Last updated on May 9th, 2023 at 12:18 pm

Omega 3 fatty acid আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড। মানব দেহ চর্বি জাতীয় খাদ্য যা আমরা খেয়ে থাকে সেখান থেকে অধিকাংশ ফ্যাটি এসিড তৈরি করতে পারে। তবে, কিছু কিছু ফ্যাটি এসিড এমন রয়েছে যা আমাদের দেহ তৈরি করতে পারে না। ফলে, বাহিরের খাদ্য খেয়ে তার চাহিদা পূরণ করতে হয়।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড হল তারই উদাহারণ। আমাদের দেহে এটি তৈরি হতে পারে না বলে খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে তার চাহিদা নিবারণ করতে হয়।

যে সব ফ্যাটি এসিড দেহে তৈরি হয় না, তার অভাব খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে পূরণ করতে হয়; তাদের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড বলে। তবে, এর অভাব পূরণের জন্য ঐসব খাদ্য বেছে নিতে হবে যা উক্ত ফ্যাটি এসিডের উৎস হিসাবে পরিগণিত।

Omega 3 fatty acids এর কাজ

এরা দেহের কোষ প্রাচিরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই কোষ প্রাচিরে বিদ্যমান রিসিপ্টরের কার্যাবলীর উপর এই ফ্যাটি এসিড প্রভাব বিস্তার করে।

দেহের হরমন উৎপাদনের সূচনা হয় omega 3 fatty acid এর মাধ্যমে। যে হরমন বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করে, যেমন-

  • Blood clotting বা রক্ত জমাট প্রতিহত করা
  • রক্তনালীর সংকোচন-প্রসারনে সহায়তা করা
  • ইনফ্লামাশেন বা প্রদাহ
  • কোষের রিসিপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে জেনেটিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করা। এই কাজের ফলে, ইহা হৃদরোগ, স্ট্রোক, আরথ্রাইটিস, একজিমা, lupus প্রভৃতি রোগের প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
  • ক্যানসার রোগে প্রতিরোধমুলক ভূমিকা পালন করে।

Omega 3 fatty acid কয় প্রকার

Omega 3 fatty acids  হল পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের পরিবার ভূক্ত। এই ফ্যাটি এসিড তিন ধরণের হয়, যথা-

Alpha-linolenic acid (ALA)

Omega 3 fatty acids এর মধ্যে এই গ্রুপটি খাদ্যে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ইহা সাধারণত: উদ্ভিদজাত উৎস থেকে আসে। আমাদের শরীর এর কিছু অংশ EPA এবং DHA -তে রুপান্তরিত করতে পারে, যার পরিমান খুবই কম। সেজন্য, এর অধিকাংশই দেহের শক্তি সরবরাহে ব্যবহৃত হয় অথবা ভবিষ্যতে শক্তির যোগান দিতে দেহে ফ্যাট হিসাবে সঞ্চিত থাকে।

Eicosapentaenoic acid (EPA)

EPA প্রাণিজাত উৎস মাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এজন্য মাঝে মাঝে একে marine omega-3s হিসাবে অভিহিত করা হয়। দেহের সুক্ষ্ম পর্যায়ে signaling molecules তৈরিতে এটি কাজে লাগে। এমন এক মলিকুলের নাম eicosanoids যা শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কর্মসম্পাদানে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি দেহের inflammation কমাতেও এটি কাজ করে।

Docosahexaenoic acid (DHA)

EPA এর মত ইহাও প্রধানত মাছ জাতীয় প্রাণিজ খাদ্যে পাওয়া যায়। এজন্য এটিও marine omega-3s  নামে পরিচিত। আমাদের দেহের ত্বক ও চোখের রেটিনার খুব গুরত্বপূর্ণ গঠনগত উপাদান এই ফ্যাটি এসিড। শৈশব বয়স থেকে এটি খাওয়ানো হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও দৃষ্টি শক্তির উন্নতি সাধন হয়।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার

Omega 3 fatty acids এর প্রকারভেদে এর উৎস নিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। যা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে-

Alpha-linolenic acid (ALA) এর উৎস

  • Vegetable oils
  • বাদাম জাতীয় খাদ্য পণ্য বিশেষ করে walnuts বা আখরোট,
  • Flax seeds বা তিসির বীজে,
  • তিসির তেলে,
  • Canola oil
  • Soybean oil
  • Chia seeds
  • সবুজ শাক সবজি,
  • তৃণভোজী প্রাণির চর্বি ইত্যাদি।

Eicosapentaenoic acid (EPA) এবং Docosahexaenoic acid (DHA) এর উৎস একই রকম। বিভিন্ন প্রকার মাছ, sea food বা সামুদ্রিক খাদ্যে অধিক পরিমানে পাওয়া যায়।

যেসব খাদ্যে EPA এবং  DHA নামের ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় তা নিম্নরুপ-

  • তৈলাক্ত ধরণের মাছ, যেমন- salmon, mackerel, herring, sardines, tuna ইত্যাদি;
  • Cod liver oil: এটি হল ফুড সাপ্লিমেন্ট যা codfish এর যকৃত থেকে তৈরি করা হয়। এই তৈলে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ছাড়াও আপনি পাবেন ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-এ।
  • Seafood বা সামুদ্রিক খাদ্য: যেমন, oysters যেখানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ছাড়াও পৃথিবীর সকল খাদ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশী zinc থাকে। সামুদ্রিক খাদ্যের মধ্যে চিংরি মাছে এই ধরণের ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।

Omega 3 fatty acids এর অভাবে কি হয়?

আমাদের দেহ যদি তার নির্ধারিত চাহিদার ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে এর অভাবজনিত রোগের বিভিন্ন প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।

এই অবস্থায় অনেক জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য যে সব খাদ্যে এর প্রাচুর্যতা রয়েছে সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

নিচে এই ফ্যাটি এসিডের অভাবজনিত কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করা হল-

  • ত্বকের সুস্কতা: আমরা জানি শরীরের কোষসমুহের সঠিকভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য ফ্যাটি এসিডের গুরত্ব অপরিসীম। এই কোষগুলির মধ্যে ত্বকের কোষও অন্তর্ভুক্ত। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড skin barriers এর অখন্ডতা ধরে রাখতে কাজ করে। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বকের মধ্যকার উত্তেজক বা ক্ষতিকর পদার্থ দুরীকরণে সহায়তা করে। এজন্য, দেহে এর অভাব হলে সর্বপ্রথম এই ত্বকের সুষ্কতা ও irritation দেখা দিবে।
  • বিষণ্ণতা: Omega 3 fatty acid মস্তিষ্কের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। যা স্নায়ুকোষের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়া, এটি প্রদাহ বা inflammation এর বিরুদ্ধেও কাজ করে। যদিও এই মানসিক সমস্যার জন্য আরোও অন্যান্য ফ্যাক্টর দায়ী থাকতে পারে। তবে, এই ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য খেলে বিষন্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগের ঝুঁকি কমে যাবে।
  • চোখ শুকিয়ে যাওয়া: চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই ফ্যাটি এসিডের ভূমিকা আছে। চোখের আদ্রতা বজায় রাখতে এটি কাজ করে। চোখের শুষ্কতা জাতীয় যদি কোন সমস্যা থাকলে আপনি এটি খেয়ে দেখতে পারেন।
  • দেহের অস্থিসন্ধিতে কঠোরতা ও ব্যাথা লাগা: মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিকাংশ স্থলে এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। এই অবস্থা osteoarthritis রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যার ফলে, হাড়ের উপরিভাগে cartilage নামের হাড়ের চেয়ে নরম যে আবরণ থাকে তা ক্ষয় যেতে থাকে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার খেয়ে আপনি এই অবস্থা কমিয়ে আনতে পারেন।
  • চুলের সমস্যা: যেহেতু, এই ফ্যাটি এসিড ত্বকের আদ্রতা রক্ষায় কাজ করে, তার ধারাবাহিকতায় চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর অভাবে চুলের আদ্রতা হ্রাস পায়, চুলের গঠন, সম্পূর্ণতা, শক্তিমত্তায় ও ঘনত্বের অবনতি হয়।

Omega 3 fatty acids দৈনিক কতটুকু খাবেন?

পুষ্টিবিদগণ এখনোও এর উপর সুনির্দিষ্ট পরিমান নির্ধারণ করে নি শুধুমাত্র ALA ছাড়া। তবে, মানুষের লিঙ্গ ও বয়স ভেদে দৈনিক ALA গ্রহনের পরিমান কম-বেশী হতে পারে।

দৈনিক যে পরিমান ALA খাওয়ার পরামর্শ রয়েছে তা নিম্নরুপ-

  • ১২ মাস বয়সের নিচে: ০.৫ গ্রাম
  • ০১ থেকে ০৩ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে: ০.৭ গ্রাম
  • ০৪ থেকে ০৮ বছরের মধ্যে বয়সের ক্ষেত্রে: ০.৯ গ্রাম
  • ০৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের বালক হলে: ১.২ গ্রাম
  • ০৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের বালিকা হলে: ১.০ গ্রাম
  • ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোর: ১.৬ গ্রাম
  • ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোরি: ১.১ গ্রাম
  • প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য: ১.৬ গ্রাম
  • প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ক্ষেত্রে: ১.১ গ্রাম
  • গর্ভবতি মহিলার জন্য: ১.৪ গ্রাম
  • স্তন্যদানকারি মহিলার জন্য: ১.৩ গ্রাম

বাজারে Omega 3 fatty acids এর সাপ্লিমেন্ট আছে?

এই ফ্যাটি এসিডের যে সব সাপ্লিমেন্ট বাজারে দেখা যায়, তারা হল-

  • মাছের তৈল বা fish oil
  • Krill oil
  • Cod liver oil
  • Algal oil যা algae নামের উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়, ইত্যাদি।

Omega 3 fatty acid খাওয়ার নিয়ম

ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবারের সাথে সাথে বাজারে এর সাপ্লিমেন্ট জাতীয় পণ্যও সহজলভ্য রয়েছে। তবে, আপনার পক্ষে সম্ভব হলে সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে যে সব খাদ্যে এটি পাওয়া যায় ঐসব খাদ্য বেছে নেওয়া ভাল।

কারণ, সাপ্লিমেন্টে অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর শুনা যায়। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আর, প্রাণিজ উৎসের ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবারের মধ্যে মাছ অন্যতম। মাছ খাওয়ার সময় এটি না ভেজে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যেহেতু EPA এবং DHA দৈনিক কি পরিমান খেতে হয় তা এখনোও বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক নির্ধারন করা হয়নি; তাই এর চাহিদা পূরণের জন্য সপ্তাহে অন্তত: দুই দিন তৈলাক্ত মাছ খাওয়া প্রয়োজন।