Last updated on May 9th, 2023 at 05:46 pm

শরীরের কালোদাগ দূর করার উপায় নিয়ে কি আপনি ভাবছেন। কোন না কোন মানুষেরই জীবনের কোন এক পর্যায়ে শরীরে কোন কালো স্পট দেখা দিতে পারে। এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এটি আমাদের হতেই পারে বা হয়েই থাকে।

যেমন ধরুন, চলা ফেরার পথে বা অন্য যেকোনভাবে শরীরের কোথায় আঘাতের মাধ্যমে একটি ক্ষত তৈরি হল। যখন সে ক্ষতটি শুকিয়ে যায় তখন ওখানে একটি কালো স্পট থেকে যায়।

যাহোক, এই আর্টিকেলে শরীরে কালো দাগ কেন তৈরি হয়, এর লক্ষণ কেমন, কি কি বিষয় শরীরে কালো স্পট তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ি শরীরের কালো দাগ দূর করার উপায় এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

চলুন শুরু করা যাক।

শরীরের কালো দাগ কি?

শরীরের কালো দাগ হল এক প্রকারের hyper pigmentation. অর্থ হল শরীরের স্কিনের কোন কোন স্থানে পিগমেন্টের পরিমান বেড়ে যাওয়া। এটি তখনই হয় যখন শরীরের স্কিনের কোনও অংশে মেলানিন নামক এক প্রকার পিগমেন্ট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী তৈরি হয়।

মেলানিন নামের এই পিগমেন্টের উপস্থিতির কারণেই প্রকৃতিগতভাবে চোখ, স্কিন এবং চুলের রঙ কালো হয়।

শরীরে কালো দাগ কেন হয়?

আমি আগেই বলেছি যে, dark spot বা কালো স্পট তৈরি হওয়ার পিছনে প্রকৃতিগতভাবে প্রধান কারণ হল শরীরে ঐ স্থানে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। এছাড়া আরোও অন্যান্য কারণেও হতে পারে। যেমন-

  • আল্ট্রা ভায়োলেট বা অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্ষে যাওয়া:

আমারা সূর্যালোক বা কৃত্রিম উপায়ে অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে যেতে পারি। কৃত্রিম উপায়ের মধ্যে tanning bed হল এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ। হাইপার পিগমেন্টেশেন সাধারনত: মধ্য বয়স্ক মানুষের বেশী হয়ে থাকে। কারণ মাঝ বয়সি মানুষেরা কম বয়সীদের তুলনায় জীবনের বেশী সময় সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ পায়। যদি তারা সূর্যের আলো থেকে প্রতিরক্ষামুলক কোন প্রকার সরঞ্জাম ব্যবহার না করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যায় তাহলে আস্তে আস্তে তাদের শরীরের চামড়ায় সূর্যালোকের দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল প্রকাশ পেতে থাকে।

শরীরের যে সমস্ত জায়গা সূর্যালোকের সাথে উন্মুক্ত থাকে যেমন আমাদের চেহাড়া, হাত বা বাহু ইত্যাদি অঞ্চলে এর প্রভাব বেশী দৃশ্যমান হয়।

  • শরীরের হরমোনাল পরিবর্তন:

Melasma হল শরীরের এমন একটি অবস্থা যার কারনে চামড়ার রঙ পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। এই শারীরিক অবস্থা মহিলাদের অধিক পরিমানে হয়ে থাকে – বিশেষ করে গর্ভবস্থায় থাকার সময়। এমেরিকার ডার্মেটোলজি একাডেমির মতে এর পিছনে শরীরের হরমনের প্রভাব রয়েছে।

  • ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:

কিছু কিছু ঔষধ এমন রয়েছে যা সেবনের ফলে স্কিনে পিগমেন্টের পরিমান বেড়ে যায়। এর ফলে শরীরে কালো স্পট দেখা দেয়। ঔষধগুলির মধ্যে যাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশী তারা হল নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (NSAIDs), টেট্রাসাইক্লিন এবং সাইকোট্রপিক (psychotropic) ড্রাগস, ইত্যাদি।

  • শরীরে যেকোন প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হলে:

শরীরের চামড়ায় কোন প্রদাহ দেখা দিলে সেখানে কালো স্পট তৈরি হতে পারে। আর এই প্রদাহ বিভিন্ন করনে হতে পারে, যেমন একজিমা (eczema), একনি (acne), শরীরের চামড়ায় যেকোন প্রকার আঘাত ইত্যাদি।

  • ক্ষত শুকিয়ে গেলে:

শরীরে সৃষ্ট কোন ক্ষত যেমন পোকা মাকড়ের কামরে, পুরে গেলে বা কেটে গেলে যে ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষতস্থান শুকানোর পর উক্ত স্থানে কালো এক স্পট থেকে যায়।

  • ইরিটেশন (Irritation) হলে:

শরীরের মাঝে মাঝে কোথাও এক প্রকারের জ্বালতন বা ইরিটেশন তৈরি হতে পারে। ইহা অনেক সময় কসমেটিক সার্জারি বা চুলের কোন পণ্যের কারনে হতে পারে যা পরবর্তিতে চামড়ায় কালো স্পট তৈরি করতে পারে।

  • ডায়াবেটিস থাকলে:

ডায়াবেটিসের ফলে শরীরের কোন কোন এলাকার স্কিন এর রঙ গাঢ় আকার ধারণ করতে পারে।

 কালো দাগ তৈরির লক্ষণ কি কি?

শরীরের dark spot মাঝে মাঝে হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করতে পারে। এই স্পটের রঙ মানুষের চামড়ার ধরণের উপর নির্ভর করে। তবে, এরকম কোন স্পটের কারণে ব্যথা অনুভব হয়না।

কালো স্পট এর সাইজ বা আকার কম বেশী হতে পারে এবং শরীরের যেকোন স্থানেই হতে পারে। কিন্তু সচারাচর শরীরের ঐসব এলাকাতেই বেশী দেখা যায় যেখানে সূর্যের আলো গিয়ে পরে।

নিচের জায়গাগুলিতে কালো স্পট বেশী দেখা দেয় –

  • হাতের পিছনে
  • মুখ মন্ডলে
  • পিঠে এবং
  • কাঁধে

এই কালো স্পটগুলি স্বাভাবিকভাবে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। তবে, অনেক ছোট ছোট স্পট মিলে শরীরের একটি বৃহত অংশের চামড়ায় এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

শরীরের কালো দাগ দূর করার উপায় কি?

শরীরের কালো দাগ দূর করার উপায় হল প্রথমে এই অবস্থা তৈরির কারণ অনুসন্ধান করুন। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এর সাথে যোগাযোগ করুন যিনি আপনাকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বা এর সাথে প্রয়োজনীয় ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে কেন আপনার শরীরের স্কিনে এরকম অবস্থার তৈরি হল তার কারণ অনুসন্ধান করে বের করতে পারবে।

কারণ অনুসন্ধান হয়ে গেলে চিকিৎসক এই কারণ দুরীকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োগ করবেন। তবে একটি কথা মনে রাখার বিষয়, তা হল চিকিৎসার মাধ্যমে কারণ  দুরীভূত হওয়ার পর কালো স্পট গুলি শরীরের স্কিনের একচুয়াল রঙের সাথে মিলে যেতে ৬-১২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

এক্ষেত্রে, আপনাকে ধৈর্য সহকারে চিকিসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

চিকিৎসকগন সাধারণত: নিম্নলিখিতভাবে শরীরে কালো দাগ দুর করায় উপায় বের করে থাকেন-

মেডিক্যাল চিকিৎসা:

  • লেজার থেরাপি:

এর মাধ্যমে কালো স্পট আস্তে আস্তে উজ্জল হতে থাকে।

  • টপিকাল ক্রিম:

সম্ভবত এটিই হল শরীরের কালো দাগ দুর করা উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই ক্রিমের উপাদান হল hydroquinone. তবে এমেরিকান ফুড এবং ড্রাগ প্রশাস (FDA) এই ঔষধের active ingradients এর মাত্রা ২% হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। কারণ পরিমানে বেশী হলে ইহা ক্যানসার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

শরীরের কালো দাগ দূর করার ক্রিম এর উপর আরেকটি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ক্রিমের নাম জানতে সেখানে ভিজিট করতে পারেন।

  • রেটিনয়েড দ্রবন:

রেটিন-A এবং রেনোভা হচ্ছে বিকল্প চিকিৎসা। এতে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড এবং রেটিনয়িক এসিড থাকে যা নতুনভাবে স্কিন তৈরির মাধ্যমে আক্রান্ত স্কিন প্রতিস্থাপনের জন্য কাজ করে।

  • রাসায়নিক পিল:

এই রাসায়নিক পিলে সেলিসাইলিক এসিড এবং গ্লাইকোলিক এসিড থাকে যা আক্রান্ত চামড়ার বাহিরের লেয়ার দুরীকরণে সহায়তা করে।

বাড়িতে চিকিৎসা:

  • ওভার দি কাউন্টার ক্রিম:

ভিটামিন- A ক্রিম বা ভিটামিন- E ক্রিম চামড়ার রঙ নষ্ট হওয়কে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। এমনকি সার্বিকভাবে শরীরের চামড়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার উন্নতি সাধনেও কাজ করে।

  • লেবুর রস:

আপনার শরীরের বিবর্ণ চামড়ায় দৈনিক দু’বার করে লেবুর রস লাগিয়ে দিন। এতে করে চামড়া উজ্জলতা বেড়ে যাবে এবং চামড়ার রং পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও কাজ করবে।

  • ক্যাস্টর ওয়েল:

শরীরের আক্রান্ত স্থানে দিনে দু’বার করে লাগিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবহার করুন।

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার বেশী করে গ্রহন করুন যা চামড়ার স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য খুব প্রয়োজনিয় একটি পুষ্টি। যেসব ফলে ভিটামিন-সি বেশী থাকে তারা হল আমলকি, পেয়ারা, আনারস, কমলা লেবু ইত্যাদি।

কি কি বিষয় শরীরে কালো স্পট তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়?

যেকোন মানুষের ক্ষেত্রেই এটি হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় এমন আছে যারা আপনার এই অবস্থা তৈরির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন-

  • সূর্যালোক
  • গর্ভাবস্থা
  • চামড়ার কিছু রোগ যেমন- একনি, একজিমা বা সোরিয়াসিস
  • যেসব ঔষধ পিগমেন্ট তৈরির পরিমান বাড়িয়ে দেয় তা গ্রহন করা
  • যকৃতের রোগে আক্রান্ত হলে
  • ডায়াবেটিস থাকলে

শরীরের কালো দাগ হওয়া থেকে বাচার উপায় কি?

শরীরের কালো দাগ প্রতিরোধ করে চলা সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে। যেমন ধরুন শরীরের হরমনজনিত কোন পরিবর্তন বা কোন মহিলা গর্ভাবস্থায় উপনিত হলে – যা প্রতিরোধযোগ্য নয়।

এরপরও, আমাদের নিজেদের হাতে কিছু বিষয় রয়েছে যা অনুসরনের মাধ্যমে আপনি এর ঝুঁকি কমাতে পারেন।

  • দৈনিক sunscreen ব্যবহার করে চলুন যদিও কখনোও সূর্যালোক তীব্র না থাকে।
  • একটি বড় মাথার টুপি এবং sunglass ব্যবহার করুন।
  • বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগ যেমন একনি, একজিমা ইত্যাদির জন্য দ্রুত চিকিৎসা নিন।
  • সকাল ১০-০০ থেকে বিকেল ৪-০০ পর্যন্ত সূর্যালোক পরিহার করে চলুন।