Last updated on May 14th, 2023 at 05:39 am
কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাকে বলে এবং এর আরোও কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকের এই পোষ্ট তৈরি করা হচ্ছে।
যে কোন উৎপাদনমুখি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে কাস্টোমার তার চাহিদামত পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে এবং তার গুনগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
অপরদিকে ভোক্তা সাধারণের নিকট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভাবমুর্তি উজ্জল হয়, ব্যবসার সুনাম তৈরি হয় এবং কাস্টোমারের আস্থা অর্জন হয়।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি এত পরিচিত একটি নাম হওয়া সত্ত্বেও এটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে আমাদের ধারণা ততটা পরিস্কার নয়। তাই এই আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।ৎ
আলোচ্য পোষ্টে কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাকে বলে, কোয়ালিটি কন্ট্রোল কেন গুরত্বপূর্ন, এর ধাপসমুহ কি কি হতে পারে – এসব বিষয়ে তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।
Table of Contents
কোয়ালিটি কন্ট্রোল কাকে বলে?
কোয়ালিটি কন্ট্রোল হল এমন এক পদ্ধতি যা অনুসরণের মাধ্যমে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়, বরং এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, তাদের উৎপাদিত পন্য ও সেবা মান সম্পন্ন। যা কাস্টোমারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় এবং কাস্টোমার এর মান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
এভাবে পন্য বা সেবা তৈরির সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানকে তার সুনির্দিষ্ট পন্য বা সেবা প্রস্তুতের উপর কতগুলি পূর্ব নির্ধারিত নীতিমালা, পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয় যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
এজন্য কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য প্রতিষ্ঠানকে এমন এক কর্ম পরিবেশ তৈরি করতে হয় যাতে সেখানে কর্মরত প্রত্যেকেই তাদের কাজের পরিপূর্ণতা উপর মনযোগী হয়। এর জন্য প্রয়োজন সময়ে সময়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা, পন্য বা সেবার মান পরিমাপের জন্য একটি বেঞ্চমার্ক তৈরি করা এবং উৎপাদিত পন্য বা সেবার মানে তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় কোনবৈচিত্র আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়টি পণ্যের ক্যাটাগরির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন, যদি খাদ্য বা ঔষধ জাতিয় পণ্য প্রস্তুত করা হয়, সেক্ষেত্রে এই উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করে কাস্টোমার যাতে কোনভাবে রোগাক্রান্ত না হয়ে যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি কন্ট্রোলের অংশ হিসাবে পণ্য উৎপাদনের সময় ও উৎপাদিত পণ্যের বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক বা অনুজীবগঠিত পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর তাদের পণ্য বাজারে ছাড়ে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল এর জনক কে?
কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জনক হলেন DR. Joseph M. Juran যিনি ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০০৮ সালে পরলোক গমন করেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। তিনি রোমানিয়ার Braila শহরে ১৯০৪ সালে জন্ম লাভ করেন।
Dr. Juran বিশ্ব ভ্রমন কালে মানুষকে শিখিয়েছেন কিভাবে কোয়ালিটির উন্নতি সাধন করা যায়। তিনি ১৯৭৯ সালে যখন তার বয় ৮৫ বছর, তখন Juran Institute প্রতিষ্ঠা করেন।
তার অনেক কাজ এখনোও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। যেমন Six Sigma Tools যার ধারণা ব্যবসায়িক কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধিতে বর্তমানেও সারা জগতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও ব্যবস্থাপনার উপর তিনি অনেক কাজ করে গেছেন। কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনার উপর প্রথম যে standard reference তা উনার হাতে লেখা। এছাড়া, তিনি কোয়ালিটি কন্ট্রোল হ্যান্ডবুক নামের যে বইটি লিখেছিলেন তা ১৯৫১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এর ৬ষ্ঠ সংষ্করণ চলছে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল কেন গুরত্বপূর্ণ?
কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বা সেবার গুনগত মান নিয়ন্ত্রণ করা কেন প্রয়োজন তার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল-
- প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সকলের মাঝে কাজের প্রতি স্পৃহা বা উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়।
- কোয়ালিটি কন্ট্রোল পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় সঠিক মান বজায় রেখে তুলনামুলক কম দামে বাজারে ছাড়ার এক প্রতিযোগীতা তৈরি হয়। ফলে এর উৎপাদন খরচ হ্রাস পায়।
- ভোক্তা সাধারণের পণ্যের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়।
- প্রতিষ্ঠানের সুনাম তৈরি হয়।
- কর্মচারিদের মাঝে নৈতিকতা সৃষ্টি হয়।
- পণ্য উৎপাদন পদ্ধতি অধিকতর উন্নত হয়।
- পণ্যের বিক্রয় বেড়ে যায়।
- প্রতিষ্ঠানের লজিস্টিকস ও রিসোর্সের সঠিক ও ফলপ্রসু ব্যবহার হয়।
কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ধাপসমুহ কি কি?
পণ্য বা সেবার গুনগত মান পরীক্ষার একটি মানদন্ড বা স্টেন্ডার্ড নিরুপন করা:
কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই একটি স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে নিতে হবে যাতে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার গুনগত মান এর সাথে বিচার বা পরিমাপ করা যায়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে নিতে হবে যে কোন স্ট্যান্ডার্ড তারা অনুসরণ করবে। এর পর, নির্বাচিত স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ি পন্য উৎপাদন করতে হলে কি কি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে সে বিষয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যেমন, হতে পারে, পন্য উৎপাদনের কোন কোন ধাপ থেকে কত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
পণ্যের কাঁচামাল পরীক্ষা করা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ পর্যবেক্ষণ করা
সাধারণত কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠানের পন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রত্যেক ধাপ অন্তর্ভূক্ত থাকে। পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পণের স্পেসিফিকেশন বলা যেতে পারে। পন্য উৎপাদনের সময় বিভিন্ন ধাপে ধাপে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, উৎপাদিত পন্যটি চুড়ান্ত পন্যের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ি তৈরি হচ্ছে কিনা। এর উদ্দেশ্য হল, উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভেতর কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা, বা ত্রুটি ধরা পরলে এর সঠিক সংশোধন প্রক্রিয়া কি হতে পারে – এসব বিষয় জানা।
সমস্যা সনাক্ত হলে তার সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া
পন্য উৎপাদন ব্যবস্থার যে কোন পর্যায়ে সমস্যা বা ত্রুটি চিহ্নিত করা গেলে প্রতিষ্ঠানটি তার যথাযথ সমাধানের ব্যবস্থা নিবে। যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। একটি প্রতিষ্ঠান বা তার পণ্যের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তার কোয়ালিটি কন্ট্রোলের স্ট্র্যাটেজি কেমন হবে।
যেমন, কোন খাদ্য উৎপাদনকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেলায়, প্রতিষ্ঠানটির QC Team সংশ্লিষ্ট কিছু মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেষ্ট করে এটি নিশ্চিত করার জন্য যাতে উৎপাদিত খাদ্য পণ্য ভোক্তা সাধারণের স্বাস্থ্যের উপর কোন প্রকার ঝুঁকি তৈরি না করে। প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যটি ভালভাবে মোড়কজাত করা হয়েছে কিনা তাও যাচাই করে দেখে। কারণ, পণ্যে প্যাকেজিং দৃষ্টিনন্দন হলে কাস্টোমার তাতে আকর্ষিত হয়।
আবার গাড়ি উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে উৎপাদিত গাড়ির যন্ত্রাংশ একটি অপরটির সাথে সমন্বয় সাধন করে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে।
তথ্য সংগ্রহ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ
পন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি দেখা দিলে তার সমাধানের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে এজাতীয় তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন এবং এর উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। পরিশেষে, সংশোধনের ব্যবস্থা পরবর্তি উৎপাদন ব্যাচসমুহে বাস্তবায়ন করতে হবে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল চেকলিষ্ট
কোয়ালিটি কন্ট্রোল চেকলিষ্টের উপাদানসমুহ একেক পণ্যের জন্য একেক রকম হতে পারে। পণ্য বা সেবার ধরণ অনুযায়ি এটি ঠিক করা হয়। সাধারণত, পণ্যের বা সেবার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকলিষ্টের যে উপাদানসমুহ সচারাচন ব্যবহার হতে দেখা যা, তা নিম্নরুপ-
- কাঁচামালের চাহিদা নিরুপণ
- প্যাকেজিং নির্ধারণ
- সাইট ভিজিট করে পণ্যের গুনগত মান যাচাই করা
- ত্রুটি থাকলে তা শ্রেণিবিভাগ করা
- আমদানিকারক, সরবরাকারি ও QC স্টাফের মাঝ সমন্বয় সাধন
সবশেষে কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিষয়ে বলতে গেলে, কাস্টোমার যাতে উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ত্রুটিমুক্ত পণ্য বা সেবা পেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাই হল কোয়ালিটি কন্ট্রোল। যদি ত্রুটিপূর্ণভাবে পণ্য বাজারে ছাড়া হয়, তাহলে কাস্টোমার ঝুঁকির ভিতর পরে যাবে।
বন্ধুগন, পোষ্টটি পড়ে কেমন লাগল, কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ
I read this paragraph fully regarding the
comparison of latest and preceding technologies, It’s awesome article.