শার্টের কাপড়ের নাম বা ইংরেজিতে অনেক সময় “shirtings” নামেও পরিচিত – এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু। এখানে মুলত: পুরুষের শার্ট নিয়ে আলোচনা করা হবে। শার্ট সারা বিশ্বে খুব পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি পোশাকের নাম। এটি অফিসায়াল ড্রেস হিসাবে বলতে গেলে প্রায় সব দেশেই পরিধান করা হয়।

শার্টের কাপড় উইভিং প্রক্রিয়ায় বৈচিত্রতার কারণে এর মান বিভিন্ন রকম হয়। অধিকাংশ শার্টের কাপড়ের নাম সুনির্দিষ্ট উইভিং পদ্ধতিকে অনুসারে হয়। উইভিং প্রক্রিয়ায় কিভাবে কাপড় তৈরি করা হয় এর উপর আলাদা একটি পোষ্ট রয়েছে। দেখে নিতে পারেন। এখানে বিস্তারিত পর্যায়ে যাব না।

যেহেতু সারা দুনিয়ায় বহুল ব্যবহৃত একটি গার্মেন্টস পণ্য হল শার্ট কাজেই এর মার্কেটের আকার স্বাভাবিক কারণেই অনেক বড়। বিভিন্ন মানের, বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন ধরণের শার্টের কাপড় বাজারে মজুত রয়েছে। ফলে গ্রাহক হিসাবে আপনার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে পছন্দসই একটি কাপড় বাছাই করার জন্য। এজন্য কাপড় বিশেষ করে কাপড়ের প্রকারভেদ সম্পর্কে কিছু বেসিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

শার্টের কাপড় কেনার আগে কোন ধরণের ফেব্রিক দিয়ে শার্ট তৈরি করবেন তা ঠিক করে নেওয়া দরকার। কারন, শার্টটি পরিধান করে আরামদায়ক মনে হবে কিনা বা এটি ধৌত করার পর এর গুনগত মান বজায় থাকবে কিনা তা এর উপর নির্ভর করবে।

শার্টের কাপড় নির্বাচনের সময় কাপড়ের সাধারণ বৈশিষ্ট ও গুনগত মান বিচারের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে জিনিসটি বিবেচনায় নিতে হয় তা হল কাপড়টির thread count এবং ply. এর সাথে দেখতে হবে সর্বোত্তম উইভিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি তৈরি হয়েছে কিনা।

আপনি হয়ত জেনে থাকতে পারেন, থ্রেড কাউন্ট সংখ্যায় গননা করা হয় যার রেঞ্জ ৫০ থেকে শুরু করে এমনকি ১০০০ পর্যন্ত হতে পারে। থ্রেড কাউন্ট যত বেশী হবে কাপড়ের গুনগত মান তত ভাল হবে। যেমন – তত বেশি নরম, মসৃন এবং সিল্কি মনে হবে। দাম যে তত বেশি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত জানতে থ্রেড কাউন্ট এর উপর পোষ্ট ভিজিট করতে পারেন।

এবারে চলুন ply সম্পর্কে কিছু বলে নেই। সাধারণত: পোশাকের কাপড় সিঙ্গেল প্লাই বা ডাবল প্লাই হয়ে থাকে। ডাবল প্লাইকে আবার two ply বল যেতে পারে। প্লাই হল একটি একক সুতা বা থ্রেড তৈরিতে টুইষ্টিং কাজে ব্যবহৃত ইয়ার্নের সংখ্যা। Two ply কাপড়ের এর ক্ষেত্রে দু’টি ইয়ার্ন পেঁচিয়ে twisting এর মাধ্যমে একটিতে পরিণত করা হয়। ডাবল প্লাই সিঙ্গেল প্লাই এর তুলনায় অধিক টেকসই ও আরামদায়ক হয়।

যে সব কাপড়ের থ্রেড কাউন্ট ১০০ এর চেয়ে বেশী ঐ সব কাপড় সাধারণত: ডাবল প্লাই হয়ে থাকে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ডাবল প্লাই এর বেলায় দু’টি ইয়ার্ন twisting এর মাধ্যমে একত্রি করা হয়। টেক্সটাইল ফাইবার সম্পর্কে পৃথক একটি পোষ্ট রয়েছে যা পড়লে ইয়ার্ন সম্পর্কে আরোও পরিস্কার ধারণা লাভ করা যাবে।

এবারে, মুল আলোচনা – বিভিন্ন প্রকার শার্টের কাপড়ের নাম বিষয়ে আলোচনার শুরুর পূর্বে আর একটি কথা বলে নেই। তা হল, শার্টের কাপড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি  ব্যবহৃত কাপড় হল কটন কাপড়।

 বিভিন্ন ধরণের শার্টের কাপড়ের নাম:

 ফাইন কটন:

ফাইন কটনের থ্রেড কাউন্ট অনেক বেশি হয়, কমপক্ষে ১৬০-২২০ পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরণের কাপড় উচ্চমান সম্পন্ন হওয়ায় এর দাম বেশি থাকে। যদি আপনি সামর্থবান হন তাহলে আপনার শার্টের কাপড়ের জন্য ফাইন কটন কাপড় বেছে নিতে পারেন।

শার্টের কাপড়ের তৈরির জন্য সবচেয়ে ভাল ফাইন কটন কাপড়ের উদাহারণ হল, অ্যামেরিকান পিমা, সুইস, ইজিপসিয়ান কটন ইত্যাদি।

লিনেন কাপড়:

এই কাপড়ের ভিতর দিয়ে খুব সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে ফলে গরম আবহাওয়ায় ব্যবহারের জন্য এর চেয়ে অধিক উপযুক্ত কোন কাপড় বাজারে আছে বলে মনে হয় না। এছাড়া ফরমাল পোশাক হিসাবেও লিনেন কাপড়ের চেয়ে অধিক মার্জিত শার্টের কাপড় খুজে পাওয়া দুস্কর। এর বুনন কার্য কিছুটা ঢিলা হয়।

লিনেন কাপড় ফ্ল্যাক্স নামের গাছের ফাইবার থেকে উৎপাদন করা হয়। এই কাপড়ের একটি অসুবিধা হল, এর কুচকে যাওয়ার প্রবনতা রয়েছে।

অক্সফোর্ড ফেব্রিক:

এরা অনেকটা পিনপয়েন্ট ফেব্রিকের মত। তবে এখানকার সুতাগুলো পিনপয়েন্ট ফেব্রিকের তুলনায় একটু ভারি এবং উভিং কাজ ততটা আটশাট নয়, কিছুটা ঢিলা ধরণের। এই ধরণের কাপড় গঠন প্রকৃতি বিবেচনায় একটু অমসৃন হলেও এরা অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় বেশ টেকসই হয়। অক্সফোর্ড ফেব্রিক ফরমাল ড্রেস হিসাবে অফিস-আদালতে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। সাধারণত: ক্যাযুয়াল বা নৈমিত্তিক কাজ-কর্মে বা খেলাধুলায় এই কাপড় বেশী ব্যবহৃত হয়।

অক্সফোর্ড ফেব্রিকের উইভিং হল অপ্রতিসম যাকে ইংরেজিতে symmetrical basketweave বলা হয় যেখানে একটি ইয়ার্ন দু’টি ইয়ার্নকে অতিক্রম করতে পারে। এই ধরণের কাপড় অন্যান্য পোশাক সামগ্রির সাথে সহজেই ধৌত করা যায়।

পিনপয়েন্ট অক্সফোর্ড ফেব্রিক:

পিনপয়েন্ট অক্সফোর্ড ফেব্রিক এর উইভিং স্টাইল অক্সফোর্ড ফেব্রিক এর মতই। তবে, এই ধরণের কাপড় তৈরিতে আরোও ভাল মানের ইয়ার্ন ব্যবহার করে আটশাট ভাবে বুনন কার্য সম্পাদন করা হয়। এরা অক্সফোর্ড ফেব্রিক এর তুলনায় অধিক ফরমাল পোশাকের মধ্যে গণ্য কিন্তু ব্রডক্লোথ বা টুইল ফেব্রিকের তুলনায় কম ফরমাল। এরা সাধারণত: স্বচ্ছ ধরণের কাপড় নয়, কিছুটা ভারি এবং পুরু হয়ে থাকে। এই ভারি গঠন শৈলীর কারণে এই কাপড় দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিধান করা যায়।

পপলিন ফেব্রিক:

শার্টের কাপড়ের নামের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল পপলিন জাতির কাপড়। এটি প্লেইন উইভ ফেব্রিক যা অনেকটা মসৃন, আরামদায়ক, বাতাস চলাচলে সহায়ক এবং দেখতে সতেজ প্রকৃতির হয়। একটি ভাল মানের পপলিন কাপড়ের বৈশিষ্ট হল এটিকে যেন খুব সুন্দর এবং শক্তভাবে বুনন বা উইভিং করা হয়।

ড্রেস শার্ট বানানেরা ক্ষেত্রে এটি সার্বিক দিক দিয়ে জনপ্রিয়। কাপড়টি নরম এবং স্পর্শ করলে মসৃন অনুভূতি জাগ্রত হয়।

তবে, আপনি যদি সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ ধরণের শার্ট তৈরি করতে চান যার ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে না, তাহলে পপলিন কাপড় আপনার এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হবে। কেননা, এটি স্বচ্ছ ও পাতল ধরণের ফেব্রিক। এজন্য, পপলিন কাপড়ের একটি সুবিধা হল, এরা হালকা ওজনধারি হয়।

পপলিন কাপড় অতিরিক্ত পাতলা হলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কুঁচকিয়ে যাওয়ার একটি প্রবনতা লক্ষ করা যায় যা এই ধরণের কাপড়ের খারাপ দিক হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, এটিকে আয়রণ করা হলে তা আবার সুন্দর ও মার্জিত পোশাকের আকার ধারণ করে।

কাজেই, সবদিক মিলিয়ে, পপলিন কাপড় দিয়ে নি:সন্দেহে আপনি খুব ভাল ও সেরা মানের শার্ট তৈরি করতে পারেন।

টুইল ফেব্রিক:

টুইল ফেব্রিক খুব সহজেই চেনা যায়। কারণ সেখানে ডায়াগোনালি বা তির্যকভাবে বুননকৃত কাজ দৃষ্টিগোচর হয়। যার মাধ্যমে টুইল ফেব্রিক সনাক্ত করা হয়। টুইল কাপড়েরর উপর এই তির্যক রেখাটি অনেক সময় খুবই সূক্ষ এবং নিগূঢ় প্রকৃতির হতে পারে। টুইল কাপড়ে প্রায় সবসময়ই এক ধরণে ঔজ্জ্বল্লতা পরিলক্ষিত হয় যা কাপড় তৈরির সময় কি ধরণের কটন, রঙ ব্যবহৃত হয়েছে এবং কোন প্রক্রিয়ায় উইভিং করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে।

টুইল কাপড় খুব শক্তভাবে বোনা হয় এবং এর থ্রেড কাউন্ট বেশি থাকে যার ফলে এটি অনেক ক্ষেত্রে সিল্কের সাথে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। এর গঠনগত বৈশিষ্টে ডায়াগোনাল ইফেক্ট থাকার ফলে এরা ব্রডক্লোথ ধরণের কাপড়ের চেয়ে নরম হতে পারে খুব সহজে সাজিয়ে রাখা যায়।

ব্রডক্লোথ:

ব্রডক্লোথ কাপড় অনেক সময় পপলিন হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই কাপড় খুব শক্তভাবে বোনা হয়। এরা সাধারণত: পাতলা ধরণের কাপড় এবং ওজনে হালকা হয়ে থাকে। এছাড়া, সাদা ব্রডক্লোথ কাপড় আবার দেখতে স্বচ্ছও মনে হয়।

এই ধরণের কাপড় ফরমাল পরিবেশে ব্যবহার করা হয় এবং কিছুটা তুলনামুলক ব্যয়বহুল হয়।

ফ্লানেল:

ফ্লানেল কাপড় মোটা সুতা দিয়ে বোনা হয় ফলে এরা ভারি ওজন সম্পন্ন কাপড়। সাধারণত: শীতকালে এর ব্যবহার বেশী হয়। এই কাপড় ১০০% কটন দিয়েও তৈরি করা যায়। তবে, মাঝে মাঝে অতিরিক্ত উষ্মতা তৈরির জন্য কটনের সাথে উল বা কাষ্মিরি ফাইবার মিশ্রিত থাকতে পারে। ফ্লানেল কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক ইনফরমাল ড্রেস হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

পরিশেষে, শার্ট কত প্রকার ও কি কি – এই বিষয়ে একটি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে যা দেখে নিতে পারেন। বন্ধুরা, শার্টের কাপড়ের নামের উপর পোষ্টটি কেমন লাগল কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।