দুবাই ভিসা মানুষের কাছে খুব পছন্দের এবং পরিচিত একটি নাম। পর্যটক বা যারা কাজের সন্ধানে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক তাদের কাছে বিষয়টি বেশ প্রত্যাশিতও বটে। কেননা, দুবাই প্রবাসি মানুষের সংখ্য দিন দিন বেড়েই চলছে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সেখানকার সুযোগ-সুবিধার বেশী হওয়ার জন্য মানুষ দুবাই -এ বসবাসের জন্য আকৃষ্ট হচ্ছে।

কালের ধারাবাহিকতায়, দুবাই এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা কয়েকটি ভ্রমন গন্তব্যের মধ্যে একটি। অসাধারণ লাইফ স্টাইল এবং অনন্য সংষ্কৃতির অধিকারি হওয়ায় ভ্রমন পিপাসু মানুষের কাছে দুবাই শহরের জনপ্রিয়তা দিন কে দিন বেড়েই চলছে।

প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ লোক সারা বিশ্ব থেকে দুবাই ভ্রমন করে আসছে।  প্রতি বছর এখানে ভ্রমনের হার বেড়েই চলছে। তবে, সারা বিশ্বের মোট উপস্থিতির মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। যেমন, গত বছর সর্বমোট ১.৬ কোটি মানুষের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা ছিল ২ কোটি।

তবে, আমাদের পাক ভারত উপমহাদেশের বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কাজের একটি বড় জায়গা দুবাই। এখান থেকে পর্যটক হিসাবে যাওয়ার চেয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। ফলে, নির্দিধায় বলা যায়, দুবাই আমাদের বৈদেশিক রেমিটেন্স এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র।

যাহোক, অদ্যকার এই পোষ্টে দুবাই ভিসা সম্পর্কে পরিস্কার একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। এর সাথে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন দুবাই ভিসা কয় ধরণের, আপনি এই ভিসা এপ্লাই কিভাবে করবেন, এপ্লাই এর পর চেক করার নিয়ম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

চলুন, শুরু করি।

দুবাই ভিসা বলতে কি বুঝায়?

এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে প্রথমে চলুন দুবাই সম্পর্কে জেনে নেই।  দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাত নামক দেশের অন্তর্গত একটি এলাকার নাম। সংযুক্ত আরব আমিরাত নামের দেশটি ৭ টি আমিরাত নিয়ে গঠিত। আমিরাত বলতে বুঝায় এমন কোন অঞ্চল যা ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ি আমির কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সাতটি অঞ্চল বা আমিরাত যুক্ত হয়ে দেশটি গঠিত বলে দেশটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত বলা হয়।

যে সাত আমিরাত নিয়ে দেশটি গঠিত তাদের নাম নিচে উল্লেখ করছি-

  • আবুধাবি
  • দুবাই
  • শারজাহ্
  • আজমান
  • উম আল ক্বুয়াইন
  • ফুজাইরাহ্
  • রাস আল খাইমাহ্

এবারে, আপনি নিশ্চয়ই দুবাই সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। যে এটি একক কোন দেশের নাম নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি বড় অঞ্চল বা আমিরাত মধ্যে একটি।

কাজেই, দুবাই ভিসা বলতে প্রকৃত অর্থে কোন ভিসা নেই। দুবাই ভিসা বলতে সংযুক্ত আরব আমিরাত এর ভিসা বুঝানো হয়। যা আপনার পাসপোর্টে লেগে গেলে দুবাই সহ দেশটির গোটা অঞ্চলই ভ্রমন করতে পারবেন।

এখন বলার অপেক্ষা রাখেনা যে – আলোচ্য পোষ্টের “দুবাই ভিসা” কথাটির দ্বারা সংযুক্ত আরব আমিরাত এর ভিসাকেই উদ্দেশ্য করা হবে।

দুবাই ভিসা কত প্রকার?

ভিজিট ভিসা

ভিজিট ভিসার মেয়াদ ৩০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত হতে পারে। ইহা সিঙ্গল বা মাল্টিপল এন্ট্রি হয়। আপনি দেশে থেকে সর্বোচ্চ দুই বার ৩০ দিন করে এই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন।

যে সব দেশের অধিবাসি দেশটির অন এরাইভাল ভিসা প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখেনা তাদের ক্ষেত্রেই কেবল এই ভিজিট ভিসার প্রয়োজন হয়।

মহিলার ক্ষেত্রে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তারা মাতা-পিতা ব্যতিরেকে একা ভ্রমন করতে পারবে না।

সারা বিশ্বের উপযুক্ত ব্যক্তি বর্গ ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে।

ভিজিট ভিসাকে টোরিস্ট বা পর্যটক ভিসা হিসাবে অভিহিত করা হয়। এই ভিসার আবেদন কিভাবে করতে হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

বিজনেস ভিসা

এটি গোল্ডেন ভিসা সিস্টেম এর অংশ যার আওতায় আপনি দির্ঘ মেয়াদে এখানে অবস্থান করতে পারেন। এই ভিসায় নিজ পরিবার সদস্যদেরকে নিয়ে আসা যাবে।

বিজনেস ভিসার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন লোক কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে দেশটিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দার করাতে পারবে।

গোল্ডেন ভিসা

এটি হচ্ছে একটি দির্ঘ মেয়াদের রেসিডেন্স ভিসা যার মাধ্যমে বিশেষায়িত কোন ব্যাক্তি এখানে বসবাস করতে পারে, কাজ করতে পারে । এই ভিসাধারি রয়েছে নানাবিধ সুবিধ পেয়ে থাকে। সাধারণত: উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারি, বিজ্ঞানি, অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারি কোন ছাত্র ইত্যাদি ক্যাটাগরির মানুষ গোল্ডেন ভিসার সুযোগ নিতে পারে।

রেসিডেন্স ভিসা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেসিডেন্স ভিসা পূর্বে কাজ করার ভিসা নামে অভিহিত করা হতো। এই ভিসার মেয়াদ দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হবে চাকুরিদাতা কর্তৃক স্পন্সর এবং স্বাস্থ্যগত সনদ।

তবে, সাম্প্রতিক কালের নিয়ম অনুসারে স্পনসর এর বাধ্যবাধকতা ক্ষেত্র বিশেষে পরিহার করা হয়েছে। আপনি একজন বিদেশি উদ্যোক্তা হয়ে শত ভাগ নিজ মালিকানায় এখানে কম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেন।

এই রেসিডেন্স ভিসা ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা হয় যা মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নযোগ্য।

ট্র্যানজিট ভিসা

যদি আপনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সংক্ষিপ্ত কোন যাত্রা বিরতি দিতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য। তবে, এর জন্য আপনাকে ৪৮ ঘন্টা বা ৯৬ ঘন্টার জন্য ট্র্যানজিট ভিসার আবেদন করতে হবে।

ইউএই ভিত্তিক কোন এয়ার লাইন বা অন্য কোন ট্রাভেল এজেন্ট এর সাহায্যেও আপনি চাইলে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

ট্র্যানজিট ভিসার ক্ষেত্রে মনে রাখার বিষয় হলো, এর মেয়াদ বাড়ানো যায় না বা নবায়ন করা যায় না। আপনাকে ভিসার মেয়াদের ভিতরেই দেশ ত্যাগ করতে হবে।

দুবাই ভিসা এপ্লাই করার নিয়ম কি?

বাংলাদেশ থেকে আপনি দুই ভাবে দুবাই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রথমত: সুনির্দিষ্ট কিছু এয়ারলাইনস এর মাধ্যমে আর দ্বিতীয়ত: ট্রাভেল এজেন্ট এর মাধ্যমে।

যদি আপনি এয়ারলাইনস এর মাধ্যমে ভিসা পেতে চান তাহলে নিচের কম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন-

  • এমিরাতস এয়ারলাইন
  • ইটিহাদ এয়ারলাইন
  • এয়ার এরাবিয়া এবং
  • ফ্লাই দুবাই

তবে, উপরের চারটি এয়ারলাইনস এর মধ্যে এমিরাতস এয়ারলাইনস দ্বারা ভিসা আবেদন খরচ তুলনামুলক কম।

এবারে ট্রাভেল এজেন্ট দিয়ে কিভাবে ভিসা আবেদন করতে হয় চলুন জেনে নেই।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধিত কোন ট্রাভেল এজেন্ট এর সাহায্যে ভিসা আবেদনের সেবা গ্রহন করতে পারেন। ট্রাভেল এজেন্ট দিয়ে আপনি সিঙ্গেল বা মাল্টিপল এন্ট্রির ভিসা আবেদন দাখিল করতে পারেন।

দুবাই ভিসা এপ্লাই করতে কি কি কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়?

দুবাই ভিসা এপ্লাই করার সময় নিম্নলিখিত ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন হবে-

  • সঠিকভাবে পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • দুই কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি যার সাইজ হবে ৪৫x৩৫ মিলিমিটার। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে সাদা।
  • আপনার পাসপোর্ট যার মেয়াদ থাকতে হবে কমপক্ষে ছয় মাস।
  • আপনি যে পেশায় আছেন তার পেশাগত সনদ পত্র।
  • আপনার কম্পানির ব্যবসায়িক প্যাডে একটি আন্ডারটেকেন এই মর্মে নিতে হবে যে, আপনার সব দায়িত্ব কম্পানি বহন করবে।
  • বিমানের টিকেট
  • আপনার বিজনেস কার্ড
  • যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের দু’টি ফোন নাম্বার।

দুবাই ভিসা চেক করার নিয়ম কি?

দুবাই ভিসা এপ্লাই করার পর আপনি এই লিংকে প্রবেশ করে আপনার পাসপোর্ট নাম্বারটি বসিয়ে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন। এভাবে আপনার ভিসা আবেদনটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে।

          দুবাই ভিসা চেক অনলাইন

উপরের লিংকে গিয়ে আপনি দুবাই ভিসা অনলাইন এ চেক করতে পারবেন।

দুবাই ভিসা ছবি

দুবাই ভিসা দাম কত?

দুবাই ভিসা দাম কত – প্রশ্নটি সুনির্দিষ্ট নয়। কেননা – কয়েক প্রকারের ভিসার মধ্যে যেমন, ভিজিট ভিসা, বিজনেস ভিসা; এ ধরণের ভিসার ক্ষেত্রে শুধু ভিসা প্রসেসিং ফি দিলেই ভিসা পেয়ে যাবেন।

যেমন, আপনি যদি ৩০ দিন মেয়াদের সিঙ্গেল এন্ট্রির ভিজিট ভিসার কথা বলেন তাহলে এর প্রসেসিং ফি আট থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে। আবার মাল্পিপল এন্ট্রি হলে খরচ প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাবে।

অপরদিকে, আপনি যদি ৯০ দিনের জন্য আবেদন করেন, তাহলে এর ফি সিঙ্গেল এন্ট্রির বেলায় বিশ থেকে পঁচিশ হাজারের মধ্যে হবে। তবে, যদি ৯০ দিনের মাল্পিপল এন্ট্রি হয়, তাহলে এর খরচ প্রায় দ্বিগুনের মত বেড়ে যাবে।

দুবাই কোন দেশের রাজধানী

দুবাই আসলে কোন দেশের রাজধানি নয়। ইহা সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি শহর অঞ্চল যা দেশটির সাতটি আমিরাত এর মধ্যে একটি।

তবে, দুবাই কে আপনি সংযুক্ত আরব আমিরাত এর বাণিজ্যিক রাজধানি নামে বলতে পারেন। কেননা, ব্যবসা বাণিজ্য ও ভ্রমনের একটি বৈশ্বিক হাব হিসাবে দুবাই স্বীকৃতি লাভ করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী হলো আবুধাবি।

দুবাই এক টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

খুব মজার প্রশ্ন – দুবাই এক টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর এক রকম থাকে না। সময় ভেদে তারতম্য হয়। তাই, আপনি যে দিন এ বিষয়ে জানতে চান সেদিনই আপনি এর উপর তথ্য যোগার করুন। যাতে দুবাই এক টাকার বিপরীতে বাংলাদেশের কত টাকা হবে তা সঠিক হয়।

বিষয়টি জানার জন্য আপনি গুগলে যান। সেখানে গিয়ে কথাটি লিখে সার্চ দিন। তারপর আপনি হালনাগাদ তথ্য পেয়ে যাবেন।

আনুমানিক ধারণার জন্য আপনাকে এতটুকু বলছি – দুবাই এক টাকা বংলাদেশের প্রায় ৩০ টাকার মত।

দুবাই টাকার ছবি