চুলকানির কালো দাগ দুর করা বিষয়ক কিছু তথ্য নিয়ে অদ্যকার এই পোষ্ট। এখানে আলোচ্য মুল বিষয়বস্তুর সাথে চুলকানি বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্যও তুলে ধরব।
তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Table of Contents
ত্বকের চুলকানি বলতে কি বুঝায়?
ত্বকের চুলকানি (প্রুরাইটিস) হলো একটি সাধারণ সমস্যা, যা ত্বকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি তৈরি করে এবং আঁচড়ানোর প্রবণতা বাড়ায়। এটি শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে এবং অনেক সময় বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কখনও এটি ছোট একটি নির্দিষ্ট অংশে হয়, যেমন পোকামাকড়ের কামড়ের জায়গায়। আবার, কিছু ক্ষেত্রে এটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকে কিংবা অ্যালার্জি থেকে হয়।
যদিও ত্বকের চুলকানি সাধারণত গুরুতর কিছু নয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বড় কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি ফুসকুড়ি বা চুলকানির কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকে চুলকানির কারণ কি?
ত্বকের চুলকানির কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- শুষ্ক ত্বক – আবহাওয়া পরিবর্তন, অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার বা ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কমে গেলে ত্বক শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হতে পারে।
- পোকামাকড়ের কামড় – কামড়ের জায়গায় সাধারণত ফোলা বা লাল হয়ে যায় এবং ব্যথা হতে পারে।
- আমবাত (আর্টিকেরিয়া) – এটি একটি চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, যা অ্যালার্জি বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হতে পারে।
- তাপ ফুসকুড়ি – এটি ছোট ছোট লাল বা গোলাপি ফোস্কার মতো দেখা যায়, বিশেষ করে গরমের সময় শিশুদের বেশি হয়।
- একজিমা – এটি ত্বকে লাল, শুষ্ক ও আঁশযুক্ত দাগ তৈরি করে, যা সাধারণত ঘাড়, কব্জি, কনুই ও হাঁটুর ভাঁজে দেখা যায়।
- স্ক্যাবিস (খোস পাচড়া) – এটি ছোট পোকামাকড়ের সংক্রমণ, যা ত্বকে তীব্র চুলকানি এবং লাল ফুসকুড়ি তৈরি করে।
- সোরিয়াসিস – এটি ত্বকে পুরু, লালচে ও আঁশযুক্ত দাগ তৈরি করে, যা মাথার ত্বক, কনুই ও হাঁটুতে বেশি দেখা যায়।
- প্রসূতি কোলেস্টেসিস – গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এটি দেখা যেতে পারে, যা পুরো শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করে, তবে সাধারণত ফুসকুড়ি হয় না।
গর্ভাবস্থায় পেটের চুলকানিও স্বাভাবিক, কারণ ত্বকের প্রসারণের ফলে এটি হতে পারে। এটি আপনার শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের টানটানতার কারণে হতে পারে।
চুলকানির কালো দাগ দুর করা : অন্যান্য কারণ
ত্বকে চুলকানি কখনও কখনও কিছু ওষুধের কারণে হতে পারে। বিনোদনমূলক মাদকদ্রব্য বা ভেষজ সম্পূরক ব্যবহারের ফলে ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
বয়স্কদের মধ্যে, ত্বকে চুলকানি কখনও কখনও গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের রোগগুলির মধ্যে রয়েছে:
- কিডনি সমস্যা
- লিভারের রোগ
- রক্তের রোগ
ত্বকের চুলকানি আরও কিছু কারণে হতে পারে, যেমন:
- থাইরয়েডের অতিরিক্ত সক্রিয়তা বা কম সক্রিয়তা
- এইচআইভি সংক্রমণ
- উন্নত স্তরের ক্যান্সার
- স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন রোগ
- মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা
কখন আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত যদি:
• আপনার ত্বকে খুব চুলকানি হয় কিন্তু কোনো ফুসকুড়ি নেই।
• এমন কোনো ফুসকুড়ি আছে যা ঠিক হচ্ছে না।
এছাড়া, আপনি যে কোনো ওষুধ খাচ্ছেন—এতে যে কোনো ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ বা ভেষজ ওষুধও অন্তর্ভুক্ত—তাহলে তা আপনার ডাক্তারের জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত যদি:
• আপনি অসুস্থ বা জ্বরে ভুগছেন।
• আপনার লক্ষণগুলো বারবার ফিরে আসছে।
• চুলকানি এত তীব্র যে আপনি ঘুমাতে পারছেন না।
• ফুসকুড়ি রক্তপাত, খোসা বা পুঁজ সহ।
• আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন তীব্র চুলকানিতে ভুগছেন।
• আপনার শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকের চুলকানি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
ত্বকের চুলকানির চিকিৎসা তার কারণের উপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুলকানির কারণ শুধু আপনার ত্বক দেখে নির্ণয় করা সম্ভব, বিশেষ কোনো পরীক্ষা প্রয়োজন হয় না।
তবে, আপনার ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন:
• ত্বকের বায়োপসি
• রক্ত পরীক্ষা
• প্রস্রাব পরীক্ষা
• মল পরীক্ষা
চুলকানির কালো দাগ দূর করা: চিকিৎসা বিষয়ক সতর্কতা?
যদি চুলকানির কালো দাগ দুর করা ক্রিম ব্যবহারের পরও আপনার ত্বকে চুলকানি থাকে, তবে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন যা সাহায্য করতে পারে:
- আঁচড়াবেন না: চুলকানির জায়গায় যত বেশি আঁচড়াবেন, তত বেশি চুলকাবে।
- নখ ছোট রাখুন: যাতে চুলকানোর কারণে ত্বক ভেঙে না যায়।
- ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন: এই ধরনের পোশাক ত্বককে শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত গরম থেকে চুলকানি আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। উলের মতো কাপড় পরা এড়িয়ে চলুন, কারণ তা ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
- মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম বা নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।
বাথরুমে
- ঠান্ডা স্নান বা গোসল: ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান করা চুলকানি থেকে কিছুটা উপশম দিতে পারে। তবে বেশি সময় ধরে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
- সাবান ও শাওয়ার জেল পরিহার করুন: এসব পণ্য ত্বক শুষ্ক করে দেয়, যা চুলকানি আরও খারাপ করতে পারে। সাবান-মুক্ত ওয়াশ ব্যবহার করুন।
- গোসলের পর ত্বক মুছুন: পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ত্বক আলতোভাবে মুছে নিন। ঘষবেন না, যাতে ত্বক আঘাত না পায়।
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন: দিনে কমপক্ষে ২ বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যদি ত্বক শুষ্ক হয়, তবে তা আরও ঘনঘন ব্যবহার করুন। মেন্থলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার চুলকানি প্রশমিত করতে সহায়ক হতে পারে।
ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে আপনি ত্বকের চুলকানি কমানোর জন্য বিশেষ পণ্য সম্পর্কে জানতে পারেন।
চুলকানি প্রতিরোধের উপায়
- যতটা সম্ভব পানি পান করুন: ত্বককে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি পান করুন। শুষ্ক আবহাওয়ায় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে ত্বক আরও ভালো থাকবে।
- গোসল দ্রুত করুন: গোসল দ্রুত করুন এবং নিশ্চিত করুন যে পানি খুব গরম নয়।
- মাইল্ড সাবান ব্যবহার করুন: সাবান ছাড়া হালকা কোনো ক্লিনজার ব্যবহার করুন। গোসলের পর ত্বক ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার লাগান।
চুলকানির জটিলতা
চুলকানির জায়গায় বারবার আঁচড়ানো খুবই কষ্টকর। মাঝে মাঝে একবার চুলকানি ধরলে সেটা আরও বেড়ে যায়। এতে আপনি চুলকানির জড়িয়ে পড়তে পারেন, যা বেদনাদায়ক হতে পারে। ত্বক ভেঙে গেলে সংক্রমণও হতে পারে।
এই আঁচড়ের ফলে ত্বকে বাদামী বা ফ্যাকাশে দাগ বা পিণ্ড দেখা দিতে পারে এবং ক্ষত বা দাগও হতে পারে।