নামাজের ওয়াজিব কয়টি: চলুন জেনে নেই 14 টি ওয়াজিব!

নামাজের ওয়াজিব কয়টি তা জেনে সে অনুযায়ি আমল করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। নামাজ আদায়ের সময় অনেক সময় উদাসিনতার কারণে বিভিন্ন রকমের ভূল হয়ে যেতে পারে। ভুলটি যদি নামাজের ফরজ মাসায়েল এর সাথে সম্পর্কিত হয় তবে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে, পুনরায় প্রথম থেকে আদায় করতে হবে। আবার এই ভুল যদি নামাজের ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে হয়, তাহলে নামাজ পুনরায় প্রথম থেকে পড়ার প্রয়োজন নেই, তবে সেজদায়ে সহু আদায় করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল নামাজ আদায়ের সময় অনিচ্ছাকৃত যে সব ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় ঐ ভুলটি কোন ধরণের ভুল তা জানার মত ইলম বা জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

ভুলটি কি কোন ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে হল নাকি কোন ফরজ তরক হওয়া কারণে? এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়ার জন্য আপনাকে নামাজের নিয়ম জানতে হবে। অর্থাৎ নামাজের ভিতর-বাহিরের ফরজ কয়টি, ওয়াজিব কয়টি, সুন্নত কয়টি- ইত্যাদি।

এই মাসায়েলগুলি যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি নামাজের সময় হয়ে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত ভুল মনে আসা মাত্রই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবেন। যদি ভুলটি নামাজের ওয়াজিব এর সাথে সম্পর্কিত হয় তাহলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থার হল আপনাকে সেজদায়ে সহু আদায় করতে হবে। নয়ত, নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

আলোচ্য পোস্টে নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।।

চলুন শুরু করা যাক।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?

নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করা

প্রতি রাকাতের প্রথমে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়। তারপর সুরা মিলানোর প্রয়োজন থাকলে অন্য সুরা পাঠ করতে হয়।

সুরা ফাতিহা পাঠের পর অপর কোন সুরা মিলানো

এখানে লক্ষ রাখার বিষয় হল, পবিত্র কোরআন শরীফের প্রতিটি আয়াতই হল কোন না কোন সুরার অংশ। ছোট-বড় সুরা মিলিয়েই কোরআন শরিফ। আমরা জানি সুরা কাওসার হল সবচেয়ে ছোট সুরা এবং সুরা বাক্বারা সবচেয়ে বড় সুরা। এখন নামাজের একটি ওয়াজিব হল সুরা ফাতিহার পর যেকোন সুরা মিলানো। এখানে আপনি ছোট সুরাও মিলাতে পারেন বা বড় সুরা মিলিয়েও নামাজ পড়তে পারেন। যেমন, জানা যায় কোন কোন বুযুর্গ ব্যাক্তি অনেক লম্বা লম্বা সুরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করতেন।

তবে লক্ষ রাখার বিষয় হল, সুরা ফাতিহার পর সুরা মিলানোর এই ওয়াজিব তখনই আদায় হয়ে যাবে যখন আপনি কোরআনের সবচেয়ে ছোট সুরায় যে ছোট ছোট তিন আয়াত রয়েছে সেই বরাবর অপর যেকোন সুরার তিন আয়াত পাঠ করা।

যেমন ধরুন, সুরা আর রাহমান এর প্রথম আয়াতগুলি সুরা কাওসারের আয়াতের প্রায় সমান দৈর্ঘ বিশিষ্ট। আপনি ইচ্ছা করলে সুরা ফাতিহার পর সুরা আর রাহমানের এরকম তিন আয়াত মিলালেও আপনার নামাজের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

আরেকটি বিষয় যদিও এটি ওয়াজিবের অংশ নয়, তা হল, সুরা মিলানোর বিষয়টি যেন ধারাবাহিক ভাবে হয়। ধরাবাহিক বলতে কোরআনে কোন সুরার পরা কোন সুরা রয়েছে, তা মাথায় রাখা। এমন যেন না হয় যে, সুরা ইখলাস দিয়ে নামাজের প্রথম রাকাতের সুরা মিলালেন আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা লাহাব পাঠ করলেন। তাহলে সুরা মিলানোর ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেল।

রুকু সেজদায় দেরী করা

নামাজের ওয়াজিব কয়টি তার মধ্যে একটি হল রুকু সেজদায় দেরি করা। অনেক মানুষ রয়েছে যারা রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাড়িয়ে তৎক্ষণাত সেজদায় চলে যায়। আবার কেউ কেউ দুই সেজদার মাঝে ভাল করে না বসে পরবর্তি সেজদায় যেতে তারাহুরা করে। এর ফলে নামাজের ওয়াজিব ছুটে যায়। এজন্য, আমাদের উচিত, নামাজের প্রতিটি রোকনে কমপক্ষে এক সেকেন্ড পরিমান সময় দেরি করা।

রুকু হতে সোজা হয়ে দাড়িয়ে দেরি করা

অনেক সময় কিছু নামাজির ক্ষেত্রে দেখা যায়, রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাড়িয়েই তৎক্ষণাত বা সঙ্গে সঙ্গেই সেজদায় চলে যায়। এর ফলে নামাজের ওয়াজিব নষ্ট হয়ে যাবে। করণীয় হল, রুকুর তাসবীহ্ শেষ করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে কম পক্ষে এক সেকেন্ড সময় অপেক্ষা। সোজ হয়ে দাড়ানো অবস্থায় ঐ এক সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি ”রাব্বানা লাকাল হামদ” পাঠ করতে পারেন।

দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে দেরী করা

এক্ষেত্রেও দেখা যায়, কেউ কেউ এমন আছে, যারা নামাজ তারাতারি পড়তে গিয়ে দুই সেজদার মাঝে এক সেকেন্ড সময়ের জন্য সোজা হয়ে বসারও সময় পায় না। ফলে, নামাজের ওয়াজিব ছুটে যায়। নামাজ আদায়ের সময় এই সুক্ষ্ম বিষয়গুলি খেয়ালে রাখা চাই।

দরমিয়ানি বৈঠক

এর অর্থ হল, চার রাকাত কোন নামাজ চাই সেটা ফরজ বা সুন্নত হউক, এই নামাজের প্রথম দুই রাকাত আদায়ের পর অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজদা আদায়ের পর না দাড়িয়ে তাশাহুদ পাঠের জন্য বসে যাওয়। একে দরমিয়ানি বৈঠক বলে। তারপর তাশাহুদ পাঠ করে অবশিষ্ট দুই রাকাত নামাজ পড়ে পুনরায় বসা যাকে শেষ বৈঠক বলা হয়। এভাবে সালাম ফিরিয়ে চার রাকাত নামাজ আদায় করা।

আর দুই রাকাত ফরজ, সুন্নত বা নফল যেকোন নামাজের বেলায়েই দ্বিতীয় রাকাতের পর বসে তাশাহুদ, দরুদে ইব্রাহিম ও দোয়ায় মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া

নামাজের ওয়াজিব কয়টি – আলোচনার মাঝামাঝি পর্যায়ে চলে এলাম। নামাজ চার রাকাত হলে উভয় বৈঠকে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা।

কেরাত আস্তের জায়গায় আস্তে ও জোরের জায়গায় জোরে পাঠ করা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফযর, মাগরিব ও এশার নামাজে ঈমাম সাহেবের জন্য প্রথম দুই রাকাতে কেরাত জোরে পাঠ করা। প্রথম দুই রাকাতের পর পরের রাকাত গুলিতে ক্বেরাত আস্তে পাঠ করা। অপরদিকে, জোহর এবং আছর নামাজের বেলায় প্রতি রাকাতেই আস্তে আস্তে ক্বেরাত পাঠ করা। এজন্যই, আস্তের জায়গায় আস্তে এবং জোরের জায়গায় জোরে ক্বেরাত পাঠের কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে।

বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া

আমরা জানি বেতরের নামাজ তিন রাকাত। এই তিন রাকাত নামাজের তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা মিলাতে হয়। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিয়ে রুকুতে না গিয়ে পুনরায় হাত বাধতে হয়। আর তারপর, এই দোয় কুনুত পাঠ করার কথা বলা হয়েছে।

ঈদের নামাজে ছয় তাকবীর পড়া

আমরা প্রত্যেকেই বছরে দুই ঈদের কথা জানি। একটি ঈদ-উল-ফিতর আর অপরটি ঈদ-উল-আজহা। ঈদের উভয় নামাজই ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা। তাকবীর কথাটি মানে হল আল্লাহু আকবার পাঠ করা।

প্রত্যেক ফরয নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা

আমরা জানি তিন বা চার রাকাত ফরজ নামাজের বেলায় শুধু প্রথম দুই রাকাতে সুরা মিলাতে হয়। প্রথম দুই রাকাতের পরের রাকাতে বা রাকাতগুলিতে সুরা ফাতিহার পর কোন সুরা মিলাতে হয়না। প্রত্যেক ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত ক্বেরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা।

প্রত্যেক রাকাতের ফরজগুলির তারতীব ঠিক রাখা

আমরা জানি, নামাজ আদায়ের সময় নামাজের ভিতরে ছয়টি ফরজ থাকে যা ধারাবাহিকভাবে নামাজ পড়ার সময় অনুসরণ করতে হয়। যেমন, ছয়টি ফরজের মধ্যে রুকু ও সেজদা করা ফরজ। এখন ফরজগুলির তাবতীব বা ধারাবাহিকত ঠিক রাখার অর্থ হল সেজদায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে রুকু আদায় করতে হবে। রুকু আদায় না করে সেজদায় গেলে তারতীব নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রত্যেক রাকাতের ওয়াজিবগুলির তারতীব ঠিক রাখা

নামাজের ওয়াজিব কয়টি – বিষয়টি আলোচনার প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।এ পর্যায়ে, প্রতি রাকাতে ওয়াজিবসমুহের তারতীবও নামাজের ভিতর যে ফরজগুলি রয়েছে তার মতই। আপনাকে ধারাবাহিকভাবে তা অনুসরণ করতে হবে। যেমন ক্বেরাতের সময় প্রথমে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয় তারপর সুরা মিলানো। কিন্তু অন্য কোন সুরা পাঠের পর সুরা ফাতিহা পাঠ করা যাবেনা। তাহলে তারতীব বা ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাবে।

শেষ বৈঠকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা

নামাজ যদি দুই রাকাত হয় তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে শেষ বৈঠক হবে। এমনিভাবে তিন রাকাত বা চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে শেষের রাকাতে শেষ বৈঠক হবে। আর তখন, সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

বন্ধুগন- নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি শিরোনামে আলোচ্য পোষ্টের তথ্যগুলো কেমন লাগল তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। যদি এ বিষয়ে কারোও কোন প্রশ্ন থাকে তাও কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।

1 thought on “নামাজের ওয়াজিব কয়টি: চলুন জেনে নেই 14 টি ওয়াজিব!”

  1. Have you ever thought about writing
    an ebook or guest authoring on other sites?

    I have a blog based on the same subjects you discuss and would really like
    to have you share some stories/information. I know my subscribers
    would value your work.
    If you’re even remotely interested, feel free to shoot me
    an
    e-mail.

Comments are closed.