  • প্রোটোকল যেমন http বা https
  • ডোমেইনের নাম
  • নির্দিষ্ট কোন ওয়েব পেজ এর একটি path বা রাস্তা যাকে অনেক সময় directory বলা হয়।
  • ওয়েব পেজটির নাম।

এই উপাদানগুলির সবগুলিই মনে হয় বুঝতে পেরেছেন। আমি শুধু path নিয়ে দু’ একটি কথা বলি। তার আগে বাস্তব একটি উদাহারণ দেই – ধরুন আপনি ওয়ার্ড ফাইলে একটি CV তৈরি করেছেন। এখন সেটি সেভ করার পালা। ধরে নেই, আপনি এটিকে ডেস্কটপের ‘E’ ড্রাইভে CV নামে সেভ করেছেন।

এখন প্রশ্ন হল, আপনার ডেস্কটপের কোথায় CV নামের ফাইলটি পাওয়া যাবে?

এর উত্তর হল- This PC / E / CV. এখানে  ‘/’ (slash) দ্বারা path নির্দেশ করা হয়েছে। আর CV ফাইলটি খুজে পাওয়ার জন্য এই path ধরেই আপনাকে এগুতে হবে।

ওয়েব পেজ এর ক্ষেত্রেও path একই অর্থ প্রকাশ করে। আমরা জানি, অনেক ওয়েব পেজ এর সমষ্টি হল একটি ওয়েবসাইট। এক একটি ওয়েব পেজ হল স্বতন্ত্র এক একটি ফাইলের মত যা ওয়েবসাইটের root directory এর ভিতরে থাকে।

নিচের চিত্রটির দিকে লক্ষ করলে আরোও পরিস্কার হয়ে যাবে –

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম

WWW বলতে কি বুঝায়?

এর অর্থ হল – world wide web যা কোন ওয়েব কনটেন্টকে টার্গেট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, এটি অপরিহার্য নয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ওয়েব এড্রেসের এই অংশকে অনুপস্থিত দেখা যায়। যেমন, বিশরার কথাই ধরুন –

ব্রাউজার থেকে বিশরার ওয়েব এড্রেস কপি করে টেক্সট ফাইলে পেস্ট করে দেখুন ‘www’ অংশটি পাওয়া যায় কিনা।

কিন্তু আপনার ডোমেইনের যদি কোন সাব ডোমেইন বানাতে চান তাহলে যে নামটি সবডোমেইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন তা ‘www’ এর অংশে গিয়ে বসবে।

যেমন – https://www.example.com; এখানে ‘example’ ডোমেইনটির সাবডোমেইন হিসাবে কথার কথা আপনি ‘my’ শব্দটি ব্যবহার করতে চান। তাহলে, এটি এমন দেখাবে: https://my.example.com ।

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা বেশ লম্বা হয়ে যাচ্ছে। এই ধাপে ডোমেইনের নাম কিভাবে নির্বাচন করতে হয় – এটিই ছিল আমাদের মুল আলোচনা। কিন্তু, বুঝার সুবিধার্থে মুল আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্যও তুলে ধরা হল।

যাহোক, এবার চলে যাই, এই তৃতীয় ধাপের মুল আলোচনায়। একটি সঠিক ডোমেইন খুজে পেতে আপনি নিচের কয়েকটি বৈশিষ্ট বিবেচনায় নিতে পারেন-

  • Domain Extension হিসাবে .com বা .org বা .net – এদের যে কোন একটি পছন্দ করুন। কারণ, এরা সবচেয়ে জনপ্রিয়।
  • ডোমেইনের নাম যত ছোট হয় তত ভাল।
  • এটি যেন generic না হয়ে brandable হয়। যা ভবিষ্যতে কাজে দিবে।
  • এমন ডোমেইন যা সহজে মনে থাকে এবং সহজে টাইপ করা যায়।
  • ডোমেইন নামে হাইফেন বা সংখ্যা না ব্যবহার করাই উত্তম। কারণ, ব্রাউজারে টাইপের সময় এগুলি বিরক্তির কারণ।
  • ডোমেনইনের ভিতর একটি কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিফলিত হয়।
  • স্বল্প মেয়াদের পরিবর্তে দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তা ভাবনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হন।
  • আপনার পছন্দের ডোমেইন খুজে না পেলে ডোমেইন নেম জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন।

এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে ডোমেইনের নাম নির্বাচন করুন। তারপর তা খালি থাকা সাপেক্ষে কিনে রেজিস্ট্রেশনের কাজ সম্পন্ন করুন। রেজিস্ট্রেশনের পর এটি আপনার নিজস্ব এক সম্পত্তি হয়ে যাবে। যতদিন বছর বছর নবায়ন করবেন, ততদিন আপনার মালিকানায় থাকবে।

Name Cheap কম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। রেজিষ্ট্রেশনের আগে দেখতে হবে আপনার পছন্দের ডোমেইটি ইতোমধ্যে কেউ কিনেছে কিনা। যদি না কিনে থাকে তাহলে ঐ নামে (যা আপনার পছন্দ) রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন।

আপনার পছন্দের ডোমেইনটি খালি আছে কিনা দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

চতুর্থ ধাপ: ওয়েব হোস্টিং কম্পানিতে একাউন্ট খুলুন

আপনার ব্লগ সাইটের ডোমেইন কেনার পর করণীয় কাজ একটি নির্ভরযোগ্য হোস্টি সার্ভিস খুজে বের করা। যার সার্ভারে আপনার ব্লগ হোস্ট করা হবে। ব্লগ হোস্ট করার অর্থ হল সেখানে আপনার ব্লগ সাইটের সমস্ত ফাইল সংরক্ষণ করা থাকবে। ইউজার যখন এই ব্লগ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পেতে চাবে তখন হোস্টিং সার্ভারে  তা সরবরাহ করবে।

এজন্য, ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম প্রসঙ্গের আলোচনার এই বিষয়টিও খুব গুরত্বপূর্ন।

আপনার সাইটের কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতা নির্ভর করে হোস্টি কম্পানির উপর। কেননা, হোস্টিং সার্ভিস গ্রহনের মাধ্যমে আপনার ব্লগ পাঠকদের নিকট অনলাইনে সবসময় 24/7  দৃশ্যমান থাকবে। যতক্ষণ, তাদের সার্ভার ডাউন থাকবে, আপনার সাইটও ঠিক ততক্ষণ পাঠকদের নিকট দৃশ্যমান থাকবে না।

যদি এমন কোন হোস্টিং কিনেন যার সার্ভিস ভাল নয়, তাহলে পরবর্তীতে সমস্যায় পরতে হবে। মনে করুন, এমন এক মোবাইল কম্পানি থেকে ফোন নিয়েছেন যেটি দিয়ে কোন ফোন কল রিসিভ করা যায় না।

মার্কেটে অনেক ভাল ভাল হোস্টিং সার্ভিস এর কম্পানি রয়েছে। যেখান থেকে আপনি খোজ খবর নিয়ে সাধ্যের ভিতর সবচেয়ে ভাল প্যাকেজটি গ্রহণ করতে পারেন।

আমি প্রায়, তিন বছর যাবত Namecheap থেকে হোস্টিং প্যাকেজ নিয়ে ব্যবহার করছি। তাতে আমার কাছে বেশ ভালই লাগছে। আমার মনে হছে- এদের হোস্টিং প্যাকেজের দাম তুলনামুলক কম।

এছাড়া, ব্লুহোস্টের কম্পানির হোস্টিং সার্ভিস এর উপরও আমার একটি রিভিউ আছে। সেটিও দেখে নিতে পারেন।

তবে, আমি যেহেতু নিজে, Namecheap থেকে হোস্টিং প্যাকেজ নিয়েছি, তাই আমি Namecheap কম্পানির হোস্টিং সার্ভিস কিভাবে গ্রহন করতে পারেন তা ধাপে ধাপে নিচে উল্লেখ করছি –

পঞ্চম ধাপ: হোস্টিং সার্ভারে ব্লগ ইনস্টল করুন

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম এর ধারাবাহিক আলোচনার এই পর্যায়টি বেশ সহজ। এখানে আপনাকে কোন বেগ পেতে হবে না। ওয়ার্ডপ্রেস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্লগিং সফ্টওয়্যার সম্পর্কে আগে কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছিল।

ধরে নেই, আগের ধাপগুলি ব্যবহার করে আপনি ইতোমধ্যে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনেছেন। এখন আপনার সেই হোস্টিং সার্ভারে ওয়ার্ডপ্রেস নামের ব্লগিং সফ্টওয়ার ইনস্টল করবেন।

মজার কথা হল, প্রচলিত বেশীরভাগ হোস্টিং সার্ভারে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগিং সফ্টওয়ার built in হিসাবে পাওয়া যায়।

হোস্টিং সার্ভারে আপনি one click installation এর মাধ্যমে খুব সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে নিতে পারেন। তার আগে আপনি যে ডোমেইনটি কিনেছেন তা হোস্টিং একাউন্টের কন্ট্রোল প্যানেলের Domain Addon ব্যবহার করে যোগ করে নিতে হবে।

এখন সেই ডোমেইনে আপনি one click installation ব্যবহার করে with just a single click ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে নিতে পারবেন।

ষষ্ঠ ধাপ: ব্লগ সাইট কাস্টোমাইজ করুন

আনার হোস্টিং একাউন্টে ব্লগিং সফ্টওয়ার (ওয়ার্ডপ্রেস) ইনস্টল করার পরই সেটি লাইভে চলে যাবে। ফ্রন্ট এন্ড থেকে ‘Hello World’ নামের সুভেচ্ছামুলক পোষ্ট দেখা যাবে। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ার্ডপ্রেসের ডিফল্ট থিম ইস্টলেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

এবার, আপনার কাজ হল, ডিফল্ট থিম পরিবর্তন করে অন্য কোন থিম ইনস্টল করে বা সেই ডিফল্ট থিমকেই আপনার পছন্দমত কাস্টোমাইজ করে চালিয়ে যাওয়া।

ওয়ার্ডপ্রেসের প্রচুর থিম রয়েছে যার ফ্রি বা পেইড উভয় ভার্সনই বাজারে সহজলভ্য। তবে, আমার পরামর্শ আপনি প্রথমে ফ্রি ভার্সন দিয়ে যাত্রা শুরু করুন। থিম কিভাবে কাস্টোমাইজ করতে হয় তার সম্পর্কে বেসিক আইডিয়া হয়ে যাবে।

সবচেয়ে বড় কথা, এর মাধ্যমে আপনার ব্লগিং এর উদ্দেশ্য পূরণ হবে। তারপর, যখন এর উপর আপনার একটি ধারণ জন্মেবে, তখন আপনি পেইড কোন থিম ব্যবহার করে আপনার সাইটিকে আরোও প্রফেশনাল করে তৈরি করতে পারেন।

সপ্তম ধাপ: কনটেন্ট লেখা শুরু করুন

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম এর শেষের দিকে চলে এলাম। এই ধাপ থেকে শুরু হবে আপনার মুল কাজ – কনটেন্ট তৈরি করা। ইংরেজিতে একটি কথা আছে – ‘Content is king’.

আপনার অডিয়েন্সকে ধরে রাখার জন্য ভাল কনটেন্টের কোন বিকল্প নেই। তবে, কনটেন্ট শুধু লিখলেই হবে না, তা যেন সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক হয় – সেদিকেও নজর দিতে হবে। ভাল ভাল কনটেন্ট দিয়ে সাইট ভরে ফেললেন, কিন্তু তা অডিয়েন্স পর্যন্ত পৌঁছেনা – এমনটি যেন না হয়। কারন, তাতে আপনি পরিশ্রমে ফল পাবেন না।

ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনার শুরুতে niche সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংকিং এর জন্য এটি বেশ গুরত্বপূর্ণ। আপনার বাছাই করা niche এর কোন টপিকসের উপর লিখবেন তার মাসিক সার্চ ভলিউম কত, keyword difficulties কেমন, মনিটাইজেশনের জন্য cost per click বা CPC রেট কেমন – ইত্যাদি বিষয় আগে থেকে জেনে কনটেন্ট তৈরি করলে সফলতা না আসার কোন কারণ থাকবেনা। এই বিষয়গুলি সম্পর্কে কনটেন্ট তৈরির আগে নিশ্চিত হতে হবে যাকে এক কথায় কিওয়ার্ড রিসার্স বলা হয়।

আজকের আলোচনা ইতোমধ্যে খুব লম্বা হয়ে যাওয়ায় অপর এক পোষ্টে কিওয়ার্ড রিসার্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অষ্টম ধাপ: SEO কাজ সম্পন্ন করে কনটেন্ট পাবলিশ করুন

সপ্তম ধপে যে কাজটি আপনি করলেন তা হল কিওয়ার্ড রিসার্স করে কনটেন্টের টপিক নির্বাচন যে টপিক এর উপর কনটেন্ট লেখা হবে। এই তো?

তাহলে, ধরে নিলাম আপনি যথাযথ গবেষণা করে লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন করেছেন এবং সে অনুযায়ি লিখেও ফেলেছেন। আদর্শগতভাবে, আপনার একটি একটি কনটেন্ট কমপক্ষে ৭০০ শব্দ বিশিষ্ট হওয়া চাই।

যাহোক, এবার আপনার কাজ হল, যে কনটেন্ট লিখেছেন তা পাবলিশ করা। কিন্তু তার আগে যে কাজটি করতে হবে তা হল SEO কাজ সম্পন্ন করা। তিন ধরণের SEO কাজ রয়েছে, তার মধ্যে কন্টটেন্ট অপটিমাইজ করার জন্য যে SEO করতে হয় তাকে on-page optimization বলে।

এই ধরণের SEO এর ক্ষেত্রে মুল যে কাজটি করতে হয় তা হচ্ছে keyword placement. অর্থাৎ আপনার niche related যে কিওয়ার্ড ব্যবহার করে কিওয়ার্ড রিসার্স করেছেন সেই কিওয়ার্ডকে নিয়ম অনুসারে আপনার লেখা কনটেন্টের মাঝে বসাতে হবে।

কনটেন্টের উপর keyword placement করার নিয়ম বা on-page ‍SEO optimization কিভাবে করা হয়, তার উপর পৃথক একটি পোষ্টে আলোচনা করব।

বন্ধুগন, ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম নিয়ে এ পর্যন্ত যত আলোচনা হল, আশা করছি তা বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন বিষয়ে প্রশ্ন থাকে, নি:সংকোচে কমেন্ট করে জানাবেন।

নবম ধাপ: ব্লগ সাইট প্রোমোট করুন

আলোচনার শেষ ধাপে চলে এলাম। এই পর্যায়ে, যেহেতু আপনার ব্লগটি নতুন, তাই এটিকে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের মাঝে প্রোমোট করতে হবে।

SEO কাজ, এটিও প্রমোশনের একটি অংশ। তবে, SEO কাজের আউটপুট পেতে সময় লেগে যায়। কিওয়ার্ডর প্রতিযোগীতা কেমন তার উপর ভিত্তি করে অনেক সময় ৪-৫ মাস বা তার চেয়েও বেশী সময় লেগে যেতে পারে।

আবার যদি, কিওয়ার্ড রিসার্স ঠিকমত না হয়, ধরুন এমন এক টপিকস নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেছেন যার keyword বা SEO difficulties অনেক বেশী, তাহলে আগামি কয়েক বছরেও অরগানিক্যালি তা সার্চ ইঞ্জনে র‌্যাংক হবে কিনা সন্দেহ থেকে যাবে। কারন, নতুন ব্লগার হিসাবে আপনার নতুন ব্লগ সাইটের ডোমেইন অথারিটি থাকবে শূন্য বা বড়জোর এক,  অথচ ডোমেইন অথারিটির সর্বোচ্চ মান হল একশত।

ডোমেইন অথারিটি কোন ব্লগ সাইটের একটি গুরত্বপূর্ণ র‌্যাংকিং ফ্যাক্টর। এটির উপর অন্য এক পোষ্টে বিষধ আলোচনা হবে।

বন্ধুগন, ব্লগ সাইট খোলার নিয়ম প্রসঙ্গে আলোচ্য পোষ্টের তথ্যগুলো কেমন লাগল কমেন্ট করে জানাবেন। ভাল লাগলে আমাদের ফেসবুক পেজ-এ একটি লাইক দিয়ে দিন।

ধৈর্য সহকারে এই দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আরোও দেখুন – কিভাবে ওয়েব হোস্টিং কাজ করে