Last updated on April 2nd, 2021 at 03:22 pm

কাজু বাদামের উপকারিতা – নিয়ে আজকের এই পোষ্ট। এছাড়াও এই বাদামের আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে।

যে বৃক্ষ থেকে কাজু বাদাম উৎাপাদিত হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale. এই উদ্ভিদে যে ফল ধরে তার বীজ হচ্ছে এই বাদাম। গাছটি প্রায় ৪৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

কাজুবাদাম দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সমুহে বিশেষ করে ব্রাজিলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হত। পরবর্তিতে তা আফ্রিকা এবং ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে, এ অঞ্চলেই হল সারা বিশ্বের সবচেয়ে অধিক পরিমানে এই বাদাম উৎপাদিত হয়। এই বাদাম গুলো কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত উভয় অবস্থাতেই বিক্রি হতে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক কালে দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যের বিকল্প হিসাবে এই বাদাম ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। যেমন, কাজু বাদামের দুধ, পনির, ক্রিম, সসেজ ইত্যাদি।

আলোচ্য পোষ্টে কাজু বাদামের পুষ্টিগুন, কাজু বাদামের উপকারিতা, কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও কতটুকু খেতে হয়- ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (USDA) এর তথ্য অনুযায়ি প্রতি আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) কাজু বাদামে নিম্ন লিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়-

  • ক্যালরি- ১৫৭;
  • ৮.৫৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট;
  • ১.৬৮ গ্রাম সুগার;
  • ০.৯ গ্রাম ফাইবার;
  • ৫.১৭ গ্রাম প্রোটিন;
  • ১২.৪৩ গ্রাম total fat বা চর্বি;
  • ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম;
  • ১.৮৯ মিলিগ্রাম আয়রন;
  • ৮৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম;
  • ১৬৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস;
  • ১৮৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম;
  • ৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম;
  • ১.৬৪ মিলিগ্রাম জিংক;

এছাড়াও, এই বাদামে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং ফলেট নামের পুষ্টি উপাদান থাকে। প্রতি আউন্স পরিমান কাজু বাদামে সম্পূর্ণ বাদামের সংখ্যা প্রায় ১৮টি . এই বাদামের চর্বি মনো আন স্যাচুরেটেড এবং পলি আন স্যাচুরেটেড প্রকৃতির হয়।

কাজু বাদামের উপকারিতা

হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়

এই বাদামে মনো আনস্যাচুরেটেড এবং পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত এল ডি এল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লসারাইড লেভেল কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। এর ফলে, আপনার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য ধরণের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

ব্রিটিশ নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, যারা সপ্তাহে চার বারের অধিক বাদাম খায় তাদের করোনারি হার্ট ডিজিজ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৭% কমে যায় ঐসব মানুষের তুলনায় যারা কদাচিত বা একেবারেই বাদাম খায়না।

মেগনেসিয়ামের অভাব পূরণে

কাজু বাদাম হল মেগনেসিয়ামের খুব ভাল মানের একটি উৎস। এই মেগনেসিয়াম দেহের ৩০০ প্রকারের অধিক এনজাইমেটিক প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজে সহায়তা করে। যার মধ্যে কোষের ভিতর খাদ্যের বিপাকিয় কার্যাবলি অন্তর্ভূক্ত। ইহা দেহের প্রয়োজনিয় ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন উৎপাদনে সাহয্যা করে।

ম্যাগনেসিয়াম দেহের মাংসপেশী প্রসারণের কাজে এবং নিউরোমাসকুলার সঞ্চালন কাজেও সহায়তা করে।

সাধারণত: বয়স্ক মানুষদের মেগনেসিয়ামের অভাব পরিলক্ষিত হয় যার ফলে তাদের দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। তারা ইনসুলিনের প্রতি আস্তে আস্তে রেজিস্টেন্ট হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে বিপাকিয় রোগ, অসটিওপোরোসিস এবং হৃদরোগের স্বীকার হওয়ার আশংকা তৈরি হয়। অসটিওপোরোসিস এমন এক রোগ যার ফলে দেহের অস্থিসমুহ দুর্বল হয়ে যায়।

কতিপয় গবেষণা ফলাফলে জানা যায়, পর্যাপ্ত মেগনেসিয়াম ব্যাতীত অধিক পরিমানে ক্যালসিয়াম খেলে artificial calcification, হৃদরোগ এবং কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

এন্টি অক্সিডেন্ট এর অভাব পূরণে

বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাদ্যকে এন্টি অক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউজ বলা হয়। কাজু বাদাম এর ব্যতিক্রম নয়। দেহের বিপাকিয় কাজে উৎপন্ন free radicals শরীরের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ যা ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ হল এই free radical সমুহকে নিউট্রালাইজ করা বা প্রশমিত করে দেওয়া। ফলে, তারা আমাদের দেহে ক্ষতি করার শক্তি হারিয়ে ফেলে।

এই বাদামে যে এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তারা হল পলি ফেনল এবং ক্যারটিনয়েড। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, এই বাদামের উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট দেহের ভিতর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে।

দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে

বিভিন্ন গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষকগণের পরামর্শ হল, কাজুবাদাম খেলে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পায়না। বরং ইহা আপনার দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এর পিছনে কারণ হল, ইহা খাওয়ার ফলে ক্ষুধার অনুভূতি কমে যায়। ফলে, দেহের ক্যালরি সরবরাহ বজায় রাখার স্বার্থে দেহে সঞ্চিত চর্বি ভেঙ্গে যায়।

এই বাদাম সাধারণত: ক্যালরি এবং চর্বি সমৃদ্ধ একটি খাবার। প্রতি আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাজু বাদামে ১৫৭ উৎপাদন হয়। এজন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ হল বাদাম পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, মানব দেহ বাদামের মোট বিদ্যমান ক্যালরির কেবল মাত্র ৮৪% হজম ও শোষণ করতে পারে। অবশিষ্ট ক্যালরি শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

এটি থেকে ধারণা পাওয়া যায়, বাদাম খাওয়ার দ্বারা দেহে ওজন বৃদ্ধি পায় না, বরং ওজন কমাতে সহায়ক। তবে, এর স্বপক্ষে আরোও গবেষণা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা তাদের খাদ্য তালিকায় কাজু বাদাম যোগ করতে পারে। এই বাদামে খুব ভাল মানের ফাইবার অধিক পরিমানে থাকে এবং সুগার কম থাকে। বাদামের এই ফাইবার হজম প্রক্রিয়া দির্ঘায়িত করে; ফলে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও চোখ এবং ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজু বাদাম ভূমিকা পালন করে।

কাজু বাদাম খাওয়ার পরিমান

 

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম