আপনি যদি বাংলাদেশে পাসপোর্টের জন্য আবেদনের কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার আগে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া ভাল। এর ফলে আপনার পূর্ব প্রস্তুতি হয়ে থাকবে। পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হয়।

এই গাইডে আমরা বাংলাদেশে পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টের একটি বিস্তারিত তালিকা উপস্থাপন করব।

তাই আপনি যদি প্রথমবারের মত পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার চিন্তা ভাবনা করেন বা পুরানোটাকে নবায়ন করতে চান, তাহলে এই গাইডটি আপনাকে সহজতর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। যেন আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ঝটপট সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

তাহলে, শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৩

পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজ লাগে?

নতুন পাসপোর্ট আবেদনের সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ তা হলো আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে প্রমাণ পত্র দাখিল করতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন হবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র। সাথে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাগজ পত্র যেমন জন্ম সনদ বা আগের পাসপোর্ট, ফটো আইডেন্টিফিকেশন, ড্রইভার লাইসেন্স ইত্যাদি।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা নিচে এক এক করে উল্লেখ করা হলো।

ঠিকানা প্রমাণ ডকুমেন্ট

পাসপোর্ট আবেদনের জন্য আপনার ঠিকানা প্রমাণ ডকুমেন্ট অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ঠিকানা যাচাই করার জন্য বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভাড়ার চুক্তি বা স্থানীয় পৌরসভা / সরকারী অফিস থেকে একটি সনদ জমা দিতে পারেন। যাতে তারা আপনার বর্তমান ঠিকানা যাচাই করতে পারেন। যাচাইযোগ্য সমস্ত ডকুমেন্ট হয় অরিজিনাল বা সার্টিফাইড কপি হওয়া প্রয়োজন।

আপনি যদি বাংলাদেশ -এ প্রথমবারের মত পাসপোর্টের আবেদন করে থাকেন, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে।

তখন, আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার যাচাই সম্পর্কিয় কাজ সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে।

জন্ম তারিখ প্রমাণ পত্র

এটি পাসপোর্ট আবেদনের একটি অন্যতম প্রধান গুরত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। যা আবেদনকারী হিসাবে আপনাকে অবশ্যই দাখিল করতে হবে। জন্ম তারিখের প্রমাণস্বরুপ আপনি জন্ম সনদ, বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত কপি জমা দিতে পারেন।

জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকলেও এটি পাসপোর্ট আবেদনের আর একটি স্বতন্ত্র ডকুমেন্ট হিসাবে বিবেচিত।

যদি এগুলি পাওয়া না যায় বা হারিয়ে যায়, তবে নিকটস্থ থানায় হারিয়ে গিয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়রি করতে হবে। তারপর, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে পুনরায় জন্ম সনদ উঠানো যাবে।

পাসপোর্ট-সাইজ ছবি

বাংলাদেশে পাসপোর্ট আবেদনের জন্য পাসপোর্ট-সাইজ ছবি বাধ্যতামূলক। ছবির আকার হওয়া উচিত ৫৫ মিমি X ৪৫ মিমি, শেষ ছয় মাসের মধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট-সাইজ ছবির উপর শুধুমাত্র সাদা বা অফ-সাদা রং এবং কোনও ছায়া দেখা যায় না এমন একটি পরিষ্কার ছবি থাকা উচিত।

একজন পেশাদার ছবির ফটোগ্রাফার অতিরিক্ত ফি ছাড়াই আপেল করতে পারেন যাতে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিধি মেনে চলা যায়।

তবে, আপনার পাসপোর্ট আকারের ছবিটি সরকারি যে কোন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত হবে।

আগের পাসপোর্ট

আপনি যদি ইতোমধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে থাকেন যা এখন হারিয়ে গেছে অথবা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাহলে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে, আপনাকে পূর্ববর্তী পাসপোর্টটি রেফারেন্স হিসাবে জমা দিতে হবে। যদি পাসপোর্টটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তবে পুলিশ রিপোর্ট এর কপি দাখিল করতে হবে।

এছাড়া, আবেদনকারীদেরকে বিবাহ সনদ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তালাকের কপি, নাম পরিবর্তনের জন্য আদালতীয় আদেশ এবং বিদ্যুৎ বিল বা ব্যাংক বিবৃতিসহ অন্যান্য ডকুমেন্টগুলি জমা দিতে হতে পারে। স্পেশাল ধরনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে, অতিরিক্ত ডকুমেন্টগুলি প্রয়োজন হতে পারে। আবেদন জমা দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট ডকুমেন্টের পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে – তালিকা

বাংলাদেশের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীন সুনির্দিষ্ট পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের ৩ নং পৃষ্ঠার ২৪ নং অনুচ্ছেদে আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত দলিলাদি শীর্ষক শিরোনামে বিষয়টি উল্লেখ আছে।

সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক সাধারণ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি

২) জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি

৩) বিদ্যমান পাসপোর্টের ফটোকপি

৪) পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে জাতীয়তার সনদ

৫) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিকাল সনদের ফটোকপি

৬) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টি আই এন সনদের ফটোকপি

৭) পূরণকৃত পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম

সরকারি চাকুরিজীবিদের জন্য পাসপোর্ট করার নিয়ম

আপনি যদি সরকারি চাকুরে হয়ে থাকেন তাহলে, পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে বিষয়ে উপরে উল্লেখিত কাগজ পত্রের সাথে অতিরিক্ত হিসাবে নিচের ডকুমেন্ট গুলো সংযুক্ত করুন।

১) সরকারি আদেশ বা জিও

যদি আপনি সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমনের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করতে চান, তখন এই আদেশটি জমা দিতে হবে। এটি থাকলে আপনার পাসপোর্ট দ্রুত গতিতে অর্থাৎ ৭২ ঘন্টার মধ্যে উঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

এর দ্বিতীয় সুবিধা – আপনাকে পাসপোর্ট আবেদনের নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রীতে আপনি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

তৃতীয় সুবিধা- আপনার নামে নীল রঙের অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।

২) ছাড় পত্র বা এনওসি

সরকারি কাজের পরিবর্তে আপনি যদি নিজ উদ্যোগে বিদেশ ভ্রমন করতে চান তাহলে আপনি যে অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত আছেন সেখানকার উপযুক্ত কর্তপক্ষ কর্তৃক আপনার নামে জারীকৃত ছাড় পত্র পাসপোর্ট আবেদনের সাথে যুক্ত করতে হবে।

৩) বিদ্যমান পাসপোর্টের ফটোকপি

আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নবায়নের উদ্দেশ্যে আবেদন করে থাকলে একজন সরকারি চাকুরে হিসাবে উপরের কাগজগুলির সাথে মেয়াদোত্তীর্ন পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হবে।