ডায়ালাইসিস কি – প্রশ্নটি পরিচিত শুনালেও অনেকের কাছেই বিষয়টি অজানা। আপনি যদি বিষয়টির উপর বিস্তারিত ধারণা পেতে চান তাহলে পড়তে থাকুন।

এই টার্মটি কিডনির সাথে সম্পর্কিত। কিডনির ক্ষতি হতে হতে যখন এটি অনেকাংশেই তার নির্ধারিত কাজটি করতে ব্যর্থ হয় তখন এর প্রশ্ন উঠে। আর যখন পুরো কিডনিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় তখন কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি আসে।

আপনি নিশ্চয়ই কিডনির প্রধান কাজ সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এটি কিভাবে আমাদের বেচে থাকতে সহায়তা করে। এক কথায় বলতে গেলে দেহের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে সেখান থেকে বর্জ্য পদার্থ পৃথক করার মাধ্যমে। যা মুত্র হয়ে দেহ থেকে অপসারণ হয়।

যাহোক, আলোচ্য পোষ্টে ডায়ালাইসিস কি, কেন করা হয়, কখন করা হয় এর খরচ কেমন হয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।

চলুন, শুরু করি।

ডায়ালাইসিস কি?

এটি হলো কিডনি রোগের একটি চিকিৎসা যখন কিডনি তার ৮৫-৯০% কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমতাবস্থায় যখন কিডনির কাজ করার সক্ষমতা থাকেনা তখন বিকল্প হিসাবে এই কাজ কোন না কোন মাধ্যমে করিয়ে নিতে হয় বেচে থাকার স্বার্থে। আর ডায়ালাইসিস সেই কাজটি সম্পন্ন করে।

আরোও দেখুন – কিডনি রোগের বিভিন্ন স্টেজ

ডায়ালাইসিস কেন করা হয়?

ডায়ালাইসিস কেন করা হয় – বিষয়টি বুঝার জন্য প্রথমে কিডনি মুলত: কি কাজ করে দেহকে সচল রাখে সেটি জানা দরকার। পোষ্টের সূচনা লগ্নে যদিও তা কিছুটা উল্লেখ করা হয়েছে তারপর আবারোও বলছি।

কিডনিকে আপনি একটি ফিল্টার মেশিনের সাথে তুলনা করতে পারেন। দেহের বিপাকিয় ও অন্যান্য ফিজিওলজিকাল কার্যক্রমের উচ্ছিষ্ট অংশ যাকে আমরা বর্জ্য পদার্থ হিসাবে অভিহিত করি তা প্রথমে রক্তে মিশে যায়। দেহের এই বর্জ্য মিশ্রিত রক্ত যখন কিডনিতে পৌঁছে তখন কিডনি তার স্বাভাবিক কাজটি সম্পন্ন করে। অর্থাৎ, ফিল্টারিং এর মাধ্যমে বর্জগুলোকে রক্ত থেকে পৃথক করে পরিশুদ্ধ রক্ত পুনরায় দেহের ভিতর চালিয়ে দেয়। আর এই পৃথকিকৃত বর্জ্য পদার্থ মুত্র থলিতে জমা হয়ে মুত্রের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।

এখন, কিডনির বেশীর ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে তার এই ফিল্টার করার কাজটি সম্পন্ন করতে পারে না। তখন, বর্জ্যগুলো রক্ত থেকে পৃথক না হয়ে রক্তেই মিশ্রিত আকারে দেহের ভিতর থেকে যায়। ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের জটিলতা।

এই জটিলতা থেকে পরিত্রানের জন্যই, কৃত্রিম উপায়ে ফিল্টার কাজ যে প্রক্রিয়ায় করানো হয় তাকেই ডায়ালাইসিস বলা হয়।

ডায়ালাইসি কত প্রকার?

এটি দুই প্রকারের হতে পারে, যথা হিমোডায়ালাইসি এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।

হিমোডায়ালাইসি

এক্ষেত্রে একটি কৃত্রিম কিডনি ব্যবহার করা হয় যাকে হিমোডায়ালাইজার বলা হয়। রক্ত পরিশুদ্ধতার লক্ষ্যে কিডনির প্রধান যে কাজটি রয়েছে তা এর মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে সেরে ফেলা হয়।

এই কাজটি সমাধার জন্য চিকিৎসকগন আপনার রক্ত নালী থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা কৃত্রিম কিডনিরে ভিতর সঞ্চালন করে। এরপর এই রক্ত কৃত্রিম কিডনি কর্তৃক ফিল্টার করা হয় এবং পুনরায় দেহের ভিতর সরবরাহ করা হয়। ডায়ালাইসিসের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সচারাচর বেশী ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

ডায়ালাইসিস কিপেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস

এই ধরণের ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে রক্ত দেহের ভিতর থাকা অবস্থায় পরিস্কার করা হয়। এ সময় এবডোমেন বা পেটের নিচের দিকে অস্ত্রপচার করে একটি প্লাস্টিক টিউব রাখা হয় যাকে ক্যাথেটার বলা হয়।

ক্যাথেটার যেখানে রাখা হয় তার পাশেই থাকে একটি পর্দ যাকে পেরিটোনিয়াম বলা হয়। এই মেমব্রেন বা পর্দা অনেক রক্ত নালী দিয়ে যুক্ত থাকে। এর ফলে, এই ক্যাথেটার পেরিটোনিয়ামের মাধ্যমে রক্ত ফিল্টার করার কাজে সহায়তা করতে পারে।

চিকিৎসার সময়, ডায়ালাইসেট নামের বিশেষ ধরণের এক তরল পদার্থ পেরিটোনিয়ামের ভিতর প্রবেশ করানো হয় যা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে এবডোমেনের মধ্যে নিয়ে আসে।

এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক ঘন্টা লেগে যায়। ইহা প্রতিদিন ৪-৬ বার করাতে হয়। তবে, ঘুমানো অবস্থাতেও কাজটি সম্পন্ন করা যায়।

ডায়ালাইসিস কিভাবে কাজ করে?

ডায়ালাইসিস একটি কৃত্রিম কিডনির মত যার মাধ্যমে রক্ত থেকে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত ফ্লুইড ফিল্টার করে পৃথক করা হয়। এই ফিল্টার কাজটি একটি অর্ধভেদ্য পর্দার সাহায্যে করানো হয়। যার ভিতর দিয়ে রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদনসমূহ অতিক্রম করে যেতে পারে। কিন্তু রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদানের চেয়ে তুলনামুলক বড় উপাদান যা কিনা দেহের জন্য বিষাক্ত তা এই পর্দা অতিক্রম করতে পারেনা। ফলে, সেগুলো পৃথক হয়ে যায়।

হিমোডায়ালাইসিস এর ক্ষেত্রে ফিল্টার করার একই পর্দাকে বলা হয় ডায়ালাইজার। যখন রক্ত এর ভিতর দিয়ে অতিক্রম করানো হয় তখন তা পরিস্কার হয়ে যায় এবং তারপর দেহে ফেরত পাঠানো হয়।

আর, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের বেলায় এবডোমেন এর ভিতর পেরিটোনিয়াম নামের যে পর্দা প্রকৃতিগত ভাবেই বিদ্যমান সেটি দিয়ে ফিল্টার কাজটি সম্পন্ন হয়।

ডায়ালাইসিস করলে কি হয়?

আপনার কিডনি যখন ফেইল করে তখন ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে দেহকে সচল রাখা হয়। এটির দ্বারা যে সব কাজ সমাধা হয় তা নিচে উল্লেখ করছি-

  • দেহের রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, লবন ও অতিরিক্ত পানি অপসারণ হয় যার ক্ষতির হাত থেকে দেহ সুরক্ষা লাভ করে।
  • দেহের ভিতর প্রয়োজনীয় খনিজ লবন যেমন পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও বাইকার্বোনেট এর নিরাপদ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

এই কাজগুলোই, একটি কিডনি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে করতে পারে। ক্ষতি সাধন হলে করতে পারেনা বিধায় ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে করানো হয়।

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে তা জানার আগে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকে করাবেন তার উপর।

সরকারি বা বেসরকারি উভয় প্রকারের হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকেই করাতে পারবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম হবে। যা চার-পাঁচশত টাকার মধ্যে হতে পারে। সরকার এক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে।

অপরদিকে, বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তুকি দেওয়া হয় না। ফলে খরচ বেশী হয়। তাতে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেদে ডায়ালাইসিস করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাগতে পারে।

কথাটি ধারণা দেওয়ার জন্য বলা হলো। বাকি, আপনি নিজে বা কাউকে পাঠিয়ে বা টেলিফোনে খবর নিতে পারেন।

বন্ধুরা, ডায়ালাইসিস কি ও কেন করা হয় প্রসঙ্গে আলোচনার উপর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করছি। ভাল থাকুন ও সুস্থ থাকুন।