কোলেস্টেরল কি, কোলেস্টেরল কেন বেড়ে যায, হাই কোলেস্টেরল কিভাবে ক্ষতির কারণ এবং এটি কমানোর উপায় ইত্যাদি বিষয়গুলি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের নিকট খুব আলোচিত।

আপনি একটু সচেতন হলেই এদের থেকে নিরাপদ হতে পারেন। এই আর্টিকেলে এসব বিষয় নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।

কোলেস্টেরল কি, কোলেস্টেরল কত প্রকার এবং কিভাবে ইহা নিরব ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়- বিষয়গুলি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করে চলা আপনার জন্য সহজ হবে।

চলুন শুরু করা যাক।

কোলেস্টেরল কি, কত প্রকার ও কেন ক্ষতির কারণ?

কোলেস্টেরল কি?

কোলেস্টেরল কি, এর উত্তর হল এটি এক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ যা লিপিড দিয়ে তৈরি। ইহা মোমের মত নরম চর্বির ন্যায় পদার্থ যা আমাদের যকৃত থেকে প্রকৃতিগতভাবে উৎপন্ন হয়। কোষ প্রাচির তৈরিতে এরা প্রধান ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কিছু হরমোন যেমন প্রোজেস্টেরণ, ইস্ট্রোজেন এবং ভিটামিন-ডি উৎপাদনে কোলেস্টেরল সহায়তা করে।

শরীরে ব্যবহৃত মোট কোলেস্টেরলের শতকরা ৮০ ভাগ তৈরি হয় লিভার বা যকৃত থেকে। অবশিষ্ট পরিমান আমরা খাদ্য যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত পন্য ইত্যাদি হতে গ্রহণ করি।

কোলেস্টেরল পানিতে দ্রবিভুত হয়না। কাজেই ইহা নিজে নিজে রক্তের মাধ্যমে চলাচল করতে পারেনা। যকৃত লিপোপ্রোটিন তৈরি করে যা কোলেস্টেরলের চলাচলে সহায়তা করে। লিপোপ্রোটিন এমন এক কণা বা পার্টিকেল যা ফ্যাট এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। তারা কোলেস্টেরেল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড রক্ত স্রোতে বহন করে।

কোলেস্টেরল লিপোপ্রোটিনের সাহায্যে রক্তে প্রবাহিত হয়।

শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে লিভার। খাওয়ার পর খাদ্যে উপস্থিত কোলেস্টেরল ক্ষুদ্রান্ত থেকে শোষণ হয়। তারপর বিপাকিয় কার্য সেরে লিভারে জমা হয়। যেহেতু, স্বাভাবিক শারিরিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য কোলেস্টেরলের দরকার হয়, তাই কোলেষ্টেরল প্রয়োজন অনুযায়ি লিভার থেকে নি:সৃত হয়।

যখন শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশী বেড়ে যায় তখন রক্তনালীর ভিতরের প্রাচিরে এক ধরণের plaque তৈরি করে যা রক্তনালীকে আস্তে আস্তে সরু করে দেয়।

কোলেস্টেরল কত প্রকার?

প্রধানত: দুই ধরণের লিপোপ্রোটিন পাওয়া যায়-

কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা Low density lipoprotein (LDL) কোলেস্টেরল

এই ধরণের কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল বলে। কারণ এরা রক্ত নালীতে চর্বি জমা করে। ফলে রক্ত নালীর প্রাচির সরু হয়ে যায়। যা পরবর্তিতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বেশী ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা High density lipoprotein (HDL) কোলেস্টেরল

HDL কে ভাল কোলেস্টেরল বলা হয়। ইহা LDL কোলেস্টেরলকে যকৃতে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে যাতে শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এই ধরণের কোলেস্টেরল ধমনি প্রাচিরে cholesterol plaque তৈরিতেও প্রতিরোধ করে। যদি আপনার শরীরে নির্ধারিত মাত্রায় HDL কোলেস্টেরল থাকে তাহলে তা হৃদরোগ বা স্ট্রোক করার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

তাহলে উপরের আলোচনা থেকে কোলেস্টেরল কি এবং কোলেস্টেরল কত প্রকার – এর উপর কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

হাই কোলেস্টেরল বলতে কি বুঝায়?

যদি আপনার রক্তে অধিক পরিমানে LDL কোলেস্টেরল থাকে এবং যদি একই সাথে HDL কম থাকে তাহলে তাকে উচ্চ বা high কোলেস্টেরল বলা হয় । এই অবস্থায় যদি চিকিৎসা না নেওয়া হয় তবে ইহা বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্যগত সমস্য তৈরি করতে পারে – যেমন হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক।

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয়?

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী হলে বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।  কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে অনেক সময় হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ যেতে পারে।

কাজেই, কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় – তা সহজেই অনুমান করতে পারছেন।

কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ফলে একই মেকানিজম এর মাধ্যমে উপরের রোগ তিনটি তৈরি হয়।

রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল বেশী হলে রক্ত নালীর (ধমনি) ভিতরের প্রাচিরে চর্বির স্তর জমা হয়। যা দেহের স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে।

ফলে, রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন কোষ এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারেন।

  • সরু হয়ে যাওয়া হার্টের করোনারি আর্টারি angina নামেরে এক প্রকার লক্ষণ তৈরি করে যার ফলে হার্টের মাংসপেশী কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। পরবর্তিতে করোনারি আর্টারি রোগ এবং অবশেষে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
  • সরু রক্তনালীর দিয়ে মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
  • পেরিফেরাল আর্টারি রোগটি হল ঐসব ধমনি সরু হয়ে যাওয়া যারা আমাদের পায়ে রক্ত সরবরাহের কাজে নিয়োজত থাকে। ব্যায়াম বা হাটা-চালার করার সময় পায়ে যদি প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে এক ধরণের ব্যাথা অনুভব হয় যাকে claudication বলে।

হাই কোলেস্টেরলের সাধারনত: তেমন কোন বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ পায়না। ফলে তা এক ধরণের নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার উচিত নিয়মিতভাবে সময়ে সময়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা।

তবে,  Coronary heart disease ও heart attack তৈরি হওয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের উপস্থিতি। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই কোলেস্টেরল রক্ত নালীর প্রাচিরকে সরু করে দেয় যাকে atherosclerosis বলে। যা রক্তনালী দিয়ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃস্টি করে।

এই কারণে, হাই কোলেস্টেরল এক ধরণের নীরব ঘাতকের মত। কারণ এর বাহ্যিক লক্ষণ বুঝা যায়না। যদি আপনি সময়ে সময়ে পরীক্ষার মাধ্যমে চেক না করেন এবং নীরবে যদি তা আপনার রক্তে থেকে থাকে তাহলে রোগটি বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখার মত হয়ে গেল। এই ক্ষেত্রে যেকোন সময় আকস্মিক বড় কোন বিপদের জন্য আপনাকে তৈরি থাকতে হবে।

LDL কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল বলার কারণ হলো ইহা আপনার ধমনির ভিতর কোলেস্টেরল আনায়নে কাজ করে। যদি আপনার রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেড়ে যায় তখন ইহা ধমনি প্রাচিরে জমা হতে থাকে।

এক পর্যায়ে তা জমতে জমতে ধমনির ভিতরের প্রাচিরে চর্বির স্তর তৈরি করে ফেলে। এতে করে, ধমনি সরু হয়ে যায়।  এই অবস্থাকে cholesterol plaque বলা হয়। এই plaque যদি করোনারি আর্টারিতে তৈরি হয় তাহলে এক পর্যায়ে করোনারি আর্টারি রোগ তৈরি করে।

সরু ধমনি দিয়ে কাংখিত পরিমানে রক্ত চলাচল করতে পারেনা।  এই অবস্থাকে বলা হয় atherosclerosis. এটি খুবই মারাত্মক পর্যায়ের একটি সমস্যা। কারণ, এর ফলে রক্তনালী প্রয়োজনীয় পরিমানে রক্ত প্রবাহ করতে পারেনা।

একসময় তা রক্ত জমাট বাঁধার মত ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর যদি এই রক্ত জমাট আপনার ব্রেইন ও হার্টে রক্ত সঞ্চালনের কাজে নিয়োজিত ধমনিকে ব্লক করে দেয় তাহলে আপনার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়।

সিডিসি আটলান্টার তথ্য অনুয়ায়ি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক তৃতিয়াংশ মানুষের LDL কোলেস্টেরল অধিক মাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। এর জন্য কিভাবে LDL কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত।

এছাড়া, atherosclerosis এর ফলে জীবনের উপর আরোও অন্যান্য হুমকিও সৃস্টি হতে পারে-

হাই কোলেস্টেরল শরীরে পিত্তরসের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলতে পারে। যার ফলে আপন পিত্ত থলিতে পাথর তৈরি হতে পারে।

তাহলে, কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় – আশা করি তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। এখন, প্রয়োজন সতর্ক হয়ে চলা। বিশেষ করে, যদি আপনি চল্লিশোর্ধ বয়সের হয়ে থাকেন।

কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়?

আপনি যদি ফ্যাট এর পরিমান কমিয়ে খাদ্য খেতে পারেন তাহলে কোলেস্টেরল লেভেল ভাবভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখাতে পারবেন। বিশেষ করে আপনাকে ঐসব খাদ্য কমিয়ে খেতে হবে যেখানে নিম্নরুপ উপাদান থাকে-

  • কোলেস্টেরল: প্রাণিজাত খাদ্য এবং খাদ্য পণ্য: যেমন- মাংস, চিজ ইত্যাদি।
  • সম্পৃক্ত ফ্যাট (saturated fat): ইহা কোন কোন মাংস, দুগ্ধজাত পন্য, চকোলেট, ব্যাকারি পণ্য, ভাজা খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে পাওয়া যায়।
  • Trans fats: ইহা হল অসম্পৃক্ত ফ্যাট যা vegetable oil থেকে তৈরি হয়। কিছু কিছু ভাজা এবং প্রক্রিয়াজত খাদ্যে থাকে।

কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে আপনার দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ, obesity হলে আপনার রক্তে LDL এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

এর জন্য জেনেটিক ফ্যাক্টরও এর দায়ি হতে পারে। বংশানুক্রমে যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশী থাকে তাদের LDL লেভেল বেশী থাকতে পারে।

তবে, কিছু কিছু রোগের কারণেও কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। এজন্য আপনাকে নিচের রোগগুলি সম্পর্কে অধিক সচেতন হতে হবে।

  • ডায়াবেটিস
  • যকৃত বা বৃক্কের কোন রোগ
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম
  • গর্ভাবস্থা বা অন্য কোন অবস্থা যখন স্ত্রীলোকের শরিরে হরমন উৎপাদন বেড়ে যায়
  • যে সব ঔষধ LDL বাড়িয়ে দেয় এবং HDL কমিয়ে দেয়

বন্ধুগন, উপর আলোচনা থেকে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আশা করি কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।

কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ কি?

বিভিন্ন বিষয় আপনার উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে-

  • বয়স: আপনি যত বয়স যত বাড়তে থাকবে, কোলেস্টেরল লেভেল বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তত ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। যদিও পরিমানে কম, তথাপি কম বয়সি তরুন-তরণীদেরও মাঝে মাঝে হাই কোলেস্টেরল হতে দেখা যায়।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে;
  • নিয়মিন ব্যায়াম না করলে;
  • ধুমপানের অভ্যাস থাকলে;
  • উত্তরাধিকার বা বংশানু্ক্রম: আপনার মা-বাবা বা পারিবারিক কোন ইতিহাস থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।
  • দৈহিক ওজন: শারীরিক ওজন বেড়ে গেলে বা যদি আপনার obesity থাকে তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
  • ডায়াবেটিস
  • Race: কিছু নির্দিষ্ট race এর লোকদের যেমন আফ্রিকান-অ্যামেরিকানদের সাধারণত: সাদা রঙের মানুষের তুলনায় HDL ও LDL বেশী থাকে।

হাই কোলেস্টেরলের লক্ষণ কি কি?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ নিরব থাকে, বুঝা যায়না। যা অনেকটা নিরব ঘাতকের মত। আদর্শগতভাবে এতে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না। ফলে অনেক লোক জানতেই পারেনা যে তারা উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ে দিব্যি সহঅবস্থানে কালাতিপাত করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না ভয়ানক কোন জটিলতা তৈরি হচ্ছে যখন আর তেমন কিছু করার থাকেনা, যেমন হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি।

এজন্য নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো খুবই গুরত্বপূর্ণ।

High কোলেস্টেরল কিভাবে নির্ণয় করা যায়?

খুব সহজেই রক্তে আপনার কোলেস্টেরল লেভেল পরিমাপ করা যায়। এজন্য রক্তের যে পরীক্ষাটি করা হয় তার নাম হল লিপিড প্যানেল। এই টেষ্টের সাহায়্যে আপনি টোটাল বা মোট কোলেস্টেরল, LDL কোলেস্টেরল, HDL কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড পরিমাপ করাতে পারেন।

এই টেষ্ট করানোর পূর্বে ডক্টর আপনাকে 12 ঘন্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কথা বলতে পারেন। তারপর রক্তের নুমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। পরীক্ষার পর টেষ্ট রিপোর্টে আপনি জানতে পারবেন আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কেমন, স্বাভাবিক না বেশী।

রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্র নিম্নরুপ:

  • LDL কোলেস্টেরল: 100 mg/dl থেকে কম হলে।
  • HDL কোলেস্টেরল: ৬০ mg/dl এর সমান বা বেশী হলে।
  • ট্রাইগ্লিসারাইড: ১৫০ mg/dl এর কম হলে।

টোটাল কোলেস্টেরল: ২০০-২৩৯ mg/dl; এটি হল high border line। যদি ২৪০ mg/dl হয় তাহলে উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল হিসাবে বিবেচিত হয়।

আপনার LDL কোলেস্টেরল যদি ১৩০-১৫৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে ইহাকে high border line হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যখন এর মাত্রা ১৬০ mg/dl হয় তখন এক বেশী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

অপরদিকে, আপনার HDL কোলেস্টেরল যদি ৪০ mg/dl এর কম হয় তখন এটি poor হয়ে যায়।

সু্ত্র: ইউ এস সিডিসি

কোলেস্টেরল কমানোর উপায় কি?

কোলেস্টেরল কি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর অদ্যকার পোষ্টটির শেষের দিকে চলে এলাম। এবারে, চলুন কোলেস্টেরল কমানোর উপায় নিয়ে কিছু কথা বলি।

আপনার কোলেস্টেরল বেশী থাকলে ডক্টর আপনাকে জীবন ধারণের স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিতে পারে। যেমন আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, দৈহিক ব্যায়াম বা আপনার দৈনন্দিন রুটিং-এ অন্য কোন বিষয় যোগ ইত্যাদি বিষয়ের কথা করতে পারে। আপনি ধুমপায়ী হয়ে থাকলে তা পরিহার করার উপদেশ দিতে পারে।

এছাড়াও, ডক্টর কিছু ঔষধ প্রেস্ক্রিপশনের মাধ্যমে দিতে পারে বা অন্য কোন উপায়ে চিকিৎসা যাতে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। দেখে আসুন কোলেস্টেরল কমাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা কাজ করতে কত সময় লাগতে পারে।

কোলেস্টেরল কমানোর উপায় নিয়ে নিচ কয়েকটি পদ্ধতি-

স্বাস্থ্যকরা খাদ্যের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

স্বাস্থ্যকর মাত্রায় কোলেস্টেরল লেভেল ধরে রাখতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে। যেমন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনাকে নিচের বিষয়গুলি উপদেশ দিতে পারে-

  • ঐসব খাদ্য খাওয়ার লাগাম টেনে ধরুন যেখানে কোলেস্টেরল বেশী থাকে। যেমন, সেচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্র্যানস ফ্যাট;
  • আমিষ জাতীয় খাদ্যে lean source বেছে নিন। যেমন, মুরগি, মাছ এবং লিগিউমিনাস জাতীয় খাদ্য;
  • বিভিন্ন ধরণের উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। যেমন, ফলমুল, শাক-সবজি, এবং whole grain.
  • ভাজা খাবার পরিহার করুন।
  • Fast food এবং junk food পরিত্যাগ করুন।

যেসব খাদ্যে কোলেস্টেরল, সেচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যানস ফ্যাট বেশী থাকে তারা হল-

  • লাল মাংস (red meat), ডিমের কুসুম এবং উচ্চ চর্বি বিশিষ্ট দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য;
  • প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য যা cocoa মাখন, পাল্ম তৈল বা নারিকেল তৈল দিয়ে তৈরি;
  • গভীরভাবে ভাজা খাদ্য যেমন আলুর চিপস, পিয়াজের রিং এবং ফ্রাইড চিকেন;
  • কিছু ব্যাকারি পণ্য যেমন cookies এবং muffins

মাছ বা অন্যান্য খাদ্য যেখানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে তা খেলে আপনার LDL লেভেল কমে যেতে পারে। যেমন, mackerel, salmon এবং herring জাতীয় মাছ হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের খুব ভাল উৎস। এছাড়াও, almonds, walnuts, avocados এবং ground flax seed ইত্যাদিও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ধারণ করে। আরোও অন্যান্য খাবার আবিস্কার করুন যা আপনার কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সহায়তা করতে পারে।

কি কি হাই কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য পরিত্যাগ করতে হবে-

  • Red meat থেকে কেটে নেওয়া চর্বি;
  • যকৃত এবং অন্যন্য অঙ্গ;
  • ডিমের কুসুম;
  • বেশী চর্বি বিশিষ্ট দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন পূর্ণ চর্বির পনির, দুধ, আইসক্রিম এবং মাখন;

আপনার চিকিৎসকের উপদেশ এর উপর নির্ভর করে আপনি পরিমিত মাত্রায় এ জাতীয় খাবারও খেতে পারেন।

প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

কোন কোন ক্ষেত্রে ঔষধ গ্রহণ ছাড়াই আপনি আপনার শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে পারেন। যেমন, তা হতে পারে ক্যালরি হিসেব করে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার দ্বারা। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যে পুষ্টিকর কিছু খাদ্য উল্লেখ করা আছে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং তামাক জাতীয় পণ্য পরিত্যগের দ্বারা।

কোন কোন মানুষ দাবি করে, নির্দিষ্ট কিছু ঔষধি গাছ এবং পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। যেমন-

  • রসুন
  • Hawthorn: গোলাপ সদৃশ এক প্রকার গুল্ম জাতীয় গাছ। এই গাছের ফল, পাতা ও ফুল বহু আগে থেকেই হৃদরোগ গঠিত সমস্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • Astragalus: এক প্রকার হার্বাল ঔষধ যা চায়নাতে রীতিগতভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাবহার করা হয়।
  • Red yeast rice
  • Oat bran
  • Ground flax seed
  • Plant sterol and stanol supplements
  • Blond psylium

যাহোক এসবের দ্বারা যে কাজ হয় সে ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে। যদিও US Food and Drug Administration (FDA) উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসায় এমন কোন পণ্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে আরোও গবেষণার প্রয়োজন।

কোন প্রকার হার্বাল বা নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা অন্য মেডিকেশনের সাথে ব্যবহৃত হতে পারে।

কোলেস্টেরল কমাতে লেবু

কোলেস্টেরলের ঔষধ কি?

কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার কোলেস্টেরল লেভেল কমানোর কাজে ডক্টর কিছু ঔষধ প্রেস্ক্রাইব করতে পারে। Statins হল এরকম একটি ঔষধ যা সচারাচর ব্যবহৃত হয়। এর কাজ হল লিভারকে ব্লক করে ফেলা যাতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল তৈরি করতে না পারে।

Statins এর কয়েকটি উদাহারণ-

  • Rosuvastatin (Crestor);
  • Atovastatin (Lipitor);
  • Fluvastatin (Lescol);
  • Simvastatin (Zocor);

এছাড়াও আপনার ডক্টর কোলেস্টেরল কমানোর উপায় হিসাবে আরোও অন্যান্য ঔষধও প্রেস্ক্রাইব করতে পারে, যেমন-

  • Colesevalam (welchol);
  • Colestipol (colestid);
  • Cholestyramine (prevalite);
  • Ezetimibe (zetia): যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়।

কিছু মেডিকেশন কয়েকটি ঔষধের সমন্বয়ে তৈরি যা আপনার শরীরে খাদ্যের মাধ্যমে গৃহিত কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে এবং যকৃতকেও কোলেস্টেরল তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এর একটি উদাহারণ হল, ezetimible এবং  simvastatin (vytorin) এর সমন্বয়ে গঠিত।

উপসংহার

কোলেস্টেরল কি, কত প্রকার এবং কোলেস্টেরল কমানোর উপায় প্রসঙ্গে অদ্যকার পোষ্টে অনেক কথাই আলোচনা করা হলো। যেহেতু এটি এক প্রকারের নিরব ঘাতক, তাই কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে আপনাকে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে চলতে হবে।

আপনার বয়স যদি বেশীর দিকে হয়, তাহলে স্ব-উদ্যোগেই কয়েক মাস পর পর ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন।