Last updated on November 25th, 2023 at 04:20 pm

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি পন্য ও সেবা উৎপাদনিকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব গুরত্বপূর্ন। এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন প্রোডাক্টস বাজারে ছেড়ে কাস্টোমারের আস্থা অর্জন করা যায়। এখানে এই বিষয়ের উপর একটি প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্য আলোচনা করা হবে।

আলোচ্য পোস্টে কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাকে বলে, এর গুরত্ব কেমন, কত প্রকার হতে পারে – ইত্যাদি বিষয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হবে।

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাকে বলে?

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর সংক্ষিপ্ত রুপ QMS. এটি হল যে কোন ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতির কার্যক্রমের সমষ্টি যার মাধ্যমে মান সম্পন্ন সেবা বা পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ইহা কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। ইহা প্রতিষ্ঠানের নীতিগত বিষয়াবলি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ডকুমেন্টেশেন, সম্পদ ও লজিস্টিকস ইত্যাদির উপর তথ্য প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।

আরোও একটু সহজভাবে বলতে গেলে, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হল কোন কম্পানি বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশেন সিস্টেম যেখানে প্রতিষ্ঠানটি তার কোয়ালিটি নীতিসমুহ কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তার উল্লেখ থাকে। QMS ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমসমুহের মাঝে সমন্বয় সাধন করে এবং প্রয়োজনিয় দিক নির্দেশনা প্রদান করে। যার মাধ্যমে টেকসইভাবে কাস্টোমার এর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং তা ধরে রাখা যায়।

ISO 900 কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি উদাহারণ। ISO 9001: 2015 হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু শর্তাবলী যা মেনে প্রতিষ্ঠানসমুহ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম নীতি ও পদ্ধতি তৈরি করে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে উক্ত কম্পানি তার পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে। যা দিয়ে কাস্টমারের চাহিদা পূরণ হয় এবং পন্য ও সেবার মানের বিষয়ে কাস্টমার সন্তুষ্ট থাকে। কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর standard বা মানদন্ড International Organization for Standardization কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয় যা অধিকাংশ সদস্য দেশ gold standard হিসাবে মেনে চলে।

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কেন গুরত্বপূর্ন?

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (QMS) যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ। কেননা, কোন প্রতিষ্ঠান কাস্টোমারের আস্থা অর্জনের জন্য উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সব কাজ করে তার সমস্ত কার্যক্রম এখানে অন্তর্ভূক্ত থাকে। আর এজন্যই, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই QMS এর ভিতর পন্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি উল্লেখ থাকে। যার ফলে, ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য স্টেকহোল্ডার এবং কাস্টোমারের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব হয়। ইহাই হল কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধনের মুল ভিত্তি ও চাবিকাঠি।

এজন্য, একটি QMS প্রস্তুত করা প্রয়োজন যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কত প্রকার

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কতগুলো স্ট্যান্ডার্ড আছে যার শর্তসমুহ পূরণ সাপেক্ষে QMS তৈরি করতে হয়। ISO 9001 হল এমন এক প্রকার স্ট্যান্ডার্ড যার প্রয়োজনিয় উপাদান ও শর্তগুলো সারাবিশ্বেই সমাদৃত। এর মধ্যে সমস্ত পলিসি, পদ্ধতি, ডকুমেন্টেশন, রেকর্ড ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে যা অনুসরণ করে একটি ভাল ও টেকসই QMS তৈরি করা যায়। ISO 9001 এই বিষয়ে সর্বোত্তম চর্চার উপর নির্দেশনা প্রদান করে।

QMS তৈরির অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ড গুলো ব্যবসার ধরণ অনুযায়ি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন, এরোস্পেস ইনডাস্ট্রির  জন্য AS9100, মেডিক্যাল ডিভাইসের জন্য ISO 13485 এবং অটোমোবাইল ইনডাস্ট্রির জন্য IATF 16949 ইত্যাদি।

তবে, উপরের সব স্ট্যান্ডার্ডের মুল ভিত্তি হল ISO 9001 ‍স্ট্যান্ডার্ড। তবে, প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ড শিল্পের ধরণ অনুযায়ি অতিরিক্ত কিছু বাধ্যতামুলক শর্ত জুরে দিতে পারে।

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রিনসিপালসমুহ

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ISO 9001 সাতটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। যা নিম্নরুপ-

১. Customer focus: কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রাথমিক ফোকাস এরিয়া হল কাস্টোমারের চাহিদা পূরণ করা এবং কাস্টোমারের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা অনবরতভাবে করে যাওয়া।

সুবিধা:

  • কাস্টোমার ভেল্যু বৃদ্ধি করে।
  • কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
  • কাস্টোমারের আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
  • একই কাস্টোমারের সাথে বার বার ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে।
  • বিক্রয় ও মার্কেট সেয়ার বৃদ্ধি করে।

২. Leadership: এখানে কম্পানির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একটি কমিটমেন্ট বা প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হয় যা কাজ করার দিক নির্দেশনা দেয় এবং কর্মরতদের কাজের প্রতি মনোনিবেশ তৈরি করে।

সুবিধা:

  • প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি বিষয়ক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখে।
  • সংস্থার বিভিন্ন বিভাগের সাথে সঠিকভাবে সমন্বয় সাধনের সুযোগ সৃষ্টি করে।
  • প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ের জনবলের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।
  • কাংখিত ফলাফল প্রাপ্তির স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরি করে।

৩. Engagement of people: প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে দক্ষতাসম্পন্ন ও কর্মঠ জনবলের ব্যবস্থা করা যা প্রতিষ্ঠানের মান সম্পন্ন পণ্য ও সেবা তৈরির সক্ষমতা তৈরি করতে পারে।

সুবিধা:

  • প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি বিষয়ক উদ্দেশ্যে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়।
  • জনবলের মাঝে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির পায়।
  • ব্যক্তিগত দক্ষতা ও সৃজনশীলতা তৈরি হয়।

৪. Process approach: কোয়ালিটি কেন্ট্রোল সিস্টেমের যে process অনুসরণ করা হবে তা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা সঠিক ভাবে বজায় রাখা যায়।

সুবিধা:

  • পন্য বা সেবা উৎপাদন মুল প্রক্রিয়ার উপর ফোকাস করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়।
  • প্রসেস ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবাহার নিশ্চিত করা যায়।
  • কম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের আস্থা বৃদ্ধি পায়।

৫. Improvement: প্রতিষ্ঠানের চলমান কর্মদক্ষতা বজায় রাখা এবং নতুন নতুন সুযোগ তালাশ করা।

  • প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার উন্নতি হয়।
  • কাস্টোমার আস্থা বেড়ে যায়।
  • পন্য ও সেবার মধ্যে নতুনত্ব তৈরি হয়।

৬. Evidence based decision making: ব্যবসায়িক পণ্য বা সেবা সম্পর্কিয় পূর্বের ঘটনা বিশ্লেষন, তথ্য সংগ্রহ ও সংগৃহিত তথ্যের যথাযথ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

  • সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়া সঠিক হয়।
  • উদ্দেশ্য অর্জনে সহয়ক হয় এমন কার্যক্রম প্রস্তুত করা যায়।
  • অতিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতার মান বৃদ্ধি পায়।

৭. Relationship management: সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

  • প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  • প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।
  • স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহ বেড়ে যায়।