Last updated on May 9th, 2023 at 01:00 pm

প্রোটিন জাতীয় খাবার  সুষম খাদ্য এবং ৫ টি খাদ্য গ্রুপের অন্যতম অপরিহার্য একিট খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান।  দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন প্রয়োজন হয় তা নির্ভর করবে আপনার বয়স, লিঙ্গ এবং দৈহিক কেমন পরিশ্রম করেন- তার উপর।

প্রোটিনের অভাবের কারণে নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষ পুরর্গঠন ও নতুন কোষ তৈরিসহ বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদনে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে।

প্রোটিন জাতীয় খাদ্য শক্তি বা ক্যালরির একটি ভাল উৎসও বটে।

আলোচ্য পোষ্টে প্রোটিন কি, প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয়, প্রোটিন কত প্রকার, প্রোটিন জাতীয় খাবার এর উৎস, দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন খেতে হয়, প্রোটিনের পুষ্টিমান কিভাবে নিরুপন করা হয়, ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য তুলে ধরা হবে।

চলুন, দেখে নেই।

প্রোটিন কি?

আপনি নিশ্চই পুষ্টি সম্পর্কে জেনে থাকবেন। পুষ্টি দু’ প্রকার- একটি বড় বা macro nutrient এবং অপরটি ছোট বা micro nutrient.

ছয়টি পুষ্টি উপাদানের তিনটি হল ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট। এই তিনটির একটির নাম প্রোটিন। অপর দু’টি কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট। এগুলো আমাদের বেচে থাকার জন্য অধিক পরিমানে প্রয়োজন হয়। তাই এদের নাম ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট।

প্রোটিন খুব গুরত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদানের নাম যা আমাদের দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরণের প্রাণিজ ও উদ্ভিদজাত খাদ্যে প্রোটিন থাকে। প্রত্যেক মানুষের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহনের দৈনিক চাহিদা আছে যা নির্ভর করে তার বয়স, দৈহিক ওজন, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর।

আমাদের সকলের জন্যই প্রোটিনের এই দৈনিক চাহিদা পূরণ করা জরুরী। নয়ত, শরীর-স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকম অসুবিধা বা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আমাদের শরীরের প্রত্যেক কোষ থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্রোটিনের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে দেহের মাংস পেশী, bone, ত্বক, চুল প্রভৃতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রোটিনের উপস্থিতি বিদ্যমান।

আপনি যেমন তেমন হিসাবে আপনাকে তুলে ধরার জন্য এবং আপনার নিজস্ব বৈশিষ্ট বাচিয়ে রাখার জন্য কম পক্ষে ১০০০০ রকমের প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে।

প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয়?

প্রোটিনের ক্ষুদ্রতর একক এমাইনো এসিড। প্রোটিন বড় আকারের কমপ্লেক্স মলিকুল যা শত-সহশ্র এমাইনো এসিড দিয়ে গঠিত। এক কথায় প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক হল এমাইনো এসিড। এই এমাইনো এসিডগুলো একটি অপরটির সাথে চেইনের মত আবদ্ধ থাকে।

রাসায়নিকভাবে এমাইনো এসিডে কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং সালফার থাকে।

এমাইনো এসিডের সংখ্যা প্রায় ২০টি। বিশ ধরণের এমাইনো এসিড দিয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। এর মধ্যে ১১টি অপ্রয়োজনীয় (non essential) এবং ৯টি প্রয়োজনীয় (essential) এমাইনো এসিড।

যে সব এমাইনো এসিড আমাদের শরীরের ভিতর তৈরি হতে পারে না, বাহিরের খাদ্য থেকে সংগ্রহ করতে হয়, তাহকে প্রয়োজনিয় এমাইনো এসিড বলে।

যে ধারাবাহিক ক্রম অনুসারে এমাইনো এসিডগুলো একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে তাই উক্ত প্রোটিনের গঠন ও কার্যাবলি সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করে।

প্রোটিন কত প্রকার?

উৎসের উপর ভিত্তি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার দুই প্রকার-

  • প্রাণিজ প্রোটিন : যেমন – ডিম, দুধ, মাংস
  • উদ্ভিদজাত প্রোটিন: যেমন- ‍soy, pea, বাদামি চাল, chick pea ইত্যাদি।

আবার, এমাইনো এসিডের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রোটিন দুই প্রকার-

  • সম্পূর্ণ বা complete প্রোটিন : এখানে প্রয়োজনীয় সব রকমের এমাইনো এসিড উপস্থিত থাকে।
  • অসম্পূর্ণ বা incomplete প্রোটিন : এখানে প্রয়োজনীয় সব ৯টি এমাইনো এসিড উপস্থিত থাকে না।

প্রোটিন জাতীয় খাবার এর উৎস কি?

প্রাণি এবং উদ্ভিদ এই দুই উৎস থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। যে সব খাদ্যে মানসম্পন্ন প্রোটিন পাওয়া যায় তা নিম্নরুপ-

  • মাছ
  • সামুদ্রিক খাদ্য
  • Lean meats: যে সব মাংসে ফ্যাটের পরিমান কম থাকে সেগুলো lean meat হিসাবে পরিচিত।
  • পোল্ট্রি, টার্কি
  • ডিম
  • দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য
  • লিগিউমস এর মধ্যে beans এবং peas জাতীয় উদ্ভিদ।
  • বাদাম বা nuts
  • Soy products

প্রাণিজ খাদ্যে উদ্ভিদজাত খাদ্যের তুলনায় অধিক পরিমানে প্রোটিন থাকে। তাই, আপনি যদি উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন, তাহলে ভাল হয়।

প্রোটিনের পুষ্টিমান কিভাবে নিরুপন করা হয়?

কোন প্রোটিন জাতীয় খাবার এর মধ্যে সবগুলো প্রয়োজনিয় এমাইনো এসিড রয়েছে কিনা তার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় এর পুষ্টমান। বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যে বিভিন্ন পরিমানে এমাইনো এসিড থাকে। যেমন-

১. প্রাণিজ প্রোটিন যেমন মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে সবগুলি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড থাকে। এজন্য, এদের পরিপূর্ণ প্রোটিন বা আদর্শ প্রোটিন বা উচ্চ মান সম্পন্ন জাতীয় খাদ্য বলা হয়।

২. Soy products, ‍amaranth যা এক ধরণের সবুজ শাকঁ এর বীজ, কুইনোয়া (quinoa) – এই জাতীয় উদ্ভিজাত প্রোটিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব এমাইনো এসিড থাকে।

৩. অন্যানা্য উদ্ভিদজাত খাদ্য যেমন শীমের বীজ, মুসুর ডাল, বাদাম, ছোলা ইত্যাদির ভিতর কমপক্ষে একটি প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড অনুপস্থিত থাকে। ফলে এরা অসম্পূর্ণ প্রোটিন।

এজন্য, যার কড়া বা শুদ্ধ নিরামিষ ভোজী তাদের দেহের প্রয়োজনীয় সব এমাইনো এসিডের ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উৎস থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে।

যদি আপনি নিরামিষ ভোজী হয়ে থাকেন এবং প্রোটিনের হরেক রকমের উদ্ভিদজাত উৎস থেকে খাদ্য খেতে পারেন, তাহলে ধরে নেয়া যায়, আপনার প্রোটিনের কোন ঘাটতি দেখা দিবে না।

যেমন, আপনি যদি এমন কোন খাবার খান যা cereals এবং legumes এর সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা থাকে, তাহলে মাছ-মাংসের মত প্রোটিনের পুষ্টিমান সেখানে পাবেন। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডের মিশ্রণ সেখানে পাওয়া যাবে।

দৈনিক কি পরিমান প্রোটিন খেতে হয়?

বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ অনুযায়ী, আপনার শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দৈনিক যত ক্যালরির প্রয়োজন হবে, তার ১০-৩৫% ক্যালরি প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে সংগ্রহ করা উচিত।

USDA এর তথ্য মতে, আমাদের বয়স, সেক্স এবং দৈনিক কি পরিমান দৈহিক কাজ কর্ম করা হয় তার উপর দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের পরিমান নির্ভর করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের National Academy of Medicine কর্তৃক সুপারিশকৃত দৈনিক প্রোটিন গ্রহনের পরিমান হল ০.৮ গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজন অনুসারে। তাতে, ৬০ কেজি ওজনের কোন মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

প্রোটিনের অভাবে কি হয়?

পরিতাপের বিষয় হল, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে দৈনিক ন্যুনতম প্রোটিন থেকে বঞ্চিত। তবে, উন্নত বিশ্বের মানুষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেতে পারছে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়।

যাহোক, প্রোটিনের অভাবে যে সব স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হয়, তা নিম্নরুপ –

  • অপুষ্টি;
  • দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়ে যাওয়া বিশেষ করে শৈশব বয়সে;
  • রোগ প্রতিরোধ কমে যাওয়া;
  • ক্ষুধামন্দা;
  • মাংস পেশীর শক্তি কমে যাওয়া;
  • Edema বা চামড়ার নিচে পানি জমা
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইত্যাদি।

বন্ধুগণ, পোষ্টের তথ্যসমুহ উপকারি মনে হয়েছে কিনা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তি পোষ্টের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা নামের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন।