Last updated on May 9th, 2023 at 05:35 pm
ফ্রি রেডিক্যালস কি – বিষয়টি আমাদের কাছে যদিও তেমন পরিচিত নয়, তথাপি জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এটি খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। এই পোষ্টে ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ে কিছু তথ্য উস্থাপনের চেষ্টা করব। বিশেষ করে, আমাদের দেহে ফ্রি রেডিক্যালস কিভাবে তৈরি হয়, এর ক্ষতিকারক দিকগুলো কি এবং ফ্রি রেডিক্যালের প্রভাব থেকে কিভাবে বাচা যায় – এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করি।
Table of Contents
ফ্রি রেডিক্যালস কি?
ফ্রি রেডিক্যালস বুঝার জন্য রসায়নের প্রাথমিক জ্ঞান থাকলে ভাল হয়। আমরা যারা রসায়ন বিদ্যা পড়েছি, সেখান থেকে জেনেছি, পরমানুর চতুর্দিক স্তরে স্তরে ইলেক্ট্রন দিয়ে সাজানো থাকে। এই স্তর গুলোকে shell বলা হয়। প্রতিটি shell –এ জোড়া হিসাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে। একটি shell যখন তার নির্দিষ্ট সংখ্যার ইলেক্ট্রন দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে তখন অবশিষ্ট ইলেক্ট্রনসমুহ তার পরের shell –এ গিয়ে অবস্থান নেয়।
কোন পরমানুর সর্ব বাহিরের shell এ যখন ইলেক্ট্রনের ঘাটতি দেখা যায়, তখন এটি অপর কোন পরমানুর সাথে বন্ধন তৈরিতে অগ্রসর হয়। তার ইলেক্ট্রন ঘাটতি পূরণের জন্য। এই ধরণের পরমানুকে ফ্রি রেডিক্যালস বলা হয়।
যে সব পরমানুর সর্ব বাহিরের স্তর ইলেক্ট্রন দিয়ে পূর্ন থাকে তারা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। কিন্তু ফ্রি রেডিক্যালস সমুহে ইলেক্ট্রনের অভাব থাকায় তারা অস্থিতিশীল অবস্থায় বিচরণ করতে থাকে। ফলে তারা খুব সহজেই অন্য কোন পদার্থের উপর রাসায়নিক বিক্রিয়া করার জন্য উদগ্রীব থাকে।
দেহের ভিতর বিপাকিয় কার্যক্রমের সময় যখন অক্সিজেন অনু ভেঙ্গে গিয়ে একক পরমানুতে বিভক্ত হয় তখন তার বাহিরের স্তরে ইলেক্ট্রনের ঘাটতি দেখা যায়। সেখানে বিজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন বিরাজমান থাকে। ফলে ঐ অক্সিজেন পরমানু অস্থিতিশীল হয়ে ফ্রি রেডিক্যালে রুপান্তরিত হয়ে যায়। এজন্য সে তার ইলেক্ট্রন ঘাটতি পূরণের জন্য আশে পাশের কোষ সমুহে আক্রমনাত্মক ভূমিকায় বিচরণ করতে থাকে। যাতে সে অন্য কোন অনু বা পরমানুর সাথে বন্ধন তৈরি করে তার ইলেক্ট্রন ঘাটতি মেটাতে পারে। আমাদের দেহে যখন এই অবস্থা তৈরি হয় তখন তাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলা হয়।
দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ফলে শরীরের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও, এর ফলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও আরোও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
ফ্রি রেডিক্যালস কিভাবে ক্ষতি করে?
Rice university এর তথ্য মতে, প্রথম প্রথম যখন ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়, তারপর ধারাবাহিকভাবে একের পর এক এটি তৈরি হতে থাকে। একে chain reaction বলে। প্রথমে তৈরি হওয়া ফ্রি রেডিক্যাল তার চারপাশে কোন মলিকুল থেকে ইলেক্ট্রন টেনে নিয়ে নিজের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে যে মলিকুল থেকে ইলেক্ট্রন টেনে নেওয়া হল তার ইলেক্ট্রন ঘাটতি দেখা দিবে। ফলে সেটি অস্থিতিশীল হয়ে নতুন করে আর একটি ফ্রি রেডিক্যালে রুপান্তরিত হয়। এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলতে চলতে সম্পূর্ণ কোষটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ কোষের কোষ প্রাচির ভেঙ্গে যায় বা কোষটি ফেটে যায়।
এই চেইন রিয়াকশনের ফলে যখন ফ্রি রেডিক্যালস এর সংখ্যা খুব বেশি পরিমানে বেড়ে যায় তখন দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। এই স্ট্রেসের ফলে কোষস্থিত প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিয়িক এসিড ইত্যাদি উপাদানের ক্ষতিসাধন হয়।
বিগত কয়েক দশকের কিছু গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেহে জটিল রোগ ও রোগের বিভিন্ন রকম অবস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। যেমন, হৃদরোগ, কিছু সুনির্দিষ্ট ক্যানসার, এমফাইসেমা, এলজিমার’স রোগ, পারকিনসন’স রোগ, আলসার, আরথ্রাইটিস নামে প্রদাহজনিত রোগ ইত্যাদি।
এছাড়া, ফ্রি রেডিক্যাল এর প্রভাবে মানুষের মাঝে বয়সের ছাপ ফুটে উঠে। অধিক বয়স্ক মনে হয়। বয়সের উপর ফ্রি রেডিক্যালস এর তত্ত্ব মতে, যেহেতু ফ্রি রেডিক্যাল আমাদের ক্ষতি করে, তাই আমরা বৃদ্ধ হতে থাকি। ডিএনএ যে কোডের সাহায্যে নির্দেশনা প্রদান করে, ফ্রি রেডিক্যালস সেই কোডের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। এর ফলে, নতুন কোষ ত্রুটিপূর্ণভাবে তৈরি হয়।
কি কি কারণে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়?
প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেকের শরীরেই কিছু না কিছু ফ্রি রেডিক্যালস তৈরি হয়ে থাকে। যেমন, বিপাকিয় কার্যক্রম, শরীর চর্চা, প্রদাহ ইত্যাদি। এটি স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
তবে, এর বাইরেও পরিবেশ থেকেও আপনি ফ্রি রেডিক্যালস এর ক্ষতিকারক প্রভাবের স্বীকার হতে পারেন। যেমন-
- ওজোন স্তর থেকে;
- সুনির্দিষ্ট কিছু কীটনাশক ব্যবহারের ফলে;
- ধুমপান করার কারণে;
- রেডিয়েশন বা বিকিরণগত কারণে;
- বিভিন্ন প্রকার পরিবেশ দুষণের মাধ্যমে;
অতিরিক্ত সুগার ও চর্বি বিশিষ্ট খাদ্য এবং মদ্যপানের দ্বারাও ফ্রি রেডিক্যালস তৈরি হতে পারে।
ফ্রি রেডিক্যালস থেকে কিভাবে বাঁচা যায়?
ফ্রি রেডিক্যালস এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে সম্পূর্ণরুপে মুক্ত থাকা অসম্ভব। তবে, আপনি চাইলে দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন বা এটিকে কমিয়ে আনতে পারেন।
এর জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আপনাকে করতে হবে, তা হল এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খাওয়া এবং পরিবেশের বিরুপ প্রভাব থেকে যে ভাবে ফ্রি রেডিক্যলস তৈরি হয় তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধের খুব ভাল এক উপায় হল – আপনি যে খাবারটি খাবেন তাতে যেন পর্যাপ্ত পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে- এটি নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে এন্টি অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট পাওয়া গেলেও এর আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়না। এর জন্য, এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
দৈনিক পাঁচ বার বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি ও ফলমুল খেতে পারলে আপনার দেহ তার চাহিদা মোতাবেক এন্টি অক্সিডেন্ট পেতে পারে। এমন ফলমুল ও শাক-সবজির কয়েকটি উদাহারণ নিচে উল্লেখ করা হল-
- বেরি, berries;
- চেরি, cherries;
- সাইট্রাস জাতীয় ফল;
- Prunes;
- গাড় সবুজ শাক সবজি;
- ব্রোকলি;
- গাজর;
- টমেটো
- অলিভস
এছাড়া, নিচের আরোও কয়েকটি পুষ্টি উপাদান থেকে পেতে পারেন-
- বাদাম
- মাছ;
- ভিটামিন-ই;
- ভিটামিন- সি;
- Turmeric
- Green tea;
- Melatonin;
- পিয়াজ;
- রসুন
আরেকটি বিষয় গুরত্বপূর্ণ যা কিনা স্বাস্থ্য সম্মত জীবন ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করে চলা যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। নিচে এর কয়েকটি উদাহারণ দেওয়া হল-
- দৈনিক নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে শরীর চর্চ করা;
- ধুম পান পরিত্যাগ করা;
- রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা;
- পরিবেশ বিষয়ে সতর্ক হয়ে চলা;
- সান স্ক্রীণ ব্যবহার করা;
- মদ্যপান পরিহার করা;
- পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো;
- অতি ভোজন পরিহার করা, ক্যালরি হিসাব করে খাবার খাওয়া; ইত্যাদি।
বন্ধুগন, পোস্টের কনটেন্ট পড়ে কেমন লাগল, কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ