গার্মেন্টস কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা Garments QC – বিষয়টির উপর কিছু তথ্য নিয়ে পুনরায় চলে এলাম আপনাদের মাঝে। আলোচ্য পোষ্টে মুলত, তৈরি পোশাক পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাজটি কিভাবে করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

পোষ্টের শুরু কোয়ালিটির উপর কিছু প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে। কোয়ালিটি কাকে বলে, কত প্রকার – এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচেরে লিংকে ক্লিক করে ভিজিট করুন।

আরোও পড়ুন কোয়ালিটি বলতে কি বুঝায় ও এর প্রকারভেদ।

কোয়ালিটি এর অর্থ হল কাস্টোমার যাতে আপনার পণ্য ব্যবহার করে সন্তুষ্ট থাকে। আপনি যদি কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পর্যাপ্তভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াতে পারে। এই কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পূরণের জন্য আপনাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

এজন্য আপনার হাতে কাস্টোমারের পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য থাকা প্রয়োজন যে তারা কি ধরণের পোশাক পরিধান করতে চায়, তার ডিজাইন কেমন হবে, স্পেসিফিকেশন কি এবং কিভাবে উৎপাদন করা যাবে – ইত্যাদি। বিশেষ করে,  নতুন প্রোডাক্টস তৈরির সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদিত পোশাকের কোয়ালিটি বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, এটি পরিধানে আরামদায়ক হবে কিনা, এর টেকসই কেমন হবে, রঙ উঠতে পারে কিনা, এর ডিজাইন কেমন – ইত্যাদি। তবে, কোয়ালিটি নিশ্চিতের সময় দামের বিষয়টিও বিবেচনায়া নিতে হবে, যেন তা নাগালের বাইরে চলে না যায়।

আমরা সহজে বুঝতে পারি যে, কোয়ালিটি যে কোন ব্যবসার সফলতার জন্য একটি মুল উপাদান। কাস্টোমার তার কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে খারাপ মানের কোন জিনিস ক্রয় করতে যাবেনা। হয়ত, ভূলবশত: একবার কি দুইবার, তার বেশি নয়। এক দুইবার কিনে ব্যবহারের পর যখন পণ্যের কোয়ালিটি সম্পর্কে জেনে যাবে বা কাস্টোমার যদি এটি ব্যবহার করে সন্তুষ্ট না হয়, পরবর্তিতে সে আর ঐ কম্পানির দিকে অগ্রসর হবে না। এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে, কম্পানি তার ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না। তাই, কোয়ালিটি এটি অতীব গুরত্বপূর্ণ ইস্যু যার ব্যাপারে সকল উদ্যোক্তাকেই উপযুক্ত তৎপর হতে হবে।

পোশাক জাতীয় পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য আপনাকে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়েও কাজ করতে হবে।

গার্মেন্টস শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই যখন আপনি নির্ধারিত পোশাকটির জন্য সমস্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করবেন। যেমন, পোশাকের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল তার জন্য উপযুক্ত ফেব্রিক বা কাপড় নির্বাচন করা। এরপর পোশাকের অন্যান্য উপকরণের কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য করতে হবে। সমস্ত কাঁচামাল নির্বাচনের সময় তার উৎস খুব ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে যেন তা মানসম্পন্ন হয়।

টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস পণ্যের মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  নির্ভর করে তার ফেব্রিকের গুনগত মানের উপর। যেমন, কি জাতীয় ফাইবার বা ইয়ার্ন দিয়ে ফেব্রিক তৈরি করা হয়েছে, এর রঙের স্থায়িত্ব কেমন, ফেব্রিকের উপরিভাগের ডিজাইন কেমন এবং সবশেষে উৎপাদিত পোশাক পণ্যের উপর।

তবে, রপ্তানির ক্ষেত্রে বায়ার প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন সামনে রেখে পোশাক তৈরির সব ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া, গার্মেন্টস শিল্পের আর একটি গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল। এর দ্বারা বুঝানো হয়- পণ্যটি তার স্পেসিফিকেশন মোতাবেক তৈরির সময় কোয়ালিটিরে আদর্শ মানদন্ডের সমস্ত শর্ত পূরণ করা হয়েছে। যার ফলে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এভাবে পোশাক উৎপাদনের সময় খরচের হিসাবটিও মাথায় রাখতে হবে যাতে প্রোফিট মার্জিনের উপর প্রভাব না পরে।

গার্মেন্টস পোশাকের কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা garments qc

গার্মেন্টস পোশাক পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক থোকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি যেহেতু পণ্যের ত্রুটি বা ডিফেক্টের সাথে সম্পর্কিত তাই এখানে উৎপাদিত পণ্যের কোন সমস্যা রয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়।

নিচে কয়েকটি সমস্যার নাম উল্লেখ করা হল-

১. ফেব্রিক ডিফেক্ট:

পোশাক উৎপাদনের সময় ফেব্রিক বা কাপড়ের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেমন crease mark, knots, ইত্যাদি। এছাড়া, কাপড় ডাইং বা প্রিন্টিং এর সময়েও ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে।

২. সেলাইয়ে ডিফেক্ট:

কাপড় কাটার পর যখন সেলাই করা হয় তখনও বেশ কিছু ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে, যেমন সেলাই বাদ পরে যাওয়া, অসম সেলাই, open seam, seam puckering ইত্যাদি।

৩. কালার ডিফেক্ট:

এক্ষেত্রে অনুমোদিত নমুনার সাথে উৎপাদিত পোশাকের রঙে তারতম্য দেখা দিতে পারে। এজন্য, যদি কালার কম্বিনেশন সঠিক না হয় তখন এটি দেখা দিতে পারে। আবার কাপড়ের রঙের সাথে যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হবে তার রঙ যদি একই রকম না থাকে, তখনও এ ধরণের ত্রুটি তৈরি হয়।

৪. সাইজের ডিফেক্ট:

বায়ার পদত্ত স্পেসিফিকেশনের সাইজের সাথে তৈরি পোশাকের সাইজ যদি না মিলে, তখন এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।

৫. অন্যান্য সমস্যা:

অন্যান্য ত্রুটির মধ্যে যেমন বাটন, হোল, জিপার, সেলাই সুতা ঝুলে থাকা, বাটন বাদ পরে যাওয়া, জিপার খাটো হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

গার্মেন্টস পোশাকের কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রক্রিয়া

আগেই বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ শুরু এর কাঁচামাল সংগ্রহের ধাপ থেকে। কাজেই, এই ক্ষেত্রে, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কাজটি শুরু হবে পোশাকের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে এবং শেষ হবে যখন পোশাকটি সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত হয়ে যাবে তখন।

কোন কোন জায়গায় কোয়ালিটি চেক করা হয়ে তা নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হল-

পোশাকের কাঁচামাল ইনস্পেকশন

আপনার গোডাউনে যখন পোশাক তৈরির কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল চলে আসবে, তখন খুব ভাল করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সেখানে কোন প্রকার ত্রুটি বা ডিফেক্ট রয়েছে কিনা। আপনাকে কাপড়ের কমপক্ষে ১০% পরীক্ষা করতে হবে। কাপড়ের পাশাপাশি কাঁচামাল যেমন, লেস, বাটন, জিপার ইত্যাদি প্রয়োজন হলে অনুমোদিত মানদন্ড অনুসারে ল্যবরেটরিতে পরীক্ষা করা যেতে পারে। এগুলো পরীক্ষা করার বেশ কিছু প্যারামিটার থাকে যেমন, ফেব্রিকের বুনন কাজ, GSM ( প্রতি স্কয়ার মিটারে কত গ্রাম ), থ্রেড কাউন্ট, ইয়ার্ন কাউন্ট, ছিড়ে ফেলার শক্তি, গঠন, হাতে ধরার অনুভূতি, কালার ফাস্টনেস ইত্যাদি।

প্রক্রিয়াকালিন কোয়ালিটি কন্ট্রোল

পোশাক ‍উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে কিছু ক্রিটিকাল পয়েন্ট থাকে যে পয়েন্টগুলোতে পোশাক সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হয়। যেমন, কাপড় কাটার সময় দেখতে হবে স্পেসিফিকেশনের সাথে মিলছে কিনা, ঠিকমত সেলাই কাজ চলছে কিনা, সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতার রঙ আর কাপড়ের রঙের মধ্যে লক্ষণিয় পর্যায়ে তারতম্য আছে কিনা ইত্যাদি। তারপর, ফিনিশিং কাজ ঠিক মত হচ্ছে কিনা – এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।

কাপড় কাটার সময় দু’টি জিনিস খেয়াল রাখতে হয়- এক হল কাপড় কাটার জন্য টেবিলের উপর ছড়িয়ে দেওয়া ও দুই- কাপড় কাটার পর। এই দুই সময়ে কাপড়ে কোন ডিফেক্ট থাকলে তা সহজেই ধরা পরে।

সেলাইয়ের সময়ও কয়েকটি বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেমন সেলাই সোজা লাইন বরাবর চলে কিনা, সেলাইয়ের পর কাপড়ে কোন টান লেগে থাকে কিনা, প্রতি ইঞ্চিতে স্টিচের সংখ্যা, মেশিনের নিডল কেমন, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়।

ফিনিশিং সেকশনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল

তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফিনিশিং শাখার গুরত্ব অনেক। কারণ এখান থেকে প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হয়। এজন্য, কোন প্রকার ডিফেক্ট রয়েছে কিনা তা পুনর্বার ভাল করে দেখতে হবে। যেমন, সেলাইগত ডিফেক্ট, ডিজাইন, পরিমাপ সঠিক কিনা – এই সব বিষয়।

ফাইনাল প্রোডাক্টের চুড়ান্ত পরীক্ষা

পোশাক উৎপাদনের সকল ধাপ সমাপ্তির পর লট থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এবং অুনমোদিত নমুনার সাথে পুরোপুরিভাবে মিলে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক প্যারামিটার থাকে যার উপর ভিত্তি করে এই পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

মানের গ্রহনযোগ্য মাত্রা বা acceptable quality level(AQL)

তৈরি করা পোশাকের সম্পূর্ণ লট প্যাকেটজাত করার পর, কোয়ালিটি ম্যানেজার AQL এর উপর ভিত্তি করে একটি অডিট করে। এই অডিট রেজাল্টের উপর কোয়ালিটি ম্যানেজার যদি সন্তুষ্ট হয়, তখন চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য বায়ারের নিকট পাঠানো হবে। র‌্যানডম স্যামপ্লিং এর মাধ্যমে AQL নির্নয়ের পর বায়ার উক্ত লটের পোশাক হয় গ্রহণ করবে বা রিজেক্ট করবে। নমুনা পরীক্ষার পর ডিফেক্টের হার যদি AQL সীমার মধ্যে থাকে, তাহলে তা গৃহিত হবে, অন্যথায় পরিত্যাগ করা হবে।

আরোও পড়ুন –