Last updated on May 9th, 2023 at 01:10 pm

ভিটামিন ই শরীর স্বাস্থের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হলাম। ভিটামিন ই একটি ফ্যাট সলিউবল বা চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন যা চর্বি জাতীয় খাদ্যের ‍উপস্থিতি ব্যাতীত আপনার শরীরে ক্ষুদ্রান্ত থেকে রক্তে শোষণ হতে পারে না। ইহা শরীরে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন হয়। এজন্য একে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ভিতর গণ্য করা হয়। এই ভিটামিন বিভিন্ন প্রকার খাদ দ্রব্যে পাওয়া যায়।

শরীরের ভিতর ইহা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। যা free radicals বা মুক্ত পরমানুর ক্ষতির হাত থেকে দেহের কোষসমুহকে রক্ষা করতে কাজ করে। খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্যের সারাংশ আমাদের শরীরে কোষের ভিতর রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যখন শক্তিতে রুপান্তরিত হয় তখন এই ধরণের মুক্ত পরমানু তৈরি হয়। এছাড়াও, পরিবেশগত দুষণ যেমন, সিগারেটের ধোঁয়া, বায়ু দুষণ, সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ইত্যাদি থেকেও আপনি মুক্ত পরমানু পেতে পারি। এই মুক্ত পরমানু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যা হৃদরোগ ও ক্যানসারসহ আরোও বিভিন্ন জটিল রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

মুক্ত পরমানু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।

এছাড়া, আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে এই ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ অবস্থা ভাল হলে বিভিন্ন অনুজীব যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া আপনাকে আক্রমন করে সহজে জয়ী হতে পারবে না। ইহা দেহের রক্তনালী প্রসার করণে কাজ করে। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও এর ভূমিকা রয়েছে।

ভিটামিন ই সাধারণত: লিভারে জমা হয়। শরীরের প্রয়োজন হলে লিভার থেকে ইহা রক্ত স্রোতে সরবরাহ হয়।

এই ভিটামিন প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে আট প্রকারে বিদ্যমান আছে। তার মধ্যে আমাদের দেহ মুলত: আলফা-টোকোফেরল ব্যবহার করে এর চাহিদা পূরণ করে।

এই আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন ই কোন কোন খাদ্যে বেশি থাকে, এর উপকারিতা, দৈনিক কতটুকু খেতে হয়, কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন- শুরু করি।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার

একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের এই ভিটামিনের প্রকৃতিজাত উৎসের দিকে বিশেষ করে উদ্ভিদজাত উৎসের প্রতি গুরত্ব দিলে ভাল।

. Wheat Germ এর তৈল: সবচেয়ে বেশী ভিটামিন ই এই ধরণের তৈলে পাওয়া যায়। ইহা দিয়ে আপনি রান্নার কাজ সেরে ফেলতে পারেন অন্যান্য প্রচলিত তৈল এর বিকল্প হিসাবে। তবে, অতি তাপমাত্রায় রান্না করলে এর ভেতরের গুনগত মান কমে যাবে। বিশেষ করে ভিটামিনের পরিমান কমে যাবে বা মান নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রাতি টেবিল চামুচ বা ২০ গ্রাম Wheat Germ তৈল এর ডেইলি ভেল্যু ১৩৫%.

২. সানফ্লাওয়ার বীজ: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের খুব ভাল একটি উৎস হচ্ছে সানফ্লাওয়ার বীজ। এক আউন্স পরিমান এই বীজে আপনি ৭.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই পেতে পারেন যা আপনার দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক। আর সানফ্লাওয়ার তৈলে আপনি পুরো বীজের মাত্র এক তৃতীয়াংশ এই ভিটামিন পাবেন। কাজেই তৈলের পরিবর্তে বীজ খাওয়াই শ্রেয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম এই বীজে আপনি নিচের পুষ্টি উপাদান সমুহ পেতে পারেন-

  • ভিটামিন-ই: ৩৫.১৭ মিলিগ্রাম;
  • ফইবার: ৮.৬ গ্রাম;
  • প্রোটিন: ২০.৭৮ গ্রাম;
  • পটাসিয়াম: ৬৪৫ মিলিগ্রাম;
  • মেগনেসিয়াম: ৩২৫ মিলিগ্রাম;
  • জিংক: ৫ মিলিগ্রাম;

৩. এলমন্ড বা কাজুবাদাম:

কাজুবাদামে শুধু যে এই ভিটামিনই অধিক পরিমানে তা নয়। ইহা আপনার ক্যালরির খুব ভাল এক যোগানদাতাও বটে। ১০০ গ্রাম কাজুবাদামের পুষ্টি উপাদান নিম্নরুপ:

  • ভিটামিন-ই: ২৫.৬৩ মিলিগ্রাম;
  • ফইবার: ১২.৫ গ্রাম;
  • প্রোটিন: ২১.১৫ গ্রাম;
  • পটাসিয়াম: ৭৩৩ মিলিগ্রাম;
  • মেগনেসিয়াম: ২৭০ মিলিগ্রাম;

৪. চিনাবাদাম বা peanuts: ইহা বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় এক খাবার। এর পুষ্টিগুনও বেশ ভাল। প্রতি ১০০ গ্রামে এর পুষ্টি উপাদানসমুহ হচ্ছে-

  • ভিটামিন-ই: ৪.৯৩ মিলিগ্রাম;
  • ফইবার: ৮.৪ গ্রাম;
  • প্রোটিন: ২৪.৩৫ গ্রাম;
  • পটাসিয়াম: ৬৩৪ মিলিগ্রাম;
  • নিয়াসিন: ১৪.৩৫ মিলিগ্রাম;

৫. অ্যাভোকাডো: ইহা বহুমুখী পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি ফল যার সুগারের পরিমান খুবই কম কিন্তু অন্যান্যা পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান থাকে। এখানে ফাইবারের পরিমান বেশি এবং ক্যারোটিনয়েডে ভরপুর থাকে। ক্যারোটিনয়েড যা এক প্রকার পিগমেন্ট, আমাদের শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

আপনি একটি অ্যাভোকাডো খেলে আপনার ভিটামিন ই এর দৈনিক প্রয়োজনের ২০ শতাংশ পুরা হয়ে যাবে। অন্যভাবে যদি বলি, তাহলে ১০০ গ্রাম এই ফলে আপনি ২.০৭ মিলিগ্রাম এই ভিটামিন পাবেন।

৬. পালন শাক বা spinach: ১০০ গ্রাম পালন শাকে আপনি নিচের উপাদানগুলো পাচ্ছেন-

  • ভিটামিন-ই: ২.০৩ মিলিগ্রাম;
  • ফইবার: ২.২ গ্রাম;
  • ভিটামিন সি: ২৮.১ মিলিগ্রাম;
  • পটাসিয়াম: ৫৫৮ মিলিগ্রাম;

৭. Broccoli: এরা হল cabbage পরিবারভূক্ত সবজি যারা ভিটামিন ই এবং প্রোটিন খুব সমৃদ্ধ। এরা আবার ক্যানসার প্রতিরোধক নামেও পরিচিত। ইহা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এর পুষ্টিমান ধরে রাখার জন্য আপনি এটিকে কম তাপে রান্না করবেন।

প্রতি ১০০ গ্রাম broccoli এর ভিতর আপনি পাচ্ছেন ১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই।

৮. কিছু তৈলে: এমন কয়েকটি তৈল রয়েছে যেখানে এই ভিটামিনের আধিক্য রয়েছে। যেমন, প্রতি ১০০ গ্রামে এই ভিটামিনের পরিমান নিম্নরুপ:

  • Wheat gram তৈল: ২০.৩২ মিলিগ্রাম
  • Rice bran তৈল: ৪.৩৯ মিলিগ্রাম
  • Grapeseed তৈল: ৩.৯২ মিলিগ্রাম
  • Sunflower তৈল: ৪.৬৪ মিলিগ্রাম

ভিটামিন ই এর উপকারিতা

  • এর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ হল এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে ভূমিকা রাখ। যার মাধ্যমে free radical ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরের কোষসমুহ সুরক্ষা পায়।
  • বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ইহা অনেক জটিল রোগ যেমন ক্যানসার, হৃদরোগ, হাই কোলেস্টেরল প্রভৃতির বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • এর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাগুনের কারণে ইহা চর্মরোগের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়।
  • এই ভিটামিন প্রোস্টাগ্লেনডিন নিঃসরণে ভূমিকা পালন করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, মাংসপেশীর কার্যক্রমে সহায়তা করে।
  • কতিপয় গবেষণার ফলাফল মতে ইহা এজমা ও শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
  • মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই ভিটামিন ভূমিকা রাখে। Parkinson’s disease, epilepsy, demetina, বাতজ্বর, Alzheimer’s disease ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে ভিটামিন ই এর কার্যকারিতা রয়েছে বলে জানা যায়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করে।
  • চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এর ভূমিকা আছে।

দৈনিক কতটুকু ভিটামিন ই এর প্রয়োজন

ভিটামিন ই দৈনিক কতটুকু প্রয়োজন হয় তা নির্ভর করে আমাদের বয়সের উপর। নিচের টেবিলে বয়স অনুযায়ি এর দৈনিক চাহিদা উল্লেখ করা হল:

  • জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত: ৪ মিলিগ্রাম;
  • সাত থেকে ১২ বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে: ৫ মিলিগ্রাম;
  • এক থেকে ০৩ বছরের শিশু: ৬ মিলিগ্রাম;
  • বয়স ৪ থেকে ৮ বছরের মধ্যে হলে: ৭ মিলিগ্রাম;
  • নয় থেকে ১৩ বছরের মধ্যে: ১১ মিলিগ্রাম;
  • বয়স ১৪ থেকে ১৮ বয়স হলে: ১৫ মিলিগ্রাম;
  • প্রাপ্ত বয়স্কের ক্ষেত্রে: ১৫ মিলিগ্রাম;
  • গর্ভবতি মহিলার ক্ষেত্রে: ১৫ মিলিগ্রাম;
  • বুকের দুধ প্রদানকারি মায়ের জন্য: ১৯ মিলিগ্রাম;

ভিটামিন ই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আপনি যদি সঠিক মাত্রায় এই ভিটামিন খেতে পারেন তাহলে সাধারনত: কোন সমস্য হয় না। বিরল ক্ষেত্রে নিচের কয়েকটি সমস্যা হতে পারে-

  • বমি বমি ভাব;
  • পাতলা পায়খানা;
  • ক্লান্তি অনুভব হওয়া;
  • পেট ব্যাথা;
  • দুর্বলতা,
  • মাথা ব্যাথা;
  • চোখে ঝাপসা দেখা, ইত্যাদি।

তবে, স্বাভাবিকের চেয়ে যদি কেউ অধিক মাত্রা এই ভিটামিন গ্রহন করে তাহলে জটিল সমস্য হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে দুর্বল স্বাস্থ্য সম্পন্ন মানুষের বেলায়।

এছাড়া, কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, ভিটামিন ই খাওয়ার ফলে পুরুষের prostate cancer এর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। আরোও গবেষণা থেকে প্রকাশ পায়, মারত্মক পর্যায়ের হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষ এই ভিটামিন খাওয়ার ফলে মৃত্যু আশংকাও তৈরি হতে পারে।

Reference:

  1. Ods.od.nih.gov. 2021. Office of Dietary Supplements – Vitamin E. [online] Available at: <https://ods.od.nih.gov/factsheets/VitaminE-Consumer/> [Accessed 18 March 2021].
  2. Butler, N., 2021. The 10 best foods high in vitamin E. [online] Medicalnewstoday.com. Available at: <https://www.medicalnewstoday.com/articles/324308#almonds> [Accessed 18 March 2021].