Last updated on November 18th, 2023 at 01:23 pm

ইস্তেখারার দোয়া একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের জেনে রাখা দরকার। অনেক সময় উদাসীনতার বসে অনেক কিছুই পেরে উঠা যায় না। প্রয়োজনীয় জনিসও জীবন থেকে বাদ পরে যায়।

এই দোয়াটির ক্ষেত্রেও তাই। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও কম মানুষই আছে যারা যথাসময়ে সঠিকভাবে আমলটি করে। এর একটিই কারণ, তা হলো দ্বীনের বিষয়ে আমাদের উদাসীনতা। দুনিয়াকে দ্বিনের উপর প্রাধান্য দেওয়া, ইত্যাদি।

কিন্তু, এভাবে জীবন চলতে দেওয়া ঠিক নয়। তাই উদাসীনতাকে জয় করে আমলি জিন্দেগিতে ফিরে আসতে হবে।

অদ্যকার পোষ্টে, ইস্তেখারার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এছাড়া, ইস্তেখারা কি, ইস্তেখারা নামাজ কেন পড়ে,  ইস্তেখারা নামাজের সময়, ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও আরবি – ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ইস্তেখারা কি?

প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে ইস্তেখারা কি বা এর দ্বারা কি বোঝানো হয়। ইস্তেখারা শব্দটি আরবি মুল খা, ইয়া এবং রা (خ-ي-ر) থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সেখান থেকে বাব –এ ইস্তেফআল ওজনে ইস্তেখারা হয়েছে। এই ওজনে আরবি ক্রিয়া পদ প্রচলিত অর্থে কোরো নিকট কিছু চাওয়া বুঝানো হয়ে।

যেহেতু খায়ের কথাটির অর্থ ভাল বা মঙ্গল তাই এক্ষেত্রে ইস্তেখারা দ্বারা মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের নিকট মঙ্গল বা ভালাই চাওয়া উদ্দেশ্য। খায়ের শব্দটি সমস্ত ভালাই এর ছাতা হিসাবে ধরা হয়। অর্থাৎ, যত প্রকর ভাল রয়েছে সবই এর মধ্যে নিহিত আছে।

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদিসের ভাবার্থ – হযরত মুহাম্মদ (সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে শিখিয়েছেন কিভাবে ইস্তেখারা করতে হয় একই ভাবে যে ভাবে তিনি (সাঃ) আমাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। সুত্র: বুখারি শরিফ, ভলিউম-২, বই- ২১, নাম্বার- ২৬৩।

ইস্তেখারার নামাজ কখন পড়তে হয়?

মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনা সামনে হাজির হয় যার উপর তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্তে আসা যায় না। বিশেষ করে জীবনের গুরত্বপূর্ণ কিছু বিষয় যখন চলে আসে – যেমন বিবাহ-সাদি, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। কাজটি করব কি করব না বা কোনটা করব আর কোনটা বাদ দিব – এসব বিষয় উপস্থিত সময়ে তখন এক ধরণের সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করে। তখন আমাদের উচিত সিদ্ধান্তের জন্য সময় চাওয়া। আর তখন ইস্তেখারার নামাজ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তায়ালার নিকট মঙ্গল কামনা করা।

তবে, একটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরী। তা হলো, এস্তেখারা সব সময় জায়েজ কোন জিনিসের উপর হয়। যেমন, বিয়ে করা একটি জায়েজ কাজ। তেমনিভাবে, ব্যবসা করাও একটি জায়েজ পেশা। তবে, হারাম কোন জিনিসের উপর ব্যবসা, হতে পারে মদের ব্যবসা, সুদের ব্যবসা – ইত্যাদি থেকে শুরু করে ইসলামি শরিয়তে যে কোন নিষিদ্ধ কাজ বা বিষয়ের উপর কোন এস্তেখারা চলে না। বরং, মহান আল্লাহ্ তায়ালার সাথে এটি তামাশা করার মত গর্হিত কোন কাজ হবে। যা একজন মুসলমান হিসাবে কারোর জন্যই তা কাম্য নয়।

এস্তেখারা নামাজের নিয়ম

আপনি যে কোন নফল নামাজের মত এস্তেখারা নামাজ আদায় করতে পারেন। সালাতুত তাসবিহ্, জানাজার নামাজ বা ঈদের নামাজের মত এখানে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। আপনি এস্তেখারা নামাজের নিয়তে দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে, সর্বনিম্ন দুই রাকাত হলেও চলবে।

এস্তেখারা নামাজের বিশষত্ব হচ্ছে নামাজ শেষ করে দোয়া করা যা এস্তেখারা দোয়া নামে পরিচিত। এই দোয়াটি মুখস্থ করে নিতে হবে এবং দোয়ার সময় এটি পড়তে হবে।

আর একটি বিষয় লক্ষণীয়, নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় যখন দোয়াটি পাঠ করা শুরু করবেন তখন দোয়াটির বিশেষ এক জায়গায় আপনার উদ্দেশ্যটি স্মরণ করে দোয়ার অবশিষ্ট অংশ পড়ে নিতে হবে।

এস্তেখারা নামাজের নিয়ম এর মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই নামাজি হতে হবে।  পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের খবর নাই অথচ এস্তেখারা নামাজ নিয়ে মশগুল হয়ে যাওয়া বিষয়টি এমন নয়।

মুসলমান হিসাবে, সবচেয়ে ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম যে বিষয়টি অবশ্য করণিয় তা হলো নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়ে প্রতি লক্ষ রেখে গুরত্বের সাথে আদায় করা।

গুরত্বের সাথে বলতে, আপনি পুরুষ হলে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়া। আর, মহিলা হলে ফরজ নামাজের ওয়াক্ত শুরুর পর পরই উক্ত নামাজ ঘরে পড়ে নেওয়া। মহিলাদের বেলায় একে বলা হয় আওয়াল ওয়াক্তে ফরজ নামাজ পড়া।

যখন আপনি ফরজ নামাজের পা বন্দি হবেন, তখন আপনার বেলায় এস্তেখারার মত যে কোন নফল নামাজের দিকে মনযোগী হওয়া।

ইস্তেখারা নামাজের সময়

এস্তেখারা নামাজের সময় বলতে আপনি যখন রাতের বেলায় ঘুমাতে যাবেন তার ঠিক আগে। এর উদ্দেশ্য ঘুমে স্বপ্নের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে যাতে কোন ইঙ্গিত লাভ করা যায়।

রাতে এশার নামাজ আদায়ের পর দৈনন্দিন অন্যান্য নিয়মিত কাজ শেষ করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে টাটকা অজু করে নিবেন। বলা হয় বেহেস্তের চাবি নামাজ। আর নামাজের চাবি হলো অজু।

কাজেই, অজুর ফরজ, সুন্নত ও মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে আপনাকে গুরত্বের সাথে খুব সুন্দর করে অজু করতে হবে। তারপর, কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এস্তেখারার দোয়া শেষ করে কারোও সাথে কথা না বলে সুন্নত তরিক্বায় শুয়ে পরবেন।

ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত

যে কোন নামাজের নিয়ত নিয়ে সাধারণ মুসলমানের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণ বিদ্যমান আছে। যা কিনা, নামাজের নিয়ত আরবিতে শিখে পাঠ করা।

বিষয়টি আসলে তেমন কিছু নয়। নামাজের নিয়ত করা একটি অবশ্য গুরত্বপূর্ণ বিষয়। তা না হলে নামাজ হবে না। কারণ, এতে নামাজের ভিতর ছয় ফরজের মধ্যে একটি ফরজ ছুটে যাবে।

নিয়্যত কথাটির সম্পর্ক হৃদয়ের সাথে যা আপনি মনে মনে নিজের মাতৃভাষায় স্মরণ করতে পারেন বা পাঠ করতে পারেন।

বাস্তবিক অর্থে এস্তেখারা নামাজের উদ্দেশ্যে যখন অজু করতে গেলেন, তখনই আপনার ইস্তেখারা নামাজের নিয়ত হয়ে গেছে।

বাকি, তারপরও যদি নামাজ শুরুর আগে আপনি নিয়ত করতে চান তাহলে জায়নামাজে দাড়িয়ে মনে মনে নিজ মাতৃভাষায় মহান আল্লাহ্ তায়ালার উদ্দেশ্যে বলতে পারেন – হে আল্লাহ্, আমি আপনার রেজামন্দির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত ইস্তেখারা নামাজ আদায়ের নিয়ত করিলাম।

এরপর অন্যান্য নফল নামাজের মত করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিবেন।

ইস্তেখারার দোয়া

হ্যা, অদ্যকার পোষ্টের এই অংশটি সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। আপনাকে ইস্তেখারার দোয়া আরবিতে মুখস্থ করে নিতে হবে এবং নামাজ শেষে মোনাজাতে হাত উঠিয়ে দোয়াটি পাঠ করতে হবে।

দোয়াটির বাংলা কথাগুলো খুব অর্থপূর্ণ। তাই ইস্তেখারার দোয়া বাংলা অর্থটিও শিখে নিবেন।

ইস্তেখারার দোয়া আরবি

যেহেতু আপনাকে ইস্তেখারার দোয়া আরবি ভাষায় শিখতে হবে তাই দোয়াটি নিচে উল্লেখ করা হলে-

ইস্তেখারার দোয়া

ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

অনেকেই যারা আরবি পড়া এখনো শিখতে পারে নাই তাদের জন্য ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ প্রযোজ্য। তবে, এটি খুবই দু:খজনক যে, একজন মুসলমান হয়েও কেন আরবি শিখা হয় না।

মনে রাখতে হবে, কোর আনের ভাষা আরবি, জান্নাতের ভাষা আরবি এবং আমাদের মহানবি (সাঃ) একজন আরবি মানুষ।

তাই, আপনি যদি এখনো আরবি না শিখে থাকেন তাহলে দ্রুত আরবি শিক্ষা লাভের উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

ইস্তেখারার দোয়া বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞান থেকে আমি মঙ্গল চাচ্ছি এবং আপনার শক্তি থেকে আমি শক্তি চাচ্ছি এবং আপনার সুমহান দয়া থেকে করুনা প্রার্থনা করছি। কারণ, আপনিই ক্ষমতাবান, আমার কোন ক্ষমতা নাই। আপনি জানেন, আমি জানি না। অদৃশ্য জগতের সব কিছু সম্পর্কে আপনি অবগত।

ও আল্লাহ্, এই কাজটি (এখানে আপনার সুনির্দিষ্ট কাজের কথাটি স্মরণ করবেন) আমার দ্বিন ও দুনিয়ার জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে যদি আপনি জেনে থাকেন, তাহলে এটিকে আমার জন্য সহজ করে দিন। আর আমার জন্য এর ভিতর আপনি আরো বরকত দান করুন। অপরদিকে, আপানার জ্ঞানে উক্ত কাজটি আমার জন্য দ্বিন ও দুনিয়া উভয় লাইনের বিচারে যদি মঙ্গলজনক না হয়ে থাকে তাহলে এটি থেকে আপনি আমাকে বিরত রাখুন। যেটি আমার জন্য ভালো হবে আমাকে সেটিই দান করুন।

ইস্তেখারার ফলাফল

আপনি শরিয়তের যে কোন যায়েজ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ইস্তেখারার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবেন। এটিই হলো উদ্দেশ্য।

কিন্তু দু’ এক দিন ইস্তেখারার আমল করেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা থেকে ইশার লাভ হবে – বিষয়টি এমন নয়। আল্লাহ্ তায়ালা থেকে দিক নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে আমল নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

কমপক্ষে এক সপ্তাহ আমলটি চালিয়ে যাওয়ার পরও যদি সরাসরি কোন ইঙ্গিত না পাওয়া যায়, তাহলে আপনার দিল যে দিয়ে সায় দিবে সে দিকে পথ চলাটাই হবে আপনার জন্য মঙ্গল জনক।

কারণ, আপনি বেশ কয়েক দিন এক টানা এস্তেখারা নামাজ পড়ে এস্তেখারার দোয়া করেছেন। যে দোয়ার মাধ্যমে উক্ত কাজের বিষয়ে মহান আল্লাহ্ তায়ালার নিকট খায়ের বা ভালাই চাওয়া হয়েছে।

কাজেই, ইস্তেখারার ফলাফল হিসাবে কয়েকদিন আমল চালিয়ে যাওয়ার পর যে দিকে আপনার অন্তর সায় দিবে, সেটিও ধরে নিতে হবে মহান আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকেই। তাই, সেভাবে কাজটি করার মধ্যেই আপনার জন্য খায়ের বা মঙ্গল নিহিত থাকবে। এটিই স্বাভাবিক।

উপসংহার

বুজুর্গানের দ্বিন বলেন, মাশওয়ারা বা পরামর্শ করে কাজ করলে লজ্জিত হতে হয়না। আর এস্তেখারা করে কাজ করলে ঠকতে হয়না। এস্তেখারা করে কাজ করার অর্থ হলো মহান আল্লাহ্ তায়ালার সাথে পরামর্শ করা। তাই, আমাদের উচিত, গুরত্বপূর্ণ কোন কাজ করার আগে এস্তেখারার আমল নিজের অভ্যাস বানিয়ে নেওয়া।

বন্ধুগন, আলোচ্য পোষ্টে যে সব তথ্য উপস্থাপন করা হলো তার উপর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবে।