Last updated on April 18th, 2024 at 06:01 pm
গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার বিষয়টি নিয়ে শুরু করছি আজকের এই পোষ্ট। এর সাথে তৈরি পোশাক পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কিভাবে করা হয় তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
কোয়ালিটি বিষয়টি সাধারণত: পন্য বা সেবার ক্ষেত্রে বেশি শুনা যায়। বিশেষ করে নতুন ব্র্যান্ডের কোন জিনিস বাজারে ছাড়া হলে, ক্রেতা সাধারণ প্রথমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে এই ভেবে যে না জানি এর মান কেমন হয়!
এছাড়া, যারা গার্মেন্টস পন্য রপ্তানির সাথে জড়িত তাদের জন্যও পোষ্টটি খুব গুরত্বপূর্ণ। কেননা, এক্ষেত্রে বিদেশী বয়ারদের সাথে কাজ করে পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করে তা সরবরাহ করতে হয়।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে কোয়ালিটি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নেয়া প্রয়োজন।
Table of Contents
কোয়ালিটি কি বা কোয়ালিটি কাকে বলে?
কোয়ালিটি এর অর্থ হল কাস্টোমার যাতে আপনার পণ্য ব্যবহার করে সন্তুষ্ট থাকে।
আরোও সহজে যদি বলি- উৎপাদিত পণ্য বা সেবা কাস্টোমারের চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়েছে কিনা বা এক কথায় এটি ব্যবহার উপযোগী কিনা – তা যাচাই করা হয়।
মানুষের ক্ষেত্রে যদি ধরি, তাহলে কোয়ালিটি বলতে বুঝায় তার সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট বা গুনাবলি। যেমন, আব্দুর রহিমের ভিতর যদি সততা থেকে থাকে, তাহলে আমরা বলতে পারি, আব্দুর রহিম একজন সৎ লোক বা তার সবচেয়ে ভাল কোয়ালিটি হল, সে একজন সৎ লোক।
ব্যবসা বিশেষ করে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি পরিমাপ করা হয় উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান কেমন বা অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যের তুলনায় এর শ্রেষ্ঠত্বের মাত্র কতটুকু। এই জায়গায়, আর একটি জিনিস চলে আসে, তা হল পণ্যটিতে কোন প্রকার ত্রুটি আছে কিনা বা এটি ত্রুটি মুক্ত কিনা।
ISO ৮৪০২-১৯৮৬ মানদন্ড অনুযায়ি, কোয়ালাটি কাকে বলে তা নিম্নরুপভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
সার্বিকভাবে কোন পণ্যে বা সেবার বৈশিষ্টগত সমষ্টি যা কাস্টোমারের চাহিদা বা প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়। ISO দ্বারা বুঝানো হয়, আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিষয়ক সংস্থা যা কোন প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণে কাজ করে।
পণ্যের কোয়ালিটি সাধারণত: ভোক্তা সাধারণ বা গ্রাহকগন তাদের অতীত ধারণা লব্ধ জ্ঞান থেকে বিচার করে থাকে। যদিও কাস্টমারের মতামতই পণ্যের কোয়ালিটি বিষয়ে চুড়ান্ত কোন বিষয় নয়। কেননা, গ্রাহক কোন পণ্যের প্রোকৌশলগত খুটিনাটি বিষয়ে পরিমাপ করার মত যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না। কাস্টোমারের সন্তুষ্টি হল পণ্যের গুনগত মান বা কোয়ালিটির পরবর্তি ফলাফল।
বছরে পর বছর ধরে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি উন্নত করার এবং তা বজায় রাখার কোন পথ অবলম্বন করে চলতে হয় যাতে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদিত পণ্য বা সেবা কাস্টমার কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হয় বা গ্রাহকের চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়। তা না হলে কাস্টমারের থেকে প্রত্যাখ্যান হওয়ার আশংকা থাকবে।
আরোও দেখুন কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাকে বলে, কেন প্রয়োজন ও কিভাবে করা হয়।
বর্তমান মানুষের কোয়ালিটি যাচাই করা বিভিন্ন রকমে সুযোগ রয়েছে। কোয়ালিটি বিষয়ে নিচের তথ্যগুলিও বিবেচনায় ধরা হয়-
- সমজাতিয় কোন পণ্যের শ্রেষ্ঠত্বের মাত্রা বিচার করা হয়।
- স্পেসিফিকেশনের পন্যটি কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তা দেখা হয়।
- পণ্যের বৈশিষ্টগত সমষ্টি যা কাস্টোমারের চাহিদ মেটাতে সক্ষম কিনা।
- পণ্য বা সেবাটি ব্যবহার উপযোগি কিনা।
- এর মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি আছে কিনা।
- কাস্টোমার পণ্যটি ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হবে কিনা।
পন্য বা সেবার গুনগত মান নির্ধারণে উপরের বিষয়গুলি গুরত্বের সাথে বিচার করা হয়।
তাই কোয়ালিটির নূন্যতম স্ট্যান্ডার্ড পূরণের জন্য আপনাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।
কারণ, আপনি যদি কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড পর্যাপ্তভাবে পূরণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।
গার্মেন্টস কোয়ালিটি বলতে কি বুঝায়?
গার্মেন্টস শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই যখন আপনি নির্ধারিত পোশাকটির জন্য সমস্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করবেন। যেমন, পোশাকের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল তার জন্য উপযুক্ত ফেব্রিক বা কাপড় নির্বাচন করা।
এরপর পোশাকের অন্যান্য উপকরণের কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য করতে হবে। সমস্ত কাঁচামাল নির্বাচনের সময় তার উৎস খুব ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে যেন তা মানসম্পন্ন হয়।
গার্মেন্টস পণ্যের গুনগত মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে তার ফেব্রিকের গুনগত মানের উপর। যেমন, কি জাতীয় ফাইবার বা ইয়ার্ন দিয়ে ফেব্রিক তৈরি করা হয়েছে, এর রঙের স্থায়িত্ব কেমন, ফেব্রিকের উপরিভাগের ডিজাইন কেমন এবং সবশেষে উৎপাদিত পোশাক পণ্যের উপর।
তবে, রপ্তানির ক্ষেত্রে বায়ার প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন সামনে রেখেই আপনাকে পোশাক তৈরির সব ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া, গার্মেন্টস পণ্যে কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণে আর একটি গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল। এর দ্বারা বুঝানো হয়- পণ্যটি তার স্পেসিফিকেশন মোতাবেক তৈরির সময় কোয়ালিটির আদর্শ মানদন্ডের সমস্ত শর্ত পূরণ করা হয়েছে।
যাতে কাস্টোমারের সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
আর একটি বিষয় হলো – কোয়ালিটি নিশ্চিতে আপনার হাতে কাস্টোমারের পছন্দ অপছন্দের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যে তারা কি ধরণের পোশাক পরিধান করতে চায়, তার ডিজাইন কেমন হবে, স্পেসিফিকেশন কি এবং কিভাবে উৎপাদন করা যাবে – ইত্যাদি।
বিশেষ করে, নতুন প্রোডাক্টস তৈরির সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদিত পোশাকের কোয়ালিটির বেশ কিছু প্যারামিটার থাকে। যেমন, এটি পরিধানে আরামদায়ক হবে কিনা, এর টেকসই কেমন হবে, রঙ উঠতে পারে কিনা, এর ডিজাইন কেমন – ইত্যাদি।
তবে, এর সাথে পণ্যটির দামের বিষয়টিও বিবেচনায়া রাখতে হবে। খুব ভালো করতে গিয়ে তা যেন নাগালের বাইরে না চলে যায়। পাশাপাশি দাম বেশী কমাতে গিয়ে আপনার প্রোফিট মার্জিনের উপর যেন প্রভাব না পরে।
পোশাক জাতীয় পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য আপনাকে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও টোটাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়েও কাজ করতে হবে।
গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার?
গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার হতে পারে – তা নিচে উল্লেখ করছি।
পণ্যের কোয়ালিটি তিন প্রকার হতে পারে-
- Quality of design: মানে হল, পণ্যটি দেখতে কেমন। যে কোন পণ্য প্রস্তুতের পর প্রথমে তার appearance বিবেচনায় আনা হয়। এর ভেতরগত মান যত ভাল হোক না কেন, এর ডিজাইন দেখতে যদি চোখে না ধরে তাহলে তার কাস্টমারের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়না। তাই ইহা অনেক সময় quality of design নামেও পরিচিত। এই ধরণের কোয়ালিটি নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঝে মাঝে ক্রেতাদের চাহিদা ও মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং সে অনুযায়ি পণ্যের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়।
- Quality of fitness: এর দ্বারা বুঝায় পণ্যটির ব্যবহার উপযোগি হয়েছে কিনা। স্পেসিকেশন অনুযায়ি উৎপাদিত পণ্য কাস্টারের চাহিদার সাথে মিলেছে কিনা।
- Quality of performance: উৎপাদিত পণ্যের কার্যকারিতার গুনগত মান কেমন তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
ইনস্পেকশন এর উপর ভিত্তি করেও গার্মেন্টস কোয়ালিটি কত প্রকার তা নির্ধারণ করা যায়। উৎপাদন প্র্রক্রিয়ার এক একটি ধাপের সাথে তা সম্পর্কযুক্ত। নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে-
১) উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে পরীক্ষা:
পণ্য উৎপাদন শুরু করার পূর্বে বায়ারের পরামর্শ নিতে হয় এই অর্থে যে, কোন ধরণের কাঁচামাল ব্যবহার করা হবে। ফ্যাক্টরি অনেকসময় বেশি লাভের আশঅয় উৎপাদন খরচ কমিয়ে নিম্ন মানের কাঁচামাল ক্রয় করতে পারে যা বায়ারের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।
এই ইনস্পেকশন প্রক্রিয়ায় আবার কোন কোন সময় উৎপাদন পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপসমুহু পরীক্ষা করে দেখা হয়।
২) পণ্য উৎপাদনের সময় কোয়ালিটি পরীক্ষা:
এর মাধ্যমে বায়ার পণ্যে গড় মান কেমন হতে পারে সে বিষয়ে সার্বিকভাবে এক ধরণের ধারণা পেয়ে থাকে। যা উৎপাদন চক্রের প্রথম থেকেই দেখা হয়। এটি আমদানিকারকের জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
যখন কোন উৎপাদিত পণ্যের ফিনিশড প্রোডাক্টস প্রোডাকশন লাইন থেকে বের হওয়া শুরু হয় তখন তখনই সেখান থেকে কয়েকটি উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান ভালভাবে যাচাই বাচাই করা হয়। যদি কোন সমস্য বা ভূল ত্রুটি ধরা পরে তখন তার ফ্যাক্টরি কর্তপক্ষকে জানানো হয় যাতে যথাযথ সংশোধন করে অবশিষ্ট পণ্যগুলো তৈরি করা যায়।
৩) দৈবচয়নের মাধ্যমে পণ্যের চুড়ান্ত পরীক্ষা:
এটিকে সাধারণত: প্রাক জাহাজিকরণ পরীক্ষা বলা হয় ইংরেজিতে যা pre shipment inspection নামে পরিচিত। ইহা সবচেয়ে কমন একটি পরীক্ষা যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। ইহা তখনই করা হয় যখন ১০০% উৎপাদন সম্পন্ন হয় এবং যার কমপক্ষে ৮০% উৎপাদিত পণ্যের প্যাকেটিং কাজ শেষ হয়ে যায়। কাজেই, এটি দৈবচয়নের মাধ্যমে বাস্তবিক অর্থে করা কোন পরীক্ষা যেখানে সরবরাহকারি কোন প্রকার খেলা খেলতে পারে না।
এই পরীক্ষা বায়ারকে ক্ষমতা প্রদান করে সরবরাহকরিকে চাপে ফেলার জন্য যাতে পণ্যের গুনগত মানে কোন প্রকার হের ফের করা সুযোগ না পায়। পণ্য জাহাজিকরন নিশ্চিত করাই হল এর উদ্দেশ্য।
৪) কনটেইনারে লোড করার সময় পরীক্ষা:
ইহা পণ্য উৎপাদন শুরুর পূর্বের পরীক্ষার মত যা কদাচিত করা হয়। ইহা তখনই করা হয় যখন বায়ারের কোন নির্দিষ্ট লোডিং পরিকল্পনা থাকে।
বন্ধুগন, কোয়ালিটি কত প্রকার – বিষয়ে উপরের আলোচনায় কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, ধন্যবাাদ।
গার্মেন্টস পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ বলতে কি বুঝায়?
গার্মেন্টস পোশাক পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক থোকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি যেহেতু পণ্যের ত্রুটি বা ডিফেক্টের সাথে সম্পর্কিত তাই এখানে উৎপাদিত পণ্যের কোন সমস্যা রয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়।
নিচে কয়েকটি সমস্যার নাম উল্লেখ করা হল-
১. ফেব্রিক ডিফেক্ট:
পোশাক উৎপাদনের সময় ফেব্রিক বা কাপড়ের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যেমন crease mark, knots, ইত্যাদি। এছাড়া, কাপড় ডাইং বা প্রিন্টিং এর সময়েও ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে।
২. সেলাইয়ে ডিফেক্ট:
কাপড় কাটার পর যখন সেলাই করা হয় তখনও বেশ কিছু ডিফেক্ট তৈরি হতে পারে, যেমন সেলাই বাদ পরে যাওয়া, অসম সেলাই, open seam, seam puckering ইত্যাদি।
৩. কালার ডিফেক্ট:
এক্ষেত্রে অনুমোদিত নমুনার সাথে উৎপাদিত পোশাকের রঙে তারতম্য দেখা দিতে পারে। এজন্য, যদি কালার কম্বিনেশন সঠিক না হয় তখন এটি দেখা দিতে পারে। আবার কাপড়ের রঙের সাথে যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হবে তার রঙ যদি একই রকম না থাকে, তখনও এ ধরণের ত্রুটি তৈরি হয়।
৪. সাইজের ডিফেক্ট:
বায়ার পদত্ত স্পেসিফিকেশনের সাইজের সাথে তৈরি পোশাকের সাইজ যদি না মিলে, তখন এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।
৫. অন্যান্য সমস্যা:
অন্যান্য ত্রুটির মধ্যে যেমন বাটন, হোল, জিপার, সেলাই সুতা ঝুলে থাকা, বাটন বাদ পরে যাওয়া, জিপার খাটো হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
গার্মেন্টস পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা হয়?
আগেই বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ শুরু এর কাঁচামাল সংগ্রহের ধাপ থেকে। কাজেই, এই ক্ষেত্রে, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কাজটি শুরু হবে পোশাকের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে এবং শেষ হবে যখন পোশাকটি সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত হয়ে যাবে তখন।
কোন কোন জায়গায় কোয়ালিটি চেক করা হয়ে তা নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হল-
পোশাকের কাঁচামাল ইনস্পেকশন
আপনার গোডাউনে যখন পোশাক তৈরির কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল চলে আসবে, তখন খুব ভাল করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সেখানে কোন প্রকার ত্রুটি বা ডিফেক্ট রয়েছে কিনা। আপনাকে কাপড়ের কমপক্ষে ১০% পরীক্ষা করতে হবে। কাপড়ের পাশাপাশি কাঁচামাল যেমন, লেস, বাটন, জিপার ইত্যাদি প্রয়োজন হলে অনুমোদিত মানদন্ড অনুসারে ল্যবরেটরিতে পরীক্ষা করা যেতে পারে। এগুলো পরীক্ষা করার বেশ কিছু প্যারামিটার থাকে যেমন, ফেব্রিকের বুনন কাজ, GSM ( প্রতি স্কয়ার মিটারে কত গ্রাম ), থ্রেড কাউন্ট, ইয়ার্ন কাউন্ট, ছিড়ে ফেলার শক্তি, গঠন, হাতে ধরার অনুভূতি, কালার ফাস্টনেস ইত্যাদি।
প্রক্রিয়াকালিন কোয়ালিটি কন্ট্রোল
পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে কিছু ক্রিটিকাল পয়েন্ট থাকে যে পয়েন্টগুলোতে পোশাক সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হয়। যেমন, কাপড় কাটার সময় দেখতে হবে স্পেসিফিকেশনের সাথে মিলছে কিনা, ঠিকমত সেলাই কাজ চলছে কিনা, সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতার রঙ আর কাপড়ের রঙের মধ্যে লক্ষণিয় পর্যায়ে তারতম্য আছে কিনা ইত্যাদি। তারপর, ফিনিশিং কাজ ঠিক মত হচ্ছে কিনা – এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।
কাপড় কাটার সময় দু’টি জিনিস খেয়াল রাখতে হয়- এক হল কাপড় কাটার জন্য টেবিলের উপর ছড়িয়ে দেওয়া ও দুই- কাপড় কাটার পর। এই দুই সময়ে কাপড়ে কোন ডিফেক্ট থাকলে তা সহজেই ধরা পরে।
সেলাইয়ের সময়ও কয়েকটি বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেমন সেলাই সোজা লাইন বরাবর চলে কিনা, সেলাইয়ের পর কাপড়ে কোন টান লেগে থাকে কিনা, প্রতি ইঞ্চিতে স্টিচের সংখ্যা, মেশিনের নিডল কেমন, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়।
ফিনিশিং সেকশনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল
তৈরি পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফিনিশিং শাখার গুরত্ব অনেক। কারণ এখান থেকে প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হয়। এজন্য, কোন প্রকার ডিফেক্ট রয়েছে কিনা তা পুনর্বার ভাল করে দেখতে হবে। যেমন, সেলাইগত ডিফেক্ট, ডিজাইন, পরিমাপ সঠিক কিনা – এই সব বিষয়।
ফাইনাল প্রোডাক্টের চুড়ান্ত পরীক্ষা
পোশাক উৎপাদনের সকল ধাপ সমাপ্তির পর লট থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এবং অুনমোদিত নমুনার সাথে পুরোপুরিভাবে মিলে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক প্যারামিটার থাকে যার উপর ভিত্তি করে এই পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
মানের গ্রহনযোগ্য মাত্রা বা acceptable quality level(AQL)
তৈরি করা পোশাকের সম্পূর্ণ লট প্যাকেটজাত করার পর, কোয়ালিটি ম্যানেজার AQL এর উপর ভিত্তি করে একটি অডিট করে। এই অডিট রেজাল্টের উপর কোয়ালিটি ম্যানেজার যদি সন্তুষ্ট হয়, তখন চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য বায়ারের নিকট পাঠানো হবে। র্যানডম স্যামপ্লিং এর মাধ্যমে AQL নির্নয়ের পর বায়ার উক্ত লটের পোশাক হয় গ্রহণ করবে বা রিজেক্ট করবে। নমুনা পরীক্ষার পর ডিফেক্টের হার যদি AQL সীমার মধ্যে থাকে, তাহলে তা গৃহিত হবে, অন্যথায় পরিত্যাগ করা হবে।
কোয়ালিটি পলিসি কাকে বলে?
কোয়ালিটি পলিসি হলো একটি স্বীকৃত কোয়ালিটি মেনেজমেন্ট সিস্টেমের (QMS) প্রয়োজনীয় উপাদান যেখানে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক স্টেকহোল্ডারদের জন্য QMS এর কার্য পরিধির বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করা হয়।
আরোও সহজ ভাষায় বলতে গেলে – এটি আদর্শিকভাবে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি যা কোন সংস্থার উদ্দেশ্য, মিশন এবং কৌশলগত কর্মকান্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ইহাতে এমন একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা থাকে যার মাধ্যমে কম্পানির উৎপাদিত পণ্য ও সেবার গুনগত মান অর্জনের উদ্দেশ্য পূরণ হয় এবং কোয়ালিটির উপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অরগানাইজেশনের প্রদত্ত শর্ত পূরণেও তা অঙ্গিকারবদ্ধ থাকে।
যেমন, ISO 9001 এর জন্য একটি কোয়ালিটি পলিসি থাকতে হয় এবং এর পরিমাপযোগ্য সব উদ্দেশ্যগুলো কম্পানির সমস্ত স্টাফদের নিকট বোধগম্য ও অনুসরণীয় হতে হয়।
কম্পানি স্টাফদের এটিও জানতে হয় যে, তারা যে কাজ করে তা কিভাবে করলে কম্পানির কোয়ালিটি পলিসির সাথে মিলে যাবে, সাংঘর্ষিক হবে না।
এজন্য, অডিটরগন সংস্থার কোয়ালিটি পলিসি এবং এর উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হচ্ছে শুধুমাত্র সেদিকেই নজর দিবেনা, এর সাথে সাথে কম্পানির স্টাফ এ বিষয়ে কতটুকু সচেতন তাও পরীক্ষা করে দেখবে।
অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার কোয়ালিটি পলিসি তাদের মুল ভবনে সকলের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে এবং কম্পানি ওয়েবসাইটে প্রদান করে থাকে।
আরোও দেখুন-
বন্ধুগন, কোয়ালিটি কাকে বলে, কোয়ালিটি কত প্রকার এবং কোয়ালিটি পলিসি কাকে বলে – বিষয়গুলির উপর যে তথ্য পরিবেশন করা হলো তাতে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পাশাপাশি আমাদের পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে ফেসবুক পেজ -এ একটি লাইক দিয়ে দিবেন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবান।
very nice moment