Last updated on May 11th, 2023 at 01:01 pm

দোয়া মাসুরা নাম ইসলাম ধর্মালম্বীদের নিকট খুব পরিচিত এক দোয়া। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ থেকে শুরু করে ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল যে কোন নামাজের ক্ষে্ত্রে দোয়াটি পাঠ করতে হয়।

কিন্তু, আমাদের মুসলিম সমাজে এটি সম্পর্কে ধারণা পরিস্কার করা দরকার।

তাই, এই পোষ্টে আমি দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়, দোয়া মাসুরা আরবি ও বাংলা উচ্চারণ এবং এর অর্থ ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য তুলে ধরব।

তাহলে, বন্ধুগন, পোষ্টের শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

দোয়া মাসুরা কি?

এটি এমন এক দোয়া যার মাধ্যমে খুব বিনয়ের সাথে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। নামাজ সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ এবাদতের নাম। নিশ্চই এটি পুন্যের কাজ, কোন সন্দেহ নাই। তবে, হাদিসের ভাস্য অনুযায়ী নামাজ সঠিকভাবে আদায় না হলে তা আবার ক্ষতির কারণও বটে। যেমন, পুরাতন কাপড়ের ন্যায় ঐ নামাজির মুখের উপর ছুড়ে ফেলা হয়।

নামাজের সঠিকতা খুব ব্যাপক একটি বিষয়। মহান আল্লাহ্ তায়ালার শান অনুযায়ী উনার হুকুম সঠিকভাবে আদায়  হয়েছে কিনা তা দাবী করা যে কারো পক্ষেই দুরুহ ব্যাপার। তাই, হুজুর ( সঃ) হযরত, আবু বকর (রাঃ) কে এই দোয়া মাসুরার আমলটি শিখিয়েছেন। অথচ, আবু বকর (রাঃ) এর মর্তবা হুজুর (সাঃ) উম্মতের মধ্যে সবার উপরে।

এই কারণেই, খুব বিনয়ের সাথে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো দেখুন- সঠিকভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম

দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়?

নামাজের শেষ বৈঠকে এই দোয়া পাঠ করতে হয়। যেমন, দুই রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে এবং চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে শেষ বৈঠক হবে চতুর্থ রাকাতে। আবার, তিন রাকাত নামাজের বেলায় শেষ বৈঠক হবে তৃতীয় রাকাতে।

প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি কথা বলে নেই। তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে শেষ বৈঠকের পূর্বে আর একটি বৈঠক রয়েছে। কেননা, প্রথম দু’ রাকাতের পর বৈঠক বাধ্যতামুলক একটি বিষয়। নামাজের এই প্রথম বা মধ্যবর্তী বৈঠককে দরমিয়ানি বৈঠক বলা হয়।

তাহলে, বুঝা গেল, নামাজের বৈঠক দু’টি হতে পারে।

  • প্রথম বৈঠক বা দরমিয়ানি বৈঠক যা কেবল মাত্র তিন বা চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
  • শেষ বৈঠক: এটি দুই রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে, তিন রাকাত নামাজে তৃতীয় রাকাতে এবং চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে চতুর্থ রাকাতে সম্পন্ন করা হয়।

এখানে একটি কথা না বললেই নয়। নামাজের প্রথম বৈঠক বা দরমিয়ানি বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পরে উঠে দাড়াতে হয়।

কিন্তু, শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুরুদ পড়তে হয়।

এখন, চলুন মুল প্রসঙ্গে- দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়?

এর এক কথায় জবাব হলো, নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও দরুদে ইব্রাহিম পাঠের পর দোয়াটি পড়তে হয়। তারপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।

দোয়া মাসুরা কয়টি?

দোয়া মাসুরা নামের নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। এটি বরং এক প্রকার মাসনুন দোয়া। যার অংশ হিসাবে যে কোন দোয়া পড়ে নিলেই হয়। এমনকি, এক্ষেত্রে আপনি চাইলে একাধিক দোয়াও পড়ে নিতে পারেন।

রেফারেন্স হিসাবে নিচে একটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-

”অত:পর দরুদ শরীফ পাঠের পর যে দোয়া ইচ্ছে হয়, সেটি পড়ে নিবে”। [সহিহ্ মুসলিম, হাদিস: ৪০২]

তবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং বহুল ব্যবহৃত দোয়াটি নিম্নরুপ:

আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসি যুলমান কাছিরা —–। দোয়াটি প্রসিদ্ধ ও বহুল প্রচলিত হওয়ার কারণে অনেকের মাঝেই একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। তা হলো দোয়া মাসুরা বলতে শুধু এই দোয়াটিকে বুঝানো হয়।

প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তা নয়। কোরআন হাদিসে বর্ণিত যে কোন দোয়াই এক্ষেত্রে পাঠ করা যায়। তাতে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

দোয়া মাসুরা আরবি কি?

আমাদের দোয়া মাসুরা আরবি পাঠ করা শিখতে হবে। এতে সঠিক উচ্চারণ এর সাথে দোয়াটি পাঠ করা যাবে। আরবি শব্দ বাংলায় লিখে পাঠ করলে সঠিক মাখরাজের সাথে উচ্চারিত হবে না। তাতে, অর্থের তারতম্য হয়ে যাবে। তাই, প্রত্যেক মুসলমানের সঠিকভাবে আরবি পড়া শিখতে হবে।

ধরে নেই, আপনি সঠিকভাবে আরবি পড়তে পারেন। তাহলে, দোয়াটির আরবি হিসাবে নিম্নরুপ হিসাবে শিখে নিন।

দোয়া মাসুরা আরবি

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ কি?

দোয়া মাসুরা বংলা উচ্চারণ তাদের বেলায় প্রযোজ্য যারা এখন পর্যন্ত আরবি পড়া শিখে নাই। এজন্য, তারা, আপাতত: ক্ষণিক সময়ের জন্য বাংলা উচ্চারণ দেখে দোয়াটি মুখস্ত করতে পারে। তবে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আরবি শিখার জন্য মনে দৃঢ় প্রত্যয় রাখতে হবে।

দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ নিম্নরুপ-

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ

দোয়া মাসুরা অর্থ কি?

হে আল্লাহ্ – নিশ্চই আমি নিজের উপর মস্ত বড় অন্যায় করেছি। আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ্ মাফ করতে পারে না। কাজেই, আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন, আপনার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চই আপনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়।

প্রীয় সাথি ভাই ও বোনেরা – আশা করি দোয়া মাসুরা সম্পর্কে অদ্যকার পোষ্টের উপস্থাপিত তথ্য আপনাদের নিকট উপকারি মনে হবে।

যদি কোন প্রশ্ন থাক তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

মহান আল্লাহ্ আমাদের সবার সহায় হোউন। পরবর্তিতে, আল্লাহ্ চাহেন – আবার নতুন কোন পোষ্ট নিয়ে হাজির হবো। খোদা হাফিজ।