নামাজের নিয়ম অনুযায়ি নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী কাজ। আজকাল নামাজ পড়ার নিয়মের উপর কোন নামাজ শিক্ষা বইয়ের অভাব নেই। বাজারে প্রচুর রয়েছে। অনলাইন রিসোর্সেও রয়েছে অগনিত তথ্যের ভান্ডার। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কত শতাংশ মুসলমান এমন আছি যারা সন্তুষ্টিচিত্তে বলতে পারব যে আমার নামাজ সঠিক হচ্ছে। আমার মনে হয় সংখ্যাটি তেমন বেশী হবেনা।

এজন্য, শুধু নামাজের নিয়ম জানাই যথেষ্ট, এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত প্রচেষ্টা। ব্যক্তিগত জীবনে পাবন্দির সাথে নামাজ আদায় করা এবং একই সাথে আদায়কৃত নামাজ কতটুকু সঠিক হচ্ছে তা নিজে নিজে মনিটর করা। নামাজ সঠিক হওয়ার জন্য আমাদের কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে তা সনাক্ত করা। পরে সেই গ্যাপ পূরণের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমের স্বরণাপন্ন হওয়া।

এই পোষ্টে মুলত: নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করব। আলোচ্য বিষয় হল – নামাজের গুরত্ব, নামাজের উদ্দেশ্য, নামাজের নিয়ম, যেভাবে নামাজ পড়লে সরাসরি আল্লাহ্ তায়ালা থেকে নেওয়া যায়, নামাজ সঠিক হচ্ছে কিনা বুঝার উপায় ইত্যাদি।

তাহলে আসুন শুরু করা যাক –

নামাজের গুরত্ব কি :

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ একটি। ঈমানের পরেই যার স্থান। মহান আল্লাহ্ তায়ালার সবচেয়ে বড় হুকুম। ইসলাম এবং কুফুরের মধ্যে পার্থক্য হল এই নামাজ।

নামাজের উদ্দেশ্য:

আল্লাহ্ তায়ালার কুদরত থেকে সরাসরি ফায়দা হাসিলের উপায় হল, আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের হুকুমগুলিকে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম) এর তরীকায় পুরা করা। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরত্বপূর্ণ ও বুনিয়াদি আমাল হল নামাজ।

চেষ্টা ও মেহনতের মাধ্যমে আমাদের নামাজ মহান আল্লাহ্ তায়ালার নিকট এরকম গ্রহনযোগ্য করা চাই যাতে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা থেকে যেকোন সমস্যার সমাধান করানো যায়। এটাই ছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পথ। সাহাবা রাযিআল্লাহু আনহুমগন এই পথ অনুসরণের করে কঠিন থেকে কঠিন সমস্যাও নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তায়ালা থেকে সমাধান করিয়ে নিয়েছেন।

বর্তমানে যত মানুষ দুনিয়াতে আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সবার জন্য আল্লাহ্ তয়ালার বিধান একই অর্থাৎ সেই সাহাবাওয়ালা জামানার মতই। আমরাও আল্লাহ্ তায়ালারই বান্দা এবং একই নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম) এর উম্মত বা অনুসারি। কাজেই আমারাও যদি সঠিকভাবে নামাজ পড়তে পারি তাহলে আমাদের নামাজও মহান আল্লাহ্ তায়ালার নিকট গ্রহনযোগ্য হবে এবং দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় সমস্যার সমাধান এই নামাজের দ্বারাই হবে।

এর জন্য শুধু নামাজের নিয়ম মুখস্থ করে নামাজ আদায় করাই যথেষ্ট নয়। বাস্তবিক অর্থে আমাদের নামাজ কতটুকু সঠিক হচ্ছে তা নিজে নিজে চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে।

এখানে গুরত্বপূর্ন একটি বিষয় যা না বললেই নয় – আমাদের মধ্যে কেউ আছেন যারা বলে, আরে – এতো সেই সাহাবাওয়ালা জামানার জন্য খাস বিষয় ছিল, এখন এই জামানার জন্য কি এটা খাটে? আমরাতো সেই সাহাবাওয়ালা জামানার লোকদের মত খাটি ঈমানদার নই।

হ্যা, আমরা সাহাবাওয়ালা জামানার লোকদের মত খাটি ঈমানদার নই- তা সত্য কিন্তু সাহাবাদের (রা:) আদর্শকে সামনে রেখে চেষ্টা করতে কি কোথাও নিষেধ আছে? কোন ছাত্র যদি পরীক্ষায়  Full answer করার চেষ্টায় লেখাপড়া করে তাহলে পরীক্ষায় যতটুকু কমন পরে তা দিয়ে সে অন্তত: পাশ করার স্বপ্ন দেখতে পারে। আর যদি, সে ৫০% উত্তর লেখার টার্গেট নিয়ে আগায় তাহলে আপনিই বলুন তার পাশ মার্ক উঠানো কতটা সহজ হবে!

যাহোক, শয়তান আমাদের চির শত্রু। তার কাজই হল আমাদেরকে বিভ্রান্ত করা এবং Demotivate করা। সাহাবাদের (রা:) হেদায়েতের উজ্জল নক্ষত্র হিসাবে সামনে রেখে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে কমছেকম পাশ মার্ক নিয়ে আমরা ঈমানি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে সহজেই জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছতে পারি।

নামাজের নিয়ম:

নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই কম বেশী জানা আছে। বিশেষ করে নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়, নামাজের ভিতরে বাইরে কয় ফরজ, নামাজের ওয়াজিবসমুহ, নামাজের কি কি সুন্নত রয়েছে, নামাজ ভঙ্গের কারণসমুহ কি ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি আমরা বই-পুস্তক থেকে সহজেই মুখস্থ করে নিতে পারি ।

কিন্তু আসল বিষয় হল বাস্তব জীবনে চেষ্টার মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটানো।

এখানে কিছু মুল বিষয়ের দিকে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। যেমন ধরুন- আমরা জানি নামাজের বাহিরে যে সাত ফরজ রয়েছে তার একটি হল শরীর পাক। এখন প্রশ্ন হল শুধু ওজূ গোছলের মাধ্যমেই কি শরীর পাক হয়ে যাবে? না, বিষয়টি তেমন নয়। আমার শরীরের রক্ত-মাংস যদি হালাল উপার্জনে না তৈরি হয় তাহলে শুধু ওজু-গোছলের মাধ্যমেই আমার শরীর পাক হয়ে যাবেনা।

নামাজের বাহিরে সাত ফরজের আরেকটি হল কাপড় পাক হওয়। একইভাবে শুধু কাপড়ের বাহ্যিক ময়লা বা নাপাকি পরিস্কারের মাধ্যমেই আমার কাপড় পাক হয়ে যাবেনা, এর সাথে এও দেখতে হবে এই কাপড়টি হালাল উপার্জনের পয়সায় খরিদ করা কিনা।

এর জন্য এবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হল হালাল উপার্জন।

এবারে আসুন নামাজের ভিতরের এক ফরজ নিয়ে তা হল নামাজে ক্বেরাত পাঠ করা। এখন, খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয় – নামাজের পড়ার সময় সুরা ফাতেহাসহ অন্যান্য যে সব সুরা মেলানো হয় তার ক্বেরাত সঠিক হয় কিনা। যদি সঠিক না হয় তাহলে একটি ফরজ নষ্ট হয়ে গেল।

আমরা জানি আরবি এক একটি অক্ষর তার মাখরাজ বা উচ্চারণ স্থান অনুযায়ি উচ্চারণ করতে হয়। আবার কোথায় লম্বা টান দিয়ে তেলোয়াত করতে হয় কোথায় টান না দিয়ে তেলোয়াত করতে হয়। এই বিষয়টি যদি সঠিকভাবে অনুসরণ না করা হয় তাহলে অনেক সময় আয়াতের অর্থ বদলে যায়।

এরজন্য, সুরা-ক্বেরাত সহিহ্ করার জন্য আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। এটি কোন রকেট সাইন্স নয় যে আমরা পারবনা। চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে। কিন্তু শর্ত হল চেষ্টাটি সাধ্যমত ও আন্তরিক হওয়া চাই।

এক কথায়, নামাজ আদায়ের যে সব মাসলা-মাসায়েল রয়েছে সেগুলো বিশেষ করে নামাজের ফরজ, নামাজের ওয়াজিব, নামাজের সুন্নত এবং নামাজের মুস্তাহাব অনুসরণ করে নামাজ পড়াই হল নামাজের নিয়ম।

যেভাবে নামাজ পড়লে সরাসরি আল্লাহ্ তায়ালা থেকে নেওয়া যায়:

  • কালেমা ওয়ালা ইয়াক্বিনের সাথে নামাজ পাড়া;
  • মাসায়েল ওয়ালা এলমের সাথে নামাজ পড়া;
  • ফাজায়েল ওয়ালা আগ্রহের সাথে নামাজ পড়া;
  • আল্লাহ্ ওয়ালা ধ্যানের সাথে নামাজ পড়া;
  • এখলাস ওয়ালা নিয়্যতের সাথে নামাজ পড়া;

নামাজ সঠিক হচ্ছে কিনা বুঝার উপায়:

নামাজ সঠিক হচ্ছে কিনা বিষয়টি নিজে নিজে মনিটর করলে ধরা পরে। যেমন, কোন নামাজি নামাজ পড়া সত্ত্বেও যদি হারাম ও ফাহেসা বা নির্লজ্জ কাজ থেকে বাচতে না পারে তাহলে বুঝে নিতে হবে তার নামাজ সঠিক হচ্ছেনা। এজন্য, নামাজ সঠিক করার জন্য চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে যেন তা মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে কবুল বা গ্রহনযোগ্য হয়।