Last updated on May 11th, 2023 at 12:52 pm

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো – তার উপর অদ্যকার এই লেখা।

এফিলিয়েটে মার্কেটিং বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। Statista এর প্রাক্কলন অনুযায়ী অ্যামেরিকায় ২০২২ সাল নাগাদ এই ব্যবসার আকার দাড়াবে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আপনি যদি আজ শুরু করেন তাহলে একদিন আপনিও এর মার্কেট শেয়ার দখলে একটি অবস্থানে যেতে পারবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে কাজ করে, এর উপর অপর এক পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চাইলে লিংকে ক্লিক করে সেটি দেখে আসতে পারেন।

আজকের পোষ্টে, আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো – তার উপর ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চলুন, শুরু করি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করব?

এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার ধাপসমুহ নিম্নরুপ-

  • একটি প্লাটফর্ম বেছে নিন।
  • আপনার পছন্দের প্রোডাক্টস ক্যাটাগরি বা niche নির্বাচন করুন।
  • আপনার নির্বাচিত niche অনুযায়ী এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগদান করুন।
  • প্রোডাক্টের সাথে সম্পর্কিত ভাল ভাল কনটেন্ট তৈরি করুন।
  • আপনার এফিলিয়েট সাইটে ভিজিটর আনুন।
  • ভিজিটরদের কাস্টোমারে রুপান্তর করুন।

এবারে প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত আলোচনা –

প্রথম ধাপ: একটি প্লাটফর্ম বেছে নিন

এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরুর জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি প্লাটফর্ম বেছে নিতে হবে। প্লাটফর্ম বলতে বুঝায় কোন জিনিসের উপর ভর করে আপনি কাজটি সম্পন্ন করবেন।

যেমন, এই প্লাটফর্ম হতে পারে কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার; অথবা হতে পারে ইউটিউব চ্যানেল বা একটি ব্লগ ওয়েবসাইট। যেখানে আপনার কাংখিত প্রোডাক্টের এফিলিয়েট লিংক প্রয়োগ করে আপনি মার্কেটিং করবেন।

তবে, সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত প্লাটফর্ম দু’টি- একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং অপরটি হল ব্লগ সাইট। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আস্তে আস্তে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স তৈরি করতে পারবেন। যারা আপনার এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে পন্য ক্রয় করতে পারে।

আজকের যুগে একটি ব্লগ চালু করা কোন বিষয় নয়। আপনার যদি আগ্রহ থাকে তাহলে খুব সহজেই এটি বানিয়ে নিতে পারেন। এতে পয়সাও তেমন খরচ হয়না। খরচের মধ্যে একটি ডোমেইন আর তার হোস্টিং। যা বছর বছর নবায়ন করতে হয়।

ডোমেইনের দাম গড়ে প্রায় ১০০০/- টাকা আর হোস্টিং বাবদ ধরুন দুই হাজার টাকা। এই আপনার প্রতি বছর ৩০০০/- টাকার বিনিয়োগ।

ব্লগ তৈরির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত সিস্টেমটির নাম ওয়ার্ডপ্রেস। যা খুবই ব্যবহার বান্ধব। আপনি প্রথম প্রথম যে কোন ফ্রি থিম দিয়ে ওয়ার্ডপ্রেসে একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। তাহলে, থিম বাবদ আপনার কোন পয়সা খরচ হল না। প্রতি বছর ৩০০০/- খরচ করেই আপনি আপনার ব্লগটি চালিয়ে নিতে পারছেন।

অনলাইনে ওয়ার্ডপ্রেসের উপর প্রচুর টিউটোরিয়াল রয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার বান্ধব হওয়ায় আপনি অল্প দিনের মধ্যেই এটিকে রপ্ত করতে পারবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। মুল বিষয়টিই হচ্ছে আপনার আগ্রহ আর সংকল্প।

ব্লগ তৈরি হওয়ার পর পরবর্তি কাজ হবে, আপনি যে ধরণের প্রোডাক্ট প্রোমোট করতে চান তার সাথে সম্পর্ক রেখে ভাল ভাল আর্টিকেল বা কনটেন্ট লিখে তা পাবলিশ করে যাওয়া। এই কনটেন্টের মধ্যে থাকবে প্রোডাক্টের এফিলিয়েট লিংক।

আপনার কনটেন্ট যাতে সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক করে তার জন্য অপটিমাইজ করা। যখন কনটেন্ট সার্চ ইঞ্চিনের প্রথম পেজে র‌্যাংক করবে, তখন থেকে আপনি অরগানিক্যালি ভিজিটর পেতে থাকবেন। এভাবে ভিজিটর পেতে পেতে এক সময় আপনার ভাল সংখ্যার একটি অডিয়েন্স তৈরি হয়ে যাবে।

যারা আপনার কাস্টোমারে পরিণত হয়ে এফিলিয়েট প্রোডাক্ট ক্রয় করবে। এটিই হল মুল ধারণা।

অপর প্লাটফর্মের নাম ইউটিউব। ইউটিউব চ্যানেল খুলতে এবং সেখানে ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করতে কোন পয়সা লাগেনা। সম্পূর্ণ ফ্রিতেই আপনি এটি চালাতে পারবেন। আপনি যে ধরণের পন্য প্রোমোট করতে চান তার উপর ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা আপনার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করবেন।

ভিডিওর ডেস্ক্রিপশন বক্সে পণ্যটি এফিলিয়েট লিংক দিয়ে দিবেন। আপনার, ভিউয়ার যদি সেই লিংক ব্যবহার করে পণ্যটি কিনে, তাহলে আপনি আপনার নির্ধারিত কমিশন পেয়ে যাবেন।

ইউটিউবে যাতে আপনার আপলোড করা ভিডিও টি র‌্যাংক করে সেজন্য সেখানেও আপনার কিছু এসইও কাজ করে নিতে হবে।

তাহলে, উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝে নিতে পারলাম, এফিলেয়েট মার্কেটিং -এ কিভাবে প্লাটফর্ম কাজ করে।

দ্বিতীয় ধাপ: একটি niche নির্বাচন করুন

সত্য কথা বলতে গেলে, আপনি আজকের সময়ে যদি একটি ব্লগ খুলতে যান তাহলে আপনাকে প্রচুর প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হতে হবে। শুধু অ্যামেরিকাতে ব্লগারের সংখ্য ২০২০ সালে ৩১.৭ মিলিয়ন হবে বলে Statista একটি প্রাক্কলন করেছিল।

এজন্যই, আপনার ব্লগ এরিয়া সরু করার জন্য প্রয়োজন যে কোন একটি সুনির্দিষ্ট niche বেছে নেওয়া। যাতে প্রতিযোগীতায় হারিয়ে যেতে না হয়।

তাই, সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কোন টপিকস নির্বাচন করুন যার উপর তৈরি হবে আপনার ব্লগ কনটেন্ট। আর সহজ কথায় – একেই বলা হয় niche. যেমন, ‘food’ এমন এক ক্যাটাগরি যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ব্যাপকতা। কাজেই, এমন ব্যাপক ক্যাটাগরি বাদ দিয়ে এর মধ্যে ক্ষুদ্র ক্যাটাগরি বিশিষ্ট কোন টপিকস যেমন ফুড সাপ্লিমেন্ট বেছে নিতে পারেন।

আপনার কনটেন্ট টপিকস যত বেশী সরু বা ক্ষুদ্র করতে পারবেন, আপনি তত বেশী সুনির্দিষ্ট audience তৈরি করতে পারবেন। যা গুগল বা সার্চ ইঞ্চিনে র‌্যাংকিং করার কাজটি আপনার জন্য সহজতর হবে।

যখন এই সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বা টপিকসের উপর সব ধরণের কনটেন্ট লিখা হয়ে যাবে, তারপর, আপনি চাইলে টপিকস এর পরিধি বিস্তার করতে পারবেন।

এখন, আপনিই যদি আপনার ব্লগের কনটেন্ট তৈরির ইচ্ছা করেন, তাহলে আপনি এমন এক টপিকস নির্বাচন করুন যা সম্পর্কে আপনি জানেন বা যার প্রতি আপনি আগ্রহি।

এই জগতের অনেক নতুন উদ্যোক্তারা মাঝ পথে হারিয়ে যায় ধৈর্য্যচুতির কারণে। আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করে ধীর গতিতে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। যেমন, একটি ফলের গাছ লাগানোর পর পরই তা থেকে ফল আশা করা যায়ন। গাছটি সময়ে সময়ে পরিচর্যা করতে হয়।

তারপর, একসময় গাছটি বড় হয়ে গেলে তখন এটি থেকে ফল পাওয়া যাবে। ব্লগিং এর মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিংও ঠিক তেমনি। সঠিক পদ্ধতিতে ধৈর্য্যের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

এই ফিল্ডে আপনি যদি অভিজ্ঞ বা দক্ষ না হন, তাতেও চিন্তার কোন কারণ নেই। কাজ করার মাধ্যমে নতুন নতুন জিনিস সামনে আসবে, আর তখন শিখে নিবেন। এভাবে শিখার কার্যকরিতা সবচেয়ে ভাল।

পাশাপাশি, আপনি যদি মনে করেন, তাহলে কনটেন্ট তৈরির কাজটি আউটসোর্স করে দক্ষ কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। এভাবে, আপনার ব্লগের ভিজিটর এর সংখ্যা বাড়তে থাকবে, ভিজিটরের এনগেজমেন্ট ভাল হবে এবং এফিলিয়েট সেল বেড়ে যাবে।

তৃতীয় ধাপ: এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক খুজে বের করুন

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো – টপিকসের এই ধাপটি বেশ গুরত্বপূর্ণ।

মার্চেন্ট ওয়েবসাইট তাদের পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির জন্য এফিলিয়েট প্রোগ্রাম অফার করে। তাদের ওয়েবসাইটে এফিলিয়েট প্রোগ্রামের লিংক দেওয়া থাকে। যার মাধ্যমে আপনি ঐ মার্চেন্ট সাইটে সাইন-আপ করে যোগ দিতে পারেন। এটি হল একক কোন মার্চেন্টের বেলায়। এভাবে এক এক করে অনেক মার্চেন্ট ওয়েবসাইটের এফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দেওয়া সম্ভব।

কিন্তু এখানে একটি সমস্যা, তা হল, প্রত্যেক মার্চেন্ট ওয়েবসাইটের এফিলিয়েট একাউন্ট সংরক্ষণ করে তার ব্যবস্থাপনা করা অনেকটা কঠিন হয়ে যেতে পারে।

এই সমস্য দুর করার সহজ উপায় হল এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। যেখানে বিভিন্ন মার্চেন্ট ওয়েবসাইট তাদের নানা রকম পণ্যের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম অফার করার জন্য সেখানে এডভারটাইজার হিসাবে যোগ দেয়। আবার একজন এফিলিয়েট হিসাবে আপনার সেখানে একাউন্ট খুলার সুযোগ থাকবে।

যাতে, আপনি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারেন। আপনি কোন একটি এফিলিয়েট নেটওয়ার্কে যোগ দিয়ে বিভিন্ন কম্পানির একাধিক পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন। এটিই হল, এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের সুবিধা।

এক কথায় বলতে গেলে, মার্চেন্ট এবং এফিলিয়েটস এর মধ্যে মধ্যস্থতাকারির ভূমিকায় যে কাজ করে সেটিই হল এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক।

এবারে, প্রশ্ন হল – আপনি কিভাবে ভাল একটি এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক খুজে পাবেন? চলুন সে বিষয়ে আলোচনা করি।

ভাল কোন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুজে পেয়ে সেখানে যোগদান করা হতে পারে আপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এর জন্য যে সব উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে, তা নিম্নরুপ-

ক) গুগল সার্চ করে: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের নাম গুগল। গুগল করে আপনি খুব সহজেই আপনার নির্বাচিত niche এর সাথে সম্পর্কিত এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক খুজে বের করতে পারেন। এর জন্য গুগলের সার্চ বক্সে নিম্নলিখিত কথা লিখে সার্চ করুন-

    • “affiliate marketing program” + “name of your niche” অথবা
    • “affiliate marketing program” + “একটি সুনির্দিষ্ট প্রোডাক্টের নাম”

এভাবে সার্চ করে আপনি নিমিষের মধ্যে সার্চের অনেক ফলাফল পেয়ে যাবেন যা হবে আপনার বাছাই করা প্রোডাক্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এছাড়া, যদি আপনি কোন মার্চেন্ট কম্পানি খুজে পেতে চান তাহলে নিচের উপায়ে সার্চ করুন-

  • সুনির্দিষ্ট মার্চেন্টের নাম লিখুন + “affiliate program”
  • আর একটি লক্ষণীয় বিষয় হল, কিছু কিছু মার্চেন্ট কম্পানি ভিন্ন নাম ব্যবহার করতে পারে, যেমন – “partner program” বা “associate program”। সেক্ষেত্রে আপনার সার্চের ভাষা হবে – আপনার পছন্দের মার্চেন্টের নাম + “partner program” বা “associate program”।

এর মাধ্যমে আপনি অসংখ্য ফলাফল পাবেন। তার মধ্য থেকে আপনাকে বাছাই করতে হবে – কোন প্রোগ্রামে আপনি যোগ দিবেন।

এখানে মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বা প্রোগ্রাম এমন আছে যেগুলো কোন নির্দিষ্ট দেশের সাথে সম্পর্কিত। আপনি ঐ দেশের অধিবাসী হলে বা যদি সেই অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে প্রোমোট করতে চান, তাহলে সেখানে যোগ দিতে পারবেন। অন্যথায়, নয়। এই বিষয়টি, শুধু ফিজিক্যাল প্রোডাক্টের বেলায় প্রযোজ্য। এরকম এফিলিয়েট প্রোগ্রামের উদাহারণ হতে পারে, Amazon Associates Program ও eBay Partner Network।

তবে, ডিজিটাল প্রোডাক্ট হলে আপনি যে দেশেই থাকুন না কেন- তা কোন বিষয় নয়। কারণ, প্রোডাক্ট ডেলিভারি হবে ডিজিটালভাবে, অর্থাৎ ডাউনলোড করে।

খ) এফিলিয়েট ডিরেক্টরি দেখে:

এফিলিয়েট ডিরেক্টরির মধ্যে এফিলিয়েট প্রোগ্রামসমুহ তালিকাভূক্ত করা থাকে। কাজেই, এই ডিরেক্টরি দেখে আপনি সহজেই আপনার পছন্দের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম বের করে নিতে পারবেন। ডিরেক্টরির ভিতরে এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলো আবার টপিকস ও কমিশনের ধরণ অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করা থাকে। যা আপনার জন্য আরোও সহজ হবে।

গ) এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে:

যে সব কম্পানির এফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে সেগুলো একসাথে খুজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল এফিলিয়েট নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়া। তাহলে একসাথে অনেক কম্পানির এফিলিয়েট প্রোগ্রাম আপনার হস্তগত হয়ে যাবে। সেখান থেকে পছন্দের পণ্য বাছাই করে প্রোমোট করা শুরু করে দিবেন।

বিশ্বব্যাপী জনপ্রীয় এমন কয়েকটি এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের নাম – ShareASale, Commission Junction (CJ) affiliate, Click Bank, LinkShare, Impact ইত্যাদি।

আপনার কাজ হবে, এই সব এফিলিয়েট নেটওয়ার্কের সাইন-আপ পেজ ব্যবহার করে সেখানে যোগ দেওয়ার আবেদন ফর্ম দাখিল করা। কিছু কিছু নেটওয়ার্ক আপনার আবেদন যাচাই বাছাই করার পর অনুমোদন করতে পারে। অনুমোদন হয়ে গেলে তারপর আপনি সেখান থেকে আপনার পছন্দের পণ্য বাছাই করে বাজারজাত করার কাজে লেগে যাবেন।

ঘ) মার্চেন্ট কম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে

উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, এফিলিয়েট প্রোগ্রাম বিশিষ্ট মার্চেন্ট কম্পানি কিভাবে খুজে বের করবেন। যার বেলায় আলাদাভাবে প্রত্যেক কম্পানির এফিলিয়েট সাইন-আপ পেজ-এ গিয়ে আপনাকে যোগদান করতে হবে।

সাধরণত: যে সব কম্পানির এফিলিয়েট প্রোগ্রাম থাকে তার লিংক তাদের ওয়েবসাইটের ফুটার অংশে দেখতে পাওয়া যায়। ফুটার থেকে “এফিলিয়েট” লিংকে ক্লিক করলে সোজা আপনাকে তার সাইন-আপ পেজ-এ নিয়ে যাবে। সেখান থেকে সাইন-করে কাজ শুরু করবেন।

যেমন, অ্যামাজন একটি মার্চেন্ট কম্পানি। তারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা একটি কম্পানি যার এফিলিয়েট হলে কম্পানিটির ওয়েবসাইট থেকে “Amazon Associate Program” লিংকে ক্লিক করে সাইন-আপ করতে হবে।

আপনি কোন এফিলিয়েট নেটওয়ার্কে তাকে খুজে পাবেন না। অ্যামাজনের এফিলিয়েট হতে হলে, তাদের ওয়েবসাইটের লিংক ব্যবহার করেই আপনাকে আবেদন পাঠাতে হবে। আলিবাবা, আলি এক্সপ্রেস, দারাজ – এদের বেলাতেও একই ঘটনা।

ঙ) পরিচিত কোন এফিলিয়েট ওয়েবসাইট দেখে:

আপনার niche এর সাথে যদি কোন এফিলিয়েট সাইট সম্পর্কে আপনি জেনে থাকেন, তাহলে সেটি ভিজিট করে তার এফিলিয়েট লিংকে গিয়ে দেখতে পারেন তারা কোন কোন কম্পানির এফিলিয়েট প্রোডাক্টস বাজারজাত করছে। এর মাধ্যমে আপনি বাস্তব সম্মত একটি ধারণা পাবেন।

চ) ফেসবুক গ্রুপ বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে:

এফিলিয়েট মার্কেটারদের একটি গ্রুপ, কমিউনিটি বা ফোরাম আছে। ফেসবুকসহ বিভিন্নি সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্চ করে আপনি সেই গ্রুপ বা ফোরামে যোগ দিতে পারেন। সেখান থেকে এফিলিয়েট মার্কেটিং জগত সম্পর্কে আপনি নতুন অনেক কিছু জানতে পারবেন। এমনকি, যদি কিছু জানার থাকে, তাহলে প্রশ্ন করেও জানতে পারবেন।

ধাপ-৪: ভাল মানের কনটেন্ট তৈরি করুন

আপনি যদি আপনার এফিলিয়েট সাইটের সফলতা চান, তাহলে ভাল মানের কনটেন্ট তৈরির কোন বিকল্প নেই। যেখানে আপনি প্রোডাক্টের এফিলিয়েট লিংকগুলো বসিয়ে দিবেন। তবে এফিলিয়েট প্রোডাক্টের লিংক এমনভাবে বসাতে হবে যা ন্যাচারাল এবং প্রাসঙ্গিক হিসাবে পাঠকের নিকট দৃশ্যমান হয়। শুধু অন্ধের মত কোন প্রোডাক্টের লিংক বসালে হবে না।

সার্চ ইঞ্জিনে কোন query word লিখে পাঠক আপনার সাইটে প্রবেশ করার অর্থই হল তার সমস্যার সমাধান করা। তার জানার বিষয়টি যাতে আপনার কনটেন্ট পড়ে জানতে পারে। যাকে searcher’s intent বলা হয়। এই কথাটি মনে রেখে আপনার কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।

যাতে, সে bounce করে ফিরে না চলে যায়। আপনার সাইটে তার এনগেজমেন্ট যেন সন্তোষজনক হয়। পরবির্তিতে একজন রিটার্ন ভিজিটর হিসাবে আপনার সাইটে পুনরায় ফিরে আসার মানসিকতা যাতে তার ভিতর জন্ম লাভ করে। আর তা কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন আপনার কনটেন্টগুলো ভাল মানের হয় এবং ভিজিটরের আকাংখা পূরণে সক্ষম হয়।

সার্চ ইঞ্জিন এই বিষয়গুলির প্রতি সতর্ক নজর রাখে। যা নির্ভর করে আপনার সাইট র‌্যাংকিং এর উপর।

ধাপ-৫: এফিলিয়েট সাইটে ভিজিটর আনার ব্যবস্থা করুন

ধরে নেই, আপনি খুব ভাল মানের কনটেন্ট তৈরি করে আপনার এফিলিয়েট সাইটে পাবলিশ করেছেন। এখন কি করার? এগুলোর আলটিমেট উদ্দেশ্য কি?

এর উত্তর হল- ভিজিটরের নিকট যেন তা দৃষ্টিগোচর হয়। পাঠকের নজরে আসলে পাঠক তা পড়ার সুযোগ পাবে। এতে করে, আপনার কনটেন্টের ভিতর বসিয়ে দেওয়া এফিলিয়েট প্রোডাক্টের লিংকে ক্লিক করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এভাবে বেশী থেকে বেশী ক্লিক হতে হতে একসময় ঐ ভিজিটর পণ্যটি কিনে আপনার কাস্টোমারে রুপান্তরিত হয়ে যাবে।

আপনার   এফিলিয়েট সাইট চালানোর উদ্দেশ্য হল ভিজিটরকে কাস্টোমারে পরিণত করা। কারণ, ভিজিটর যখন এফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি কিনবে, কেবল তখনই আপনি আপনার প্রাপ্য কমিশনটি পেয়ে যাবেন।

কিন্তু, প্রশ্ন হল – ভিজিটর আনার কৌশল কি?

ভিজিটর আপনি দু’ভাবে আনতে পারেন-

ক) ভিজিটর কিনে (paid traffic):

এক্ষেত্রে ভিজিটর আনার জন্য আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। আপনি এটি করতে পারেন PPC ads ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত আপনার সাইটে ভিজিটর আসা শুরু হবে।

কিন্তু এর অসুবিধা হল- ads চালাতে গিয়ে আপনার লাভের একটি বড় অংশ খরচ হয়ে যাবে। পকেট থেকেই তা বিনিয়োগ হয়ে যেতে পারে। কারণ, প্রথম প্রথম ভিজিটর বা ট্রাফিক এলেই যে পণ্যটি কিনবে, তা কিন্তু নয়।

এজন্য, আপনি paid traffic campaign কতদিন চালাবেন তা মাথায় রাখতে হবে। কেননা, তার Return on Investment (ROI) বাস্তবতার নিরীখে হিসেব করতে হবে।

Ads campaign যখন বন্ধ করে দিবেন, তখন আপনার সাইটের ট্রাফিক থেমে যাবে।

এজন্য, আপনার কৌশল হতে হবে, যে সব প্রোডাক্টের কমিশন বড় মাপের, শুধু সেগুলোর জন্য PPC ads চালানো। যাতে, ROI এর হিসাব ঠিক থাকে। অ্যামাজনের মত এফিলিয়েট প্রোগ্রাম যাদের প্রদত্ত কমিশন খুব সীমিত, সেখানে PPC ads চালিয়ে লাভবান হওয়া কঠিন।

খ) সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও:

এসইও এমন এক পদ্ধতির নাম যা ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনে কোন কনটেন্ট বিনা পয়সায় র‌্যাংক করানো যায়। সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম এক থেকে তিন এর মধ্যে যদি আপনার কনটেন্ট র‌্যাংক হতে পারে তাহলে প্রচুর ভিজিটর আসা শুরু হবে। বিনা পয়সায় কোন সাইটে আসা ভিজিটরকে অরগানিক ট্রাফিক বলে।

কিন্তু, সার্চ ইঞ্জিনে আপনার কনটেন্ট র‌্যাংক করানো অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করবে এবং তা সময় সাপেক্ষ। কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে যেতে পারে।

সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক করতে যে সব বিষয় প্রয়োজন হয় তার উপর আলাদা এক আর্টিকেল লিখে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ধাপ-৬: এফিলিয়েট লিংকে ক্লিক ঘটান

আপনার সাইটে ভাল মানের কনটেন্ট থাকলেই যে তার এফিলিয়েট প্রোডাক্টের লিংকে মানুষ ক্লিক করবে, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। এর জন্য কয়েকটি বিষয় আপনার বিবেচনায় স্থান পেতে হবে-

১. Link placement:

আপনার সমস্ত এফিলিয়েট লিংক যদি কনটেন্টের একেবারে নিচের দিকে থাকে, তাহলে ইউজারগন খুব কমই স্ক্রল করে সেখানে যাবে। ফলে ক্লিকের সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে।

অপরদিকে, কনটেন্ট লেখার সূচনা লগ্নের প্রতি এক দ’টি শব্দ পর পরই যদি লিংক বসানো শুরু করে দেন, তাহলে কনটেন্ট স্প্যামি দেখাবে। এর জন্য অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাথে Link placement এর বিষয়টির মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।

২. Context

কনটেক্সট এর মানে হল প্রাসঙ্গিকতা। এমন কথাকে কেন্দ্র করে লিংক প্রয়োগ করবেন যা কিনা প্রাসঙ্গিক হয়। তা না হলে, পাঠকের নিকট তা ন্যাচারাল মনে হবে না।

আপনার কনটেন্টের সূচনা নিম্নরুপ হওয়াকে নিশ্চয়ই আপনি পছন্দ করবেন না-

আজ, আমি রান্না ঘরে ব্যবহৃত কয়েকটি নাইফ সম্পর্কে রিভিউ করব।

উপরের লিংকগুলির মধ্যে কোন প্রাসঙ্গিকতা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এর চেয়ে বরং নিম্নরুপ হলে কি ভাল হয় না?

আজ আমি রান্না ঘরে ব্যবহৃত তিন ধরণের নাইফ সম্পর্কে রিভিউ করব যা আপনি ১০০/- টাকার ভিতর পেয়ে যাবেন দারাজ থেকে। এগুলো হল, প্রথম প্রডাক্টের নাম, দ্বিতীয় প্রোডাক্টের নাম এবং তৃতীয় প্রোডাক্টের নাম।

সপ্তম ধাপ: ক্লিকগুলোকে বিক্রয়ে রুপান্তর করুন

এটিই হল আমাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। গাছ লাগিয়েছেন এবার ফল খাওয়ার পালা।

বন্ধুগন, এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো – বিষয়টির উপর তথ্যগুলি উপকারি মনে হলে পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে একটি লাইক দিয়ে দিন।