Last updated on April 16th, 2024 at 09:17 am

গার্মেন্টস কত প্রকার এবং গার্মেন্টস কাপড়ের নামের তালিকা নিয়ে শুরু করছি আজকের লেখা।

গার্মেন্টস নামটি সবার নিকট খুব পরিচিত – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। কেননা, আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত গার্মেন্টস পন্য ব্যবহার করে চলছি।

কিন্তু, তা সত্ত্বেও বিষয়টির উপর অনেকের পরিস্কার ধারণার অভাব পরিলক্ষীত হয়।

তাই এই আর্টিকেলে গার্মেন্টস কাকে বলে এবং গার্মেন্টস কত প্রকার এবং প্রধান প্রধান কিছু গার্মেন্টস কাপড়ের নামের তালিকা নিয়ে তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।

গার্মেন্টস প্যাটার্ন নিয়ে অপর এক পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা পড়ে নিলে গার্মেন্টস সম্পর্কে ধারণা আরোও পরিস্কার হয়ে যাবে।

প্রথমেই চলুন গার্মেন্টস কত প্রকার ও এর সাথে কিছু আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলি।

গার্মেন্টস কাকে বলে?

গার্মেন্টস কাকে বলে – প্রকৃত অর্থে গার্মেন্টস হল মানুষের শরীরে ব্যবহার করার লক্ষ্যে এমন ধরণের পোশাক যা কাপড় বা ফেব্রিকস অথবা অন্য কোন টেক্সটাইল মেটেরিয়ালস থেকে উৎপাদন করা হয়। এই পোশাকের উপর নানা ধরণের কারুকাজ, নকসা বা প্যাটার্ন যোগ করে গার্মেন্টস পণ্যকে মানুষের নিকট আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলা হয়।

আরোও সহজভাবে এক কথায় বলতে গেলে গার্মেন্টস হল পোশাক যা বিভিন্ন ধরণের ফেব্রিক দিয়ে তৈরির পর মানুষের পরিধানের কাজে ব্যবহার করা হয়। এজন্য একে আপনি রেডিমেইড গার্মেন্টস বলেও ধরে নিতে পারেন।

যেমন, পুরুষের বহুল জনপ্রিয় একটি পোশাকের নাম হল শার্ট যাকে নির্দিধায় গার্মেন্টস পণ্যের অন্তর্ভূক্ত। বিভিন্ন ধরণের শার্টের কাপড়ের নাম এবং শার্টের প্রকারভেদ নিয়ে পৃথক পৃথক দু’টি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দেখে নিতে পারেন।

যাহোক, বিভিন্ন ধরণের গার্মেন্টস পণ্য তৈরির জন্য যে টেক্সটাইল ফাইবার কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় তার উৎসভেদে তৈরি পোশাকের গুনগত মানে তারতম্য হতে পারে। টেক্সটাইল ফাইবার এবং কাপড়ের প্রকারভেদের উপর পোষ্টে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গার্মেন্টস, এপারেলস এবং ক্লেদিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

 গার্মেন্টস কত প্রকার?

শ্রেণীবিভাগের কোন আদর্শ মানদন্ড না থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সাধারণত: নারী, পুরুষ এবং বিভিন্ন বয়সের শিশু থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য গার্মেন্টস পোশাক বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।

বর্তমানে নিচের বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়-

১. ফেব্রিক বা কাপড়ের ধরণের উপর ভিত্তি করে-

  • নিট : শার্ট, টি শার্ট, সোয়েটার
  • ওভেন: শার্ট, স্যুটস, ডেনিম
  • নন ওভেন: ডায়পার, মুজা

২. সময় বা ঋতুকালের উপর ভিত্তি করে-

  • শীতকাল : জ্যাকেট (jacket)
  • গ্রীষ্মকাল: ট্যাংক টপ (tank top)
  • বসন্তকাল: সিঙ্গলেট (singlet)
  • শরতকাল: (shirt)
  • হেমন্ত: (shirt)

৩. কোন ঘটনা বা events এর উপর ভিত্তি করে-

  • পার্টি : ফ্যাশন জাতীয় গার্মেন্টস
  • একটিভ (active): নিয়মিত পোশাক
  • সান্ধকালিন গাউন: আউটফিট (outfit)
  • রাত্রীকালিন পোশাক: নরম কাপড়ের তৈরি

৪. ব্যবহারের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে-

  • আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল: কলার বিশিষ্ট শার্ট
  • সাঁতারের পোশাক: Binki, cover ups
  • খেলাধুলার পোশাক: ট্রাউজার
  • অন্তর্বাস (lingerie): ব্রা, পেন্টি, আন্ডার ওয়ার ইত্যাদি;

৫. উৎপাদন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে-

  • তৈরি পোশাক
  • দর্জি দিয়ে তৈরি পোশাক
  • গৃহ সজ্জা জাতীয় পোশাক

৬. উৎসের উপর ভিত্তি করে-

  • চামড়াজাত পোশাক
  • প্রকৃতিজাত পোশাক
  • কৃত্রিম পোশাক

৭. লিঙ্গ এব বয়সভেদে পোশাক-

  • মহিলা: স্কার্ট
  • পুরুষ: টঙ্গো (tongo)
  • ছোট বাচ্চা বা শিশুদের জন্য: টোগা (toga)
  • Toddler: Bibs
  1. স্টাইলিং এবং আকৃতির উপর ভিত্তি করে-
  • মহিলাদের শাড়ি
  • স্কার্ট: (elastic and stitches)
  • শার্ট: (neck wear)
  • স্যুটস: অফিসিয়াল আউটফিট

৯. পোশাকের দৈর্ঘের উপর ভিত্তি করে-

  • সর্টস
  • থ্রি- কোয়ার্টার
  • Full wear: প্যান্ট
  • Bermuda wear: Thigh wear
  • Pullover: Stockings

গার্মেন্টস কাপড়ের নামের তালিকা

কাপড় বা ফেব্রিক হল গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল। গার্মেন্টস পোশাক finished fabrics দিয়ে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন প্রকারের ফেব্রিক গার্মেন্টস এর পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ফেব্রিক সাধারণত: ওভেন এবং নিট জাতীয় ফেব্রিকস। এই আর্টিকেলে অনেক ধরণের ওভেন এবং নিট ফেব্রিকের নাম উল্লেখ করা হল:

ওভেন ফেব্রিকস:

এই জাতীয় ফেব্রিক গার্মেন্টস পোশাক তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। ওভেন ফেব্রিক বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। এই জাতীয় কাপড় বিভিন্ন আকার-আকৃতি অনুযায়ি সহজেই কেটে বিভিন্ন স্টাইলের পোশাক প্রস্তুত করা যায়। বিভিন্ন প্রকারের ওভেন ফেব্রিক এর উপর আরেকটি পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি লিংকে ভিজিট করে দেখে আসতে পারেন।

নিট ফেব্রিকস:

গার্মেন্টস বায়ারগনের নিকট নিট ফেব্রিকও অনেক পছন্দের কাপড়। ক্রেতাগন নিট ফেব্রিকের বিশেষ কিছু বৈশিষ্টের কারণে এই জাতীয় কাপড়ে তৈরিকৃত পোশাক ব্যবহার করতে ভালবাসে। বৈশিষ্টগুলি যেমন- নিট কাপড় পরিধানে আরামদায়ক অনুভুতি হয়, এরা কুচকে যায়না এবং এদের টানলে লম্বা হয় অর্থাৎ এরা ইলাস্টিক স্বভাবের হয়ে থাকে।

নিট ফেব্রিকের প্রকারভেদ এর উপরও আরেকটি পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে। লিংকে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।

এছাড়াও গার্মেন্টস পোশাক তৈরিতে সবচেয়ে বেশী যে ধরণের ফেব্রিকস ব্যবহৃত হয় তা এক এক করে নিচে আলোচনা করা হল-

Cotton voile:

এই ধরণের কাপড় হালকা ওজনের হয়। এর নরম প্রকৃতির কাপড় যা ১০০% কটন বা তুলা দিয়ে তৈরি হয়। এই টার্মটি ফ্রেন্স শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে যার অর্থ হল  veil বা পর্দা। এই জাতীয় কাপড় হালকা ওজনসম্পন্ন হওয়ার কারণে গরম আবহাওয়ার দেশে জানালার পর্দা, মশারি ইত্যাদি তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।

Cotton lawn:

এই জাতীয় কাপড় অনেকটা cotton voile এরমত হয়। এরা হল প্লেইন উইভ টেক্সটাইল যা কটনের পাশাপাশি লিনেন ফাইবার দিয়েও তৈরি হতে পারে। লোন কাপড় সাধারনত: অতি সুক্ষ্ম প্রকৃতির হয় এবং উন্নত মানের ইয়ার্ন থেকে তৈরি হয় যাদের থ্রেড কাউন্ট বেশী থাকে। এই ধরণের ফেব্রিক combed বা carded ইয়ার্ন দিয়ে তৈরি হয়।

Rayon Challis:

এরা মসৃন এবং হালকা ওজনসম্পন্ন হয়। তবে এর cotton volie এবং  cotton lawn এর তুলনায় একটু ভারি হয়।

Chambray:

ইহাও মসৃন এবং lightweight ধরণের ফেব্রিক। এরা খুবই সুক্ষ্ম এবং ঘন সুতায় তৈরি প্লেইন উইভ প্রক্রিয়ায় তৈরি কাপড়। এই ধরণের কাপড় প্রথম দিকে লিনেন ফাইবার দিয়ে তৈরি হত। পরবর্তিতে কটন দিয়ে তৈরি হয়।

Denim:

এর ভারি প্রকৃতির ফেব্রিক। টুইল উইভ প্রক্রিয়ায় এদের তৈরি করা হয়। সাধারনত: জিন্সের পোশাক তৈরিতে এদের ব্যবহার করা হয়।

Double gauze:

এদের স্বাতন্ত্র বা ইউনিক বৈশিষ্ট রয়েছে। তা হল, এরা দু’টি লেয়ারের গজ যা একসাথে উইভিং করে তৈরি হওয়া ফেব্রিক।

এছাড়াও, নিট, সিল্ক, সাটিন, লিনেন, উল, ফ্লানেল ইত্যাদি ধরণের ফেব্রিক গার্মেন্টস শিল্পে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।