Last updated on May 9th, 2023 at 05:44 pm
আপনি কি ওবেসিটি (obesity) নিয়ে চিন্তিত? ওবেসিটি – বাংলায় যাকে স্থুলতা বলে। মাত্রাতিরিক্ত ওজনের স্থুল দেহ বিশিষ্ট কোন ব্যক্তির অবস্থাই হল ওবেসিটি। অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনের ফলে আমাদের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পায়। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে পরে অনেক জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
ওবিসিটি কি, আমাদের দৈহিক ওজন কেন বাড়ে, ওজন বাড়লে কি হয়, ওবেসিটির স্বাস্থ্য ঝুঁকি কি কি, এর চিকিৎসা, প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য নিয়েই এই আর্টিকেলে। চলুন শুরু করি।
এক নজরে ওবেসিটির উপর কিছু তথ্য:
- ওবেসিটি অর্থ হল শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাটের উপস্থিতি। ৩৫ এবং তদুর্ধ মানুষের মধ্যে যাদের BMI 30 এর চেয়ে বেশী তারা এই অবস্থার স্বীকার।
- ইহা হল দীর্ঘ মেয়াদি বা ক্রোনিক প্রকৃতির একটি রোগ যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হার্ট অ্যাটাক সহ অন্যান্য হৃদরোগ, পিত্তে পাথর এবং আরোও অন্যান্য জটিল রোগের দরজা খুলে দেয়।
- ইহা বেশ কয়েক ধরণের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ওবেসিটির চিকিৎসা ব্যবস্থা জটিল এবং চিকিৎসার পর পুনরায় আক্রান্ত হওয়া হার খুব বেশী। অধিকাংশ লোকের ওজন কমানোর ৫ বছরের মাথায় পুনরায় ওজন বৃদ্ধি পায়।
- যদিও কিছু ঔষধ এবং খাদ্য এই অবস্থা দুর করতে সাহায্য করে, তথাপি এর চিকিৎসা স্বল্প মেয়াদি হলে চলেনা। যেখানে পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস গ্রহন, বর্ধিত হারে শারীরিক কর্মকান্ড এবং শরীর চর্চায় সারা জীবনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়।
- এর চিকিৎসার লক্ষ্য হল দৈহিক ওজন স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পর্যায়ে নামিয়ে আনার পর তা ধরে রাখা।
- এমনকি ৫-১০% এর মত পরিমিত মাত্রায় ওজন কমিয়ে তা দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে পারলে আপনার স্বাস্থ্য সন্তোষজন পর্যায়ে উন্নতি হতে পারে। যেমন উচ্চ রক্ত চাপ কমে যাবে, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে।
- ওজন কমানোর পর দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখার চেষ্টা সফল হবে যদি আপনি বিভিন্ন পেশাজীবির সমন্বয়ে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, সাইকোলজিস্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত কোন টিমের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন।
Table of Contents
ওবেসিটি কি, কাকে বলে?
ওবেসিটি এক প্রকার মেডিক্যাল কন্ডিশন যেখানে অতিরিক্ত ফ্যাট শরীরে এমন পর্যায়ে জমা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য বিরুপ প্রভাব তৈরি করে। ওবেসিটি পরিমাপ করা হয় body mass index (BMI) এর সাহায্যে।
ওবেসিটি রোগটি খুবই প্রচলিত একটি রোগ। বেশীরভাগ মানুষই এই অবস্থার স্বীকার। এমনকি, খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও দুই-তৃতিয়াংশের বেশী প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ওজন নিয়ে জীবন-যাপন করছে। শিশুদের মাঝেও এর প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়ে চলছে।
সারা বিশ্বেই ওবেসিটির ব্যাপকতা দ্রুততার সাথে বাড়ছে।
Body mass index কি?
BMI পরিমাপ পদ্ধতি হল- আপনার দৈহিক ওজনকে ভাগ করতে হবে আপনার উচ্চতার বর্গ দিয়ে, যেখানে উচ্চতার একক ধরা হয় মিটারে।
ধরুন আপনার ওজন 8০ কেজি এবং উচ্চতা 6 ফিট। ৬ ফিটকে মিটারে পরিবর্তন করলে হয় 1.83 মিটার। এখন ১.৮৩ মিটারের এর বর্গ মান হল 3.35। তাহলে আপনার BMI হবে (৮০/৩.৩৫) কেজি/ মিটার ২ , অর্থাৎ 23.89 কেজি/ মিটার ২ ।
BMI এর স্বাভাবিক মান ২৫-৩০ এর ভিতরে থাকে। সাধারনত: ঐ সব মানুষদের মাত্রাতিরিক্ত ওজনধারি, স্থুলাকায় বা মেদবহুল বলা যায় যখন তাদের BMI মান ৩০ এর উপরে উঠে যায়।
জেনে নিন আপনার BMI কত?
প্রথমে নিচের টেবিল থেকে ইমপেরিয়াল ও মেট্রিক পদ্ধতির মধ্যে আপনার পছন্দের পরিমাপ প্রক্রিয়া নির্বাচন করুন। তারপর, আপনার উচ্চতা এবং দৈহিক ওজনের সংখ্যাটি বসিয়ে দিয়ে ক্যালকুলেট বাটনে ক্লিক করুন। তাতেই জেনে যাবেন আপনার BMI কত। এরপর উপরে উল্লেখিত বিএমআই মান থেকে আপনার দৈহিক ওজন স্বাভাবিকের মধ্যে রয়েছে কিনা বুঝে নিন।
BMI
ওজন বাড়লে কি হয়?
ওবেসিটি নি:সন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একটি বিষয়। ইহা বেশ কয়েকটি মারাত্মক রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। প্রত্যক্ষভাবে ওবেসিটি নিয়ে অ্যামেরিকায় প্রায় ১১২,০০০ জন লোক প্রতি বছর মারা যায়। তাদের অধিকাংশেরই BMI ভেল্যু ৩০ এর উপরে। যাদের BMI ভেল্যু ৪০ এর উপরে তাদে আয়ু কমে যায়।
ওবেসিটির কারণে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হয় তারা-
- ইনসুলিন রেজিস্টেন্স যেখানে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়:ইনসুলিন শরীরের মাংসপেশী, চর্বিসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কোষসমুহে গ্লুকোজ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। রক্তস্রোত থেকে গ্লুকোজ কোষের ভিতর পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইনসুলিন রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। ইনসুলিন রেজিস্টেন্স (IR) হল শরীর-স্বাস্থ্যের এমন এক অবস্থা যখন ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে ইনসুলিনের সহায়তায় রক্ত থেকে যে পরিমান গ্লুকোজ কোষে যাওয়া উচিত সে পরিমান গ্লুকোজ কোষে পাঠাতে পারেনা।চর্বির কোষ মাংসপেশীর কোষের তুলনায় ইনসুলিনের প্রতি অধিক মাত্রা রেজিস্টেন্স হয়। এজন্য ইনসুলিন রেজিস্টেন্স ওবেসিটির অন্যতম একটি প্রধান কারণ। রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষে যেতে না পারা ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। এই বর্ধিত গ্লুকোজের চাপ মোকাবেলা করতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান স্বাভাবিক রাখার জন্য পেনক্রিয়াস তখন অধিক পরিমানে ইনসুলিন নি:সৃত করে রক্তে পাঠায়। যতক্ষণ পর্যন্ত পেনক্রিয়াস এই অতিরিক্ত ইনসুলিন সরবরাহ করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। যখন থেকে পেনক্রিয়াস বাড়তি ইনসুলিন সরবরাহে ব্যর্থ হবে তখন রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সুত্রপাত ঘটায়। তাই, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স অনেকটা প্রি-ডায়াবেটিসের মতই।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস: টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি নির্ভর করে ওবেসিটির পরিমান এবং মেয়াদের উপর। এই ডায়াবেটিস সেন্ট্রাল ওবেসিটির সাথে সম্পৃক্ত। সেন্ট্রাল ওবেসিটি হল কোমরের চতুর্দিকে যাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় এবডোমিনাল অঞ্চল বলে সেখানে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া।
- উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপার টেনশন: মাত্রাধিক ওজনধারি মানুষের জন্য উচ্চ রক্তচাপ খুবই কমন একটি বিষয়। যাদের শরীরের ওজন বেশী তাদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যেয়। নরওয়ের এক গবেষণায় দেখা যায় ওজন আধিক্যের কারণে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেশী হয়।
- হাই কোলেস্টেরল: রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায়।
- ব্রেইন স্ট্রোক
- হার্ট অ্যাটাক:একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব মহিলাদের BMI ভেল্যু ২৯ এর বেশী, তাদের করোনারি আর্টারি রোগের ঝুঁকি তিন থেকে চার গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফিনল্যান্ডের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১ কেজি (২.২ পাউন্ড) বর্ধিত দৈহিক ওজন এই রোগে মৃ্ত্যু ঝুঁকি ১% করে বাড়িয়ে দেয়। যেসব রোগীদের ইতিমধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, ওবেসিটি তাদের দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকে আক্রমন করার রাস্তা খুলে দেয়।
- Congestive heat failure
- কেনসার:ওবেসিটির কারণে পুরুষ এবং মহিলাদের কোলন কেনসার হতে পারে। পুরুষের বেলায় রেক্টাম এবং প্রোস্টেট অঙ্গে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে পিত্ত থলি এবং জরায়ুতে কেনসার হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ওবেসিটির কারণে মহিলাদের ব্রেস্ট কেনসারও হতে পারে। ফ্যাট টিস্যু ইস্ট্রোজেন উৎপাদনের জন্য গুরত্বপূর্ন এবং দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মাত্রার ইস্ট্রোজেনের উপস্থিতি ব্রেস্ট কেনসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- পিত্ত থলিতে পাথর
- Gout এবং gouty arthritis
- Osteoarthritis:হাটু, কোমর এবং পিঠের অঞ্চেলে অস্থি সন্ধিতে।
- Sleep apnea
শরীরের ওজন কেন বাড়ে?
ক্যালরি অর্জন এবং ক্যালরি খরচ এই দু্’টির মধ্যে ভারসাম্যতা নির্নয় করে দেয় মানুষটির ওজন কেমন হবে। যদি কোন ব্যক্তি ক্যালরি খরচের তুলনা অধিক ক্যালরি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করে তাহলে তার ওজন বৃদ্ধি পাবে। তখন আপনার শরীর এই অতিরিক্ত এনার্জি চর্বি হিসাবে সঞ্চয় করে রাখবে। অপরদিকে, আপনি যে পরিমান ক্যালরি বার্ন করেন তার চেয়ে যদি কম পরিমানে গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার ওজন কমা শুরু করবে।
কাজেই, ওবেসিটির সবচেয়ে প্রধান কারণ হল শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে অধিক পরিমানে খাদ্য গ্রহন করা। এর বাইরে, জেনেটিক, বিপাকীয় ইস্যু, পরিবেশ, আচরনগত বিষয়, সংস্কৃতি ইত্যাদি ওবেসিটির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা:কোন কিছুর উপর আসীন বা উপবিস্ট ব্যক্তি শারীরিকভাবে সচল ব্যক্তির তুলনায় কম ক্যালরি খরচ করবে, এটিই স্বাভাবিক।
- অতিরিক্ত খাদ্য খাওয়া:অতি ভোজন ওজন বৃদ্ধির কারণ বিশেষ করে খাবারটি যদি চর্বি প্রধান হয়। যেসব খাদ্যে চর্বি এবং সুগার বেশী থাকে যেমন- ফাস্ট ফুড, ফ্রাইড ফুড, মিষ্টি জাতীয় পণ্য; সেখানে এনার্জির পরিমান খুব বেশি থাকে। খুব কম পরিমান এসব খাদ্যে এনার্জি ঘনত্ব তুলনামুলক অনেক বেশী হয়। গবেষকগন দেখেতে পেয়েছেন, অধিক চর্বি ও সুগার বিশিষ্ট খাদ্য ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
- জেনেটিক:আপনার পিতা-মাতার কোন একজনের যদি ওবেসিটি থেকে থাকে তাহলে আপনার জেনেটিক ভাবে স্থুলতা তৈরি হওয়ার আশংকা থাকে। জিনগত বিষয় দেহে চর্বি নিয়ন্ত্রণে যে হরমোন কাজ করে তার উপর প্রভাব থাকে। যেমন, শারীরিক স্থুলতার একটি কারণ হল leptin এর অভাব। leptin একটি হরমোন যা চর্বি কোষ থেকে তৈরি হয়। যখন শারীরে চর্বি সঞ্চয়ের পরিমান খুব বেড়ে তখন leptin ব্রেইনে সিগনাল প্রদান করে কম খাওয়ার জন্য। এভাবে leptin দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। যদি কোন কারণে আপনার শরীর পর্যাপ্ত leptin তৈরি করতে না পারে তখন কম খাওয়ার জন্য leptin ব্রেইনকে সিগনাল দিতে পারেনা। এভাবে তারপর leptin কর্তৃক ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ওবেসিটি জন্ম নেয়। leptin প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ওবেসিটির চিকিৎসা এখনোও গবেষণাধীন রয়েছে।
- যে সব খাদ্যে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট বেশী:ওজন তৈরিতে কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা পরিস্কার নয়। কার্বোহাইড্রেট রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায় যা পরবর্তিতে পেনক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন প্রদানের ব্যবস্থা করায়। তখন ইনসুলিন ফ্যাট টিস্যুর বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। কোন কোন বৈজ্ঞানিক মনে করে, সাধারণ বা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট যেমন সুগার, ফ্রুকটোজ, কোমল পানিয়, বিয়ার, মদ ইত্যাদি দৈহিক ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। কারণ তারা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন পাস্তা, বাদামি চাউল, খাদ্য শস্য, সবজি, কাঁচা ফল ইত্যাদির তুলনায় খুব দ্রুত অন্ত্র থেকে শোষণ হয়ে রক্ত স্রোতে মিশে যেতে পারে। তখন রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ায় পেনক্রিয়াস থেকে অধিক ইনসুলিন সরবরাহের কারণ হয়। এই অধিক ইনসুলিন বেশী পরিমান সুগারের উপর কাজ করে এবং এভাবেই ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- খাদ্য গ্রহণের হার:খাদ্য গ্রহনের হার এবং দৈহিক ওজন একটি ওপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। অনেক মানুষ এমন আছে যাদের ওজন বেশী হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক ওজনসম্পন্ন মানুষের চেয়ে কম সংখ্যক বার খাদ্য খায়। বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছে যারা কম পরিমানে চার-পাঁচবার খাদ্য খায় তাদের কোলেস্টেরল লেভেল কম হয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রাও কম বা স্বাভাবিক থাকে। এর একটি ব্যাখ্যা এও হতে পারে, কম পরিমানে বার বার খাদ্য খেলে ইনসুলিন লেভেল স্থিতিশীল থাকে, উঠানামা কম যেখানে বেশী পরিমানে খাদ্য একবারে খেলে ইনসুলিন লেভেল লক্ষণীয় মাত্রায় উঠানামা করে, স্থিতিশীল থাকেনা।
- কিছু ঔষধগত বিষয়:এন্টি ডিপ্রেসেন্ট জাতীয় কিছু ঔষধ যা বিষন্নতা দুর করতে ব্যবহার করা হয়, এন্টি কনভালসেন্ট যা খিচুনির চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়, ডায়াবেটিসের কিছু ঔষধ, সুনির্দিষ্ট কিছু ঔষধ যা ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ এবং অধিকাংশ কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজন বৃদ্ধিতে কাজ করে। উচ্চরক্তচাপ নিরাময়ের কিছু ঔষধ এবং এন্টিহিস্টামিনেরও ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা থাকে বলে জানা যায়। এরকম এক এক ঔষধে ওজন বৃদ্ধির কারণ এক এক রকম। আপনার এ জাতীয় সমস্যা থাকলে ঔষধগুলি পরিত্যাগের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টর:কোন কোন মানুষের বেলায় আবেগ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে প্রভাব বিস্তার করে। অনেক লোক এমন আছে যারা একঘেয়েমি, বিষন্নতা, ধকল বা ক্রোধ বশত অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে। যদিও অধিকাংশ মাত্রাধিক ওজন সম্পন্ন মানুষের এরকম মনস্তাত্ত্বিক সমস্য থাকেনা।
- কিছু রোগের কারণে:হাইপোথাইরয়ডিজম, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত কোন ব্যাক্তির ওবেসিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
- সামাজিক কিছু বিষয়:সামাজিক কোন বিষয়ের সাথে ওবেসিটির যোগসুত্র রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ক্রয়ের অর্থ সংকট, হাটাচলা বা শরীর চর্চার জন্য উপযুক্ত নিরাপদ জায়গার অভাব আমাদের ওবেসিটি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
শরীরের কোথায় চর্বি জমা বেশী ভয়ের কারণ?
আপনার শরীর কতটুকু চর্বি জমা হয়েছে, এটি যেমন চিন্তার কারণ; ঠিক একই সাথে শরীরের কোথায় জমা হয়েছে তাও একটি চিন্তার কারণ। শরীরের বিভিন্ন জাগায় চর্বির বিস্তৃতি পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এক রকম হয়না।
সাধারনত: মহিলাদের ক্ষেত্রে নিতম্বে (hips)এবং কোমরের পিছনের অংশে (buttocks) চর্বি জমা হওয়ার প্রবনতা লক্ষ করা যায় যা অনেকটা নাশপতির মত আকার (pear shape) প্রদান করে। অপরদিকে পুরুষের ক্ষেত্রে পেটের চারপাশে চর্বি জমা হয় যা আপেলের মত দেখতে হয়। বিষয়টি কোন স্বতসিদ্ধ নিয়ম নয়।কোন কোন পুরুষের বেলায় pear shape হতে পারে আবার কোন কোন মহিলার বেলায় apple shape হতে পারে, বিশেষ করে হৃতুচক্র বন্ধ হওয়ার পর।
আপেল আকৃতির মানুষের যাদের চর্বি পেটের চতুর্দিকে জমা হয় তাদের ওবেসিটির কারণে অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। তারা এই ধরণের চর্বি বিন্যাসের জন্য অধিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। যেখানে যেকোন প্রকারের ওবেসিটি মানেই হল স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তবে, আপেল আকৃতির তুলনায় নাশপতি আকারের হওয়া অধিকতর ভাল।
ফলের প্রকার বাছাইয়ের জন্য চিকিৎসাবিদগন একটি সহজ পদ্ধতি তৈরি করেছে যার মাধ্যমে নির্নয় করা যায় জমা হওয়া চর্বি আপেলের মত আর কার নাশপতির মত। এই পরিমাপ পদ্ধতিকে waist-to-hip অনুপাত বলা হয়।
কোন ব্যক্তির waist-to-hip অনুপাত বের করার জন্য-
- কোমরের সবচেয়ে সরু জায়গার এবং নিতম্ব বা হিপ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রশস্ত এলাকার মাপ নিতে হয়।
- তারপর কোমরে মাপের মানকে হিপের মান দিয়ে ভাগ করতে হয়। যেমন কোন মহিলার কোমর ৩৫ ইঞ্চ এবং হিপ ৪৬ ইঞ্চি, তাহলে তার waist-to-hip এর অনুপাত হবে ৩৫/৪৬ বা ০.৭৬ ।
মহিলার ক্ষেত্রে waist-to-hip অনুপাত যদি ০.৮ এর চেয়ে বেশী হয় এবং পুরুষের বেলায় waist-to-hip অনুপাত যদি 1.0 এর বেশী হয় তাহলে হবে আপেল। আর উল্লেখিত মাত্রার কম হলে হবে নাশপতি।
এবডোমিনাল ফ্যাট বা পেটের চতুর্দিকের চর্বি নির্নয়ের আর একটি খসরা পদ্ধতি হল কোমরের চারিপার্শ্বের মাপ নেওয়। পুরুষের ক্ষেত্রে এর মান যদি ৪০ ইঞ্চির বেশী এবং মহিলার ক্ষেত্রে যদি ৩৫ ইঞ্চির বেশী হয় তাহলেও ধরে নেওয়া হয় যে তাদের ওবেসিটির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে উচ্চ ঝুঁকি বিদ্যমান।
ওবেসিটি কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
একজন ব্যক্তির উচ্চতা অনুযায়ি দৈহিক ওজনের একটি খসরা গননা হল BMI যার মাধ্যমে শরীরের চর্বির উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে শরীরে চর্বির পরিমান সঠিকভাবে নির্ণয় করা ততটা সহজ নয়। এই পরিমাপ পদ্ধতি সতর্কতার সাথে মনিটর না করলে অনেক সময় ফলাফল সঠিক আসেনা। শরীরের চর্বি পরিমাপের জন্য BMI এর চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিগুলি হল-
- শরীরের চামড়া ভাজ করে এর পুরুত্বে পরীক্ষ বা skin fold thickness test;
- কোমর থেকে মাজার তুলনা বা waist-to-hip comparison
- স্ক্রিণিং টেস্ট যেমন ultrasounds, CT scans, MRI scans
চিকিৎসক আপনাকে ওবেসিটির সাথে সম্পর্কযুক্ত আরোও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরীক্ষা করাতে পারে, যেমন-
- রক্তে কোলেস্টেরল এবং গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপের পরীক্ষা
- যকৃতের কার্যকারি পরীক্ষা বা liver function test
- ডায়াবেটিস স্ক্রিণিং
- থাইরয়েড টেষ্ট
- হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা যেমন- electrocardiogram (ECG বা EKG)
কোমরের চারদিকের চর্বির পরিমাপ করলেও ওবেসিটির কারণে অন্যান্য রোগের সম্ভাভ্য ঝুঁকি আন্দাজ করা যায়।
ওজন কমানোর উপায় কি?
ক্যালরি হিসাব করে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস তৈরি করতে পারলে আপনি ওবেসিটির চিকিৎসায় সফল হতে পারবেন। যদিও প্রথম প্রথম আপনি খুব দ্রুত ওজন হারাতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যদি আপনি টেকসইভাবে ওজন কমাতে পারেন, তাহলে ইহা আপনার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। আর একটি গুরত্বপূর্ণ ইস্যু হল ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক ওজনে নামিয়ে আনার পর স্থায়িভাবে আপনাকে তা ধরে রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অঙ্গিকার। তা না হলে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ওজন আবার সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে গিয়ে বাস্তব সম্মত নয় এমন খাদ্য নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকুন যাতে তা টেকসই ও দীর্ঘ মেয়াদি হয়।
ওবেসিটি চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল আপনার দৈহিক ওজন স্বাস্থ্যসম্মত একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং তা বহাল রাখা। ইহা আপনার স্বাস্থ্যগত সার্বিক বিষয়ের উন্নতি সাধন করবে এবং ওবেসিটির কারণে অন্যান্য যেসব রোগের ঝুঁকি তৈরি হয় তা কমিয়ে দিবে। এজন্য আপনাকে স্বাস্থ্য পেশাজীবির এক টিম এর পরামর্শ মেনে চলতে হবে। যে টিমে থাকবে পুষ্টিবিদ, কাউন্সেলর ও একজন ওবেসিটি বিশেষজ্ঞ যারা আপনাকে খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ-স্টাইল পরিবর্তন নিয়ে কাউন্সেলিং বা বুঝাতে সাহয্য করতে পারে।
চিকিৎসার প্রাথমিক লক্ষ্য হতে হবে পরিমিত মাত্রায় দৈহিক ওজন কমিয়ে আনা যা আপনার মোট ওজনের ৫-১০% এর মধ্যে হয়। যেমন, আপনার দৈহিক ওজন যদি ৯১ কেজি হয়ে থাকে এবং BMI মানদন্ড অনুযায়ি যদি আপনার ওবেসিটি ধরা পরে, তাহলে আপনাকে ৪.৫ থেকে ৯ কেজি ওজন কমাতে হবে। যাতে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি শুরু হতে পারে। তবে, মাত্রাতিরিক্ত ওজনধারি ব্যক্তি হিসাবে আপনি যত ওজন কমাতে সক্ষম হবে ততই আপনার জন্য ভাল হবে।
সমস্ত ওজন কমানোর প্রোগ্রামেই আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। পাশাপশি শারীরিক কর্মকান্ডও বাড়াতে হবে। চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করবে আপনার ওবেসিটির তীব্রতার উপর, সার্বিকভাবে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন তার উপর এবং ওজন কমানোর কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের বিষয়ে আপনার আন্তরিকতা।
একটি সর্বাঙ্গিন প্রসস্ত পরিধির ও কার্যকর ওজন কমানো কর্মসূচি নির্বাচন করে তা অন্তত: ছয় মাসের জন্য মেনে চলুন। তারপর যে সফলতা আসবে তা কমপক্ষে এক বছর ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে ভাল বলতে কোন খাবার নেই। এমন কোন খাদ্য পছন্দ করুন যার পুষ্টিমান ভাল থাকে এবং যা আপনার ক্ষেত্রে কাজ করছে বলে আপনার মনে হয়।
খাদ্য পরিবর্তনে ওবেসিটির চিকিৎসা নিম্নরুপ-
- ক্যালরি কেটে ফেলা:ওজন কমানোর মুল বিষয় হল আপনার খাদ্যের সাথে ক্যালরি গ্রহনের পরিমান নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রথম পদক্ষেপ হল আপনার বিদ্যমান খাদ্য ও পানিয়র মাধ্যমে বর্তমানে আপনি কি পরিমান ক্যালরি গ্রহণ করছেন তা দেখে নেওয়া এবং এই খাদ্যের কোন কোন অংশ আপনি বাদ দিতে পারেন তা পর্যালোচনা করা। আপনি এবং আপনার চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিন যে দেহ সুস্থ রেখে ওজন কমাতে গিয়ে আপনার জন্য দৈনিক কি পরিমান ক্যালরির প্রয়োজন হতে পারে। যদিও সাধারণভাবে দেখা যায় একজন মহিলার দৈনিক ১২০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি এবং পুরুষের জন্য ১৫০০-১৮০০ ক্যালরির প্রয়োজন হয়।
- কম ক্যালরির খাদ্য পরিমানে বেশী:কিছু খাদ্য এমন আছে যা পরিমানে কম কিন্তু ক্যালরির পরিমান বেশী থাকে। এ ধরণের খাদ্য কম পরিমানে খেলেই আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা মিটে যাবে। কিন্তু খাদ্যে ভলিউম কম হওয়ার কারণে আপনার ক্ষুধার ভাব বাকি থাকে। এখন অবশিষ্ট ক্ষুধা মিটাতে যদি পুনরায় খাদ্য গ্রহন করেন তাহলে আপনার দৈনিক ক্যালরি গ্রহনের মাত্রা নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে বেড়ে যাবে। এসব খাদ্যের উদাহারণ হল- প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি এবং অন্যান্য চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য।এর জন্য আপনাকে ঐসব খাবার বাছাই করতে হবে পরিমানে বেশী হলেও ক্যালরির পরিমান কম। যাতে আপনার দৈনিক নির্ধারিত ক্যালরি চাহিদা পূরণ করতে বেশী পরিমানে খাদ্য খেতে হয়। ফলে আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথে ক্ষুধার ভাব মিটে গেল। এ ধরণের খাদ্যের উদাহারণ- ফলমুল ও শাক সবজি।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য বেছে নেওয়া:খাদ্য স্বাস্থ্যসম্মত বানানোর জন্য উদ্ভিদজাত খাবার বেশী করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- ফলমুল, শাক-সবজি, whole grain কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। এর সাথে প্রোটিনের lean উৎস যেমন beans, soy, lentils এবং lean meats অন্তর্ভুক্ত করুন। যদি আপনি মাছ পছন্দ করে থাকেন তাহলে খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ রাখুন। লবন এবং চিনি যথাসম্ভব সীমিত করুন। কম পরিমানে ঐ সব চর্বি খান যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয়, যেমন canola, olive, এবং nut oils.
- সুনির্দিষ্ট কিছু খাদ্য পরিহার করুন:যে খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় শর্করা থাকে বা পুরোটাই চর্বি দিয়ে তৈরি তা পরিহারের চেষ্টা করুন। আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন কোন ধরণের খাদ্য পরিকল্পনা আপনার জন্য অধিক ফলদায়ক হবে। সুগার সমৃদ্ধ মিষ্টি কোমল পানিয় জাতীয় খাদ্যে ক্যালরির পরিমান নিশ্চিতভাবে বেশী থাকবে। কাজেই এসব খাদ্যও পরিহার করুন। এতে করে আপনার দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের হিসাব ঠিক থাকবে।সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা কিভাবে আপনার ওজন কমাতে সহয়তা করে তা আরোও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন।
- শরীচর্চা এবং শারীরিক পরিশ্রম:ওবেসিটি প্রতিরোধের জন্যও এই পদ্ধিতি গ্রহণ করা হয়। শরীচর্চা এবং শারীরিক পরিশ্রম আপনার ওবেসিটি চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কিভাবে কাজ করে তা দেখার জন্য লিংকে ভিজিট করুন।
- আচরণগত পরিবর্তন বা behavior change:আচরণগত পরিবর্তন আপনার লাইফ স্টাল পরিবর্তন আনতে পারে যা আপনার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে। এর জন্য আপনার বর্তমান অভ্যাসগুলো পর্যালোচনা করুন যাতে বের করা যায় যে কোন কোন বিষয় বা পরিস্থিতি আপনাকে ওবেসিটি উপহার দিল।প্রত্যেকেই প্রত্যেকের থেকে পৃথক। ফলে ওজন কমাতে গিয়ে একেক জনের একেক রকমের প্রতিবন্ধকতা থাকে। যেমন শরীর চর্চায় সময় খুজে না পাওয়া, রাতের খাবার দেরিতে খাওয়া ইত্যাদি। আপনার এই জাতীয় সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায় খুজে বের করুন।
আচরণগত পরিবর্তনের পদ্ধতিকে আপনি এক ধরণের থেরাপিও বলতে পারেন, যেমন
- কাউন্সেলিং: মানষিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে আপনি খাদ্য বিষয়ে আপনার আবেগ এবং আচরণগত বিষয়টি চিহ্নিত করতে পারবেন। এই কাউন্সেলিং থেরাপির সাহায্যে আপনি আপনি অতিভোজনের কারণ অনুসন্ধান করতে পারবেন এবং বিষণ্ণতা দুর করার পদ্ধতিও শিখতে পারবেন।
- সাপোর্ট গ্রুপ: এই গ্রুপে যোগ দিয়ে আপনি অন্যদের ওবেসিটির অভজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- মেডিকেশনের সাহায্যে ওবেসিটির ব্যবস্থাপত্র
ওজন বৃদ্ধি কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
যদি আপনি ওবেসিটির ঝুঁকিতে থাকেন, যদি বর্তমানে আপনার দৈহিক ওজন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের বা স্বাভাবিক যাই হউক না কেন, প্রতিক্ষেত্রেই আপনার সচেতনতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে অস্বাভাবিকভাবে ওজন বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। মজার বিষয় হল, ওজন বৃদ্ধি রোধ করার পদক্ষেপ আর ওজন কমানোর পদক্ষেপ একই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। যেমন নিয়মিত শরীর চর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য লাইফ স্টাইলের এই পরিবর্তন চালিয়ে যাওয়ার উপর দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
নিচের কার্যক্রমগুলি আপনাকে ওবেসিটি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে-
- দৈনিক শরীর চর্চায় অংশ নেওয়া:প্রতি সপ্তাহে ১৫০-৩০০ মিনিট পর্যন্ত আপনাকে মাঝারি থেকে ভারি পর্যায়ের শরীর চর্চায় অংশগ্রহন করতে হবে। এই শরীর চর্চার সর্বোত্তম উদাহারণ হতে পারে হাটা যা বয়স ভেদে হালকা থেকে মাঝারি গতিতে শুরু করতে হয়। পরে আপনার শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে গতি আরোও বাড়িয়ে দিতে পারেন। এছাড়া, সাঁতার কাটাও শরীর চর্চার আর একটি ভাল উদাহারণ যা সুযোগ থাকলে আপনি অংশ নিতে পারেন।ওবেসিটি প্রতিরোধে শরীর চর্চা কিভাবে সফলতার সাথে কাজ করে তা জেনে নিলে নিয়মিত দৈহিক ব্যায়ামে অংশ নিতে আপনার উৎসাহ বাড়তে পারে।
- একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিকল্পনা মেনে চলা:কম ক্যালরি বিশিষ্ট খাদ্য যেখানে অন্যান্য পুষ্টি উপাদন বিদ্যমান থাকে সেগুলো খাওয়ার প্রতি মনযোগ দিন। এই জাতীয় কয়েকটি খাদ্যের নাম- ফলমুল, শাক-সবজি, ফাইবারসহ আটা ও চাল (whole grain) ইত্যাদি। এলকোহল পরিহার করুন। চর্বি জাতীয় খাবার ও মিষ্টান্ন খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন। দৈনিক নিয়মিতভাবে তিন প্রকারের বেশী নয় এমন খাদ্য বাছাই করুন যেখানে খাদ্যের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে এবং ক্যালরির হিসাবও ঠিক থাকে। স্ন্যাকস জাতীয় খুবই সীমিত পর্যায়ে নামিয়ে আনুন।স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য আপনার ওজন কমাতে কিভাবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিক রাখে সে সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন।
- এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন যা আপনার খাদ্য পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে:যেহেতু আমরা সমাজে বসবাস করি তাই সামাজিকতা মেনেই চলতে হয়। নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জেনে সামাজিক কোন অনু্ষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে কৌশলে খাদ্যের অংশটুকু এড়িয়ে চলুন যদি খাদ্যটি স্বাস্থ্যসম্মত না হয়। এসব অনুষ্ঠানে উচ্চ ক্যালরি বিশিষ্ট ফাইবার ব্যাতিত খাদ্যই পরিবেশন করার প্রচলন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়।
- আপনার দৈহিক ওজন নিয়মিত মনিটর করুন:যারা সপ্তাহে অন্তত একবার ওজন মাপে তারা তাদের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে অধিক সফল হয়। নিয়মিত মনিটরিং করলে আপনি জানতে পারবেন আপনার চেষ্টা সাধনা কতটুকু সফল হচ্ছে। এর ফলে বড় কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির আগেই আপনি সতর্ক হতে পারবেন।
- আপনার ডায়েট পরিকল্পনা অনুসরণে অবিচল থাকুন:মাঝে মাঝে এমন কোন সময় বা পরিস্থিতি বা বিনোদনমূলক কোন কর্মসূচি চলে আসে যখন এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেমন, উইক এন্ডে বা ছুটি কাটাতে কোথায় ভ্রমনে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই ক্ষেত্রে আপনার অবিচলতা আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।
Thanks a lot for the article post. Really looking forward to read more. Cool. Dian Keith Bozuwa
Hi there, I enjoy reading through your article. I like to write a little comment to support you. Carilyn Coleman Cavill
Appreciate you sharing, great blog post. Much thanks again. Much obliged. Jasmine Travus Kopple Karin Lewiss Hammer
Hi there. I found your website by the use of Google even as searching for a similar matter, your web site got here up. It appears good. I have bookmarked it in my google bookmarks to come back then. Cynthie Rafaello Gratiana
This is exactly what i was looking for, thank you so much for these tutorials Maiga Claudio Singh
Hey there! This is my 1st comment here so I just wanted to give a quick shout out and say I truly enjoy reading your articles. Can you recommend any other blogs/websites/forums that cover the same topics? Thanks! Annaliese Forster Publia
I?m amazed, I should say. Truly rarely do I encounter a blog site that?s both educative and amusing, and also let me tell you, you have hit the nail on the head. Your idea is exceptional; the issue is something that inadequate individuals are talking intelligently around. I am extremely delighted that I came across this in my search for something connecting to this. Gilbertina Culley Lai
Pretty! This was an extremely wonderful post. Thank you for providing this info. Ellissa Rhys Had
Everything is very open with a precise explanation of the challenges.
It was really informative.
Your site is extremely helpful.
Thank you for sharing!