Last updated on May 9th, 2023 at 12:21 pm
ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট বা কোন কোন ধরণের খাদ্য খাওয়া উচিত এবং কোন কোন খাদ্য পরিত্যাগ করা উচিত – এসব বিষয় নিয়ে আজকের পোষ্ট।
ফ্যাটি লিভার কি, কিভাবে হয়, কেন হয়, কিভাবে এটি ডায়াগনোসিস করা হয় এবং এর চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে অপর এক পোষ্টে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে ক্লিক করে সেটি দেখে আসলে এই পোষ্টটি আপনার নিকট অধিক গুরত্বপূর্ণ মনে হবে।
যাহোক, ফ্যাটি লিভার রোগটি মুলত: দুই ধরণের হয় – একটি এলকোহলিক এবং অপরটি নন এলকোহলিক। অর্থাৎ, এলকোহলিক হল মদ্যপানজনিত কারণে হয় এবং নন এলকোহলিক মদ্যপান ব্যাতীত অন্যান্য কারণে হয়।
খোদ অ্যামেরিকার মত দেশেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত যা এক পর্যায়ে লিভার ফেইলিউরের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
স্থুল দেহ বিশিষ্ট মানুষ যারা মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক ওজনের অধিকারি এবং যারা অধিক পরিমানে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে অভ্যস্ত তারাই সাধারণত: নন এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগে অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হয়।
আপনি যে ধরণের ফ্যাটি লিভারেই আক্রান্ত হোন না কেন, এর চিকিৎসার প্রধান দিক হল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। এই রোগের নামই বলে দেয়, আপনার যকৃতে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি জমে গেছে।
একটি সুস্থ দেহে, লিভার টক্সিক বা বিষাক্ত জাতীয় পদার্থ দুরীকরণে এবং বাইল (bile) পিত্ত রস উৎপাদনে কাজ করে। এই পিত্ত রস হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। আর, ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হলে, লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলে লিভার তার স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনে ব্যর্থ হয়।
এই রোগের খাদ্যসমুহ সাধারণত: নিম্নরুপ-
- প্রচুর পরিমানে ফলমুল ও শাক সবজি
- Whole grain এবং লিগিউম জাতীয় উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য
- খুবই কম পরিমানে added সুগার, লবন, ট্র্যানস ফ্যাট, প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাদ্য গ্রহণ করা।
- মদ জাতীয় পদার্থ খাদ্য থেকে একেবারেই পরিহার করা।
কম ক্যালরি এবং কম চর্বি বিশিষ্ট খাদ্য আপনার দৈহিক ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে যা ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক ওজনের অধিকারি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার দৈহিক ওজনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমিয়ে ফেলার একটি লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
আলোচ্য পোষ্টে, ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট এর উপর ১২ টি খাদ্যের নাম এবং তাদের উপকারি বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে।
চলুন – শুরু করি।
ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট
এখানে ১২ ধরণের খাদ্য ও পানিয় উল্লেখ করা হবে যা লিভারকে সুস্থ রাখতে কাজ করতে পারে –
১. কফি যা abnormal লিভার এনজাইম কমাতে কাজ করে
গবেষণায় দেখা যায়, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে যারা কফি পান করে তাদের লিভার কফি পান না ব্যক্তিদের তুলনায় কম ক্ষতি হয়। কফির একটি উপাদানের নাম ক্যাফেইন যা প্রাকৃতিক উত্তেজক হিসাবে কাজ করে।
ক্যাফেইন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের abnormal লিভার এনজাইম কমাতে কাজ করে যার ফলে লিভারে ক্ষতির পরিমান তুলনামুলক কম হয়।
২. সবুজ শাক সবজি যা ফ্যাট জমা হতে বাধা দেয়
ব্রোকোলি লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয়না, প্রতিরোধ করে যা ইদুরের উপর পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা যায়। অধিক পরিমানে সবুজ শাক-সবজি যেমন পালন শাক, Brussels sprouts যা এক প্রকার ক্ষুদ্র বাধাকপি এবং kale বা পাতাকপি জাতীয় খাদ্য দৈহিক ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৪. তোফু (tofu) – শরীরে ফ্যাট জমার পরিমান কমিয়ে দেয়
University of Illinois – থেকে ইদুরের উপর পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, তোফুতে বিদ্যমান soy protein লিভারে ফ্যাট জমার পরিমান কমিয়ে দেয়। অধিকন্তু, খাদ্য হিসাবে তোফু কম চর্বি বিশিষ্ট এবং উচ্চ প্রোটিন সৃমৃদ্ধ এক খাবার।
৪. ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত মাছ
স্যালমন, সারডিনস (sardines), টুনা (tuna) এবং ট্রাউট (trout) ইত্যাদি ধরণের সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড আপনার লিভারের ফ্যাট লেভেল উন্নতি সাধনে সহায়তা করে এবং লিভারের প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
৫. দেহে শক্তি সরবরাহের জন্য oatmeal
ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট জাতিয় খাদ্য খুব গুরত্বপূর্ণ। কারণ এর চাহিদার তুলনায় বেশি খেলে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং আরোও নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কার্বোহাইড্রেট দেহে শক্তি সরবরাহ করে। আপনাকে এমন কার্বোহাইড্রেট বাছাই করতে হবে যা ফাইবার সমৃদ্ধ। এই ফাইবার সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট refined বা পোরিষোধিত কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া যাবে না।
এর জন্য আপনাকে whole grain বা সম্পূর্ণ শষ্যদানা থেকে তৈরিকৃত কার্বোহাইড্রেট খাদ্য হিসাবে বেছে নিতে হবে যেখানে ফাইবারের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে। আর পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের ক্ষেত্রে এর মধ্যে বিদ্যমান ফাইবারসমুহ অপসারণ করা হয়।
ফাইবার যুক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলে পাকস্থলিতে দ্রুত হজম হবে না। ফলে, আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং খাদ্য গ্রহনের মাত্রা কমে যাবে। এভাবে, আপনার জন্য নির্ধারিত calore গ্রহণের পরিমান অনুযায়ী খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের উদাহারণ হিসাবে whole grain থেকে তৈরি ফাইবার যুক্ত oatmeal খাওয়ার মাধ্যমে আপনার দৈনিক ক্যালরি বা শক্তির চাহিদা পুরণ করতে পারেন।
এতে বিদ্যমান ফাইবার হজম আপনার পাকস্থলিকে দীর্ঘসময় ভরাট রাখতে পারবে। ফলে, ক্ষুধা কম লাগবে এবং খাদ্য গ্রহন কমে যাবে। এতে করে, আপনার দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
আখরোটে ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড অধিক পরিমানে পাওয়া যায়। গবেষণা বলে যে, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা নিয়মিত আখরোট খাবে, তাদের লিভারের কার্যকারিতা তুলনামুলক ভাল পাওয়া যাবে।
৭. লিভার সুরক্ষার সহায়তায় এভোকাডো
এভোকাডো জাতীয় সবজিতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অধিক থাকে। গবেষণা থেকে জানা যায়, এতে এমন কিছু কেমিক্যাল রয়েছে যা লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে বাচাতে সহায়তা করে।
তদুপরি, এভোকাডো একটি উচ্চ ফাইবার বিশিষ্ট খাদ্য যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রেনেও কাজ করতে পারে।
৮. কম চর্বি যুক্ত দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য
দুগ্ধজাত খাদ্য পন্যে whey protein অধিক পরিমানে থাকে। ইহা আপনার লিভারকে অধিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে বলে ২০১১ সালে ইদুরের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে।
৯. এন্টিঅক্সিডেন্টের জন্য সানফ্লাওয়ার বীজ
সানফ্লাওয়ার বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ই যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটিও আপনার লিভার অধিক ক্ষতি হওয়া থেকে বাচাতে সহায়তা করবে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট কি ও কিভাবে কাজ করে – তার উপর অপর এক পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে।
১০. ওজন নিয়ন্ত্রণে অলিভ ওয়েল
ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট নিয়ে কতগুলি খাদ্যের নাম ও তাদের উপকারিতা আলোচনার প্রায় শেষ দিকে চলে এলাম।
এবারে, অলিভ ওয়েল নিয়ে। এই ধরণের তৈলে প্রচুর পরিমানে ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড উপস্থিত থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অলিভ ওয়েল লিভার এনজাইম কমিয়ে দেয় এবং দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
১১. রসুন যা ওজন কমাতে কাজ করে
রসুন হার্বাল জাতীয় খাদ্য হিসাবেও পরিচিত। ইহা খাদ্যে শুধু সগন্ধি যোগ করে না বরং রসুনের পাউডার জাতীয় সাপ্লিমেন্ট ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের দৈহিক ওজন এবং ফ্যাট কামাতেও কাজ করে।
দৈহিক ওজন বেশি হলে ইহা কি কি ক্ষতি বা রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে তা জেনে রাখা ভাল।
১২. সবুজ চা বা green tea
গবেষণায় জানা যায়, green tea দেহে চর্বি শোষণের পরিমান কমিয়ে দেয়। কিন্তু এর ফলাফল এখনোও ততটা স্পষ্ট নয়। এর জন্য গবেষকগন আরোও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, এর অনেক উপকারি দিক রয়েছে।
বন্ধুরা, ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট – বিষয়ে উপস্থাপিত পোষ্টের তথ্য সমুহ উপকারি মনে হলে পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন।