টি-শার্ট কত প্রকার নিয়ে আজকের এই আয়োজন। জিন্স প্যান্টের সাথে ডিজাইন ও রঙের মিলন ঘটিয়ে একটি টি-শার্ট পরে নিলে আপনাকে যে অসম্ভব স্মার্ট দেখাবে তা আর নিকট গোপন নয়! লিঙ্গভেদে মানুষ টি-শার্ট পরা পছন্দ করে বিশেষ করে ক্যাযুয়াল কোন কাজ বা পরিবেশে অংশ নিতে। আর ডিজাইন সচেতন ব্যাক্তির নিকট টি-শার্টের রয়েছে আকাশ সমান নতুন নতুন ডিজাইন ও স্টাইলের বিচিত্র সমাহার।

টি-শার্ট শুধু আরামদায়ক পরিধেয় পোশাক হিসাবেই স্বীকৃত নয়। এটি এক ক্লাসিক ধরণের স্টাইলে সাথে আপনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

আধুনিক বিশ্বের ফ্যাশন জগতের বিচারে পুরুষ সমাজ সাধারনত: ক্লাসিক গোল গলা টাইপের বা কলার সম্বলিত টি-শার্ট পছন্দ করে থাকে। মার্কেটে এটি ছাড়াও আরোও বিভিন্ন ধরণের বহু টি-শার্টের প্রাচুর্যতা রয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় প্রত্যেক রঙের বিভিন্ন ডিজাইনের এক অদ্ভুত সবাবেশ।

কাজেই, ব্যাপারটি এমন নয় যে, বাজারে গেলাম আর প্লেইন বা সলিড ধরণের কোন একটি নিয়ে নিলাম। কেনার আগে আপনার জানা প্রয়োজন টি-শার্ট কত প্রকার হতে পারে, এর ভিতর কোন কোন ধরণের ডিজাইন রয়েছে, কোন বয়সে কোন ধরণের টি-শার্ট আপনার জন্য মানানসই হবে- ইত্যাদি।

তাই, এই বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে টি-শার্ট কত প্রকার ও কি কি – বিষয়ের উপর আপনাদের নিকট কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। এছাড়া, বিশেষ করে বেকার ভাইদের জন্য কিভাবে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করা যায় সে বিষয়ে অপর এক পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে।

তো, চলুন – ফিরে যাই মুল আলোচনায়।

Basic half T-shirt

বেসিক হাফ হাতা টি-শার্ট

এই ধরণের টি-শার্ট একটি অন্যতম জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।এটি নারি-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পরিধান করতে পারে। আপনি দেখতে পাবেন- পুরুষের সাথে সাথে অনেক মেয়েরাও বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে এটি সমান তালে ব্যবহার করছে। অথচ এমন অনেক ধরণের টি-শার্ট রয়েছে যেগুলো পুরুষ ও মহিলাদের বেলায় ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিছু আছে যেগুলো একচেটিয়া শুধু মেয়েদের জন্য আবার কিছু এমন ধরণের টি-শার্ট যেগুলো শুধু পুরুষরাই ব্যবহার করে।

এই টি- শার্টের নেকলাইন গলার কাছাকাছি থাকে এবং গোলাকার হয়। নেকলাইনটি গলার নিকটবর্তি হলেও পরিধানের সময় খুব সুন্দরভাবে ফিটিং হয়। কোন অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়না।

V-Neck T-Shirt

ভি-নেক টি-শার্ট

এই টি-শার্টের নাম তার পরিচয় বহন করে যা গলার অংশে V আকৃতি প্রদর্শন করে। এই ধরণের টি-শার্ট সাধারণ গোল গলার টি-শার্টের তুলনায় একটু অধিক স্টাইলিশ মনে হয় এবং গলার ঠিক নিচে তুলনামুলক বেশী খোলা জায়গা প্রদান করে যা V আকৃতির কারণে সম্ভব হয়।

এই টি-শার্ট বিভিন্ন সাইজে তৈরি হয় যেখানে V এর আকার ছোট-বড় হতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত স্টাইল যাই হউক না কেন এবং আপনি বক্ষদেশের যতটুকু খোলা রাখেন না কেন, এই ধরণের টি-শার্ট আপনার জন্য মানানসই হবে।

এটি পুরুষ এবং মহিলা উভয় শ্রেণির মানুষই পরিধান করতে পারে। ইহা গায়ে দেওয়ার পর আপনাকে ক্যাযুয়াল বা ফরমাল উভয় রকম দেখাতে পারে। এই টি-শার্ট আপনি অন্যান্য পোশাকের নিচে অথবা গ্রিষ্মের ডুপরে এককভাবেও পরতে পারেন।

Polo T-Shirt

পলো টি-শার্ট

ইহা টি-শার্টের জগতে একটি অন্যতম জনপ্রিয় টি-শার্ট। পলো টি শার্ট এমন ধরণের টি-শার্ট যার কলার থাকে। এর নেকলাইনের সামনের অংশের নিচের দিকে প্লাকেট থাকে যেখানে দুই-তিনটি বোতাম শোভা পায়। এছাড়া আপনি ইচ্ছা করলে বুকে একটি পকেটও লাগিয়ে নিতে পারেন।

এরা সাধারণত: হাফ হাতা হয়ে থাকে। এই ধরণের টি-শার্ট  ১৮৫৯ সালে ভারেতে পোলো খেলোয়ারগন পরিধান করেছিল এবং ১৯২০ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই টি-শার্ট ওভেন ফেব্রিকের পরিবর্তে নিট ফেব্রিক দিয়ে তৈরি করা হয় যার উৎস কটন কাপড়।

Henley T-Shirt

হেনলি টি-শার্ট

এই টি-শার্টে কলার থাকে না। তবে সব মিলিয়ে এই ধরণের টি-শার্ট দেখতে ইউনিক বা অন্যন্য বৈশিষ্টের বলে মনে হবে। গোল গলার নিচেই থাকে দৃষ্টি নন্দন একটি প্লাকেট। এটি হল পোলো শার্ট এবং টি-শার্টের মাঝামাঝি পর্যায়ের একটি পোশাক। কিন্তু এর স্টাইল এর মতই নিজস্ব বৈশিষ্টের অধিকারি।

এই টি-শার্টের প্লাকেটের বোতাম একটু সূক্ষ প্রকৃতির হয়। বাইরে থেকে দেখতে ভালই লাগে। এক কথায় বলতে গেলে এটি একটি ক্লসিক ধরনের টি-শার্ট।

Ringer T-shirt

রিঙ্গার টি-শার্ট

আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা রিঙ্গার টি-শার্টে চলে এসেছি যার খুবই সুনির্দিষ্ট ধরণের বৈশিষ্ট রয়েছে। এর উপরিভাগ অন্যান্য বেসিক টি-শার্টের মত মনে হতে পারে যেখানে crew neck collar বা গোলাকার ধরণের গলার অংশ থাকে।

তবে, এই ধরণের টি শার্টে কিছুটা ইউনিক বৈশিষ্ট থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ডিজাইনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিষয়গুলিও কম গুরত্বের নয়। এই ধরণের টি-শার্টের কাপড়ের সমস্ত অংশ জুরে এক রঙ বিশিষ্ট হবে। শুধুমাত্র কলার এবং হাতার রীব হবে বিপরীত বা অন্য কোন রঙের।

রীতিগতভাবে দেখা যায়, সবচেয়ে কমন রঙ হল সাদার সাথে কালো রীব। সর্বপ্রথমএই ধরণের টি-শার্টের প্রচলন দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫০ সালের দিকে। তারপর থেকে এটি ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

Cap-Sleeve T-Shirt

ক্যাপ স্লিভ টি-শার্ট

পুনরায় বলতে হচ্ছে- এই টি-শার্টের নামই বলে দেয় এটি কোন ধরণের টি-শার্ট হতে পারে। এটি এমন ধরণের টি-শার্ট যেখানে একটি ক্লাসিক crew neckline থাকবে। কিন্তু এটি চেনার প্রধান উপায় হল এর cap sleeves. অর্থাৎ ক্যাপের মত দেখতে এর হাতা যুগল।

বাস্তবে, এই ধরণের টি-শার্ট এর হাতা একটু বেশি পরিমানে খাট থাকে। এটি তাদের জন্যই সঠিক টি-শার্ট হতে পারে যারা গতানুগতিক অন্যান টি-শার্টের হাতার বিষয়ে চিন্তিত থাকে। কারণ হাতাগুলি অর্ধেক হলেও একটু লম্বা হওয়ায় তাদের নিকট পছন্দের নয়।

তবে, এই টি-শার্টের হাতা এত খাট যে আপনি এটিকে হাতা কাটা টি-শার্টও বলতে পারেন। আর ক্যাপ স্লিভ টি-শার্টের এই বৈশিষ্ট স্টাইলিং এর ক্ষেত্রেও কিছুটা নতুনত্বের জন্ম দেয়।

Pocket T-Shirt

পকেট টি-শার্ট

পকেট টি-শার্ট প্লেইন অথবা প্রিন্টেড কাপড় দিয়ে তৈরি এক প্রকারের টি-শার্ট। এখানের বুকের বামদিকে একটি ছোট আকারে পকেট থাকে যা এর স্টাইলিং বা সৈন্দর্য বর্ধনে ভূমিকা রাখে। কারণ পকেটটি ছোট হওয়ার কারণে এখানে তেমন কিছু রাখার সুযোগ হয়ন। তাই এটিকে স্টাইলিশ হিসেবেই ধরে নিতে হয়।

বর্তমান সময়ে এই টি-শার্ট অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ধরণের টি-শার্ট জিন্সের প্যান্টের সাথে গায়ে দিলে আপনাকে খুব চমৎকার দেখাতে পারে।

অন্যান্য টি-শার্টেও পকেটের উপস্থিতি থাকতে পারে তবে সেটি অনেক সময় crew neckline বিশিষ্ট বেসিক ধরণের টি-শার্ট।  কাজেই, আপনি যদি আপনার বেসিক কালেকশনের মধ্যে বৈচিত্র আনতে চান তাহলে এই ধরণের টি-শার্ট বেছে নিতে পারেন।

Baseball T-Shirt

বেসবল টি-শার্ট

যে কোন ধরণের খেলার পোশাক হিসাবে ব্যবহারের জন্য এই টি-শার্ট খুবই উপযোগি। এটি হল Raglan-sleeve টি-শার্ট যা বেসবল খেলোয়ারের ইউনিফর্মের মত খুব ক্লাসিক দেখায়। এজন্য একে রাগলান-স্লিভ বা বেসবল টি-শার্ট উভয় নামেই ডাকা হয়। এই টি-শার্ট হাফ হাতা হয়ে থাকে।

এদের সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট হল, এই টি-শার্টের এক এক হাতা উভয় দিক দিয়ে টি-শার্টের কলার পর্যন্ত গিয়ে মিশে গেছে। সাধারণত: বেসবল টি-শার্টের হাতার রঙ কাপড়ের অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই টি-শার্টগুলো সাদা রঙের হয় এবং হাতার কাপড় নীল, কাল বা লাল রঙের হয়।

তবে, মজার বিষয় হল, এই টি-শার্ট যে শুধু খেলার ময়দানেই ব্যবহার করতে হবে তা নয়। আপনি এর বাইরেও বিভিন্ন নিত্য নৈমিত্তিক কাজে এটি পরিধান করে ব্যবহার করতে পারেন।

Solid T-Shirt

 

সলিড টি-শার্ট

সলিড টি-শার্টকে প্লেইন টি-শার্টও বলা হয়। এ ধরণের টি-শার্টের এক রঙ বিশিষ্ট কাপড়ে অন্য কোন ডিজাইন বা স্টাইল প্রদান করা হয় না। ফলে যারা একটিু সাধরণ, পরিচ্ছন্ন বা ছিম-ছাম ধরণের কিছু পছন্দ করে তাদের জন্য এটি হতে পারে সবচেয়ে ভাল একটি সুযোগ।

এই সলিড টি-শার্ট সমাজের বিশেষ কোন শ্রেণির মানুষের নিকট দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি এমন এক টি-শার্ট যা ফ্যাশন বা পোশাক জগত থেকে কখনোও মুছে যাওয়ার নয়। এগুলো সহজেই অন্য কোন পোশাকের সাথে মিশিয়ে ম্যাচিং করে বছরের যে কোন সময়ে পরিধান করা যায়।

Striped T-Shirt

স্ট্রািইপ টি-শার্ট

আপনি যদি তরুণ প্রজন্মের হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ওয়ারড্রোবে নিশ্চয় এক বা একাধিক স্ট্রাইপ টি-শার্ট থাকার কথা। তাই না? প্রাথিমিকভাবে এর ক্লাসিক দৃশ্য যে কোন মানুষের ব্যক্তিগত সাইলিংকে আরোও সমৃদ্ধ করে।

আড়া-আঁড়ি বা লম্বা-লম্বি যে কোন ধরণের স্ট্রাইপের টি-শার্ট আপনি যে কোন পোশাক বিশেষ করে জিন্সের সাথে মিলিয়ে নির্দিধায় পরিধান করতে পারেন। তারপর নিত্য নৈমিত্তিক যে কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন।

স্ট্রাইপ টি-শার্টের নেকলাইন বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন crew নেক, scoop নেক এবং V-neck ইত্যাদি।

Muscle T-Shirt

 

Longline T-Shirt

 

 

পরিশেষে একটি বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন মনে করছি। তা হল এই পোষ্টে বিভিন্ন টি-শার্টের ছবিগুলি Sell Merch থেকে নেওয়া।