Last updated on May 9th, 2023 at 05:42 pm

ওজন কমাতে খাদ্য বা ক্যালরির হিসাব সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা আপনার  ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। আমাদের সকলের জন্য খাদ্য এবং পানিয় এর সাথে আমরা যে পরিমান ক্যালরি গ্রহন করি তার ওজন বৃদ্ধিতে যে সরাসরি প্রভাব থাকে আমরা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করি। আপনি যে পরিমান ক্যালরি দৈনিক বার্ন করেন অর্থাৎ দৈহিক পরিশ্রম বা শরীর চর্চায় ব্যাবহার করেন যদি হিসাব করে ঐ পরিমান ক্যালরি খাদ্যের সাথে গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আপনার দেহের ওজন ঠিক জায়গায় থাকবে। বাড়বেও না কমবেও না।

শরীর যে পরিমান ক্যালরি বার্ন করে তার চেয়ে বেশী ক্যালরি খাদ্যের সাথে গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে, যে পরিমান ক্যালরি বার্ন হয় তার চেয়ে কম ক্যালরি নিলে ওজন কমবে। সহজ হিসাব।

ক্যালরি যেহেতু সরাসরি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত, তাই আপনার ওজন কমাতে খাদ্য সরাসরি ভূমিকা পালন করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ওবেসিটি নামের একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে যা পরবর্তিতে আপনার জন্য ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকসহ আরোও করুণ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

তাই এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্যই এই লেখা। চলুন শুর করি।

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যের উদ্দেশ্য কি?

ডায়েটিং এর প্রথম লক্ষ্য হল এখন থেকে আপনার ওজন বৃদ্ধি রহিতকরণ। যাতে আগামিতে আপনার ওজন আর না বাড়ে। পরের লক্ষ্য হল একটি বাস্তবধর্মি ওজন-কমানো কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করা। যাতে আপনার ওজন BMI এর আদর্শ মান মোতাবেক ২০-২৫ এর মধ্যে থাকে। যা অর্জন করা অনেক মানুষের জন্যই কঠিন হতে পারে। এজন্য কৃতকার্যতার হার বেশী হবে যদি ২০-৩০% এর পরিবর্তে ১০-১৫% ওজন হারানোর লক্ষ্য বেজলাইন হিসাবে আপনি নির্ধারণ করতে পারেন। এটা মনে রাখা দরকার, কোন স্থুল মানুষের জন্য যেকোন পরিমানে ওজন কমানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনে।

ওজন কমাতে খাদ্য বা ক্যালরির হিসাব কিভাবে করবেন?

ওজন কমাতে খাদ্য হিসাবের একটি কার্যকর পদ্ধতি হল কম ক্যালরি বিশিষ্ট খাদ্য গ্রহণ করা। ১ পাউন্ড ৩৫০০ ক্যালরির সমান। অন্যভাবে বলা যায়, আপনি যা খান তার চেয়েও ৩৫০০ ক্যালরি বেশী খরচ করতে হবে যদি আপনি ১ পাউন্ড ওজন কমাতে চান। অধিকাংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ১২০০-১৮০০ ক্যালরির প্রয়োজন হয় যা শরীরের শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ভর করে তার শরীরের আকার এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপর।

যার প্রাথমিক ওজন যত বেশী হবে সে তত দ্রুত ওজন কমাতে সফল হবে। এর কারণ হল, প্রতি ১ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রায় ২২ ক্যালরির প্রয়োজন হয় তা ধরে রাখার জন্য। কাজেই, যার ওজন ১০০ কেজি, তার দৈনিক ২২০০ ক্যালরি প্রয়োজন হবে ঐ ওজন ধরে রাখার জন্য। অপরদিকে যার ওজন ৬০ কেজি তার প্রয়োজন হয় মাত্র ১৩২০ ক্যালরি। যদি উভয়েই দৈনিক ১২০০ ক্যালরির খাদ্য গ্রহণ করে, তাহলে বেশী ওজন বিশিষ্ট মানুষটি তারাতারি ওজন কমাতে সক্ষম হবে।

ক্যালরি খরচে বয়সও একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স যত বেশী হতে থাকে, আমাদের বিপাকীয় হার বা metabolic rate তত ধীর গতি সম্পন্ন হতে থাকে। কাজেই, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষের ওজন কমানো কিছুটা কঠিন হয়ে যায়।

ওজন হ্রাসে কম কার্বোহাইড্রেট বিশিস্ট খাদ্য

ওজন কমানোর সবচেয়ে সবচেয়ে স্বীকৃত খাদ্য পদ্ধতি হল কম কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য। তবে, চর্চা করার সময় প্রথম দিকে কিছুটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। খাদ্যে যখন কার্বোহাইড্রেট সীমিত করা হয়, তখন অনেক সময় মানুষের প্রথম দু’ সপ্তাহের ভিতরেই খুব দ্রুত কমে যাওয়া অভিজ্ঞতা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দ্রুত ওজন কমার প্রধান কারণ হল তখন শরীরের ফ্লুইড কমে যায়। যখন পুনরায় খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট যোগ করা হয় তখন শরীরের ফ্লুইড ফিরে পাওয়ার জন্য ওজন আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অন্যান খাদ্য যেমন কম চর্বিযুক্ত খাবারও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একই আচরণ করে যা ধরে রাখা বাস্তবে কষ্টসাধ্য হয়। যদি আপনি নিজের মধ্যে লাইফ স্টাইলের অন্যান্য পরিবর্তন আনতে না পারেন।

ওজন কমাতে খাদ্য গ্রহণের সাধারন কিছু নির্দেশনা

  • ওজন কমাতে খাদ্য নির্বাচনে যে খাদ্যটি নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য বাছাই করবেন তা সুষম খাদ্য হতে হবে। যাতে খাদ্যটিতে আমিষ, ভিটামিন, খনিজ লবনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে।
  • অধিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন যেখানে এনার্জির পরিমান কম থাকে। কম এনার্জি ঘনত্বের খাদ্যে তুলনামুলক কম ক্যালরি থাকে, অর্থাৎ বেশী পরিমান খাদ্য হওয়া সত্ত্বেও ক্যালরির পরিমান কম। কম এনার্জি ঘনত্ব বিশিষ্ট খাদ্যের উদাহারণ হল শাক-সবজি, ফলমুল, lean meat, মাছ, খাদ্য শস্য বা grain এবং যেমন- আপনি প্রচুর পরিমানে ceery বা কেরট খেতে পারেন যেখানে কম পরিমানে ক্যালরি থাকে।
  • এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার কম পরিমানে খান। এনার্জি সমৃদ্ধ খাবারের বৈশিষ্ট হল এখানে চর্বি এবং সাধারণ ‍সুগার অধিক পরিমানে থাকায় কম পরিমান খাদ্যেই অধিক ক্যালরি থাকে। বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ি একটি স্বাস্থকর খাদ্যে ৩০% এর চেয়ে কম চর্বি থাকা উচিত। চর্বিতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় দিগুন পরিমানে ক্যালরি থাকে। অধিক শক্তি সম্পন্ন খাদ্যের উদাহারণ হল red meat, ডিমের কুসুম, ভাজা খাদ্য, অধিক চর্বি বা ‍সুগার বিশিষ্ট ফাস্ট ফুড, মিষ্টান্ন সামগ্রী, পেস্ট্রি, মাখন ইত্যাদি। ঐসব খাদ্যও পরিত্যাগ করুন যেখানে ক্যালরি থাকে কিন্তু পুষ্টিমান খুবই কম। যেমন- এলকোহল, কোমল পানিয় এবং অনেক প্যাকেটজাত উচ্চ ক্যালরি বিশিষ্ট স্ন্যাকস ফুড।
  • খাদ্যের প্রায় ৫৫% ক্যালরির উৎস জটিল বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট থেকে হওয়া উচিত। অধিক পরিমানে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য যেমন ব্রাউন রাইস, পুরো গমের আটা, ফলমুল, শাক-সবজি ইত্যাদি গ্রহন করুন। সরল বা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য যেমন চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, ডোনাট, কেক ইত্যাদি পরিহার করে চলুন। খাদ্য নয় এমন কোমল পানিয় যেখানে সিম্পল কার্বোহাইড্রেট বা ক্যালরি বেশী থাকে তা পরিত্যাগ করুন। এই সিম্পল কার্বোহাইড্রেট এর কারণে পেনক্রিয়াস থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ইনসুলিন নি:সৃত হয় এবং এই অতিরিক্ত ইনসুলিন ফ্যাট টিস্যুর বৃদ্ধি তরান্বিত করে।
  • নিজেকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য এবং ক্যালরি সম্পর্কে শিক্ষিত করুন।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ আপনার প্রতিদিনের খাদ্যে ক্যালরির মাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারে।