Last updated on October 25th, 2022 at 02:15 pm

কিডনি ভালো রাখার উপায় আসলে তেমন কঠিন কিছু নয়। এর জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে আমাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। সচেতনতা তৈরি হলেই কেবল মানুষের পক্ষে নিয়ম মেনে চলা সহজ ও সম্ভব হবে।

আপনি জেনে অবাক হবেন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশেও ৩৩% প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির ভিতর রয়েছে। মানে হলো প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন।

এজন্য, কিডনি রোগ জন স্বাস্থ্যের উপর বেশ চিন্তার একটি কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, এটি নিরব ঘাতকের মত। কেননা কিডনি রোগে আক্রান্তের প্রথম অবস্থায় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। রোগের লক্ষণ শেষ পর্যায়ে প্রকাশ পায় যখন করার তেমন কিছু থাকে না। ক্ষতি যা হওয়ার ইতোমধ্যে তা হয়ে যায়। যা পুষিয়ে নেয়া দুষ্কর হয়ে যায়। তখন চিকিৎসা হিসাবে হয় ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মত জটিল বিষয় সামনে এসে দাড়ায়।

তবে, অ্যামেরিকান জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে এ রোগে আক্রান্ত মাত্র ১০% লোক অগ্রিম জানতে পারে তাদের আক্রান্তের বিষয়।

এজন্য কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তার জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হলো রোগটি যেন প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই সনাক্ত করা হয়।

তাই, নিজেকে সুস্থ মনে করা প্রতিটি মানুষ নিজ উদ্যোগে তার কিডনির পরীক্ষা নিয়মিত সময়ে সময়ে করিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে যারা ঝুঁকির ভিতর আছে।

আর একটি বিষয় জানতে হবে, কাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী।

যাহোক, আলোচ্য পোষ্টে আমাদের আলোচনার মুল বিষয়বস্তু হলো – কিডনি ভালো রাখার উপায়। এর সাথে থাকবে কিছু আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ।

তাহলে, মনযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

কিডনি ভালো রাখার উপায়

এ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে প্রথমে চলুন কিডনির আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় জেনে নেই।

কিডনির উপর জ্ঞতব্য কিছু বিষয়

কিডনি মুলত কি কাজ করে?

  • দেহের ফ্লুইড বা পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
  • রক্ত থেকে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ আলাদা করে রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখে।
  • এক প্রকার হরমোন নিঃসরণ করে যা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ডি কে সক্রিয় করে যা দেহের অস্থি-মজ্জা গঠনে কাজ করে।
  • ইরাইথ্রোপয়েটিন নামের অপর এক হরমোন নিঃসরণ করে যা রক্তের লোহিত কনিকা উৎপাদনে ভূমিকা পালক করে।
  • রক্তে খনিজ লবন যেমন সোডিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখে।

কিডনি রোগের কারণে কি কি সমস্য হতে পারে?

  • হৃদরোগ
  • হার্ট এটাক ও স্ট্রোক
  • উচ্চ রক্ত চাপ
  • অস্থি দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন হওয়া
  • কিডনি ফেইলিউর
  • রক্ত শূণ্যতা বা দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যাওয়া।

কিডনি রোগ নিয়ে আপনার ঝুঁকি কতটুকু?

আপনি কি ইতোমধ্যে নিম্নলিখিত রোগে আক্রান্ত? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আপনি এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির ভিতর রয়েছেন।  যে রোগগুলো কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তা হলো-

  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ রক্ত চাপ
  • হৃদ রোগ
  • কিডনি ফেইলিউর, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্ত চাপের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষ
  • ওবেসিটি বা দৈহিক স্থুলতা

এছাড়া, নিচে উল্লেখিত কোন বিষয়ের সাথে কি আপনার মিল আছে? যদি মিলে যায়, তাহলেও ধরে নেওয়া হবে যে, আপনি ঝুঁকিতে আছেন।

  • আপনার বয়স কি ষাট বা তার চেয়ে বেশী
  • আপনি কি দির্ঘ সময় ধরে যারা NASIDs গ্রুপের ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করে আসছেন
  • আপনার মুত্র নালীতে কি ক্রনিক ধরণের কোন সংক্রমণ আছে
  • আপনার কিডনিতে পাথর হয়েছিল; ইত্যাদি।

কি কি লক্ষণ হলে কিডনি রোগ হতে পারে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বাহ্যিকভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এজন্যই, লক্ষণ অপ্রকাশিত অবস্থায় রোগটিকে সনাক্ত করা খুব কঠিন কাজ।

তবে, যারা রোগটি সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন তাদের ব্যাপার আলাদা। কারণ, তারা লক্ষণ প্রকাশের অপেক্ষায় থাকেনা। তারা নিয়মিত ভাবে নিজ দায়িত্বে চেক আপ করিয়ে দেখে নেন যে তাদের কিডনি ছাড়াও দেহের অন্য কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা।

কাজেই, কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসাবে আপনার জন্যও উচিত একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তির মত নিয়মিত নিজেকে চেক আপ  করিয়ে নেওয়া। বিশেষ করে আপনি যদি উপরে বর্ণিত ঝুঁকিসমূহের ভিতর থেকে থাকেন, তাহলে তো কোন কথাই নেই। তখন, কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও আপনার কিডনি ঠিক আছে কিনা তা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন।

রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মানেই হলো – তা আর প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। রোগটি ইতোমধ্যে কিডনির বেশ ক্ষতিসাধন করে ফেলেছে। তখন নিচের লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখা দিতে পারে-

  • দুর্বলতা ও অবসাদগ্রস্থতা
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা লাগা
  • ফেনাযুক্ত মুত্র
  • রক্ত মিশ্রিত মুত্র
  • রাতে মুত্র ত্যাগ বেড়ে যাওয়া
  • চোখের নিচে ফুলে যাওয়া
  • মুখ মন্ডল, হাত, পেটের তলদেশ ও পা ফুলে যাওয়া

কিডনি রোগ কিভাবে সনাক্ত করা হয়?

আপনি যদি কিডনি রোগের ঝুঁকির ভিতর থাকেন অথবা উপরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এজন্য, নিচের পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন-

  • রক্ত চাপ মেপে নিন: রক্ত চাপ বেড়ে গেলে কিডনির ভিতর ছোট ছোট রক্ত নালী যাকে গ্লোমেরুলি বলা হয় তাতে ক্ষতি সাধন হয়। ডায়াবেটিসের পর উচ্চ রক্ত চাপ কিডনি ফেইলিউর এর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
  • মুত্রে প্রোটিন আছে কিনা দেখার জন্য মুত্র পরীক্ষা করা: কিডনি রোগে আক্রান্তের প্রাথমিক পর্যায়ে মুত্রে এলবুমিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এলবুমিন হচ্ছে এক প্রকার ক্ষুদ্রতর প্রোটিন।
  • রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষা দু’ভাবে করা যায়। একটি হচ্ছে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট নির্নয় করা। এর মাধ্যমে বুঝা যাবে আপনার কিডনি সঠিকভাবে রক্ত ফিল্টার করতে পারছে কিনা। দ্বিতীয় পরীক্ষা হলো রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর পরিমান বের করা। যদি তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হয় তাহলে বুঝা যাবে, কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

কিডনি রোগ নির্নয়ের উপর অপর এক পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এখানে সংক্ষেপে ধারণা দেওয়া হলো।

কিডনি ভাল রাখার উপায়: সার কথা

যদি আপনি ইতোমধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে নিচের কাজগুলো করুন-

  • উচ্চ রক্ত চাপ থাকলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনুন
  • রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখুন
  • লবন খাওয়া কমিয়ে দিন
  • NASIDs গ্রুপের ঔষধ সেবন পরিহার করুন
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহন স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখুন

আপনি যদি কিডনি  রোগে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন তাহলে কিডনি ভাল রাখার জন্য বা কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য নিচের কাজগুলো করুন-

  • নিয়মিত শরীর চর্চায় অংশ নিন
  • দৈহিক ওজন স্বাভাবিক রাখুন
  • সুষম খাবার গ্রহন করুন
  • ধুমপান পরিহার করুন
  • রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল স্বাভাবিক রাখুন
  • বছরে কমপক্ষে দু’বার ফুল বডি চেক আপ করুন

কিডনি ভাল রাখার উপায় নিয়ে বর্ণিত তথ্যের আলোকে জীবন পরিচালনা করুন। আর কোন প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে লিখুন। ভাল ও সুস্থ থাকুন।