Last updated on November 18th, 2023 at 01:28 pm
আসতাগফিরুল্লাহ্ প্রতিটি ইসলাম ধর্মালম্বি মানুষের নিকট খুব পরিচিত এক শব্দ। বলতে গেলে এটি প্রত্যেকের মুখে মুখে উচ্চারিত এক ধ্বণি।
কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকের কাছেই বিষয়টির তাৎপর্য পরিস্কার নয়।
তাই, আলোচ্য পোষ্টে আসতাগফিরুল্লাহ্ অর্থ কি, আসতাগফিরুল্লাহ্ এর উপকারিতা, আসতাগফিরুল্লাহ্ পুরো দোয়া ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হবে। সাথে থাকবে এর সাথে সম্পর্কিত আরো কিছু সংশ্লিষ্ট বিষয।
তাহলে, চলুন আলোচনায় চলে যাই।
Table of Contents
আসতাগফিরুল্লাহ্ অর্থ কি ?
আমাদের মুসলিম সমাজে ধর্মিয় অনেক কাজই আমরা করে থাকি। রেওয়াজ বা রুসুমের খাতিরেও অনেক সময় অনেক আমল করা হয়। এর ফলে আমলের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেকের কাছেই অজানা থেকে যায়।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ধর্মিয় অনুশাসনের ভেতর থাকে উদ্দেশ্য ও ফলাফল। তেমনি আসতাগফিরুল্লাহ্ বিষয়টির ক্ষেত্রেও তাই। কথাটি কেন পড়তে হয় বা পাঠ করলে কি লাভ হয়, পাঠ না করলে ক্ষতির কারণ আছে কিনা – এসব বিষয়ে আমাদের ধারণা সমৃদ্ধ নয়।
তাই প্রথমেই জানা দরকার শব্দটির অর্থ জানা প্রয়োজন।
আসতাগফিরুল্লাহ্ অর্থ কি ও শব্দটির গঠন
প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল যে আরবি ব্যকরণগত দৃষ্টিতে আসতাগফিরুল্লাহ্ – একটি পুর্ণাঙ্গ বাক্য। কারণ একটি বাক্য হতে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই এর মধ্যে বিদ্যমান আছে।
যেমন, বাক্য গঠনের নিয়ম পর্যালোচনা করে দেখা যায় সাধারণত: কোন বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকতে হয়। আরো বিস্তারিত বলতে গেলে কর্তা, ক্রিয়া ও কর্ম ইত্যাদি অংশ থাকলে বাক্যটি পূর্ণতা লাভ করে।
আপনি জেনে খুশি হবেন, আসতাগফিরুল্লাহ্ এর মাঝে কর্তা, ক্রিয়া ও কর্ম প্রতিটির উপস্থিতিই বিদ্যমান আছে।
তাহলে, এতটুকু জানতে পেলাম যে, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য।
এবারে প্রশ্ন হলো বাক্যটি কিভাবে গঠিত হয়েছে?
এর উত্তর – দু’টি অংশ নিয়ে বাক্যটি গঠিত হয়েছে। প্রথমত: আসতাগফিরু ও দ্বিতীয় অংশ আল্লাহ।
এবারে, মুল প্রশ্ন, বাক্যটির ভিতর কর্তা কে এবং কোথায় রয়েছে?
অনেকেই, মনে করতে পারেন কর্তা হয়ত বা আল্লাহ্। এটি সঠিক নয়।
তাহলে কর্তা কোথায়? এর উত্তর – কর্তা এখানে উহ্য যার প্রতিনিধিত্ব করছে বাক্যটির প্রথম হরফ অর্থাৎ আলিফ।
বুঝার সুবিধার্থে চলুন আর একটি গভীরে যাই-
ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে মুল ক্রিয়া পদ বর্তমান কালের ক্ষেত্রে ধরা হয়। কিন্তু আরবির বেলায় ক্রিয়া পদের রুট বা উৎপত্তি অতীত কাল হিসাবে গণ্য করা হয়।
তাই, ইস্তিগফার এর উৎপত্তি হলো তিন অক্ষর বিশিষ্ট মুল শব্দ গা-ফা-রা দিয়ে। এটি ক্রিয়ার অতীত কাল। এর অর্থ ক্ষমা করা।
এই গাফারা থেকে উৎপত্তি লাভা করে ইসতেফআল এর ওজনে ইস্তিগফার কথাটি এসেছে। ইংরেজি ব্যকরণের ভাষায় ইস্তিগফার হচ্ছে verbal noun. যার বর্তমান কালের ক্রিয়া পদ আসতাগফিরু। যার অর্থ আমি ক্ষমা চাই।
এখন কার কাছে ক্ষমা চাই? মহান আল্লাহ্ তায়ার নিকট।
তাই, আসতাগফিরু এর পর মহান আল্লাহ্ তায়ালার নাম যোগ হয়েছে।
যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, আমার মনে হয় তাদের জন্য এতটুকুই বিশ্লেষণই যথেষ্ট। তবে, সাধারণ লাইনে লেখা পড়া করলে আরবি ব্যকরণ যে বুঝা যাবে না – বিষয়টি তেমন নয়।
আপনার আগ্রহ থাকলে একটু চেষ্ট করলেই পারবেন। আরবি ব্যকরণ খুবই সহজ, ধারাবাহিক এবং সুনির্দিষ্টভাবে এটি বর্ণিত।
আরবি ব্যকরণ শিখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আসতাগফিরুল্লাহ্ কখন পড়তে হয়?
কথাটি কখন পড়তে হয় এমন কোন বিধি নিষেধ নেই। নিষিদ্ধ কাজ হয়ে গেলেই যে পড়তে হবে আর গুনাহ্ না করলে যে পড়ার প্রয়োজন নেই বিষয়টি তেমন নয়।
মুল কথা হচ্ছে, গুনাহ্ হোক বা না হোক সর্ব অবস্থায় আপনি দোয়টি যত পাঠ করবেন ততই আপনার লাভ হবে।
এ প্রসঙ্গে নিচের হাদিসটি লক্ষ করুন –
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ (আল্লাহ্ তায়াল উনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান) হতে বর্ণিত হাদিসের মর্মার্থ অনেকটা এরকম যে, আল্লাহ্ তায়ালার রাসুল (ﷺ) কসম খেয়ে বলেছেন যে, আমি দৈনিক ৭০ বার আল্লাহ্ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাওবা করি।
সুত্র: বুখারি, বই নং – ১৯, হাদিস নং-২
অথচ, উনি (ﷺ) একজন বেগুনা মাসুম ছিলেন।
কাজেই এই জামানায় আমাদের যে কত বার ইহা পাঠ করা প্রয়োজন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।