Last updated on May 9th, 2023 at 12:18 pm

আমাদের শরীরের একটি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন বা উপাদান হলো – বায়োটিন ।  

বিজ্ঞানের মতানুসারে, বায়োটিন হলো এমন এক উপাদান, যা আমাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটির ঘাটতির ফলে আমাদের ত্বক , চুল ও নখ ভিষনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শুধু শারীরিক না, মানসিক স্থিতি ও স্বাস্থ্যের উপর ও এর বিরাট প্রভাব পরে, এমনকি বায়োটিন এর অভাবে আমাদের মস্তিষ্কের ও নানান সমস্যা হয়। 

প্রচুর পরিমানে চুল ওঠা , বা ঝরে যাওয়ার কারণ কিন্তু শুধুমাত্র পলিউশন নয়, বা নখ বা ত্বক জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণ কিন্তু শুধুমাত্র আপনার অযত্ন নয়। আপনি বাহ্যিক যত্ন নিয়েও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন না, কারণ এই সমস্ত সমস্যার মুল উৎস হলো বায়োটিন এর অভাব। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক , কি এই বায়োটিন, কি বা তার কার্যকারিতা , উপকারিতা। 

বায়োটিন কি?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো এই বায়োটিন এর ব্যবহার। ডিমের হলুদ অংশে থাকে বায়োটিন। এটিকে ভিটামিন এইচ , ভিটামিন বি বা বি-৭ ও বলে হয়ে থাকে। মানব শরীরের একটি অত্যাবশ্যক উপাদান হলো এই বায়োটিন। 

জলে দ্রবীভূত এই ভিটামিন টি শুধু ত্বক, নখ ও চুলের সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য নিশ্চিত করে তা নয় , এটি আমিষ, শর্করা ও চর্বিজাতীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া তে ও সাহায্য করে। আপনার মস্তিস্ক কে সতেজ ও সচল রাখতে এবং মানসিকভাবে আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে এর জুড়ি মেলা ভার। 

বায়োটিনের অভাবে কি হয় ?

কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে বায়োটিন এর ঘাটতি হয়েছে? 

খুব সহজেই কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে এই উপাদানের অভাব রয়েছে।  

যেমন ধরুন, 

  • র‍্যাশ হওয়া , চামড়ার কিছুটা জায়গা শুস্ক অনুভব করা এবং চুলকানি হওয়া।  
  • নখ ভেঙে যাওয়া , 
  • ত্বক এর রং পরিবর্তন , ধূসর হয়ে যাওয়া।
  • পেশিতে ব্যাথা অনুভব করা 
  • প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্লান্ত হওয়া বা বিষন্নতা অনুভব করা। 
  • চুল পড়া একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ 
  • এছাড়াও বায়োটিন এর অভাবে ডার্মাটাইটিস হতে পারে। 

তবে কি এর ঘাটতি হওয়াটা খুবই সাধারণ একটি বিষয় ?

একদমই নয়। তবে মানব শরীরে বায়োটিন এর অভাব এর সম্ভাবনা থেকে থাকে। 

যদি আপনি কাঁচা ডিমের সাদা অংশ বেশি পরিমানে খান তাহলে আপনার শরীরে বায়োটিন এর অভাব হতে পারে। 

অ্যাভিডিন নামক গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে কাঁচা ডিমের সাদা অংশে, যা কিনা বায়োটিন এর সাথে যুক্ত হয়ে শরীরকে বায়োটিন শোষণে বাঁধা দেয়। কিন্তু ভালোকরে রান্না করলে অ্যাভিডিন নিষ্ক্রিয় হয়েযায়। 

এই কারণেই বডিবিল্ডার দের ক্ষেত্রে এই বায়োটিন এর অভাবজনিত সমস্যা বেশিপরিমানে লক্ষ্য করা যায়, কারণ তারা প্রচুর পরিমানে কাঁচা ডিম খায়। 

বায়োটিন একটি জলে দ্রবীভূত ভিটামিন, তাই এটি শরীরে সংরক্ষিত থাকে না বলেই একে নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়। 

বায়োটিন এর অভাবজনিত সমস্যা এড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে নিয়মিত ১০০০ মাইক্রোগ্রাম এর বেশি বায়োটিন গ্রহণ করতে হবে। 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো , আপনি প্রয়োজন অতিরিক্ত বায়োটিন গ্রহণ করলেও, কোনো ক্ষতি হবেনা। যেহেতু এটি জলে দ্রবীভূত একটি ভিটামিন তাই খুব সহজেই এটি শরীর থেকে বের হয়েযায়, যারফলে কোনো ক্ষতি সাধন হয়না। উচ্চমাত্রায় বায়োটিন গ্রহণ এও কোনো মারাত্মক বিষাক্ততার কারণ হয়না। 

বায়োটিনের কাজ কি?

  • ভিটামিন বি-৭ শরীরে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেড, অ্যামিনো অ্যাসিড  বিপাকে সাহায্য করে।
  • বায়োটিন শরীরকে ফিট রাখতে খুব জরুরি।
  • দেহের নতুন কোষ গঠন করে 
  • ইহা চুলকে পুষ্টিকর  করতে সক্ষম,তাই শ্যাম্পুতে এর ব্যবহার হয়। 
  • চুল, নখ ও ত্বকের সুন্দর গঠনে বায়োটিন এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। 
  • আমিষ, শর্করা ও চর্বিজাতীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া তে এনজাইমকে সাহায্য করে
  • বুদ্বিমত্তা বিকাশে এটি সহায়তা প্রদান করে 
  • ডায়াবেটিস বা প্রদাহ কমাতে এটি বিশেষ কার্যকরী 
  • শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ও খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস করে রক্তে ভারসাম্য বজায় রাখে এই বায়োটিন। 

বায়োটিনের উৎস কি?

বায়োটিন দুই ভাবে গ্রহণ করতে  পারেন। ভিটামিন B৭ জাতীয় খাবার খেতে পারেন বা বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।  

যেহেতু এই বি গোত্রীয় ভিটামিন টি শরীরে তৈরি হয়না , তাই বিভিন্ন রকমের দৈনন্দিন খাবার এর দরুন ও ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট এর মারফত ই এটি গ্রহণ করতে হয়। 

বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার

যেকোনো ধরণের ডাল , চাল, গম, সোয়াবিন, ডিমের কুসুম, ফুলকপি, বাদাম, মাশরুম, কলিজা, কলা, এবং কাজু বাদাম জাতীয় খাবার এ প্রচুর পরিমানে বায়োটিন থাকে।

এছাড়া বি-৭ এর সাপ্লিমেন্ট গুলি নিতে পারেন।  বাজারে অনেক বায়োটিন টেবলেট উপস্থিত আছে , সেগুলি আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। 

ভিটামিন বি ৭ সাপ্লিমেন্ট

রোজকার খাদ্য তালিকায় মাছ বা ডিম রাখা সম্ভব হয় না। এর বদলে একটা বায়োটিন এর ট্যাবলেট খাবার পর খেতেই পারেন। এটি কোনো এক্সট্রা মেটাবলিসম বাড়ায় না। ফলে ওজন ও বৃদ্ধি পায়না। এটি নেওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত। 

তবে হ্যাঁ, মনে রাখবেন সাপ্লিমেন্ট সবার পক্ষে কার্যকরী নয়।  তার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনিবার্য। 

বায়োটিনের উপকারিতা কি?

বায়োটিনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

মানব শরীরে বায়োটিন এর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা রয়েছে।  

যেমন 

  • এনার্জি বৃদ্ধি করতে বায়োটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে 
  • নখ কে শক্তিশালী হতে সহজ করে , যাতে সহজেই ভঙ্গুর না হয়েযায়
  • গর্ভবতী নারী বা সদ্য মা হয়েছেন এমন মহিলাদের বায়োটিন এর গ্রহণ খুবই উপকারী, কারণ গর্ভাবস্থায় ৫০ শতাংশ নারীই ভিটামিন এর অভাবে ভুগতে থাকেন। 
  • বায়োটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন  করে যা কিনা টাইপ ২ ডায়াবেটিস ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। 
  • উচ্চমাত্রার বায়োটিন গ্রহণ বেশ উপকারী, কারণ এটি মাল্টিপল ক্লোরোসিস যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রর রোগ নিরাময় এ ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও যে তিনটি প্রধান কারণে বায়োটিন এর ব্যবহার অধিক লক্ষ্য করা যায় সেগুলো নিম্নে সবিস্তরে আলোচনা করা হলো। 

চুলের ক্ষেত্রে  বায়োটিন  এর উপকারিতা

বায়োটিন, কেরোটিন নামক প্রোটিন বানাতে সাহায্য করে। এই কেরোটিন আমাদের চুল ,নখ, ত্বকের গঠনে উপযোগী। এটি চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুল কে গোড়া থেকে মজবুত করতে সাহায্য করে।  এবং অল্প বয়সেই অকারণে চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। পুরুষ ও মহিলা উভয় এরই এই চুল পড়ার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কেরোটিন যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকেই পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে। 

ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বায়োটিন

আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়র একটি গুরুত্ব পূর্ণ ইন্দ্রিয় হলো ত্বক। তাই একে সজীব ও মসৃন রাখা আমাদের ই দায়িত্ব। কিন্তু বায়োটিন এর ঘাটতির ফলে ত্বক শুস্ক ও খসখসে হয়েযায়।বায়োটিন এই অভাব তাই পূরণ করে ও ত্বক কে সুন্দর বানিয়ে তোলে। আমাদের ত্বকের স্তরে থাকে তৈল গ্রন্থি যা ত্বক কে মসৃন ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। বায়োটিন ত্বকের এই তৈল গ্রন্থি কে ব্যালান্সড রাখে এবং নতুন কোষ গঠনেও সাহায্য করে। 

নখে বায়োটিন এর প্রভাব

নিয়ম করে ম্যানিকিওর করলেই আপনার নখ যে সুন্দর থাকবে তার মানে নেই। ভিতরে নখের স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা সেটা আসল দেখার বিষয়। 

নখ কতটা শক্ত, পাতলা বা মোটা হবে সেটা কিছুটা জিনগত হলেও তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দাবার এর উপর। 

অনেক সময় ই লক্ষ্য করা যায় , অল্পতেই নখ ভেঙে যাচ্ছে বা বড় হচ্ছেনা, তার একটা প্রধান কারণ হলো বায়োটিন এর অভাব। বায়োটিন একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে কে সুন্দর ও শক্তিশালী করতে। 

বায়োটিন যে নখ এর গঠন কে আরো সুন্দর ও শক্তিশালী করে, সেটি  বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।

উপসংহার

বায়োটিন যে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভিটামিন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই, কোনোরকম ভয় ছাড়াই , শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য এটি ব্যবহার করাই যায়।  

তবে আপনার যদি কোনো জটিল রোগ বা অন্যকোনো জিনগত অসুবিধা থেকে থাকে, তো, বায়োটিন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। 

উপরুক্ত দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এর দরুন ও কিন্তু খুব সহজেই বায়োটিন এর অভাব মেটানো সম্ভব।  যদি আপনি চান তো রোজকার ডায়েট এ উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো যুক্ত করতে পারেন। 

আশা করবো ব্লগ টি আপনারা উপভোগ করেছেন এবং এতে দেওয়া তথ্য গুলো আপনার উপকারে আসবে। 

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

Author: Susmita Dutta, Post Graduate in English Literature, India