আমরা প্রায়ই এন্টি অক্সিডেন্ট এর নাম শুনে থাকি। সুস্থভাবে বেচে থাকার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। শরীরের বেশ কিছু গুরত্বপূর্ন কাজ এরা করে থাকে। তাই, এন্টি অক্সিডেন্ট বিষয়ে পরিস্কার ধারণা লাভের জন্য এর উপর কিছু তথ্য নিয়ে চলে এলাম।

এই আর্টিকেলে, এন্টি অক্সিডেন্ট কি, কত প্রকার, এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার কিভাবে পেতে পারেন- এই সব বিষয়ে আলোচনা করব।

চলুন- শুরু করি।

এন্টি অক্সিডেন্ট কি?

এন্টি অক্সিডেন্ট কি – শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী ইহা এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যে জারন বা অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যে কাজ করে। এজন্য একে এন্টি অক্সিডেন্ট বলে। জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া আমরা রসায়নে পড়েছি। প্রশ্ন হল, মানব দেহের ভিতর এর সংশ্লিষ্টতা কোথায়? খুব ভাল প্রশ্ন। চলুন বুঝার চেষ্টা করি।

আপনার শরীরের কোষসমুহ সৃষ্টিগতভাবে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের হুমকি মোকাবেলা করে বেচে আছে। যেমন, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য কোন অনুজীব গঠিত সংক্রমণ অহরহ হয়ে চলছে।

এরপর আর একটি বিষয় হল, কোষের অভ্যন্তরে বিপাকিয় কার্যক্রমের অংশ হিসাবে জারণ বা অক্সিডেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যার ফলে কোষ প্রাচিরসহ কোষস্থিত প্রোটিন, লিপিড এবং ডিএনএ মলিকুল ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কোষের ভিতর এই জারণ প্রক্রিয়ার ফলে একটি অস্থিতিশীল পদার্থ তৈরি হয় যাকে ফ্রি রেডিক্যাল বলে যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক।

ফ্রি রেডিক্যালস এর উপর অপর এক পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। বিষয়টি পড়ে নিলে ধারণা আরোও পরিস্কার হয়ে যাবে।

এই ফ্রি রেডিক্যালস আপনার কোষ এবং এর ডিএনএ ধংস করে দিতে পারে বা এর ক্ষতিসাধন করতে পারে। পরে, কিছু কোষ ক্ষতিগ্রস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারে; আবার কিছু কোষ পারে না।

বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, ফ্রি রেডিক্যালস এর প্রভাবে মানুষ খুব দ্রুত বৃদ্ধ হওয়া শুর করে। এছাড়াও, এর ফলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।

উপরের আলোচনা থেকে এন্টি অক্সিডেন্ট কি – বিষয়টির উপর একটি প্রাথমিক ধারণা হয়ে গেল। এবারে এন্টি অক্সিডেন্ট কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করব।

এন্টি অক্সিডেন্ট এর কাজ কি?

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি কিভাবে অক্সিডেশন এর মাধ্যমে ফ্রি রেডিক্যালস তৈরি হয়। এবারে, এন্টিঅক্সিডেন্ট কি কাজ করে সে প্রসঙ্গে কিছু বলা যাক। এক কথায় এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ হল এরা ফ্রি রেডিক্যালস এর অস্থিতিশীল অবস্থাকে নিরপেক্ষ বা প্রশমিত করে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসে। ফলে, তাদের ক্ষতিকর প্রভাব দুর হয়ে যায়। আপনার শরীর ফ্রি রেডিক্যালস balance করার কাজে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করে। এছাড়াও, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা রয়েছে।

এন্টি অক্সিডেন্ট কত প্রকার?

প্রকৃতিতে সাধারণত: তিন ধরণের এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা নিম্নরুপ-

  • ফাইটোক্যামিকেলস
  • ভিটামিন
  • এনজাইম

ফাইটোক্যামিকেলস

উদ্ভিদে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থসমুহকে ফাইটো ক্যামিকেলস বলা হয় যা উদ্ভিদজাত এন্টিঅক্সিডেন্টর এর মধ্যে গণ্য। এই জাতীয় এন্টি অক্সিডেন্ট সবেচেয়ে শক্তিশালী ধরণের হয়। এর কারণ হল, বৃক্ষসমুহ সারা দিন ধরে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পায়। এর ফলে উদ্ভিদে প্রচুর পরিমান free radicals তৈরি হয় যার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাচার জন্য উদ্ভিদের মধ্যে built in কিছূ এন্টি অক্সিডেন্ট সরক্ষা সামগ্রি থাকে। যা ফাইটো ক্যামিকেলস নামে পরিচিত।

এন্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম

আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাবারে যে সব প্রোটিন ও খনিজ লবন খেয়ে থাকি সেখান থেকে এনজাইম তৈরি হয়। এই এনজাইমগুলো মানব দেহের অভ্যন্তরে তৈরি হয়। এই এনজাইমগুলোর এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে সক্রিয়তা লাভের জন্য  কিছু কো-ফ্যাক্টর যেমন আয়রন, কপার, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক জাতীয় খণিজ লবনের প্রয়োজন হয়। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যে উৎস থেকে আমারা গ্রহন করি তার খাদ্য মানের উপর এন্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম গুনগত মান নির্ভর করে।

এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন

আমাদের শরীর এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করতে পারে না। এজন্য, যে সব খাদ্যে এদের উপস্থিতি ভাল থাকে ঐ সব খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের এর চাহিদা পূরণ করতে হয়।  খাদ্যের সাপ্লিমেন্ট হিসাবেও আপনি এটি গ্রহণ করতে পারেন। নিচে কয়েকটি এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিনের উদাহারণ দেওয়া হল-

এন্টি অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট এর কার্যকারিতা

এন্টি অক্সিডেন্ট কি – বিষয়টির উপর ইতোমধ্যে আমাদের কিছুটা হলেও ধারণা তৈরি হয়েছে। এন্টি অক্সিডেন্টের গুরত্ব বিবেচনায় বাজারে এর কিছু সাপ্লিমেন্ট চালু হয়েছে। আমাদের দেহে এন্টি অক্সিডেন্ট এর অভাব পূরণের জন্য অনেকেই বাজারে এসব সাপ্লিমেন্ট কিনে খেয়ে থাকে। কিন্তু, এসব সাপ্লিমেন্টে বিদ্যমান এন্টি অক্সিডেন্ট খেয়ে কাংখিত ফলাফল পাওয়া যায় না। বিভিন্ন গবেষণা ফলাফল থেকে জানা যায় যে, এন্টি অক্সিডেন্ট এর সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায় যখন এটি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান, ফাইটো ক্যামিকেলস ইত্যাদির সাথে সংমিশ্রণ করে খাওয়া হয়।

উদাহারণ স্বরুপ- এক কাপ টাটকা স্ট্রবেরির জুস খেলে আপনি ৮০ গ্রাম ভিটামিন সি পাচ্ছেন যার উচ্চ পর্যায়ে এন্টি অক্সিডেন্ট কার্যকারিতা রয়েছে। কিন্তু একটি সাপ্লিমেন্ট যেখানে ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে তার তেমন কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। কারণ এই সাপ্লিমেন্টে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ও ফাইটোক্যামিকেলস (পলিফেনল) থাকে না। কিন্তু স্ট্রবেরির জুসে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি বাদেও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ও ফাইটোক্যামিকেলস উপস্থিত থাকে।

অপর এক উদাহারণে বলা যায়, খাদ্যের প্রকৃতিজাত উৎসের ভিটামিন-ই তৈরির ক্ষেত্রে আট প্রকারের রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয়। অথচ, ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্টে শুধুমাত্র এক প্রকারের ক্যামিকেলস উপস্থিত থাকে যার নাম আলফা-টকোফেরল। আমরা জানি, ভিটামিন-ই এর অন্যতম প্রধান কাজ হল এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে ভূমিকা পালন করা।

কাজেই, উপরের আলোচনার মর্ম অনুযায়ী, এন্টি অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্টের তুলনায় এন্টি অক্সিডেন্ট  সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন করাই আমাদের সকলের জন্য অধিক কার্যকরি।

এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার

যে সব পুষ্টি উপাদানের এন্টি অক্সিডেন্ট কার্যকারিতা রয়েছে তাদের নাম এবং সেগুলো কোন কোন খাদ্যে অধিক পরিমানে পাওয়া যায় তা নিচে উল্লেখ করা হল-

  • ভিটামিন সি: ব্রোকলি, ক্যান্টালোপ, ফুল কপি, বাধা কপি, আঙ্গুর, সবুজ শাক-সবজি, kale, kiwi, লেবু, কমলা, পেপে, স্ট্রবেরিস, গোল আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি।
  • ভিটামিন ই: এভোকাডো, কাঠ বাদাম, সবুজ শাক-সবজি, চিনা বাদাম, কাঁচা মরিচ, পালন শাক, সানফ্লাওয়ার বীজ ইত্যাদি।
  • ক্যারটিনয়েডস – বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপেন (lycopene) সহ: এপিক্রোটস, এসপারেগাস, beets, ব্রোকলি, ক্যান্টালোপ, গাজর, মরিচ, আম, kale, turnip বা শাল গম জাতিয় সবজি, কমলা লেবু, আঙ্গুর ফল, মিষ্টি কুমরা, পালন শাক, মিষ্টি আলু, টমেটো, তরমুজ ইত্যাদি।
  • সেলিনিয়াম: Brazil nuts, মাছ, গরুর মাংস, পোল্ট্রি মাংস, বার্লি, বাদামি চাল ইত্যাদি।
  • জিংক: গরুর মাংস, পোল্ট্রি মাংস, চিংড়ি মাছ, মিষ্টি কুমড়া, lentils, chickpeas, কাজু বাদাম, পুষ্টি যুক্ত বা ফর্টিফাইড cereals ইত্যাদি।
  • ফেনোলিক যৌগ: যেমন quercetin (আপেল, পিয়াজ), catechins ( স্ট্রবেরিস, চা, cocoa), resveratrol (আঙ্গুর, চিনাবাদাম, স্ট্রবেরিস), coumaric acid (বিভিন্ন প্রকার মসলা, স্ট্রবেরিস) ইত্যাদি।

বন্ধুগন,  এন্টি অক্সিডেন্ট কি – বিষয়ের উপর পোষ্টটি পড়ে কেমন লাগল, কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। এরপর, পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক ও শেয়ার করবেন।