Last updated on April 23rd, 2024 at 05:06 pm

সুতা কত প্রকার কি কি – বিষয়টি আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু। নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর মধ্যে সুতা অন্যতম। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াও দেশের প্রতিটি ঘরে সুই-সুতার প্রচলন সেই প্রাচীন কাল থেকে।

ঘরের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ যেমন কাপড় সেলােই করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে সুতার প্রয়োজন হয়। এজন্য, বিভিন্ন সুতার নাম ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আমাদের কিছুটা হলেও ধারনা নেয়া প্রয়োজন।

তাই, আলোচ্য পোষ্টে  সুতার কাকে বলে, সুতার উৎস কি, সুতা কিভাবে তৈরি হয়, সুতা কত প্রকার কি কি, বিভিন্ন সুতার নাম ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে। তবে, বিষয়গুলি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা হয়ে গেলে তখন কাপড়ের প্রকারভেদ  খুব সহজে বোধগম্য হবে।

এর ফলে,  কাপড় কেনার সময় সঠিক কাপড় চেনার ক্ষেত্রে আপনার সন্দেহ কিছুটা হলেও দুর হয়ে যাবে। তাহলে চলুন, চলে যাওয়া যাক সুতার প্রকারভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গিক বিষয় নিয়ে মুল আলোচনায়।

সুতা কাকে বলে?

সুতা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল যা দিয়ে পোশাক সেলাই করে তৈরি পোশাক হিসাবে বাজারে ছাড়া হয়। দর্জির দোকান থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউজ, পোশাক উৎপাদনকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, বুটিক হাউজ এবং নিজ ঘরে যারা ঘরোয়া পর্যায়ে নিজেদের পরিধানের জন্য পোশাক তৈরি করে – সব জায়গাতেই সুতার একচ্ছত্র ব্যবহার লক্ষণীয়।

এর বাইরে, এমনকি অটোমোবাইল ইনডাস্ট্রিতেও গাড়ির সিট তৈরির কাজে সুতার ব্যবহার দেখা যায়। পাদুকা শিল্পেও জুতা তৈরির সময় সুতা দিয়ে সেলাই করতে হয়।

এমব্রয়ডারি কাজে হরেক রকমের সুতা ব্যবহার করে রং-বেরঙের নকসা তৈরি করে গ্রহকদের আকৃষ্ট করা হয়।

সুতা কাকে বলে এর সহজ উত্তরে বলা যায় – সুতা হলো টেক্সটাইল ইয়ার্ন কে শক্তভাবে প্যাঁচিয়ে তৈরি করা এমন এক জিনিস যার ক্রস সেকশন বা প্রস্থচ্ছেদ বৃত্তাকার হয়। আমরা জানি টেক্সটাইল ফাইবার দিয়ে ইয়ার্ন তৈরি করা হয়। আবার, দুই বা ততোধিক ইয়ার্নের সমন্বয়ে সুতা তৈরি করা হয়।

হাত ও মেশিনের মাধ্যমে পোশাক তৈরির কাজে সুতার কোন বিকল্প নেই। সমস্ত সুতার প্রায় ৯৫% বাণিজ্যিক পোশাক কারখানায় কাপড় সেলাই কাজে ব্যবহৃত হয়।

ইয়ার্নের সাথে সুতার মুল পার্থক্য হচ্ছে, সুতা দিয়ে পোশাক তৈরি হয় এবং ইয়ার্ন দিয়ে টেক্সটাইল ফেব্রিক উৎপাদন করা হয়।

সুতার উৎস কি?

সুতার উৎস হল ফাইবার বা আঁশ। এই ফাইবারগুলো আবার নানা রকম উৎস হতে আসে যার উপর ভিত্তি করে সুতার প্রকারভেদ এবং বিভিন্ন সুতার নামকরণ করা হয়। যেমন, প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম। প্রকৃতিগতভাবে ফাইবারগুলো প্রধানত: উদ্ভিদ এবং প্রাণি হতে আসে।

যেমন ধরুন, কটন ফাইবার উদ্ভিদজাত উৎস হতে আসে। আবার উল ফাইবার প্রাণিজ উৎস হতে আসে। অন্যান্য প্রকৃতিক ফাইবারের মধ্যে রেয়ন, সিল্ক, হেম্প, লিনেন, পাট ইত্যাদি বহুল ব্যবহার্য হিসাবে আমরা দেখে থাকি।

আবার সিনথেটিক বা কৃত্রিম ফাইবারের প্রধান উৎস হল বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যালস বা রাসায়নিক দ্রবাদি। সিনথেটিক ফাইবারের সবচেয়ে ভাল উদাহারণ হল নাইলন এবং পলিস্টার ।

কিভাবে সুতা তৈরি করা হয়?

সুতা প্রকরাভেদ ও বিভিন্ন সুতার নাম অনুযায়ি এক এক সুতার উৎপাদন প্রক্রিয়া ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সুতা কিভাবে তৈরি হয় তা জানার আগে ইয়ার্ন সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নেয়া প্রয়োজন। ইয়ার্ন কাকে বলে এবং কিভাবে তৈরি হয় এর উপর আলাদা এক পোষ্টে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। সেটি দেখে আসতে পারেন।

টেক্সটাইল জগতের উৎপাদন চেইনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ফাইবার। তার পরের ধাপই হল ইয়ার্ন। এই ইয়ার্নকে বুনন বা উইভিং এর মাধ্যমেই কাপড় বা ফেব্রিক তৈরি হয়। ইয়ার্ন একাধিক ফাইবারের সমন্বয়ে গঠিত যা ‍স্পিনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়।

পরিশেষে, দুই বা ততোধিক ইয়ার্ন এর সমন্বয়েই সুতা তৈরি হয় যা বিভিন্ন প্রকার সেলাই কার্যে ব্যবহৃত হয়।

সুতা কত প্রকার কি কি?

বিভিন্ন সুতার নাম এবং সুতা কত প্রকার বিষয়টি অনেকটা একই রকম মনে হতে পারে। কিন্তু সুতা কত প্রকার বলতে মুলত বুঝানো হচ্ছে সুতার বিভিন্ন প্রকারের টাইপ বা ধরন। গঠন কৌশলের উপর ভিত্তি করে সুতা কয়েক প্রকারের হতে পারে, যেমন:

Spun Thread: এই ধরনের সুতা প্রাকৃতিক এবং সিনথেটিক উভয় প্রকার ফাইবার থেকেই তৈরি করা যায়। সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত Spun Thread সুতার উদাহারন হল পলিস্টার ধরনের সুতা। এ ধরনের সুতা টেকসই এবং দির্ঘস্থায়ি হয়।

ব্যবহার: মহিলাদের ব্লাউজ, শিশু পোশাক, জিন্স কাপড়, শার্ট, আন্ডারওয়ার, জ্যাকেট প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার হয়।

Core Spun Thread: ইহাকে Industrial Thread বলা হয়। এ ধরনের সুতা Continuous Filament এবং Staple Fiber এর সংমিশ্রণে তৈরি হয়।

ব্যবহার: উপরোক্ত ব্যবহার ছাড়াও এ ধরনের সুতা ইউনিফর্ম এবং চামড়া জাতীয় পন্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ফিলামেন্ট থ্রেড: এই ধরনের সুতা একক ফিলামেন্ট বা একাধিক ফিলামেন্টে Twisting প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। ফিলামেন্ট থ্রেড আবার নিম্নোক্ত তিন ধরনের হয়:

মনোফিলামেন্ট থ্রেড:

ব্যবহার: Hair wraps. Invisible seams, Flags, Upholstery প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

মাল্টি ফিলামেন্ট থ্রেড:

ব্যবহার: চামড়া জাতীয় পন্য, Footwear, লাগেজ প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত য়।

বাল্ক ফিলামেন্ট বা Texturized Thread:

ব্যবহার: পুরুষ মহিলাদের প্রচলিত পোষাক, খেলাধুলার পোশাক সামগ্রী ইত্যাদি এই ধরনে সুতা দিয়ে তৈরি হয়।

বিভিন্ন ধরনের সুতার নাম:

১। লিনেন সুতা: লিনেন সুতা খুব শক্ত প্রকৃতির হয়। ইহা সাধারনত: গার্মেন্টস শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

২। সিল্ক সুতা: এই ধরনের সুতা সিল্কের চলমান এবং ভেঙ্গে যাওয়া উভয় ফিলামেন্ট থেকে তৈরি করা হয়। সিল্ক সুতা অধিকতর শক্ত এবং উন্নতমানের সুতা।

সুতা কত প্রকার

৩। কটন সুতা: ইহা আবার তিন প্রকারের যথা:

  •  নরম কটন সুতা
  • মারসেরাইজড কটন সুতা
  • গ্লেইজড কটন সুতা

সুতার হিসাব

৪। পলিস্টার সুতা: এই সুতা কম দামী এবং শক্ত প্রকারের হয়ে থাকে। পলিস্টার সুতা দামে কম হওয়ার জন্য খুব বেশী পরিমানে ব্যবহৃত হয়।

সুতা কত প্রকার কি কি

৫। নাইলন সুতা : নাইলন সুতা হল ঐ সব সুতার মধ্যে অন্যতম যা ঘরের কাজে এবং বানিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। নাইলন সুতা খুব শক্ত এবং টেকসই হয়। নাইলন সুতা এক ধরনের সিনথেটিক সুতা যার প্রচলন ১৯৪০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়। নাইলন সুতা হালকা, মসৃন এবং ইহা পানি শোষন করতে পারে না।

সুতা কত প্রকার

৬। রেয়ন সুতা : রেয়ন সুতার উৎপত্তি ফাইবার থেকে হওয়া সত্ত্বেও ইহা উৎপাদনে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় বিধায় রেয়ন সুতাকে পুরোপুরিভাবে প্রকৃতিজাত সুতা হিসাবে ধরা হয়না। এমব্রয়ডারি কাজে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সুতার নাম হল রেয়ন সুতা। রেয়ন সুতা উচ্চগতি সম্পন্ন এমব্রয়ডারি মেশিনে খুব ফলপ্রসু হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উচ্চগতির এমব্রয়ডারি মেশিনে ব্যবহারের সময় রেয়ন সুতার ছিড়ে যাওয়ার হার অন্যান্য সুতার তুলনায় অনেক কম। রেয়ন সুতার দাম কম হওয়ায় ইহা সিল্ক সুতার বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

৭। উলেন সুতা : সাধারন অর্থে উলেন সুতা হল ঐ সব সুতার অন্তর্ভূক্ত প্রাণির লোম থেকে উৎপাদন করা হয়। উলেন সুতা উলের একাধিক ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। উলেন সুতা বিভিন্ন শীতের পোশাক ও কম্বল তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এমব্রয়ডারি শিল্পে উলেন সুতার সবচেয়ে বেশী ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

 

সুতার হিসাব কিভাবে করে?

থ্রেড কাউন্ট বা সুতার হিসাব কিভাবে করে তা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে থ্রেড কাউন্ট কি বা কাকে বলে?

থ্রেড কাউন্ট বলতে যা বুঝায় তা হলো- কাপড় বোনার সময় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে যে পরিমান সুতা ব্যবহৃত হয় তাকে সুতার হিসাব বা থ্রেড কাউন্ট বলে। সুতার হিসাব সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।

সুতার হিসাব গননার সময় আপনাকে কাপড়ের দৈর্ঘ এবং প্রস্থ উভয় দিক বরাবর বিবেচনায় নিতে হবে। কাপড় বোনার সময় তার দৈর্ঘ বরাবর যে সুতা ব্যবহৃত হয় তাকে wrap বলে এবং প্রস্থ বরাবর সুতাকে weft বলে। অপর এক পোষ্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

কাজেই দৈর্ঘ বরাবর ১০০ টি সুতা দিয়ে এবং প্রস্থ বরাবর অপর ১০০ টি সুতার সমন্বয়ে যে কাপড় বোনা হয় তার সুতার হিসাব হবে ২০০.

বর্তমান সময়ে ওভেন ফেব্রিকের ভিতর কোন কাপড়ের শীট কেনার ক্ষেত্রে সুতার হিসাব একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হিসাবে ধরা হয়। কারণ, এর উপর নির্ভর করে ফেব্রিকস এর গুনগত মান।

কনজিউমার প্রতিবেদন অনুযায়ি, কোন কাপড়ের সুতার হিসাব বা থ্রেড কাউন্ট যদি ২০০ হয়, তাহলে ভাল। আর যদি ৪০০ হয়, তাহলে আরোও ভাল, পরিধানে আরামদায়ক ও অধিক নরম মনে হয়ে। তবে, যদি থ্রেড কাউন্ট যদি ৪০০ এর  চেয়ে বেশী হয়, তাহলে এটি হবে ব্যয়বহুল।

সুতার হিসাব ২০০ এর কম হলে যেমন প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৭৫ বাই ৭৫ অর্থাৎ ১৫০ থ্রেড কাউন্ট দিয়ে যে কাপড় তৈরি হয় তাকে muslin বলে। যা কিনা তেমন মসৃন হয়না, কিছুটা খসখসে মনে হবে।

সচারাচর দৃষ্টিতে আপনি যদি ১৮০ থেকে ২০০ বা এর কিছু উপরের থ্রেড কাউন্টের কোন কাপড় বাছাই করেন, তাহলে তা মান সম্পন্ন হিসাবে ধরে নেওয়া হয়।

বন্ধুগন, পোস্টের তথ্যগুলি যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে আমাদের ফেসবুক পেজে একটি লাইক দিন, পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য।