Last updated on May 9th, 2023 at 05:29 pm

আপনি কি কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান? উত্তর হ্যা হলে, আপনি সঠিক জায়গায় আছেন।

প্রত্যেকেই তার কিডনির বিষয়ে শংকিত থাকেন যখন জানা যায় যে তিনি ক্রনিক বা দির্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন। তারা কি তারা খাচ্ছেন বা পান করছেন সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন।

বিশ্ব কিডনি দিবস ২০১৭ এর প্রতিপাদ্য অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপকে কিডনি রোগের অন্যতম সেরা কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই অবস্থার আরোও অবনতির জন্য দায়ী করা হয়েছে দুর্বল খাদ্য গ্রহন, লাইফস্টাইল এবং ওবেসিটিকে

বিভিন্ন গবেষণা লব্ধ ফলাফল থেকে জানা যায় যে, কিডনি রোগ সমাধানের একমাত্র উত্তম উপায় হচ্ছে অধিক পরিমান বিশুদ্ধ পরিস্কার পানি পান করা এবং নিয়মিত শরীর চর্চায় অংশ নেওয়া। এর সাথে সাথে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পুরোপুরিভাবে বর্জন করা।

গবেষকগণ আরোও দাবী করেন যে, যে সব খাদ্য কিডনি রোগের চিকিৎসায় এবং কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ভাল ফলাফল দেয় তার তালিকায় পিয়াজ, রসুন, আদা এবং তরমুজ সেরা হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, মদ্যপানের কারণে কিডনিতে যে বিষক্রিয়া বা টক্সিসিটি হয় তা কমানোর ক্ষেত্রে আদার নির্যাস কার্যকর হিসাবে প্রমান পাওয়া যায়। এজন্য আদাকে আপনি কিডনি সুরক্ষা কাজে নিয়মিত সেবনের একটি খাদ্য হিসাবে বেছে নিতে পারেন।

তবে, আপনাকে শুধু এসব ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে হবেনা। সাথে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

আলোচ্য পোষ্টে আপনি কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা কিভাবে করবেন সে বিষয়ে আলোকপাত করব। চলুন – শুরু করা যাক।

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা:

১. প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন 

আপনি যদি প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে পারেন তাহলে আপনার দেহ থেকে সংক্রামক জীবানুসহ ক্ষতিকারক অনেক পদার্থ ধৌত হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, অধিক পরিমানে পানি পান করা আপনার রেচন তন্ত্রের পরিচ্ছন্নতার কাজেও সহায়তা করবে।

ইহা আপনার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য ভূমিক পালন করে যা কিনা পরবর্তিতে কিডনি ইনফেকশন ঘটিয়ে থাকে।

কাজেই, এটি পর্যাপ্ত পানি পান করা একটি উত্তম চর্চা হতে পারে। এজন্য, আপনাকে দৈনিক কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

২. মদ্যপান ও কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন

কিডনির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ হলো দেহের জন্য ক্ষতিকারক বস্তুসমূহকে ছেকে বা ফিল্টার করে দেহে থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু এলকোহল এবং ক্যাফেইন এক্ষেত্রে কিডনির উপর চাপ তৈরি করে। যার ফলে কিডনি রোগ আরোও বেড়ে যেতে পারে।

অধিকন্তু, এলকোহল এবং এন্টিবায়োটিক একত্রে মিশ্রিত হওয়া কাম্য নয়। কাজেই, আপনার কিডনি রোগের চিকিৎসা ফলদায়ক করার জন্য দ্রুত মদ্যপান পরিহার করুন।

৩. প্রোবায়োটিকস গ্রহন করুন

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রোবায়োটিকস এর দু’টি বড় সুবিধা রয়েছে। এটি আপনার দেহের উপকারি ব্যাক্টেরিয়াকে সুসংহত রাখে যদিও এন্টিবায়োটিকস এর কাজ উপকারি ও অপকারি সব ব্যাক্টেরিয়াকেই সমুলে বিনাশ করা।

প্রোবায়োটিকস এর আর একটি সুবিধা হচ্ছে ইহা এন্টিবায়োটিক এর কারণে সৃষ্ট ডায়রিয়া রোগ কমানোর জন্য কাজ করে।

আপনি এই প্রোবায়োটিকস নিকটস্থ যেকোন গ্রোসারি দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন।

৪. ভিটামিন-সি সংগ্রহে রাখুন

আপনি জেনে থাকবেন, ভিটামিন-সি খুব ভালো এবং শক্তিশালী একিট এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর ফলে আপনার দেহের কোষগুলোর সুরক্ষায় কাজ করে।

এমনকি কিডনি কার্যকারিত বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা থাকে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল ধরে বয়স্ক প্রাণিতে পরিচালিত একটি গবেষণা থেকেও কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভিটামিন সি যে কাজ করে তার প্রমান পাওয়া যায়।

তাই, আপনি ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন অথবা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল-মুল বা শাক-সবজি অধিক পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

৫. আপেল এবং আপেল জুস

আপেল এমন একটি ফল যা অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ। আপেলে এসিডের পরিমান বেশী থাকার ফলে এটি মুত্রের এসিডিটি ধরে রাখতে সহায়তা করে। যা অতিরিক্ত ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে বাধা প্রদান করে।

তাছাড়া, আপেলের মধ্যে প্রদাহ নাশক গুনাগুনও রয়েছে যা ইনফেকশনের কারণে কিডনি প্রদাহ সৃষ্টি হলে তা কমিয়ে দিতে সহায়তা করবে।

৬. ব্যথা নাশক গ্রহণে সতর্ক থাকুন

আপনি যদি কিডনি রোগে ভুগে থাকেন তাহলে ব্যথানাশক হিসাবে NASIDs বা নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

এর বিকল্প হিসাবে আপনি গরম পানির সাথে এপসম সল্ট মিশিয়ে গোসল করতে পারেন যা ব্যথা কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া, ব্যথা কমানোর জন্য তাপ থেরাপি গ্রহন করতে পারেন। যার অংশ হিসাবে গরম পানির বতল আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে পারেন।

৭. ক্র্যানবেরি জুস পান করুন

যদিও ফলটি আমাদের দেশে জন্মায়না তথাপি সম্ভব হলে এটি সংগ্রহ করে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। কারণ, বাংলাদেশে অধিকাংশ ফল-মুল অনেক দুরের দেশ থেকেও আমদানি করা হয়।

এটি আপনার মুত্র নালী ও মুত্র থলিতে ইনফেকশন হলে সেটি কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দির্ঘকাল যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

৮. কিডনি বিনস : কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কিডনি বিনস প্রোটিন সমৃদ্ধ এক খাবার। এর মধ্যে বিদ্যমান ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুব উপকারি। এটি ডায়াবেটিক রোগীর জন্যও ভাল যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে।

কিডনি বিনস –এ ভিটামিন বি থাকে যা কিডনি ফাংশন উন্নতিতে সহায়তা করে।

৯. পারসলি জুস (parsley) পান করুন

এটি এক ধরণের ডাইউরেটিকস (diuretic) পদার্থ। যা দেহ থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে কাজ করে। এজন্য এটি কিডনি পরিস্কারক বা কিডনি ক্লিনসার হিসাবেও পরিচিত।

এই জুসে ভিটামিন এ থেকে শুরু করে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং কপার থাকে। পারসলি জুস বানানোর জন্য প্রথমে এর পাতা গুলোকে ছোট ছোট করে কাটুন। তারপর পানিতে সেদ্ধ করুন।

পরে, এই পত্র সমেত পানি ঠান্ডা হওয়ার পর পান করুন।

বন্ধুগন, এই ছিল কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা বিষয়ে উপস্থাপিত তথ্য। এর উপর আপনার যে কোন প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট আকারে জানানোর অনুরোধ করছি। ভাল থাকুন ও সুস্থা থাকুন।